আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আলাপচারিতায় সুন্দরের প্রকাশ কে হত্যা করেছে প্রযুক্তির অন্যতম ডিভাইস সেলফোনের এসএমএস

আমি সত্য জানতে চাই বিভিন্ন জরুরী কাজে ব্যবহারের সাথে সাথে একাকিত্ব কাটানোর জন্যও সেলফোন এখন মানুষের সঙ্গী। তবে পরস্পরের সঙ্গে সংযোগ দৃঢ় করতে সেলফোনের ব্যবহার শুরু হলেও এখন অবস্থা হচ্ছে হিতে বিপরীত। এখন আর কেউই সরাসরি কথা বলতে চায় না। সেলফোনে কথা বলার সাথে সাথে এসএমএস পাঠানোকে আজকাল দক্ষতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই পাশাপাশি বসে থাকলেও আগের মতো কেউ আর আগ বাড়িয়ে কথা বলেন না।

ফলে মুখোমুখি আলাপচারিতা ক্রমেই কমছে। আর আলাপচারিতায় সুন্দরের সেই প্রকাশ কে হত্যা করেছে প্রযুক্তির অন্যতম ডিভাইস সেলফোনের এসএমএস। সকালবেলা নাস্তার টেবিল থেকে শুরু করে প্রিয় মানুষকে চিরবিদায় দেয়ার সময়ও তারা এসএমএস করা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আর এর চাপ পড়ছে মস্তিষ্কের ওপর। আমেরিকাতে১৮-২৪ বছর বয়সীরা প্রতি মাসে গড়ে ৩ হাজার ২০০ শত বার্তা চালাচালি করে থাকে বলে জানা গেছে।

খবর দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার। যুক্তরাষ্ট্রের ৯০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি সেলফোন ব্যবহার করে। সেলফোনে কথা বলা ও এসএমএস করতেই তারা ৯০ শতাংশ সময় কাটিয়ে দেয় বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) মনোবিজ্ঞানী শেরি টার্কলের এসএমএস বা টেক্সটিংয়ে শত শত ব্যক্তির ওপর গবেষণা চালিয়ে 'অ্যালোন টুগেদার' নামে একটি বই লিখেন। বইয়ের শেষ লাইনে তিনি দুঃখ করে বলেন, ‘আমরা মুখোমুখি আলাপের মতো শিল্পকে হারিয়ে ফেলেছি।

’ তাঁর ভাষায়, ‘১৮ বছর বয়সী এক ছেলে সরাসরি কথা বলার চেয়ে বার্তা পাঠাতে বেশি পছন্দ করে। কথা বলার বিপক্ষে সে বেশ কিছু যুক্তি আমার সামনে দাঁড় করিয়েছিল। সে আমাকে জানায়, কথা বলাটা তাত্ক্ষণিক ঘটে যায় এবং বলার সময় অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণ থাকে না। অপরদিকে এসএমএসে চিন্তাভাবনা করে মনের ভাব প্রকাশ করা যায়। ’ যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মতে, ‘সেলফোন, ট্যাবলেট কম্পিউটারের মতো ডিভাইসগুলো যদি হঠাৎ আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়, তাহলে আমরা কী করব? আমরা কি তাহলে স্বাভাবিকভাবে চলতে পারব? এ প্রশ্নগুলো এখন আর এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই।

’ গবেষক সার্গেই গলিতসিনস্কি তার শিক্ষার্থীদের ২৪ ঘণ্টা সেলফোন ছাড়া থাকতে বলেছিলেন। ২৪ ঘণ্টা পর শিক্ষার্থীদের করা এক প্রশ্নের জবাবে সবাই তাকে জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ২৪ ঘণ্টা কাটিয়েছিল বলে জানায়। শিক্ষার্থীদের ৭০ শতাংশ তো এ গবেষণায় আর সহায়তা করতে পারবে না বলে বিদায় নেয়। সেলফোন ছাড়া জীবন তাদের কাছে বিরক্তিকর ঠেকছিল। বিশ্বের সঙ্গে আবেগের দিক থেকে তারা নিজেদের বিচ্ছিন্ন হিসেবে মনে করছিল বলে সার্গেই গলিতসিনস্কির কাছ থেকে জানা গেছে।

প্রযুক্তি ও সংস্কৃতিবিষয়ক লেখক নিকোলাস কারের মতে, ‘এসএমএস, ফেসবুক আপডেট, ই-মেইল না দেখতে পারলে আমরা রীতিমতো অস্থির হয়ে যাই। মোবাইল ডিভাইসগুলো কীভাবে আমাদের বদ অভ্যাসের অন্তর্ভুক্ত হলো, তার পেছনে বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। নতুন কিছু সম্পর্কে জানা ও নতুন নতুন তথ্য মস্তিষ্কে যোগ করা মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। তবে এ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই মানুষকে নিজস্ব জগত তৈরিতে সাহায্য করে, যেখানে অফুরন্ত তথ্য রয়েছে। এ অবস্থাকে এড়ানোর উপায় নেই।

উপরোক্ত জরিপটি যুক্তরাষ্ট্রে করা হলেও পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এর একই প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। বাংলাদেশও এর থেকে ব্যকিক্রম নয়। আমাদের দেশে মোবাইলে এসএমএস শুধু অক্ষর জ্ঞান সম্পন্যদের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলেও মোবাইলের কারণে চিঠি আদান প্রদান কমে গেছে তা বলাই বাহুল্য। সূত্রঃ The Times of India Texting killing the art of conversation  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।