গতকাল রাতে দেখলাম কারিনা কাপুর অভিনীত এবং মধুর ভাণ্ডারকার পরিচালিত হিরোইন মুভিটা। মধুর ভাণ্ডারকারের বেশ কিছু মুভি দেখা হয়েছে, বেশিরভাগই ভালো লেগেছে কম বেশি। ইদানিং অনুরাগ কশ্যপ- দিবাকর ব্যানারজিদের জীবনঘেঁষা মুভিগুলো যে বেশ নাম করছে তার সূচনা কিছুটা মধুর ভাণ্ডারকারের হাত ধরেই। আমার দেখা মধুর ভাণ্ডারকার পরিচালিত মুভিগুলোর একটা শর্ট রিভিউ দিলাম। সাধারণত হিন্দি মুভি নিয়ে পোস্ট দিলে আগেই বলে দেই যাতে যারা হিন্দি মুভি পছন্দ করেন না তারা যাতে এড়িয়ে যান।
কিন্তু এই তালিকার প্রায় সব মুভিই মোটামুটি মৌলিক কাহিনীর মনে হয়েছে এবং অভিনয় বেশ ভালো – পরিচালনাও চমৎকার। তাই মুভিগুলো কেউ দেখলে সময় নষ্ট হয়েছে বলে মনে হবে বলে মনে হয়না!
http://en.wikipedia.org/wiki/Madhur_Bhandarkar
***নারীচরিত্র কেন্দ্রিক জীবনঘেঁষা মুভিগুলোঃ
১) চাঁদনী বার (২০০১):
মধুর ভাণ্ডারকারকে রাতারাতি খ্যাতনামা করে তোলা মুভি চাঁদনী বার। চমৎকার স্ক্রিপ্ট+টাবু আর অতুল কুলকারনির দারুণ অভিনয় মুভিটাকে স্মরণীয় করে রেখেছে। যারা একটু ভিন্ন ধাঁচের জীবনধর্মী মুভি দেখতে ভালবাসেন তাদের অবশ্যই ভালো লাগবে। টাবুর মতো একজন জাত অভিনেত্রীকে বলিউড যে হাতেগোনা কয়েকটা সিনেমায় ঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছে তার মাঝে এটা সবার উপরে থাকবে।
http://www.imdb.com/title/tt0267363/
২) পেজ থ্রি (২০০৫):
আমার দেখা সবচেয়ে সাহসী হিন্দি মুভি নিঃসন্দেহে পেজ থ্রি। ঝলমলে আলোয় ভরা রুপালী পর্দার মানুষগুলোর যে কদর্য কুৎসিত চেহারা মধুর ভাণ্ডারকার এই মুভিতে অদ্ভুত সাবলীলতার সাথে তুলে এনেছেন তা দেখে অবাক না হয়ে উপায় নেই। সমকামিতা এবং শিশুকামিতার মতো স্পর্শকাতর বিষয় খুব দক্ষতার সাথে তুলে ধরা হয়েছে। কঙ্কনা সেন শর্মার বলিউড অভিষেক এই মুভি দিয়ে এবং খুবই সাবলীল অভিনয় দিয়ে রীতিমত চমৎকৃত করেছেন কঙ্কনা। অতুল কুলকারনি সহ বাকিরাও বেশ ভালো কাজ করেছেন।
আমার কাছে এখন পর্যন্ত মধুর ভাণ্ডারকারের সেরা কাজ মনে হয়েছে পেজ থ্রি।
http://www.imdb.com/title/tt0443708/
৩) কর্পোরেট (২০০৬):
অপেক্ষাকৃত কম নাম করা এই মুভিটা দেখা হয়েছিল মূলত বিজনেস স্টাডিস কোর্সের অ্যাসাইনমেন্ট করতে গিয়ে!অ্যাসাইনমেন্ট লিখতে গিয়ে বেশ কয়েকবার মুভিটা দেখতে হলেও মন্দ লাগেনি একটুও। কর্পোরেট দুনিয়ার হালচাল বেশ ভালোভাবেই ফুটে উঠেছে বিপাশা বসু-রজত কাপুর-রাজ বাব্বার আর সব সময়ই দারুণ কে কে মেনন এর অভিনয়ে। তবে মুভির মেকিংটা আরও ভালো হতে পারত বলে মনে হয়েছে-কিছু জায়গায় একটু খাপছাড়া লেগেছে। তবে সব মিলিয়ে মন্দ না।
http://www.imdb.com/title/tt0488381/
8) ফ্যাশন (২০০৮):
এটাই সম্ভবত মধুর ভাণ্ডারকারের সবচেয়ে নামকরা এবং কমার্শিয়ালি সফল মুভি! এই মুভির জন্যে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল সেরা অভিনেত্রী হিসেবে এবং কঙ্গনা রানাওয়াত সেরা পার্শ্বঅভিনেত্রী হিসেবে। প্রিয়াঙ্কার অভিনয় মাঝারি গোছের লেগেছিল- বেশ ভালো কাহিনীই মুভিটাকে শক্তিশালী করে তুলেছে। তবে কঙ্গনা আর মুগ্ধার অভিনয় তুলনামুলক ভাবে বেশি সাবলীল মনে হয়েছিল – তার একটা কারণ হয়তো এটা যে ওদের ২ জনেরই সূচনা আসলে র্যাম্প মডেলিং দিয়ে।
মুভি হিসেবে বেশ ভালো- গানগুলো এখনও মাঝে মাঝে শুনি – “মার যাওয়া”-“কুছ খাস হ্যায়”-“আশিয়ানা” গানগুলো বেশ পছন্দের তালিকায় থাকবে সবসময়।
বেশ স্মার্টলি পরিচালনা করা মুভিটা-সবার কাছেই ভালো লাগার মতো।
http://www.imdb.com/title/tt0964516/
৫) হিরোইন (২০১২):
গতকাল রাতেই দেখলাম মুভিটা। মধুর ভাণ্ডারকারের বাকি মুভিগুলোর তুলনায় কাহিনী কিছুটা দুর্বল লাগলো। কেমন যেন হঠাৎ করে সবকিছু ঘটল মনে হল। কারিনার অভিনয় ভালো ছিল কিন্তু স্ক্রিপ্ট থেকে খুব বেশি সাহায্য পেলো না। মুভিটা আরও অনেক ভালো হতে পারতো তাই কিছুটা হতাশই হলাম দেখে।
http://www.imdb.com/title/tt1949548/
***কমেডি
দিল তো বাচ্চা হ্যায় জি (২০১১):
তিন ব্যাচেলর যুবকের প্রেমে পড়া এবং হৃদয় ভাঙ্গার গল্প। বেশ মজার লেগেছে মুভিটা। গান-অভিনয় ভালো ছিল তবে সমাপ্তির ধরণটা ঠিক পছন্দ হয়নি!
http://www.imdb.com/title/tt1727496/
***অ্যাকশন
আন (২০০৪):
মুভিটা পুরো দেখা হয় নাই- টিভিতে কিছুটা দেখেছি। খুব বেশি ভালো লাগে নি। তবে ইরফান খান আর পরেশ রাওয়াল দুর্দান্ত!
http://www.imdb.com/title/tt0363409/
***সামাজিকঃ
জেল (২০০৯):
অনেক সম্ভাবনা থাকলেও মুভিটা কেন জানি ভালো হল না।
কেবল মনোজ বাজপায়ির অভিনয়ই মনে দাগ কাটার মতো ছিল। নিল আর মুগ্ধা মোটামুটি। কাহিনি আরেকটু ভালো হলে হয়তো ভালো লাগতো।
http://www.imdb.com/title/tt1245774/
--- এই মুভিগুলোই মোটামুটি দেখেছি। এছাড়া নাম করা মুভিগুলোর মাঝে সাত্তা(http://www.imdb.com/title/tt0341562/) আর ট্রাফিক সিগনাল(http://www.imdb.com/title/tt0819810/) দেখা বাকি আছে।
বলিউডের মতো নায়কতান্ত্রিক ইন্ডাসট্রিতে এতগুলো নারীচরিত্র কেন্দ্রিক মুভি বানাবার মতো সাহস করা এবং সবগুলো মুভিতেই বেশ ভালো কাহিনী-অভিনয় এবং পরিচালনার জন্যে মধুর ভাণ্ডারকার এখন বলিউডের প্রথম সারির পরিচালকদের একজন!
একটু ভিন্ন ধাঁচের মুভি দেখার মতো মুড থাকলে দেখে ফেলতে পারেন তালিকার উপরের দিকের মুভিগুলো! বিশেষ করে চাঁদনী বার, পেজ থ্রি এবং ফ্যাশন দেখলে ভালো লাগবে আশা করি ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।