আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘রাজনৈতিক প্রতারণার’ অভিযোগে চাপের মুখে ওবামা প্রশাসন

ইন্টারনেট ও ফোনালাপে যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তচরবৃত্তির খবর ফাঁসের পর ভীষণ চাপের মুখে পড়েছে বারাক ওবামার প্রশাসন। মিত্র রাষ্ট্রগুলোও ‘রাজনৈতিক প্রতারণার’ অভিযোগ আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ইতিমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানিয়েছে, তথ্য সংরক্ষণ অধিকার আইনের আলোকে তার ‘গুপ্তচরবৃত্তি’ যে অন্যায় কিছু নয়, তা প্রমাণ করতে। তথ্য ফাঁসকারী ও সিআইয়ের সাবেক কর্মী অ্যাডওয়ার্ড স্নোডেন লাপাত্তা হয়ে যাওয়ায় জল আরও ঘোলা হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে স্নোডেনকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে আগুনে ঘি ঢেলেছে রাশিয়া।


‘দ্য গার্ডিয়ান’ বলছে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার ইতিহাসে অন্যতম বড় তথ্য ফাঁসের ঘটনার পর বারাক ওবামা নিজ দেশে ও আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র ক্ষোভের মুখে পড়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক মতামত এখন দুটি বড় শিবিরে ভাগ হয়ে গেছে। কংগ্রেসের কিছু সদস্য দাবি করেছেন, তথ্য ফাঁসকারী অ্যাডওয়ার্ড স্নোডেনকে হংকং থেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। তবে দেশটির বড় দুই রাজনৈতিক দলের জ্যেষ্ঠ রাজনীতিকদের প্রশ্ন হলো, গোয়েন্দাগিরি করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র খুব বেশি বাড়বাড়ি করে ফেলেছে কি না।

যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ
তবে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, গুপ্তচরবৃত্তির কর্মকাণ্ড দেশের আইন ভঙ্গ করেনি।

দেশটির কর্মকর্তারা বলছেন, ‘প্রিজম’ নামের গোয়েন্দা কর্মসূচিটি ফরেইন ইন্টেলিজেন্স সার্ভেইলেন্স অ্যাক্ট (ফিজা) বা বিদেশিদের ওপরে গোয়েন্দা নজরদারি আইনের অধীনেই করা হয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের এনএসএ-কে বিদেশি নাগরিকদের ই-মেইল ও ফোন রেকর্ড সংগ্রহ ও সংরক্ষণের অধিকার দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ওপর রাষ্ট্রের নজরদারি একটা পর্যায় পর্যন্ত সীমিত রাখতে জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (এনএসএ) এখন পর্যন্ত কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা জানতে চেয়ে আদেশ জারি করেছেন দেশটির জাতীয় গোয়েন্দা কমিটির প্রধান ডায়ানে ফিনিস্টেন। তবে তিনি এ-ও জানিয়েছেন যে, স্নোডেন যা করেছেন তা অন্যায়। তিনি বলেন, ‘সে যা করেছে, তা রাজনৈতিক প্রতারণা।

’ অ্যাডওয়ার্ড স্নোডেন যা করেছেন, তা ফৌজদারি অপরাধ কি না, তা খতিয়ে দেখছে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার।

ইউরোপের প্রতিক্রিয়া
ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর রাজধানীতে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকাণ্ড নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে। অনতিবিলম্বে মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের কাছে জবাব চেয়েছে ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো। ইউরোপীয়দের ডিজিটাল তথ্য সংগ্রহে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসূচিকে অগ্রহণযোগ্য, বেআইনি ও মৌলিক অধিকারের অবমাননা বলে অভিহিত করেছে এসব রাষ্ট্র।
ইইউর স্বাস্থ্য কমিশনার টোনিও বোর্গ বিবিসিকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তথ্য সংরক্ষণ অধিকার রক্ষার ‘পরিষ্কার অঙ্গীকার’ চেয়েছে ইইউ।



লাপাত্তা স্নোডেন
হংকং-এর টিভি চ্যানেল আরটিএইচকে-এর বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, স্নোডেন হোটেল ছেড়ে চলে গেছেন। হংকং-এর মিরা হোটেলের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, স্নোডেন গতকাল দুপুরে হোটেল ছেড়ে চলে যান।
স্নোডেন কোথায় গেছেন, তা এখনো জানা যায়নি, তবে ধারণা করা হচ্ছে তিনি এখনো হংকং-এ আছেন।

বরখাস্ত হয়েছেন স্নোডেন
হাফিংটন পোস্ট বলছে, স্নোডেনকে আজ মঙ্গলবার বুজ অ্যালেন হ্যামিলটন কোম্কানি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্তের খবর নিশ্চিত করে কোম্কনিটি একটি বিবৃতিও দিয়েছে।

মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি বলছে, স্নোডেন গত তিনমাস ধরে চুক্তিভিত্তিক কাজ করতেন এবং তাঁর কর্মস্থল ছিল হাওয়াই। প্রতিষ্ঠানের ‘নৈতিকতা ও কর্মনীতি’ ভঙ্গের দায়ে স্নোডেনকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

রাশিয়ার প্রস্তাব
রাশিয়া জানিয়েছে, স্নোডেন যদি দেশটির কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় চায়, তবে তাঁকে তা দেওয়ার কথা বিবেচনা করবে ক্রেমলিন।
রাশিয়ার সরকারি দপ্তর ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ আজ কোমেরসান্ট নামের একটি দৈনিককে বলেন, ‘যদি আমরা এমন কোন অনুরোধ পাই, তবে তা বিবেচনা করবো। ’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, হংকং স্নোডেনের জন্য মোটেই নিরাপদ নয়, কারণ হংকং-এর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দি বিনিময় চুক্তি আছে।

হংকং-এ রাশিয়ার একটি উপদূতাবাস আছে এবং রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এমন কোন চুক্তি নেই। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর রাশিয়া অনেকবার যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ জানিয়েছে দেশটিতে অবস্থানকারী রাশিয়ান ব্যবসায়ীদের ফেরত দিতে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এতকাল সে কথা কানে তোলেনি। তাই এবার স্নোডেনকে আশ্রয় দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে বাগে পেতে চায় রাশিয়া।

ড্যানিয়েল এলসবার্গের বক্তব্য
ভিয়েতনাম যুদ্ধ-সংক্রান্ত পেন্টাগনের নথিপত্র ফাঁসকারী ও সাবেক সামরিক বিশ্লেষক ড্যানিয়েল এলসবার্গ বলেছেন, স্নোডেনের কাজটি তাঁর নিজের কাজের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁসের ঘটনা।


এলসবার্গ তাঁর এক নিবন্ধে লিখেছেন, ‘আমার হিসেবে অ্যাডওয়ার্ড স্নোডেন এনএসএর কাগজপত্র ফাঁস করে যা করেছেন, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফাঁস যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে আর কখনো হয়নি। এমনকি ৪০ বছর আগে পেন্টাগনের নথিপত্র নিয়ে যা হয়েছিল, তার চেয়েও বেশি। ’

স্নোডেন সম্প্রতি ‘দ্য গার্ডিয়ানের’ কাছে তাঁর পরিচয় খোলাসা করে সাক্ষাত্কার দিয়েছেন। এ সাক্ষাত্কার দৈনিক পত্রিকাটির গত বুধবারের সংস্করণে ছাপা হয়েছে। সিআইএর সাবেক কর্মী ২৯ বছর বয়সী স্নোডেন এখন মার্কিন প্রতিরক্ষা ঠিকাদার বুজ অ্যালেন হ্যামিলটনের সঙ্গে কাজ করছেন।


সাক্ষাত্কারে স্নোডেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রিজম’ কর্মসূচি ও গোপন আদালতের রায়ের কথাটি ফাঁসের কথা স্বীকার করেন। স্নোডেন প্রিজম গোয়েন্দা-ব্যবস্থার এমন একটি নথি প্রকাশ করেছেন, যাতে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (এনএসএ) ও কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোকে (এফবিআই) গুগল, অ্যাপল, মাইক্রোসফট, ফেসবুক ও এওএলের মতো ইন্টারনেট-সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলো থেকে নাগরিক ও ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ প্রকল্পের অধীনে এনএসএ ই-মেইল, ভিডিও চ্যাট, তাত্ক্ষণিক বার্তা ও বিদেশি কোনো আলাপ, বার্তা বা ভিডিও রেকর্ড করতে পারে। এনএসএ ইতিমধ্যে লাখ লাখ নাগরিকের টেলিফোন আলাপের রেকর্ড সংগ্রহ করছে।
স্নোডেন ‘দ্য গার্ডিয়ান’কে বলেন, তিনি একসময় সিআইএর আইটি নিরাপত্তা বিভাগে কাজ করতেন।

কূটনৈতিক কাজের অজুহাতে ২০০৭ সালে তাঁকে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় নিযুক্ত করা হয়। সে সময় তিনি অনেক গোপন নথিপত্র দেখেছেন।
স্নোডেন বলেন, ‘জেনেভায় আমি যা দেখেছি, তারপর আমার সরকারের কাজকর্ম ও বিশ্বের ওপরে এর প্রভাব সম্পর্কে আমার মোহমুক্তি ঘটেছে। ...আমি বুঝতে পারলাম যে আমি যার জন্য কাজ করছি, সেটি যত না ভালো কিছু করছে, তার চেয়ে বেশি অনিষ্ট করছে। ’।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.