deceive, deceive me once again
বিখ্যাত থ্রিলার ফিকশন ঔপন্যাসিক ড্যান ব্রাউন এর জন্ম ২২জুন, ১৯৬৪ সালে। তিনি ‘দ্যা ডা ভিঞ্চি কোড’ এর জন্য সবচেয়ে বেশী পরিচিত যেটি কিনা ২০০৩ সালের সর্বোচ্চ বিক্রিত উপন্যাস ছিল। এছাড়াও ওনার আরো কয়েকটি #১ বিক্রিত উপন্যাস রয়েছে। এখন পর্যন্ত তিনি মোট ৫টি বই লিখেছেন। বইগুলো ৫২টি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে এবং সমগ্র বিশ্বে প্রায় ২০০মিলিয়ন কপি বিক্রিত হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি পদক প্রাপ্ত এ লেখক আমহার্স্ট বিশ্ববিদ্যালয় হতে গ্র্যাজুয়েশন করেন। পুরোদমে লেখালেখি শুরু করার আগে তিনি সে বিশ্ববিদ্যালয়েই ইংরেজী পড়াতেন।
প্রাচীনকালের ক্রিপ্টোগ্রাফী, সিম্বল, কোড ব্রেকিং, গোপন সংঘ, ষড়তন্ত্র তত্ত্বের মিশেল- তাঁর বইগুলোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য যা কিনা পাঠককূলকে সহজেই আকৃষ্ট করে। তাঁর লেখনির এমনই শক্তি যার ফলে পুরো বই পড়া শেষ না করা পর্যন্ত মনে শান্তি পাওয়া যায়না। তিনি একটি প্রিপারেটরী স্কুল ক্যাম্পাসে বেড়ে ওঠেন, সেখানে থাকাকালে তিনি ধর্ম ও বিজ্ঞানের আপাতবিরোধী পারস্পরিক ক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা গড়ে তোলেন যা কিনা তাঁকে উপন্যাস লিখার ক্ষেত্রে অনুপ্রাণিত করে।
বইয়ে চার্চ ও ধর্মবিরোধী বেশ কিছু কথা বলার কারণে একটি পক্ষ থেকে ব্রাউনকে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হতে হয়। ‘দ্যা ডা ভিঞ্চি কোড’ প্রকাশের পর ভ্যাটিকান ব্রাউনকে তুমুলভাবে তিরস্কৃত করে এবং তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যদিওবা কেউ কেউ সমালোচনা করছে; আমি তৃপ্ত- গোপন ধর্মীয় ইতিহাস, গুপ্ত সংঘ ও কোড ব্রেকিং নিয়ে লেখা আমার এ উপন্যাসটি মানুষেরা পছন্দ করেছে। বাইবেলবেত্তা আর ইতিহাসবিদরা তা নিয়ে যুদ্ধ করুক”।
২০০৫ সালে প্রকাশিত টাইম ম্যাগাজিন এর নির্বাচনে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ জনের মধ্যে ১ জন ঘোষিত হন।
ম্যাগাজিনটির সম্পাদকের মতে, ‘Keeping the pubLishing industry afLoat; renewed interest in Leonardo da Vinci and early Christian history; spiking tourism to Paris and Rome; a growing membership in secret societies; the ire of CardinaLs in Rome; eight books denying the claims of the novel and seven guides to read along with it; a fLood of historicaL thriLLers; and a major motion picture franchise.’
ড্যান ব্রাউন তাঁর ষষ্ঠ উপন্যাস লিখা শুরু করেছেন।
ড্যান ব্রাউনের সৃষ্টিসমূহ:
• ডিজিটাল ফোরট্রেস:
ব্রাউনের লিখা প্রথম উপন্যাস ‘ডিজিটাল ফোরট্রেস’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৮ সালে, এটি একটি টেকনো-থ্রিলার। নিউইয়র্ক টাইমস এর মতে এটি ওই বছরের বেস্ট সেলার।
কাহিণীসূত্র: আমেরিকার সবচে গোপন এবং মূল্যবান ইন্টেলিজেন্স সংস্থা NationaL Security Agency (NSA) এর অব্যর্থ, অসাধারণ কোড ব্রেকিং মেশিন এমন এক কোডের সম্মুখীন হল যা ভাঙা যাচ্ছেনা। এজেন্সী তাদের চিফ ক্রিপ্টোগ্রাফার সুসান ফ্লেচার এর শরণাপন্ন হল।
গণিতবিদ মেয়েটা পুরো ব্যাপারটা ধরতে পারার পর কেঁপে উঠলো পুরো প্রতিষ্ঠান।
NSA কে জিম্মি করা হয়েছে এক অসাধারণ, অপ্রতিরোধ্য জটিল কোডের দ্বারা। US ইন্টেলিজেন্সকে ঘোল খাইয়ে ছাড়ছে সেটা। ক্রমবর্ধমান গোপনীয়তা আর মিথ্যার বেড়াজালে আটকা পড়েও সুসান নেমে পড়ে তার এজেন্সীকে রক্ষা করার জন্য, নিজের দেশকে রক্ষা করার জন্য, নিজেকে এবং নিজের ভালবাসার মানুষটিকে রক্ষা করার জন্য।
বইটি বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন মাকসুদুজ্জামান খান।
• এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস:
মিস্ট্রি-থ্রিলার ঘরানার উপন্যাস ‘এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস’ প্রকাশিত হয় ২০০০ সালে। এ উপন্যাসটিতে লেখক সৃষ্টি করেন জ্ঞানী, বুদ্ধিদীপ্ত, সুদর্শন রবার্ট ল্যাংডন চরিত্রটি। আগেরটির মতো ব্রাউনের এ মেদহীন টানটান উত্তেজনাকর উপন্যাসটিও বেস্টসেলার হয়।
কাহিণীসূত্র: খুন হয়ে যাওয়া এক বিজ্ঞানীর বুকে পোড়া ছাপের পাঠোদ্বার করতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বখ্যাত সিম্বলজিস্ট রবার্ট ল্যাংডন হাজির হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠান সার্ন এ- চুরি হয় শক্তিশালী বিস্ফোরক এন্টিম্যাটার। ।
থলের বিড়াল বেড়িয়ে পড়লে সবাই অবাক হয়ে পড়ে।
ক্যাথলিক চার্চের বিরুদ্ধে বিষবাস্প তুলছে এক শতাব্দী পুরোনো ভ্রাতৃসংঘ- দি ইলুমিনেটি। খুন হন চারজন কার্ডিনাল, বুকে থাকে ইলুমিনেটির পোড়া সিম্বলগুলো। স্মরণকালের সবচাইতে ভয়াবহ অস্ত্রের হাত থেকে ভ্যাটিকান সিটিকে রক্ষার জন্য ল্যাংডন ঝাঁপিয়ে পড়ে রোমের উপর। সাথে থাকে সুন্দরী পদার্থবিদ-জীববিজ্ঞানী ভিট্টোরিয়া ভেট্টা।
তারা দুজনে চষে বেড়ায় রোমের অস্পৃশ্য সব এলাকা- পরিত্যক্ত ক্যাথেড্রাল, বদ্ধ কবরখানা, বিশাল বিশাল গির্জায়; একসময় তারা আবিষ্কার করতে পারে পৃথিবীর সবচে গোপন এবং সুরক্ষিত ভোল্টটি। রহস্যের সমাধানে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয় তারা।
এ বইটির ও বাংলা অনুবাদক মাকসুদুজ্জামান খান।
২০০৯ সালে এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস মুভি নির্মিত হয়। রবার্ট ল্যাংডনের চরিত্রে অভিনয় করেন টম হ্যাঙ্কস।
• ডিসেপশন পয়েন্ট:
২০০১ সালে প্রকাশিত হয় লেখকের আরেকটি টেকনো-থ্রিলার উপন্যাস ‘ডিসেপশন পয়েন্ট’। এটি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এর উপর লিখা।
কাহিণীসূত্র: দুনিয়া কাঁপানো একটি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে সারা পৃথিবী যখন উদ্বেলিত, পর্দার অন্তরালে তখন ঘটতে থাকে একের পর দূর্ঘটনা- খুন হতে থাকেন বিজ্ঞানী, রাজনৈতিক আর উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা; পেছন থেকে কেউ কলকাঠি নাড়ছে। এরই মধ্যে NRO (NationaL Reconnaissance Office) এর বিশ্লেষক র্যাচেল সেক্সটন সহ আরো তিনজন বিজ্ঞানী এবং সিক্রেট সার্ভিসের এক অফিসার পৃথিবীর সবচাইতে বিপদসঙ্কুল জায়গায় বিপজ্জ্বনক এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হলো। পর্দার অন্তরালে থাকা শক্তিটি সবাইকে নিশ্চিহ্ন করে পৃথিবীবাসীর কাছে কি লুকোতে চাচ্ছে? আর হতভাগ্য সিভিলিয়ান বিজ্ঞানীরা সেই রহস্য উন্মোচন করতে পেরেছিলো কিনা তার উত্তর নিহিত আছে ডিসেপশন পয়েন্ট এ।
বইটির বাংলা অনুবাদক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন।
• দ্যা ডা ভিঞ্চি কোড:
২০০৩ সালে প্রকাশিত হয় ড্যান ব্রাউনের সবচেয়ে জনপ্রিয় উপন্যাস, মাস্টারপিস ‘দ্যা ডা ভিঞ্চি কোড’। আগের তিনটি উপন্যাস বিক্রির ক্ষেত্রে তোলপাঢ় তুললেও দ্যা ডা ভিঞ্চি কোড আগের সব রেকর্ড ভেঙ্গে দেয়, হয় নিউ ইয়র্ক টাইমসের বেস্ট সেলার। এটি বিখ্যাত চরিত্র রবার্ট ল্যাংডন এর দ্বিতীয় অ্যাডভেঞ্চার। খ্রিস্টান ধর্মের ইতিহাসে ম্যারি ম্যাগদালিন এর ভূমিকা এবং হলি গ্রেইল সম্পর্কিত কিংবদন্তীর আলোকে এই উপন্যাস রচিত হয়েছে।
কাহিণীসূত্র: দু হাজার বছরের পুরোনো একটি সত্যকে চিরতরে নির্মূল করার জন্যে প্যারিসে একই দিনে হত্যা করা হয় চারজন বিখ্যাত ব্যক্তিকে। কি সেই সত্য যে সত্য উন্মোচিত হয়ে গেলে একটি প্রতিষ্ঠিত ধর্মমতের ভিত্তি কেঁপে যাবে? হাজার বছরের ইতিহাস লিখতে হবে একেবারে নতুন করে? আর কেনই বা হাজার বছর ধরে একটি সিক্রেট সোসাইটি সেই সত্যকে সঙ্গোপনে লালন করে আসছে, যে সোসাইটির সদস্য ছিলেন আইজ্যাক নিউটন, ভিক্টর হুগো, বত্তিচেল্লি আর লিওনার্দো ডা ভিঞ্চির মতো ব্যক্তিবর্গ?
উগ্র ক্যাথলিক সংগঠন ‘ওপাস দাই’ সেই সত্যকে পুরোপুরি নির্মূল করার আগে অভিনবভাবে সত্যটা হস্তান্তর করে দেয় তাদের সংঘের বাইরের একজনের কাছে আর ঘটনাচক্রে হার্ভার্ডের সিম্বোলজিস্ট রবার্ট ল্যাংডন জড়িয়ে পড়ে মারাত্মক এক মিশনে।
বইটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন।
২০০৬ সালে এ উপন্যাসটি থেকে মুভি নির্মিত করা হয়।
• দ্যা লস্ট সিম্বল:
২০০৯ সালে ড্যান ব্রাউন প্রকাশ করেন রবার্ট ল্যাংডন এর তৃতীয় অ্যাডভেঞ্চার ‘দ্যা লস্ট সিম্বল’।
এটির প্রথম প্রকাশনের সময় ৬.৫ মিলিয়ন কপি ছাপানো হয়। মুক্তির প্রথম দিনেই ১মিলিয়ন কপি বিক্রিত হয়। বেস্টসেলার হিসেবে ৬ সপ্তাহ ধরে নিউইয়র্ক টাইমসের শীর্ষে থাকে।
কাহিণীসূত্র: হাজার হাজার বছর ধরে একটি সিক্রেট জ্ঞান রক্ষা করে যাচ্ছে সিক্রেট সোসাইটি ফৃম্যাসন। সেই জ্ঞান ভুল কারো হাতে পড়লে এ পৃথিবীর অপরিমেয় ক্ষতি হয়ে যাবে।
এক অশুভ শক্তি সিম্বলজিস্ট রবার্ট ল্যাংডনকে ফাঁদে ফেলে নিয়ে আসে ওয়াশিংটন ডিসি’তে। সিম্বোলিস্ট রবার্ট ল্যাংডন অপ্রত্যাশিতভাবে ক্যাপিট্যাল বিল্ডিং এ একটি সান্ধ্য বক্তৃতা দিতে আমন্ত্রিত হয়| সে পৌঁছানোর কিছু সময় পরেই দিনটি উদ্ভট দিকে মোড় নেয়। শৈল্পিকভাবে অঙ্কিত পাঁচটি সিম্বলযুক্ত একটি বস্তু ক্যাপিট্যাল বিল্ডিং এ আবিস্কৃত হয়। ল্যাংডন চিহ্নটি চিনতে পারে, এটি হলো একটি প্রাচীন গুপ্তসংঘের আহ্বান এর প্রতীক।
ল্যাংডন এর কাছের একজন বন্ধু পিটার সলোমন- যিনি কিনা বিশিষ্ট ম্যাসন সদস্য এবং মানবমিত্র গুপ্তসংঘটির দ্বারা কিডন্যাপ হন।
ল্যাংডন বুঝতে পারে যে বন্ধুকে বাঁচাতে হলে তাকে সেই রহস্যময় প্রতীকটি কি নির্দেশ করছে তার সমাধান বের করে পথ বের করতে হবে। ল্যাংডনকে নিমিষেই গুপ্ত ম্যাসনিক রহস্য, লুক্কায়িত কাহিনী এবং অভূতপূর্ব স্থানসমুহে নিমগ্ন হতে হয়- যা তাকে টেনে নিয়ে যায় একটি ধারণাতীত সত্যের কাছে।
এ বইটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন ওমর ফারুক এবং মনোজিৎকুমার দাস।
এই উপন্যাস থেকে মুভি বানানোর নির্মাণকাজ চলছে।
তথ্য ও ছবি:
* কাহিণীসুত্র লিখার সময় বাংলা অনুবাদগুলোর সাহায্য নেয়া হয়েছে
* অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, গুগল, উইকিপিডিয়া ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।