কয়েক মাস পুর্বে প্রবীন সাংবাদিক এবিএম মুসাকে নিয়ে লিখেছিলাম, কিন্তু সম্প্রতি তিনি আবার আলোচনায় এসেছেন তার সাম্প্রতিক একটি মন্তব্যের কারনে। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রির বক্তব্যের উত্তর দিতে গিয়ে তার নিজের কিছু বক্তব্য তুলে ধরেছেন.
সেখানে তিনি বলেছেন ,তার টিভি লাইসেন্ষ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেনদরারের কথা, আর এক মন্ত্রীর বাসায় বসার কথা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি সফল হননি।
অবস্থাদৃস্টে মনে হয় তিনি কিছুটা নাখোশ হয়েছেন।
একটা বিষয়ে সবাই আমার সাথে একমত হবেন যে,এটা এখন অনেকটাই পরিস্কার, যে দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার যে প্রত্যাশা থেকে মানুষ বর্তমান সরকারকে ভোট দিয়েছিল সেটা তারা করতে পারছেনা, উল্টো নিজেরাই দিনে দিনে নতুন নতুন কায়দায় দুর্নীতিতে জড়িয়ে পরছে।
শেয়ার বাজার থেকে শুরু করে রেল কেলেংকারি, হলমার্ক, পদ্মা সেতু এসবের খন্ডিত চিত্রমাত্র।
সুতারং সরকারের দুর্নীতিবাজদের চোর বলার বিষয়ে এবি এম মুসার আহ্বান অমুলুক নয়। বরং বর্তমান বাস্তবতার সাথে সংগতিপুর্ন।
কিন্তু আমার সন্দেহ ,সত্যি সত্যি যদি মুসা সাহেব টিভি লাইসেন্স পেয়ে যেতেন তবে কি তিনি এভাবে সমালোচনা করতেন?
তারা যে স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যাবহারের কথা বলেন, যদি তাকে লাইসেন্স দেয়া হত তবে সেটা কি স্বজনপ্রীতি , ক্ষমতার অপব্যাবহার হত না?
টিভি লাইসেন্স পাওয়ার জন্য মন্ত্রীর বাসায় তদবির করা কতটা ন্যায় সংগত?
যে সরকারের সমলোচনা করছেন, সেই সরকারের সাথে বিদেশ সফরে যাওয়া, বিভিন্ন সুবিধা চাওয়া কতটা নীতি সংগত?
নিজে আবেদন করে না পেয়ে অন্য যারা পেয়েছে তাদের বিষয়ে প্রশ্ন তোলা কতটা যুক্তি সংগত? কারন তিনি যে প্রক্রিয়ায় চেয়ে ব্যার্থ হয়েছেন অন্যরা ঠিক সেই একই পন্থায়(তদবির করে) সফল হয়েছেন।
বিষয়টি খুব সাধারন মনে হলেও, এই ভদ্রলোক কে আমি একটু ভিন্নভাবে খেয়াল করছি বেশ কিছুদিন থেকে।
২০০৪/২০০৫ সালের দিকে তিনি যখন যুগান্তর পত্রিকার সম্পাদক তখন দেখতাম উনি ওই পত্রিকার বিভিন্ন জেলা অফিস সফর করছেন আর সুন্দরী মেয়েরা উনাকে ফুল ছিটাচ্ছে, সংবর্ধনা দিচ্ছে ইত্যাদি, সেগুলা আবার ফলাও করে ছাপা হত ওই পত্রিকার পাতা ভরে। তখনি আমার মনে হত ভদ্রলোক সম্পাদক হয়ে পত্রিকার কাভারেজ ব্যাবহার করছেন নিজের জন্য পত্রিকা কেনে কি মানুষ এসব দেখার জন্য ?
যা্ই হোক যুগান্তরের পর উনি আর কোন পত্রিকায় ছিলেন সেটা জানিনা। তবে উনাকে আবার হঠাত দেখা যায় বিগত তত্বত্তাবাধয়ক সরকারের সময় জেনরেল মঈনের পাশে। ২০০৭ সালের মে মাসে সে সময়ের এক সাংবাদিক মতবিনিময় অনুস্ঠানে তিনি সন্চালকের ভুমিকায় ছিলেন। এরপর প্রায় পুরোটা সময় তিনি সহ আমাদের সময়ের নাইমুল ইসলাম খান কে দেখতাম ,জেনারেল মঈনকে মাহাথির বানানোর প্র্চেষ্টা ।
এমনকি জেনারেল মঈনকে বলতে শুনেছিলাম এবিএম মুসা নাকি জাতীয় মুরুব্বি (!?!!)।
যাই এরপর তিনি সহ অন্য সাংবাদিকরা ২০০৮ এর মাঝামাঝি দেখলাম আস্তে আস্তে ভোল পাল্টানো শুরু করলেন এবং ২০০৮ এর শেষ নাগাদ উনারা পুরাপুরি গনতান্ত্রিক হয়ে গেলেন। এরপর নির্বাচনের পর কিছুদিন মুসা সাহেবকে দেখলাম 'বংগবন্ধু' 'বংগবন্ধু' করতে। হঠাত ২০১০ সালের মাঝামাঝি দেখলাম উনি একটু একটু সুর বদলাচ্ছেন । এরপর একদিন বলতে শুনলাম 'বাতাসে পচাত্তুরের গন্ধ পাচ্ছি' ভাবলাম ঘটনা কি।
ভদ্রলোক হটাত এত কঠিন কথা বলা শুরু করলেন কেনো ? পরে শুনলাম উনি একটা টিভি চ্যানেলের আবেদন করেছিলেন, কিন্তু পাননি।
একইভাবে আমাদের সময়ের নাইমুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ প্রতিদিনের ণঈম নিজাম , পীর হাবিবুর রহমান ত্বত্তাবাধয়ক সরকারের সময় শেখ হাসিনাকে হাওরের জোস্না দেখিয়ে, আবার ২০০৯ সালে পুরাপুরি তার গুনমুগ্ধ ভক্ত হিসাবে বিভিন্ন টকশো/লেখা উপহার দিয়েছেন। ঠিক তাদেরকেই আবার টিভি চ্যানেল না পাওয়ার আক্ষেপে কঠিন সমালোচনা করতে। ণঈম নিজাম কে প্রায়ই লিখতে দেখি ' বিএনপি বলতে পারে তাদের টিভি চ্যানেল আছে, কিন্তু আওয়ামী লীগ এতগুলো লাইসেন্স দিল সব বিক্রি হয়ে গেল, দেশে আওয়ামী লীগের কনো টিভি চ্যানেল থাকল না ??!!?? আমি অবাক হয়ে চিন্তা করলাম একজন সাংবাদিক কিভাবে দলীয় টিভি চ্যানেলের কথা বলে। পরে শুনলাম ভদ্রলোক নিজে নাকি একটা চ্যনেলের জন্য আবেদন করে পায়নি।
মনেমনে ভাবলাম সরকার উনাকে একটা লাইসেন্স দিলে বোধহয় দেশে অন্তত একটা আওয়ামী টিভি চ্যানেল থাকতো।
ইদানিং কিছু সাংবাদিকের কলাম লিখা পরলে মনে হয় উনারা সংবাদ/ঘটনা বিশ্লেষনের চেয়ে নিজেদের ব্যাক্তিগত বর্ননা, কার কোথায় চলাফেরা, কাদের সাথে উঠা বসা ইত্যাদি বর্ননায় ব্যাস্ত বেশি। এদিক দিয়ে ণঈম ণিজাম,পীর হাবিবুর রহমান ও এবিএম মুসা এগিয়ে। ইদানিং কাদের সিদ্দীকিকে দেখি বাংলাদেশ প্রতিদিনে লিখে, কিযে লিখে তা আল্লাহ মালুম ।
উনি শুরু করেন সাম্প্রতিক বাংলাদেশ নিয়া এরপর চলে যান ৭১ উনি কি করতেন, তারপর ভারত, পাকিস্তান ঘুরে কোথায় গিয়ে শেষ করেন উনি নিজে ও বোধহয় বুঝেন না।
একদিন দেখলাম ভারতের কলকাতা,হওড়া ট্রেনের সময়সুচি লিখছে!!
যদি ও এটা তেমন ব্যাপার না , কিন্তু আমার কাছে সন্ধেহ হয় এইসব ণঈম ণিজাম,পীর হাবিবুর রহমান ,নাইমুল ইসলাম খান ও এবিএম মুসারা সময়ে সময়ে বদলায়; সেটাকি ন্যায়ের জন্য, দেশের জন্য ?নাকি নিজেদের স্বার্থ স্বিদ্ধির জন্য। আমাদের দেশে শওকত মাহমুদ , ইকবাল সোবাহান, আতিকুল্লা খান মাসুদ,মোজ্জাম্মেল বাবু, মাহামুদুর রহমানের মতো দলীয় সাংবাদিকদের আমরা চিনি এবং এদের ব্যাপারে আমরা সচেতন। কিন্তু সুশীলের ভান ধরা এসব গিরিগিটি সাংবাদিকরা দেশের জন্য বেশি ভয়ানক। তাই এদের বিষয়ে সচেতন হওয়া খুব জরুরী। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।