আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্লগে বাংলা সিনেমা রিভিউ : সস্তা জনপ্রিয়তার সিড়ি নাকি দেশী সিনেমা ধ্বংসের নীলনক্সা

ব্লগের অন্যতম জনপ্রিয় বিষয় "মুভি রিভিউ"। আমি নিজে অপেক্ষায় থাকি গুণী কিছু ব্লগারের মুভি রিভিউ পড়ার জন্য,শুধু আমি না এমন প্রচুর আমার মত সাধারণ ব্লগার মুভি দেখার বিষয়ে মুভি রিভিউ পড়ে মুভি দেখার সিদ্ধান্ত নেয়। বলা বাহুল্য সেগুলো অবশ্যই হলিউড বা অন্য বিদেশি মুভি। কাদের রিভিউ পড়ার জন্য অপেক্ষা করি সেসব গুণী ব্লগারের নাম নিলামনা কারন কয়েকজন জনপ্রিয় ব্লগারদের নাম ধরে তাদের প্রিয় ব্লগার এবং ব্লগিয় সম্পর্ক মধুর শব্দটি ব্যবহার করায় সেইসব জনপ্রিয় ব্লগারদের রিপোর্টে আমার পোস্ট ডিলিটও হইছিল আর আমি হিছিলাম জেনারেল। যাই হোক আসি মুভি রিভিউ বিষয়ে।

যেহেতু মুভি রিভিউ জনপ্রিয় বিষয় ব্লগে,আমরা দুই ধরণের মুভি রিভিউ দেখি ব্লগে। প্রথম হল দেশী সিনেমা আর অন্যটা হলিউড এবং অন্য যে কোন দেশের মুভি। এখানে লক্ষণীয় দেশী চলচিত্রকে আমরা সম্বোধন করি বাংলা চলচিত্র বা সিনেমা হিসেবে আর বিদেশীটা হল মুভি। হলিউড বা বিদেশী মুভি রিভিউগুলি পড়লে দেখা যায় সেখানে মুভির বিভিন্ন শ্রেণীবিন্যাস পাওয়া যায়,যেমন ত্রিলার,হরর,এ্যাকশন,প্রেম,বন্ধুত্ব প্রভৃতি। অধিকাংশ রিভিউ পড়লেই মনের ভিতর আনচান শুরু হয় মুভিটি দেখার জন্য।

হলিউড বা বিদেশী মুভির রিভিউ যারা লেখেন তারা মোটামুটি ধারাবাহিক ভাবে আলোচিত সব মুভির রিভিউ লিখে যান তাদের নিরেপক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে। তাতে দেখা যায় রিভিউয়ের সাথে আম জনতার দৃষ্টিকোণের পার্থক্য হয় কম কারণ অধিকাংশ মুভি প্রিয় মানুষ বিদেশী আলোচিত ছবি গুলান দেখে ফেলে মুভি রিলিজ হইলেই হোক সেটা ডিভিডি বা ডাউনলোডেড। এই বিদেশী ছবিগুলানের মান প্রায়ই ভাল রকমের। তাদের পরিচালকদের মুভি তৈরির অর্থ নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘোরা লাগে কম,আছে আধুনিক যন্ত্রপাতি,এডিটিং এ ব্যবহার হয় আধুনিক প্রযুক্তি,যৌনতার ব্যবহার হয় শৈল্পিক। এরকম হাজারও সুবিধা যোগ করে একটা মুভি হাজির হয় মুভিপ্রেমিদের সামনে।

সারা দুনিয়ার মুভি পাগল মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে ছবি দেখতে। এবার আসি আমাদের দেশের বাংলা চলচিত্র বা সিনেমা নিয়ে। আমাদের দেশের চলচিত্র বা সিনেমার একটা যেমন স্বর্ণালী অধ্যায় আছে ঠিক তেমনি আছে একটা কুৎসিত রূপ। সাদাকালো সিনেমার দিনগুলার পুরাটাকেই মোটামুটি বাংলা সিনেমার জয়জয়কার সময় হিসাবে বলা যায়। সে সময় সিনেমা শুধু বিনোদন ছিলনা ছিল সমাজের চালচিত্র।

আর তাই সামাজিক সিনেমার সাথে সাথে আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম বা আমাদের স্বাধীনতার জন্য যে আকুতি ছিল তাও খুজে পাওয়া যায় আমাদের স্বাধীনতার আগে ও স্বাধীনতার পরের কিছু বছরের সিনেমায়। তখন সিনেমা ছিল এ দেশের মানুষের বিনোদনের অন্যতম প্রধান উপাদান। পরিবারের সবাই মিলে সিনেমা দেখতে সিনেমা হলে যাওয়া ছিল একটা উৎসবের মত। আমার নিজেরও মনে পড়ে আব্বা-আম্মার হাত ধরে খুলনার শঙ্খ,সোসাইটি,পিকচার প্যালেস বা আরও কিছু সিনেমা হলে গেছি প্রচুর সময়। সিনেমার বুঝি না কিছুই কিন্তু বিশাল পর্দায় মানুষ দেখার অনুভূতিই ছিল আলাদা।

তারপর যখন বাসায় টেলিভিশন আসল,বিটিভিতে যেদিন সিনেমা দেখাবে দেখতাম সবাই সবার কাজ দ্রুত শেষ করে টিভির সামনে বসত। বাংলা সিনেমার সুসময় শেষ হয়ে আসতে থাকে ডিশ নামক বস্তু যখন ঘরে ঘরে তার থাবা বিস্তার করতে থাকে। সিনেমার হলমুখী মানুষ স্থায়ী হয়ে যেতে লাগল ডিশ লাইন যুক্ত টিভির সামনে। ঠিক তখনই কিছু বিকৃত মানসিকতার মানুষ হাজির হল মুনমুন,ময়ূরী,পলি,মলি,হলী প্রভৃতি নায়িকা সমৃদ্ধ সিনেমা নিয়ে। যে সিনেমা শুধু নারী শরীর আর কাটপিস স্থুল যৌনদৃশ্য নিয়েই তৈরি।

নতুন করে হইচই পড়ল সিনেমা নিয়ে। যে সিনেমায় রগরগে বিষয় বেশী,সে সিনেমার লাভ তত। আর এই সব সিনেমার দর্শক কারা?সব বিকৃত মানসিকতার মানুষেরা। চারিদিকে হায় হায় রব উঠল বাংলা সিনেমা নিয়ে। বাংলা সিনেমার সেই ক্রান্তি লগ্নে এগিয়ে আসলেন সদ্য প্রয়াত হুমায়ুন আহমেদ,মুস্তফা সরোয়ার ফারুকি সহ কিছু ব্যাতিক্রম ধারার পরিচালকেরা।

তাদের তৈরি সিনেমা আবারও হলমুখি করল পরিবারের সবাইকে একসাথে। সপরিবারে দেখার মত ছবি আর আইনের সঠিক ব্যবহারে গুটিয়ে গেল সেইসব শরীর সর্বশ্ব নায়িকা ও তাদের পরিচালকেরা। সবকিছু মিলিয়ে বাংলা সিনেমা একটা ঘুরে দাঁড়ানোর দিকে হাঁটছে। কিন্তু মজার বিষয় হল সমাজের বর্তমান দর্পণ হিসেবে পরিচিত ব্লগে দেখা গেল কিছু সুশীল বলে খ্যাত ব্লগারের বাংলা সিনেমা নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ। আগ্রহ কিন্তু সব সিনেমা নিয়ে নয় কিছু সিনেমা নিয়ে যেগুলি দেখতে সিনেমা হলে যাবার আগ্রহ সৃষ্টি করেছিল আমজনতার মনে।

আমজনতার কাছে আগ্রহ জাগানিয় সিনেমা মুক্তি পাইলেই সুশীলরা দৌড়ায় সবার আগে সিনেমা হলে হাজির হয়,সিনেমা শেষ হইছে কি হয়নি ,এক দৌড়ে ব্লগে হাজির। সদ্য দেখা বাংলা সিনেমায় কি কি ভুল হইল সেটা নিয়ে বাংলা সিনেমা রিভিউ না লিখলে তাদের সুশিলতার ধুতি টান পড়বে এমন ভাব নিয়ে নেগেটিভ একখান রিভিউ লিখেই তবে তৃপ্তির ঢেঁকুর। আমার প্রশ্ন কেন এই রিভিউ?যারা বিদেশী কোন মুভির খারাপ কিছু দেখতে পায়না বা বিদেশী ছবির রিভিউ লেখার তাগিদ নাই,তারাই কেন বাংলা সিনেমার রিভিউ নিয়ে এত দ্রুত হাজির?আর আমরা হুজুগে জাতি সেই সুশীল ব্লগারের রিভিউ পড়েই সিনেমাটা নিয়ে নেগেটিভ চিন্তা করেই সিনেমাটাকে বাতিলের খাতায় ফেলে দিচ্ছি। আমরা কি একবারও ভেবে দেখেছিঃ *বাংলা সিনেমার নেগেটিভ রিভিউ কি কেউ নিজের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর চাবিকাঠি হিসেবে ব্যবহার করছে কিনা?যারা রিভিউ পড়ছে তারাও সুশীলতার সাথে তাল মেলাচ্ছে সেটা মজা করে হোক বা সিরিয়াসলি হোক। কিন্তু ভেবে কি দেখছি তাতে বংলা সিনেমা হলে যেয়ে দেখার যে নতুন ধারা সৃষ্টি হয়েছিল তাতে বাধা পড়ছে কিনা?? *পরিবারের সবাইকে নিয়ে দেখা যায় এমন ছবি তৈরির বিপক্ষে কেউ জেনে বুঝে অবস্থান নিচ্ছে নাতো?কেউ বা কোন মহল কি সুস্থ ধারার সিনেমার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আবার সেই অশ্লীল যুগে ফিরে যেতে চাইছে নাতো?কারণ এখন নাকি নায়িকারা শুধু রান দেখায় পুরা শরীর দেখায় না * ব্লগে বাংলা সিনেমার নেগেটিভ রিভিউ পড়ে আমরা কি বিদেশী মুভি দেখার প্রতি আগ্রহী হচ্ছিনা?বাংলা সিনেমা মানেই বাজে কিছু, এরকম ধারনা দেবার হীন প্রচেষ্টা কোন মহল করছে নাতো? *মা,মাটি,দেশ।

কথিত সুশিলদের মুখে ফেনা উঠে যায় কথাটা প্রমান করার জন্য। মুখে বলব আমার দেশ যা হোকনা কেন তার জন্য জীবন বাজি আর সীমিত টাকায় প্রাচীন প্রযুক্তি নিয়ে খুঁড়িয়ে চলা এফডিসির ছবির মানকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেবার প্রাণপণ চেষ্টা কি হিপক্রেসির চরম উদাহরণ নয়?হিন্দি ছবির কৃষ আকাশ থেকে মাটিতে নামলে ইন্ডিয়ান পরিচালকের পাছায় চুমু খাব আর বাংলা সিনেমায় কেউ এমন করলে তা নিয়ে হাস্যরসের কাহিনী বানাব,এটা কি দেশপ্রেম বুলি কপচানো সুশীলদের আসল চেহারা প্রকাশ পায়না?এখন অনেকে বলবে ঐটা তো ইন্ডিয়ারে নকল করছে,আমি বলি ইন্ডিয়ান ভুরি ভুরি হিট মুভি আছে হলিউডের নকল করা,কই সেসব নিয়ে তো বাংলা সিনেমা নিয়ে রিভিউ কারিরা কোন কিছু লেখেনা। *সমালোচনা যদি করতে হয় সেটা করতে হবে গঠন মূলক,লাফ দিয়ে সিনেমা দেখতে যাব আর ব্লগে সস্তা নেগেটিভ রিভিউ লিখে নিজের পাছা চাপড়িয়ে মুই কই হনু টাইপ ভাব নিব,এইটা কি সুস্থ মানসিকতার বিষয়?কই সেইসব রিভিউকারিরা এফডিসির আধুনিকায়নের জন্য তো কোথাও এক লাইন লেখেনা,লেখেনা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সিনেমাকে নতুন ধারায় নিয়ে যাবার জন্য। কারণ কি?কারণ হইল ঐ রকম পোস্টে পাছা থাপ্রানি মিলবে না বা পোস্ট হিটও নাও হতে পারে। আর তাতে জনপ্রিয়তার ধুতিতে টান পড়বে।

সিক মানসিকতা আর কাকে বলে। সবশেষে বলব,আমার দেশ আমার গর্ব। আর তাই সিনেমা হোক আর অন্য কিছুই হোক প্রার্থনা করব দিন দিন যেন উন্নতির দিকেই যাক যত ষড়যন্ত্র হোকনা কেন। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২৮ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.