শেষ বারের মতো সতর্ক করছি... গ্রীষ্মের কোন এক ঝড়ের দুপুর। কোন পূর্ববাস না দিয়েই ঝোড় হওয়া বইতে থাকে। বাতাসের ঢেউয়ে ঝড়া পাতারা উড়তে থাকে। বাঁশ পাতা উড়ার দৃশ্য কোন গ্রাম্য জীবনের অপরিচিত নয়। অনেক উপরে উঠে যায়।
চিকন লম্বা বাঁশ পাতারা লাটিমের মতো ঘুড়তে ঘুড়তে উড়ে চলে। উড়ন্ত পাতাটা যদি একটি প্রাণী হতো? সেই প্রাণীটা যদি মানুষ হয়? আর সেই মানুষটা যদি আমি হই।
আমি মাঝে মাঝে নিজেকে এমন একটা উড়ন্ত বাঁশ পাতা ভাবি। হাওয়ার অসীম দাপটের মাঝে নিজেকে এমন একটি পাতা ভাবতে ভাল লাগে। বাতাসের কাছে কত অসহায় কত নিঃস্বঙ্গ।
বাতাসের সাথে আমিও ক্ষন উড়ন্ত জীবনে দেখে আসি আকাশটাকে। দেখে আসি পাখির চোখে আমার স্বদেশ ভূমি। কিন্তু খুবই অল্প সময় আমার আকাশ ভ্রমন। আমাকে খুব দ্রুতই নেমে আসতে হয় নিচে । পাতারা ফিরে আসে অভিকর্ষের টানে ।
আমিও কি বার বার ফিরে আসি কোন এক টানে? যে আমাকে টেনে নিয়ে আসে অসীম থেকে ।
নিচে নামতে নামতে ভাবি কোথায় আমার গন্তব্য? আমি ফিরে যেতে পারি আপনি মাটির বুকে। অথবা আটকে যেতে পারি কোন মাকড়শার জালে। থেমে যেতে পারে আমার পথ কোন এক টিনের ঘরের চালে।
আমার যখন যৌবন ছিল।
আমি যখন চির সবুজ ছিলাম । বাঁশ আমাকে ধরে রেখেছিল বাহু বন্ধনে। আমি তো ছিলাম তারই। হয়তো সেও ছিল আমার। কিন্তু এক সময় তার বাহু শিথিল করে আমাকে উড়িয়ে দিল আকাশে।
ভাসিয়ে দিল বাতাসে। আমি উড়ে চল্লাম, আমি ভেসে চল্লাম। মাকেও সন্তান ত্যাগ করতে হয় কখনো কখনো। আমার এই দেশ মাতৃকাও তার বীর সন্তানদের উৎসর্গ দিয়েছিল একাত্তুরে। বৃহত্তর স্বার্থের কাছে ক্ষুদ্রতার পরাজয় হয়।
আমিও বাঁশকে ছেড়ে চলে গেলাম। সেও তার স্বার্থেই আমাকে ত্যাগ করলো। পাতারা ঝড়ে যায়। কিন্তু বাঁশ থাকে, বাঁশ বন থাকে। হয়তো বাঁশ বনও একদিন হারাবে কারো জন্য।
হয়তো মানুষের জন্য। কয়েকটা পাতা হারালে বাঁশ ঝারের কোন শুন্যতা তৈরি হয়না। পৃথিবী থেকে কয়েক জন মানুষ হারালে কি পৃথিবীর কোন শুন্যতা তৈরি হয়? হয়তো হয়না।
ভাবতে ভাবতে আমি নেমে আসছি নিচে। অনেক নিচে।
যদি পুকুরের জলে পরি তবে ভাসতে হবে নৌকার মতো। থামতে হবে পদ্ধপতার ঘাটে। মাছেরা খেলবে আমায় নিয়ে। কিন্তু যদি উনুনে পরি? হোক সে গৃহীনির শান্ত উনুন। তবু পুড়তে হবে।
জ্বলতে হবে। আমি কি জলেই পড়বো নাকি উনুনে? আমি কি ভাসবোই নাকি জ্বলবো?আমি কিছুই জানি না।
বাতাসের জোরালো ঝাপটা আমার ভাল লাগে না। এত বেশি ভনভন করে ঘুড়তে আমার ভাল লাগে না। এভাবে অনিশ্চিত যাত্রা আমার ভাল লাগে না।
তবু সব যাত্রার সমষ্টি গুলোই অনিশ্চিত। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।