আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সব দলকে নির্বাচনে চায় যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা এ কথা বলেন। তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র সরকার গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সমর্থন করে। একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন কীভাবে হবে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতারা ও জনগণ সেই প্রক্রিয়া নির্ধারণ করবেন- যাতে দেশে একটি অবাধ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়। সব দলই যাতে সেই নির্বাচন মেনে নেয়।

” গত জুন মাসে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হওয়ার পর থেকে বিএনপি বলে আসছে এ ব্যবস্থা পুনর্বহাল না হলে তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে না। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ স্টিফেন র‌্যাপের চলমান কার্যক্রমকে বুধবার ‘ইতিবাচক’ বলে অভিহিত করেন মজিনা। রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর খালেদার সঙ্গে এটি মজিনার প্রথম সাক্ষাৎ। গত ২৪ নভেম্বর নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে তিনি রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের কাছে পরিচয়পত্র পেশ করেন। মজিনা ১৯৯৮-২০০১ সালে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে কাউন্সিলর হিসেবে কাজ করেন।

এক ঘণ্টা ১০ মিনিট স্থায়ী এই সাক্ষাতে নতুন রাষ্ট্রদূত খালেদা জিয়ার সঙ্গে দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পসহ ব্যবসা বানিজ্যের প্রসার, বিনিয়োগবৃদ্ধি, গণতন্ত্র শক্তিশালী করার বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। সাক্ষাতের সময়ে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান ও সহসভাপতি শমসের মবিন চৌধুরী প্রমৃখ উপস্থিত ছিলেন। সাক্ষাতের পর মজিনা আলোচনার বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন। ‘নিবিড় সম্পর্ক’ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচিত উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, “কেন গুরুত্বপূর্ণ তা আমি বিরোধীদলীয় নেতার কাছে ব্যাখ্যা করেছি। কারণ বাংলাদেশ একটি উদার, গণতান্ত্রিক বৃহৎ জনসংখ্যা অধ্যুষিত মুসলিম দেশ।

” তিনি বলেন, “ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে এশিয়ার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব রয়েছে। এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে নিবিড় সর্ম্পক রাখতে চায়। ” এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক। জাতীয় প্রবৃদ্ধি গত অর্থ বছরে ৬ শতাংশ ছিলো। যা আগামীতে ৭ থেকে ৮ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আমি আশা করি।

” জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ১০ হাজারের বেশি সদস্য বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় ভূমিকা রাখছে বলেও উল্লেখ করেন মজিনা। দারিদ্র্য বিমোচনেও বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। যুদ্ধাপরাধ বিচার যুদ্ধাপরাধ বিচার বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত মজিনা বলেন, “এ বিষয়ে স্টিফেন র‌্যাপ কাজ করছেন। তিনি দুই বার বাংলাদেশে এসেছেন। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারক, সরকার পক্ষ ও আসামি পক্ষের কৌশলীদের সঙ্গে ব্যাপক আলোচনা করেছেন।

“আমি মনে করি- তার ভূমিকা পজিটিভ,” বলেন রাষ্ট্রদূত। যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক অ্যাম্বাসডর অ্যাট লার্জ স্টিফেন র‌্যাপ গত ২৮ নভেম্বর আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের সঙ্গে দেখা করেন। সেসময় তিনি যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ও বিচারের মুখোমুখি ব্যক্তিরা যেন যথাযথ আইনি সহায়তা পান সেজন্য আইনমন্ত্রীসহ সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধ বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে ‘দলীয়’ আখ্যা দিয়ে এ বিচারের বিরোধিতা করে আসছে বিএনপি। ইতিমধ্যে এ নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবকে লিখিত অভিযোগও জানিয়েছে দলটি।

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিএনপি ও তার শরিক জামায়াতে ইসলামীর ছয় শীর্ষ নেতা আটক রয়েছেন। এদের মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়েছে। এছাড়া বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত জিয়াউর রহমানের আমলের এক মন্ত্রীও একই অভিযোগে আটক হলেও শর্তসাপেক্ষে জামিনে রয়েছেন। ‘বিএনপি সম্পর্ক অব্যাহত রাখবে’ বিএনপি চেয়ারপার্সনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের বুধবারের সাক্ষাৎ সৌজন্যমূলক ছিলো বলে জানান বিএনপির সহসভাপতি শমসের মবিন চৌধুরী। তিনি বলেন, “আগে কাউন্সিলর হিসেবে বাংলাদেশে কাজ করেছেন মজিনা।

আবার বাংলাদেশে ফিরে আসতে পারায় রাষ্ট্রদূত আনন্দিত। ” খালেদা জিয়ার পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা শমসের মবিন বলেন, “বিরোধী দলীয় নেতা রাষ্ট্রদূতকে বলেছেন, ‘অতীতে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলো ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসলে তা অব্যাহত রাখবে’। ” খালেদা বিরোধী দল হিসেবে মজিনাকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন বলে জানান তিনি। শমসের মবিন বলেন, “বিরোধীদলীয় নেতা যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাকসহ সব পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের জন্য রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে সে দেশের সরকারের কাছে অনুরোধও জানিয়েছেন। ” সাক্ষাতের সময় খালেদার উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, শমসের মবিন চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।