আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিদারুন কষ্টে দিনাতিপাত করছে মাহবুবের পরিবার...

কাছের মানুষ বলে পরিচিত অনেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাঁচানোর চেষ্টা করেননি। কিন্তু একজন দেহরক্ষী নিজের জীবন দিয়ে বাঁচিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট যখন গ্রেনেড হামলা হয়, তখন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে বাঁচিয়েছেন তারই দেহরক্ষী মাহবুব রশিদ। যখন গ্রেনেডের বিকট শব্দ, ভয়ে দিগ্বিদিক ছুটছে সবাই, ছোটেন শেখ হাসিনাও, তার বুলেট প্রুফ গাড়ির দিকে। কিন্তু ধেয়ে আসে ঘাতকের নির্মম বুলেট।

মাহবুব বুঝতে পারলেন, সেই বুলেট আসছে তার প্রাণপ্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার দিকে। তিনি বসে থাকলেন না। বুক পেতে দিলেন। নিজের জীবন দিয়ে বাঁচালেন হাসিনাকে। তার ছিল না কোনো ইউনিফরম।

ছিল না অস্ত্র। তবুও তিনি বাঁচিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে। সেই মাহবুবের কথা ভুলে গেছে সবাই। জানা যায়, মাহবুবের মা হাসিনা খাতুন অর্থের অভাবে বয়স্ক ভাতা পাওয়ার জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছিলেন। চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডবোকেট আকরাম হোসেন দুলাল কথাও দিয়েছিলেন বয়ষ্ক ভাতার কার্ড করে দেয়ার।

কিন্তু কথা রাখেননি চেয়ারম্যান। হাসিনা খাতুনের বয়স ৭০ পার হলেও এ কার্ড তার জোটেনি। মাহবুবের পিতা হারম্নন অর রশিদ মোলস্না ৭১ বছর বয়সে আর অন্যের জমিতে কাজ করতে পারেন না। নিজের যেটুকু আছে তা বর্গা দিয়ে ফসল ঘরে তোলারও সুযোগ নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট্র প্রতি মাসে তাকে এক হাজার টাকা দেয়।

এ টাকাও ডাক বিভাগের গাফিলতির কারণে নির্ধারিত সময়ে পান না তিনি। হারম্নন অর রশিদ মোলস্না প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন মাহবুবের দুই বোনকে বিয়ে দিতে পারছেন না। প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেছিলেন, ‘‘ছেলে নিয়ে আসেন চাকরি দিয়ে দেবো। ’’ কন্যার জন্য ছেলে ঠিক করে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে যমুনায় গেলে তাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। আগে তাকে ঢুকতে দেয়া হতো বলে বর পক্ষকে জানান তিনি।

নিরম্নপায় হয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফের সঙ্গে দেখা করলে এক মেয়ে শিরিনের বর ঠিক হলে তিনি চাকরি দেয়ার প্রতিশ্রতি দেন। তার এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় এক যুবকের সঙ্গে শিরিনের কাবিন করা হয়। কিন্তু হানিফ বরকে সরকারি চাকরি না দেয়ায় শিরিনকে বউ করে তুলে নিতে অস্বীকৃতি জানায় শ্বশুরবাড়ির জন্য লোকজন। বরং উল্টো বিয়ে বিচ্ছেদের চাপ দিচেছ বলে মাহবুবের পরিবারের জানিয়েছেন। মাহবুবের বোন আবিদা সুলতানা ও শিরিন সুলতানা শুধুমাত্র টাকার জন্য এইচএসসি পরীক্ষা দিতে পারেননি বলে কুষ্টিয়ার স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

শুধু তাই নয়, আবিদা সুলতানা গার্মেন্টসে চাকরির আশায় এক ভাইকে নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন। এখানেও ভালো চাকরি না পাওয়ায় আবার ফিরে যান কুষ্টিয়ার খোকসা থানার ফুলবাড়িয়ায় গ্রামের বাড়িতে। মাহবুবের স্ত্রী শামীমা আখতার আসমা কুষ্টিয়া শহরে বাসা ভাড়া করে থাকেন। দুই ছেলের মধ্যে আশিক কলেজে আর রবিন হাইস্কুলে পড়ে। প্রধানমন্ত্রীর ট্রাস্ট থেকে তিন হাজার টাকাসহ পাঁচ হাজার আর স্বামীর পেনশনের ১৮০০ টাকা দিয়ে সংসার চালাচ্ছেন।

এ টাকা দিয়েই দুই ছেলের পড়া-লেখা, বাসা ভাড়া, খাওয়া-পড়া চালাচ্ছেন মাহবুবের স্ত্রী। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট এককালীন দু’লাখ টাকা অনুদান দিয়েছিল আসমাকে। দুই ছেলের পড়ালেখার জন্য মাসে দুই হাজার টাকা বৃত্তি দিচ্ছে। এ টাকা যেন তার কাছে অথৈ সাগরে কলাগাছের ভেলা। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মাহবুবের স্ত্রী স্বামী হারানো কষ্ট বুকে ধরে আরো কিছুদিন বেঁচে থাকতে চান গ্রেনেড হামলাকারীদের শাস্তি দেখার আশায়।

তার দৃঢ় বিশ্বাস বঙ্গবন্ধু কন্যা এ হামলাকারীদের বিচার করবেন। এদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ রোববার মাহবুব রশিদের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা ও মিলাদ মাহফিলের মাধ্যমে পালন করে। তবে ওই অনুষ্ঠানে তার পরিবারের কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। মৃত্যুর সময় অনেকে অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন তাদের খোঁজখবর নেই না কেউ। বছরের এই দিনে মিলাদ-মাহফিলে কেউ একটু সহযোগিতাও করে না।

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামের হারুন-উর রশিদ মোল্ল্লার পুত্র মাহবুব রশীদ। তিন ছেলে আর পাঁচ মেয়ের মধ্যে মাহবুব ছিল সবার বড়। কৃষিকাজ করে তার সংসার চলতো। এত বড় সংসারে ভরণপোষণ জোগানো তার জন্য ছিল বেশ কষ্টসাধ্য। গ্রামের স্কুল থেকে এসএসসি পাস করার পর পিতার সাথে সংসারের হাল ধরেন মাহবুব।

একদিন খোকসায় সেনাবাহিনীতে লোক নেয়ার আহ্বান করা হয়। মাহবুব গিয়ে লাইনে দাঁড়ান। তারপর টাকা ধার করে বহু কষ্টে ঢাকায় গিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। এরপর থেকে তার যাত্রা শুরু হয়। চাকরি করার কিছুদিন পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেহরক্ষী হওয়ার প্রস্তাব পান তিনি।

এরপর সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে দিয়ে যোগ দেয় সেখানে। যেখানেই নেত্রীর সভা-সেমিনার সেখানেই মাহবুব। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিকেল ৫টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ আহূত জনসভার দিন মাহবুবের ছুটি ছিল। তারপরও নেত্রী জনসভায় যোগ দিতে ঢাকার বাসা থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে হাজির হন সেখানে। click here ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.