সেদিন আমরা ব্যর্থ হয়েছি। আমরাই অপরাধী, সেদিন বিবেকের পক্ষে দাঁড়াতে পারিনি। দাঁড়াতে পারলে হয়তো আবু বকরকে আজ হারাতাম না। এই মেধাবী ছাত্রের অকাল মৃত্যুতে দেশ ও জাতি একজন সম্ভাবনাময় তরুণকে হারিয়েছে। আর যেন এরকম কোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে তবে।
গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার অডিটরিয়ামে মেধাবী শিক্ষার্থী শহীদ আবু বকর সিদ্দিকের ১ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় বক্তারা এসব কথা বললেন। আবু বকর হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্টসহ বিভিন্ন সংগঠন।
এদিকে দিনটিকে শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসবিরোধী দিবস হিসেবে পালন করেছে আমার দেশ পাঠকমেলা। এ উপলক্ষে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেটে মুক্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব সভায় দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সন্ত্রাসমুক্ত করে গণতান্ত্রিক সহাবস্থান নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এছাড়াও শিক্ষার্থীদের শতভাগ আবাসন, পরিবহন ও উন্নত খাবার সুবিধা দিতে বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রদানের দাবি জানানো হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করে ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব মধুপুর শহীদ স্মৃতি। একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয় দোয়া মাহফিলও। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। এছাড়া প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান, স্যার এফ রহমান হলের প্রভোস্ট ড. আজিজুর রহমান, প্রক্টর ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান এবং স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব মধুপুর শহীদ স্মৃতির নেতারা আলোচনায় অংশ নেন।
ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক আবু বকর সিদ্দিকের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, মেধাবী ছাত্র আবু বকরের অকাল মৃত্যুতে দেশ ও জাতি একজন সম্ভাবনাময় তরুণকে হারিয়েছে। এ ধরনের ঘটনা যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে বলেন।
প্রক্টর অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান বলেন, সেদিন আমরা ব্যর্থ হয়েছি। আমরাই অপরাধী, সেদিন বিবেকের পক্ষে দাঁড়াতে পারিনি। দাঁড়াতে পারলে হয়তো আবু বকরকে আজ হারাতাম না।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ ও পুলিশের সংঘর্ষে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মেধাবী ছাত্র আবু বকর। টানা দুদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ৩ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
পাঠকমেলার কর্মসূচি : শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসবিরোধী শহীদ আবু বকর দিবস উপলক্ষে গতকাল আমার দেশ’র সভাকক্ষে কেন্দ্রীয় পাঠকমেলার উদ্যোগে এক মুক্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শহীদ আবু বকর সিদ্দিকের বিভাগীয় সহপাঠীরা আবু বকরের স্মৃতিচারণ করেন। আবু বকরের মতো নির্দলীয় মেধাবী শিক্ষার্থীদের হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রতি তারা আহ্বান জানান।
তারা বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ পর্যন্ত ৭৩ জন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর জন্য অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদই দায়ী। তারা ক্যাম্পাসগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অবর্ণনীয় নির্যাতন থেকে রেহাই দিতে সন্ত্রাসমুক্ত গণতান্ত্রিক সহাবস্থান নিশ্চিত করার দাবি জানান। সভায় স্মৃতিচারণ করেন আবু আবু বকরের সহপাঠী জাহিদুল হাসান ও তানজিম আল আলম। উপস্থিত ছিলেন পাঠকমেলার কেন্দ্রীয় পরিচালক খোমেনী ইহসান, সহকারী পরিচালক ফয়সাল আকবর, দিদারুল ইসলাম মানিক, সামিউল ইসলাম, ইলিয়াস মোহাম্মদ, ফখরুল ইসলাম, হাসানুজ্জামান হাসান, মুজাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় : বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় দিবসটি উপলক্ষে এক মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় পাঠকমেলার সভাপতি কাজী শাহিনুর আলমের সভাপতিত্বে সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাদা দলের আহ্বায়ক প্রফেসর মু. আজহার আলী ও সাবেক প্রক্টর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় পাঠকমেলার সমন্বয়ক এরশাদুল বারী কর্নেল, সাধারণ সম্পাদক রোকনুজ্জামান, আজিবুল হক পার্থ, আবুজর গিফারী, শফিকুল হাসান প্রমুখ।
চট্টগ্রাম : ‘শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস দমনে করণীয়’ শীর্ষক মুক্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। হাসান মোহাম্মদ আরিফের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন জুনায়েদ কৌশিক চৌধুরী ও আবদুল মজিদ নাদিম, আবু ওবাইদা আরাফাত, দেলোয়ার হোসেন, হাসান মাহমুদ ও মিজানুর রহমানসহ চট্টগ্রাম মহানগর, চট্টগ্রাম কলেজ ও আইআইইউসি-এর শিক্ষার্থীরা।
সিলেট : শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস ও সহিংসতা বন্ধে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসবিরোধী দিবস উপলক্ষে সিলেটে অনুষ্ঠিত মুক্ত আলোচনায় বক্তারা এ দাবি জানান।
ডা. হোসাইন আহমদের সভাপতিত্বে এবং এমজেএইচ জামিলের পরিচালনায় সভায় অতিথি ছিলেন লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ আলী আহমদ। সিটি কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও সাবেক ছাত্রনেতা মু. আবদুর রহিম।
বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি আদিল রশীদ হুমায়ুন, ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক আলী আকবর রাজন, দফতর সম্পাদক মু. খলীলুর রহমান প্রমুখ। কোরআন তেলাওয়াত করেন পাঠকমেলার সহ-সাধারণ সম্পাদক সুলাইমান আল মাহমুদ।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2011/02/04/66571
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।