আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিক্ষাঙ্গনে হয়রানি : শিক্ষার্থীরা এখন পকেটে রাখে আ’লীগ নেতার সার্টিফিকেট

অনু পরিমাণ খবরকে নিয়ে আসব সবার গোচরে

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও ছাত্রলীগের যৌথ হয়রানিতে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ক্লাসের লেখাপড়া কিংবা আবাসিক হলের সিট নিয়ে কোনো ধরনের মতবিরোধ দেখা দিলেই তা রাজনৈতিক রূপ নিচ্ছে, বিরোধী রাজনৈতিক আদর্শের অভিযোগ দিয়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করছে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। মারধর করে তুলে দেয়া হচ্ছে পুলিশের হাতে। এতে অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীও হয়রানির শিকার হচ্ছে। এ নির্যাতন ও হয়রানি থেকে বাঁচতে অনেক সাধারণ ছাত্র এখন বহন করছে আওয়ামী লীগের ‘দলীয় পরিচয়পত্র’।

জেলা, থানা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের কাছ থেকে নেয়া ‘দলীয় পরিচয়পত্র’ নিয়ে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ক্লাসে অংশ নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীর-নগর, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, খুলনার বিএল কলেজ, বরিশালের বিএম কলেজসহ বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতি-ষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থী আওয়ামী লীগের ‘দলীয় পরিচয়পত্র’ নিয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। দলীয় পরিচয়পত্র বহনকারী শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করে। তবে বিশেষ অনুসন্ধানে দলীয় পরিচয়পত্রের একটি কপিও এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। পটুয়াখালীর ফেরদাউস-উর-রহমান বরিশাল বিএম কলেজের অনার্সের ছাত্র।

কোনো রাজনৈতিক দলে জড়িত না থাকলেও সে স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ‘দলীয় পরিচয়পত্র’ নিয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান করছে। ‘দলীয় পরিচয়পত্র’ শিরোনামে ওই পত্রে কমলাপুর ইউনিয়ন শাখা আ’লীগ সভাপতি মোঃ ইব্রাহিম খান লিখেছেন, ‘এই মর্মে দলীয় পরিচয়পত্র প্রদান করা যাইতেছে যে, জনাব মো. ফেরদাউস-উর-রহমান, পিতা-মাওঃ মো. মুস্তাফিজুর রহমান খান, মাতা-মোর্শেদা বেগম, গ্রাম-ধরান্দী, পোঃ-ধরান্দী, থানা ও জেলা-পটুয়াখালী, আমার বিশেষভাবে পরিচিত। তাহার পরিবারবর্গ এবং তিনি আওয়ামী পরিবারের সদস্য। আমি তাহার সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করি। ’ গত ২২ ফেব্রুয়ারি কমলাপুর ইউনিয়ন শাখা আওয়ামী লীগের প্যাডে এ দলীয় পরিচয়পত্র দেয়া হয়।

আর এ পরিচয়পত্র নিয়ে মোঃ ফেরদাউস-উর-রহমান বরিশাল বিএম কলেজে ক্লাসে অংশ নিচ্ছে। প্রসঙ্গত, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবির ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে এক ছাত্রলীগ কর্মী নিহত হওয়ার পর দেশব্যাপী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধরপাকড় ও হয়রানি শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে রাজশাহী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রশিবির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান চালায় পুলিশ ও র্যাব। আর এতে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে ছাত্রলীগ। কোনো শিক্ষার্থীকে অন্যমতের সন্দেহ হলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাকে আটক করে মারধর করে এবং পরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।

২ মার্চ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে এভাবে ৭ ছাত্রকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্ররা জানায়, গভীর রাতে ঘুমন্ত ছাত্রদের রুম থেকে তুলে এনে মারধর করলেও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়—‘গভীর রাতে হলের ছাদে গোপন বৈঠকের সময় তাদের আটক করা হয়’। পরে আদালতে হাজির করলে প্রথমে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয় এবং পরে অন্য আদালত তাদের জামিন দেন। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে চার ছাত্রী ছাত্রলীগ কর্মীদের হয়রানির শিকার হয়। হলের এক্সটেনশন বিল্ডিংয়ের ৫৮ নম্বর কক্ষে নতুন কোনো ছাত্রী তোলার বিরোধিতা করায় ওই রুমের সিনিয়র চার ছাত্রীর বিরুদ্ধে ‘ছাত্রী সংস্থা’র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আনে ছাত্রলীগ কর্মী জাকিয়া।

চার ছাত্রীকে হল থেকে বের করে দেয়ার দাবি জানিয়ে হল প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয় সে। অপেক্ষাকৃত সিনিয়র এই চার ছাত্রীর বিরুদ্ধে ইসলামী রাজনীতির অভিযোগ আনা হলেও এদের একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বীর। বিষয়টি নিয়ে হল প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তে উঠে আসে অভিযুক্ত চার ছাত্রী ওই রুমে অপেক্ষাকৃত সিনিয়র। ছাত্রলীগ কর্মী জাকিয়া তার কয়েকজন অনুসারীকে ওই রুমে তুলতে গেলে সিনিয়ররা বাধা দেয় এবং এ নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয়।

পাশের রুমের ছাত্রীরাও জাকিয়ার পদক্ষেপের সমালোচনা করে। আর এ পরিস্থিতিতে জাকিয়া সিনিয়র চার ছাত্রীর বিরুদ্ধে ভিন্নমতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আনে। হল সূত্র জানায়, বিষয়টি অবহিত করতে জাকিয়া বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি অধ্যাপক আআমস আরেফিন সিদ্দিকের বাসভবনেও গিয়েছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে রোকেয়া হলের প্রভোস্টেরও ডাক পড়েছিল ভিসি অফিসে। অভিযুক্ত চার ছাত্রী ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের হলে ওপর মহলে জবাবদিহিতা করতে হবে মর্মে প্রভোস্টকে শাসিয়ে দেন ভিসি।

এ বিষয়ে প্রভোস্ট প্রফেসর ড. লায়লা নূর ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘হলের আবাসিক শিক্ষকরা তদন্ত করে দেখেছেন রুমে ছাত্রী তোলাকে কেন্দ্র করে চার ছাত্রীর বিরুদ্ধে অসত্য অভিযোগ আনা হয়েছে। ’ ভিসির শাসানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভিসি মহোদয় আমার কাছে পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য নিয়েছেন। ’ তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হলেও সিনিয়র ওই চার ছাত্রী এখনও নিজেদের রুমে ফিরতে পারেনি। বর্তমানে তারা হয়রানির আতঙ্ক নিয়ে সহপাঠীদের রুমে অবস্থান করছে বলে একজন আবাসিক শিক্ষিকা জানান। এসব পরিস্থিতিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নামাজি ছাত্র ও বোরকা পরা ছাত্রীরা বেশি বেকায়দায় পড়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে ১১ ছাত্রের স্ব-স্ব এলাকার আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে সংগৃহীত ‘দলীয় পরিচয়পত্র’ বহনের তথ্য আমার দেশ-এর কাছে এসেছে। গ্রেফতার ও হয়রানি এড়াতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক ছাত্রের ‘সরকারি দলের পরিচয়পত্র’ বহনের তথ্য পাওয়া গেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি (সম্মান) চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, সে কখনও কোনো রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হয়নি। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ কর্মী হত্যাকাণ্ডের পর সে গ্রামের বাড়িতে যায়। এরপর মা-বাবা ক্যাম্পাসে ফিরতে দিতে চাচ্ছিলেন না।

পরে তার ছোট মামা বগুড়া জেলার এক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের কাছ থেকে ‘দলীয় প্রত্যয়নপত্র’ এনে দেন এবং তা নিয়ে গত কয়েকদিন আগে রাজশাহীতে ফেরে Source: Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.