আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেম-২৬

কৃষক blogsaudi@gmail.com

কিষাণীর স্মৃতি থেকে-১২ আমাদের সম্পর্কটা আমার বাসায় কিভাবে জানলো সেটা বলি...... আমার পরিবারে আমাদের সব ভাইবোনদের ব্ন্ধুদের অবাধ যাতায়াত ছিল। ছোটবেলাতেই দেখেছি আমার ভাইবোনদের সব বন্ধুরা ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে বাসায় আসতো গল্প করতো। তাই সে সুবাদে আমার সব বন্ধুবান্ধবীদের মত কৃষক ও আমাদের ঢাকার বাসায় নির্বিঘ্নে আসতো। ছুটিতে যখন আমরা বাড়ী আসতাম, ঈদের ছুটি না হলে ও ঢাকায় আসার চেষ্টা করতো, ওর খালার বাসায় থাকতো এবং ঢাকাতেও আমাদের দেখা হত। কখনো অন্য বন্ধুদের সাথে ও বাসায় এলে গল্প হোত, কখনো বা কৃষক ফোন করে সময় আর জায়গা ঠিক করতো, আমি বাইরে ওর সাথে ঘুরতে যেতাম।

ফোনে কথাগুলো সরাসরি বলতে পারতাম না। তখন তো আর মোবাইল ছিল না। বাসার ল্যান্ড ফোনটাই ভরসা। আবার ল্যান্ডফোন ছিল এমন যায়গায় যেখানে কথা বললে সবাই কমবেশী শুনতে পেত। ওপাশ থেকে ও বলতো বের হতে পারবা? আমি না কিংবা হ্যা বলতাম।

উত্তর হ্যা হলে পরের প্রশ্ন কখন বের হবা? আমি চুপ। তখন ও হয়তো বলল "নটায়"? আমি বলি "না"। পরের প্রশ্ন, দশটায়? আমি বললাম 'হুম'। একই ভাবে কোথায় দেখা হবে সেটাও হু, না, ঠিক আছে, এ জাতীয় কথায় সারতাম। বাসা থেকে বের হওয়া নিয়ে তেমন ঝামেলা হোত না, এতদিন পর বাসায় এসেছি আদরের শেষ নাই, তাই সাত খুন মাফ।

আমার অন্য সব বন্ধুদের মধ্য থেকে ওকে আলাদা করে বের করা বা আমাদের সম্পর্কটা বাসায় কেউ আঁচ করবে এটা আমার ধারনার ও বাইরে ছিল। তবে আমার মায়ের সব কিছুতে ই তীক্ষ দৃষ্টি, মা কেমন করে যেন টের পেয়ে গেলেন। আমার মা যখন কোন জরুরী কথা বলেন বা কোন তথ্য জানতে চান, তখন খুব খাতির করে কথা বলেন। কাছে এসে বসেন, এটা ওটা জিজ্ঞেস করে আসল কথাটা বের করেন। তেমনি একদিন আমার রুমে আমি পত্রিকা বা কিছু নিয়ে অলস সময় কাটাচ্ছি, (বাসায় থাকলে তো আর পড়াশোনা করতাম না, হলে কত পড়ি আবার বাসায় কিসের পড়া....এমন একটা ভাব) মা কাছে এসে বসলেন।

এ কথা সে কথার পর সরাসরি প্রশ্ন আমি কাউকে পছন্দ করি কিনা। আমার তো মাথা চক্কর দিচ্ছে। আমি অনেক জোরের সাথে বলি "না"। ভাবখানা এমন এইসব করা কি আমার কাজ নাকি (মাকে কখনো মিথ্যে বলিনা এটা বলেই কেমন কেমন লাগছিল)। এদিকে মনে মনে ভাবছি এটা জিজ্ঞেস করলো কেন? এরই মধ্যে দ্বিতীয় প্রশ্ন..."অমুক"....ছেলেটা বাসায় আসে তোমার সাথে পড়ে, ওকে কি তোমার ভালোলাগে? ভাবলাম ধুর, ধরা যখন পড়েই গেছি, যা থাকে কপালে, বললাম হ্যাঁ ভাল লাগে।

তারপর মা ওর সম্পর্কে ওর বাবা মা সম্পর্কে জানতে চাইলেন, আমি যেটুকু জানি বললাম। আর ওর সম্পর্কে বেশ ফুলিয়ে ফাপিয়ে বললাম, অনেক ভাল হেন তেন। আমার মা আমার আগ্রহ টা দেখলেন এবং অনেকটা নিরব সম্মতি দিলেন বলা চলে। আমি তো মনে মনে মহা খুশি। ক্যাম্পাসে এসেই ওকে সব বলে দিলাম।

মা আমার বড় বোনকে ঘটনাটা জানালেন, বললেন ছেলেটা কে একটু দেখো, কেমন লাগে। ওকে বললাম একদিন বড়আপুর বাসায় তোমাকে নিয়ে যাব। ও তো শুনেই পারলে তিন লাফ দেয়, "ওরে বাবা আমি যেতে পারবো না, ওখানে যেয়ে কি বলতে কি বলবো"। বুঝলাম সোজা বুদ্ধিতে কাজ হবে না। অন্য পথ ধরতে হবে।

এরপর যখন আবার ঢাকা যাওয়া হল। দুজন বের হয়েছি বিকেল বেলা। রিকশা নিয়ে ঘুরছি। ও বলছে "কোথায় যাবো"। আমি বলছি "চল তোমাকে এক জায়গায় নিয়ে যাই, সারপ্রাইজ, আগে বলা যাবে না"।

এমনি করে ফার্মগেট থেকে ক্রমাগত প্রশ্ন কোথায় যাচ্ছি, আমি ও এটা ওটা বলে এড়িয়ে যাচ্ছি। তারপর মহাখালি এসে যখন গলির দিকে যেতে বললাম তখন ও বলল, "এই, এদিকে বড়আপুর বাসা না"? ক্যাম্পাস থেকে অনেকদিন ও আমাকে এ বাসার কাছাকাছি নামিয়ে দিয়েছে। কাজেই কাছাকাছি হবার পর বুঝতে পারলো কোথায় এসেছে। আমি বলছি, "একদম ঝামেলা করবে না, ভাল মানুষের মত যাবে, কথা বলবে তারপর চলে আসবে"। ও তো পারলে রিকশা থেকে নেমে পালায়, এমন একটা ভাব ধরলো, আমি শক্ত করে ওর হাত ধরে থাকলাম।

তারপর বড়আপুর বাসায় আগে থেকে কিছু বলে যাইনি। বন্ধুকে নিয়ে এসেছি বললাম। ওকে বসার ঘরে বসিয়ে আপুকে নিয়ে আসলাম। আপু ওর সাথে গল্প করলেন, বাড়ীর সবার খবর, ঢাকায় ওর যে খালা থাকেন তাদের খবরাখবর নিলেন। উনি তো এক্কেবারে শান্ত শিষ্ট হয়ে, দুই হাত কাচুমাচু করে বসে আছেন।

যেন কত্ত লক্ষী ছেলে। যা প্রশ্ন করছে, ভালমানুষের মত জবাব দিচ্ছেন। ওর ভালো মানুষি দেখে আমারই হাসি পাচ্ছিল, মনে মনে আমার ভয়ও লাগছিল। একটু পর দুলাভাইও এলেন, কথাবার্তা, চা খাওয়ার পর কৃষক বিদায় নিল; আমি আপুর বাসায় থেকে গেলাম। কৃষক পরে এটাকে বলেছিল ওকে নাকি ইন্টারভিউ নিয়েছিল আমার আপু।

আর ইন্টারভিউতে কৃষক পাশ ও করেছিল। আমার পরিবারে এটুকু স্বাধীনতা আমাদের সকলের ছিল। জোর করে আমাদের উপর কখনো কিছু চাপিয়ে দেয়া হত না। কোন কিছুকে যদি অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে পাওয়া যায় তাহলে তাকে রক্ষা করতে হলে বা ধরে রাখতে হলে তার থেকেও অনেক বেশী সাবধান হতে হয়, আরো অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। ...... আমাদের সম্পর্কটা একটা স্বাভাবিক নিয়মেই গড়ে উঠেছিল, ........যদিও আমি স্বীকার করতে অনেক গড়িমসি করেছিলাম, এটা আগে বলেছি।

কিন্তু এই সম্পর্কটাকে সফলতার রূপ দিতে আমাদের দুজনের উপরই অনেক দায় ছিল। ..........এদিকে আমার মা এবং বোন বিষয়টি জেনে যাবার পর, তাদের মৌন সম্মতি দেবার পর দায়টা যেন আরো বেড়ে গেল, আমাকে প্রমান করতে হবে আমি ভুল করিনি। যে মানুষটিকে ভালওবেসে বেছে নিয়েছি সমাজ সংসারের বিবেচনায় সে সঠিক ব্যক্তি। তবে এটা প্রমান করাতো আমার একার কাজ নয়। কৃষক কে যে আমার সাথে থাকতে হবে............এ দায় অথবা দায়িত্ব যে তার ও।

যে তরীটি আমরা ভাসিয়েছি তাকে কূলে নিতে হলে দুজনের এক হয়ে চলতে হবে। ......... চলবে.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.