আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেম -১০

কৃষক blogsaudi@gmail.com

আগের পর্ব Click This Link পরদিন, সকালে উইঠ্যা ক্লাসে গেলাম। দুইজন বসলাম পাশাপাশি। তার পাশে বইসা ক্লাস আর করুম কি মাস্টারের সব কথা যায় আমার মাথার উপর দিয়া। আমি তখন অন্য জগতের মানুষ। ভাগ্য ভালো মাস্টার কোন কিছু জিজ্ঞাসা করে নাই আর আমিও বাইচ্যা যাই।

সচরাচর মাস্টার রা বেশী জিগাইতো না। যাই হোক আবার আগের রুটিনে ফিরে গেলাম। ক্লাস, লাইব্রেরী ও নদীর পার এই নিয়া আবর্তিত হইতে থাকে আমাদের পৃথবী। দিন যায়.. একদিন তারে কই চলো আজকে ঘুরি সেও কইলো চলো । চিন্তা কইরা বাহির করলাম কই যাওয়া যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিম দিকে ফিল্ড এক্সপেরিমেন্টের জায়গা ছিল। আগেও গেছি ক্লাস করতে। সামনে দিকে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত ফষলের মাঠ মাঝখানে কনক্রিটের রাস্তা । ঠিক মাঝখানে একখান ফার্ম হাউজ। কান পাতলেই বাতাসের ও ধানের পাতার তৈরী শিস শোনা যায়।

একটু দূরে হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলাপান কাজ ছাড়া এই এলাকায় আসতো না। জায়গাটা মুটামুটি নির্জন থাকে। জায়গাটা কথা মনে হইতেই একখান রিক্সা লইয়া গেলাম সেখানে । ফার্ম হাউজের সামনে রিক্সা ছাইড়া দিয়া মুক্ত প্রান্তরে তারে নিয়া ঘুড়ি । মনে হয় আমরা কোন এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা।

মন আবেশিত হয়, তার হাত ধরতে ইচ্ছা করে । আস্তে তার হাত ধরি সেও না করে না। যেন পরম ভরসায় সে আমরা হাতে মৃদু চাপ দেয়। দুইজন হাত ধরাধরি কইরা হাটতে থাকি। এ এক অনন্য অনুভুতি।

অন্যরকম ভাললাগা। একটু দূরে ছিল একটি কলার বাগান। সেইটা দেইখ্যা মনে পড়লো খানা সেই বিখ্যাত বচন- কলা রুয়ে না কেটো পাত তাতেই কাপড় তাতেই ভাত তারে কইলাম খনার বচন টা অবাক হইয়া লক্ষ্য করলাম সে খনা কে সেইটা জানে না। অগ্যতা তারে খনার কাহীনি খানা কইলাম। মানে তখন যতটুকু জানতাম আরকি।

তার সঙ্গে বিভিন্ন আলাপে আলাপে সময় পাড় হইতে লাগলো। সময় যায়... দুপরের সূর্য অনেক আগেই পশ্চিমে হেলে পড়ছে। কিন্তু মনে হয় সময় খুব তাড়াতাড়ি চলে গেল। তারে কইলাম চলো যাই । সে কয় আর একটু থাকি।

থাকলাম আর কিছু সময়। জিগাইলাম জায়গাটা কি তোমার খুব পছন্দ হইছে। সে কয় খুউব। তারে কইলাম সামনে সময় আসতাছে এইখানে আসবার। সে কয় কেন।

তারে কইলাম এই বিশাল প্রান্তর থাইক্যা তোমাকেও কিঞ্চিত প্রদান করা হইবে ফিল্ড এক্সপেরিমেন্টর জন্য। তাহা পরিচর্যার জন্য তোমাকে প্রায়শই আসিতে হইবে । দেখলাম তার চোখে ঝিলিক দিয়া উঠলো আনন্দ। তাহার আনন্দেই আমার আনন্দ। সন্ধ্যার দিকে হলে ফিরিয়া আসি।

অপেক্ষায় থাকি কবে দেওয়া হইবে সেই প্লট বা জমি যাহাতে শস্য উৎপাদেনর মাধ্যমে আমাদের কৃষক সত্তা বিকশিত হইবে (আসলেই কি তাই নাকি তার সান্নিধ্য লাভের আশা) । একদিন অপেক্ষার পালা শেষ হয়। জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়। ছোট একটুকরা জমি। হাল চাষ করাই আছে।

কাজ শুধু শুধু বীজ বপন । সেচ প্রয়োগ ( তাও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাম্প থেকে অটোমেটিক দেওয়া হইতো) পরিচর্যা ( আগাছা দমন, কীটনাশক প্রয়োগ ইত্যাদি) ফষল সংগ্রহ। রিপোর্ট প্রদান। পরম মমতায় কৃষকের কষ্ট অনুধাবন করিয়া। কাঠফাটা রোদ্রে ঘর্মাক্ত হইয়া ।

কাদা মাটিতে একাকার হইয়া ধানের বীজ বপন করিয়া পরিপূর্ন কষকের ভাব ধরিলাম (সেই ভাবটা এখনও ধরিয়া আছি )। কারণ মাষ্টর সামনে দাড়াইয়া ছিল। যাইহোক ফষলে জমিতে বীজ বপন সম্পাদিত হইলো। এখন পরিচর্যার পালা। অবশ্য এইসব পরিচর্যা অন্যদের মতো ফার্মের মামু দের দ্বারা সম্পাদন সম্ভব।

কিন্ত আমরা তাহা করিলাম না। কারণ এইজায়গায় আসার জন্য এর চেয়ে ভালো অজুহাত আর কেউ বাহির করতে পারবে কিনা আমার সন্দেহ আছে। এর পর থেক প্রায় দুপুরে আমরা দুই কৃষক কিষাণী এখানে এস ফষলে পরিচর্যা করতে লাগলাম । সেই ফাকে অবসরে এই নির্জন প্রান্তরে দুই কৃষক কিষাণী তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন দেখার কাজও সম্পাদন করতে লাগলো। সেই বিষয়ে আগামী পর্ব বলবো চলবে....


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.