আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অগভীর ভাবনা ১৯ - পরিচয় বিড়ম্বনা।

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা

অনেক আগে অমিত নিজস্ব মতামত লিখেছিলো, ভারতের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনায় প্রবেশের জন্য ভারতীয়দের প্রদেয় মূল্য এবং বৈদেশিক ভ্রমনকারীদের প্রদেয় মূল্যে বিশাল ফারাক। অনেক ক্ষেত্রেই বিষয়টা ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি। এটার যৌক্তিকতা কোথায়? উপমহাদেশে বিশেষত মুঘল আমলে নির্মিত যেকোনো স্থাপনার প্রয়োজনীয় অর্থ এসেছিলো এই উপমহাদেশের বাসিন্দাদের কাছ থেকেই। সুতরাং এই স্থাপনা নির্মানের ব্যয় যেমন বহন করেছে ভারতের তৎকালীন বাসিন্দারা তেমন ভাবেই এই স্থাপনা নির্মানের ব্যয় বহন করেছে আমাদের পূর্বপুরুষেরা, সুতরাং আমাদেরও আদতে ভারতীয়দের সমান মূল্য পরিশোধ করেই এই স্থাপনায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া উচিত। ১৯৪৭ এর পর থেকেই ভারত সম্পূর্ণ আলাদা একটি দেশ, এবং পাকিস্থান হয়ে বাংলাদেশ হয়ে উঠবার পরে আমরাও সম্পূর্ণ আলাদা একটি দেশ।

আমাদের অনেক দিন ধরেই ভারতে প্রবেশের জন্য নিজস্ব জাতীয় পরিচয়সূচক পাসপোর্টে অনুমোদন নিয়েই ভারতে প্রবেশ করতে হয়। এই বাধ্যবাধকতারও প্রয়োজন আছে। এটাই আমাদের নিজস্ব পরিচিতি, সাংস্কৃতিক এবং বাহ্যিক আকৃতিগত সাযুজ্য থাকবার পরেও আমরা আদতে দুটি ভিন্ন দেশের বাসিন্দা। এত কথার প্রয়োজন ছিলো না মোটেও, তবে আজ হঠাৎ করেই নিজেকে কোণঠাসা মনে হলো গণবক্তব্যের কাছে। বাংলাদেশ থেকে প্রভুর ভ্রমনার্থী প্রতি বছরই ভারতে যাচ্ছে, অনেকে ঈদের শপিং করতেও যাচ্ছে কোলকাতায়, বালুচরি শাড়ী আর কোটাকের সিল্ক কিনে পড়ছে মানুষ, এইসব কর্তব্য পালনের সাথে সাথে যেটুকু না দেখলেই নয় সেটুকুও দেখে আসে বাঙালী।

তারা ভারতীয় ধাঁচের চেহারা হওয়ার সুবাদেই নিজেকে ভারতীয় পরিচিয় দিয়েই সস্তায় এই ভ্রমনের কাজটা সমাপ্ত করে। পূর্বে তাজমহলে প্রবেশের জন্য ভারতীয়দের প্রবেশ মূল্য ছিলো ১০ টাকা, এবং বিদেশীদের জন্য সেটা ছিলো ১০ ডলার, পরবর্তীতে শুনলাম সেটা বাড়িয়ে ৩০ ডলার করা হয়েছে। একই ভাবে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে প্রবেশের জন্য ৫ ডলার গুণতে হয়। সেখানে অধিকাংশ বাঙালীই ভারতীয় পরিচয়ে প্রবেশ করে ৫ রুপিতে। বিষয়টি অনৈতিক- এই ছিলো আমার অভিমত আদতে।

আমরা যখন অন্য কোনো দেশের নাগরিক বাংলাদেশে আসলে আশা করি তারা বাংলাদেশের প্রচলিত আইনকানুনকে শ্রদ্ধা করেই তাদের ভ্রমন কর্মসূচি সমাপ্ত করবে, একই ভাবে আমাদেরও অন্য কোনো দেশে প্রবেশ করলে সেখানের প্রচলিত আইনকানুনকে মান্য করতে হবে। আমি বাংলাদেশের পাসপোর্ট বহন করে যদি নিজেকে ভারতীয় পরিচয় দিতে চাই সেটা অবশ্যই এক ধরণের প্রতারণা। তবে গণদাবি হলো টাকার অংক নেহায়েত কম নয় , যদি সামান্য এই পরিচয় লুকানোতে আমার ১২০০ টাকা লাভ হয় তবে আমি কেনো নিজের পরিচয় লুকাবো না। বিদেশি দেখলেই গলা কাটবার প্রবনতা আছে, আমি যদি নিজেকে বিদেশি পরিচয় না দিয়ে নিজের ঠকে যাওয়াকে রদ করতে পারি তবে কেনো এটা করবো না। বিষয়টার অন্য দিকটা আমি উপস্থিত কাউকেই বুঝাতে পারলাম না, কেউ যেনো আমাকে ঠকাতে না পারে তাই আমি তাদের ভারতীয় সেজে ঠকাচ্ছি।

এটা হয়তো সস্তা দরের স্মার্টনেস, তবে শেষ পর্যন্ত এটা নিরেট প্রতারণা। যেটা যে অবস্থান থেকেই করা হোক না কেনো। আমি যদি সেখানে লিপিবদ্ধ আইনকে অগ্রাহ্য করি তবে সেই প্রতারণার দায়িত্ব এবং এর ফলশ্রুতিতে প্রাপ্ত লাঞ্ছনা এবং অবমাননার দায়িত্ব আমাকে নিতে হবে। সবাই তো করছেই, যদিও তাদের এই কথাও বুঝানো সম্ভব হলো না, সবাই করলেই কোনো কাজ বৈধ কিংবা আইনানুগ হয়ে যায় না। এমন অনেক রীতিই প্রচলিত আছে যেগুলো অন্যয়, কিন্তু মানুষ নির্বিকার ভাবেই করছে, মানুষ নির্বিকার হয়েই অপরাধ করছে বলেই অপরাধস্খলন হয়ে যায় না।

আমাদের ভেতরে লুকানো শ্রেণীঘৃনা অন্যায় একটা বোধ, তবে এই ঘৃণা আমরা নিজেদের ভেতরে নিয়ে ঘুরছি, এটার জন্য আমাদের কোনো অপরাধবোধ নেই, আমাদের অফিসগুলোতে মানুষেরা নিয়মিত ঘুষ খাচ্ছে, বিষয়টা সবাই করছে মোটামুটি, কিন্তু তাতে ঘুষ নেওয়া অপরাধ নয় এমনটা প্রমাণিত হয় না। বরং হঠাৎ করেই দেখলাম আমি নেহায়েত স্টুপিড একজন মানুষ যে নিজের আর্থিক ক্ষতি স্বীকার করেও প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবার জন্যই নির্ধারিত মূল্যেই স্থাপনায় প্রবেশের দাবি জানাচ্ছে। সবাই বলছে এটা নির্বোধের মতো আচরণ, তাদের প্রতারক বলছি এটা আমার গোয়ার্তুমি। এমন কি যারা প্রতারণা করে ধরা পড়ছে নিজেদের বোকামির জন্য তাদের বলা হচ্ছে নির্বোধ। একটু মুখ বন্ধ রাখলেই যদি অন্তত নিজের প্রবেশ মূল্য ১০০ গুন কমিয়ে ফেলা যায় তবে সেটা করতে বাধা কোথায়।

আমি অবশ্য এই পর্যায়ে হাল ছেড়ে দিলাম, অন্তত এরপরের বক্তব্যটা নিশ্চিত ভাবেই সাম্প্রদায়িক হয়ে যেতো। আমি যদি বলতাম ভাই তোমাদের মতো আমি ভারতকে নিজের দেশ ভাবি না। বাংলাদেশই আমার নিজের দেশ, তবে সেটার সাম্প্রদায়িকতা সম্পর্কে সচেতন হয়েই আমি ফেরত আসলাম। তবে আমি নিশ্চিত জানি- তারা যে কাজটাকে বৈধ মনে করছে সেটা অবশ্যই অবৈধ এবং প্রতারণা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।