আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অগভীর মানুষের গভীর আলোচনা ১

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা

ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের ভেতরের বিভেদ এবং ব্যবধান নিয়ে আমাদের সামাজিক সচেতনতা শূণ্যের কোঠায়। অধিকাংশ মানুষই আদতে ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের ভেতরের সম্পর্ক বিষয়ে তেমন করে ভাবছে না। প্রথমে মনে হয়েছিলো এটা শুধু ডানপন্থী উজবুকদের ভাবনার সীমাবদ্ধতা- তারা ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানকে গুলিয়ে ফেলে, তাদের ভাবনায় ব্যক্তিস্বাতন্ত্রতাবোধ অনুপস্থিত। অবশ্য উম্মাহভিত্তিক অনুভাবনার সাথে ব্যক্তিবিযুক্ততার ধারণা সহগামী নয়। একই আদর্শে, একই ছাটের কাপড় এবং একই ছাটের সুন্নতী চুলের কাটে তারা সবাইকে একই পরিনতিতে দেখতে চায়।

তারা একই আল্লার বান্দা হিসেবে, একই ভগবানের সৃষ্টি হিসেবে তার লীলা দেখে মুগ্ধ হতে চায়, তারা প্রশ্নবিহীন বাঁচতে চায়, তাই ব্যক্তি স্বাতন্ত্রতা কিংবা চিন্তার বিভেদ তাকে পীড়িত করে, এবং সেইসব ডানপন্থী উজবুকেরা মরিয়া হয়ে ভিন্নমত দমন করতে চায়, এবং বৈচিত্র এবং বহুভাবনাকে ধারণ করবার বাসনা তারা সচেতন ভাবেই ধারণ করে না। তবে এখানে এসে দেখলাম বামপন্থী উজবুকেরাও আদতে ব্যক্তিকে প্রতিষ্ঠানবিযুক্ত ভাবতে নারাজ। তারাও প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির বিভাজনের রেখা অনুভব করতে চায় না। তবে আমাদের প্রচলিত ধারার বামপন্থী মানুষের সামাজিক সচেতনতার মান হয়তো আমাদের আমজনতার থেকে এক ইঞ্চি উঁচু, তবে সেই উচ্চতা তার সামাজিক সচেতনতাকে গণের সচেতনতার প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে পারে না। খুব আশ্চর্য হলো আমাদের সামাজিক পরিমন্ডলে ব্যক্তির কোনো সংজ্ঞা নেই, জীবিত প্রজননক্ষম কিংবা অক্ষম মানুষ মাত্রই ব্যক্তি নয়, একটা জীবিত স্বত্তা যা মানুষের অবিকল প্রতিরুপ, তবে সেখানে ব্যক্তি নেই।

ব্যক্তি সামাজিক সত্তা। সমাজ ব্যক্তিকে তৈরি করে এবং সমাজ ব্যক্তিকে বলিষ্ঠ করে। বাংলাদেশের সমাজ ব্যক্তি নির্মানে ব্যর্থ, ব্যক্তিবিবেচনার সুযোগ কিংবা সম্ভবনা সৃষ্টিতে নারাজ বলেই তারা ব্যক্তিপূজার আড়ালে আসলে স্তাবকতা অব্যহত রাখতে চায়, তারা ব্যক্তির মতকে অগ্রাহ্য করতে গিয়ে আদতে ব্যক্তিচরিত্রকে আহত করতে চায়। সামাজিক মানুষ এবং রাষ্ট্রীয় মানুষ, জীবিত ব্যক্তি এবং আইনের ব্যক্তি একই দেহে বসবাস করলেও তাদের পরিধি এবং গন্তব্য ও বিকাশে সুযোগ আলাদা। আমাদের ব্যক্তির সংজ্ঞা, সম্ভবনা পরিধি প্রতিষ্ঠানের গায়ে ভর করে বেড়ে উঠে।

আমাদের ব্যক্তিপূজা অর্চনার ভাববাদী বিকারও একই সাথে বাড়তে থাকে, আমাদের নিরাবেগ আলোচনাও শেষ পর্যন্ত একটা আবেগী বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠা করবার অনবরত প্রয়াস। ব্যক্তিকে নিয়ে প্রতিষ্ঠান, তবে বাংলাদেশের জন্য দুঃখজনক হলো এখানে ব্যক্তিই প্রতিষ্ঠানের শব্দার্থ, ব্যক্তিই প্রতিষ্ঠান হয়ে দাঁড়াচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের কাছে আমাদের দাবি এবং ব্যক্তির কাছে আমাদের দাবি আলাদা আলাদা, কতৃপক্ষের কাছে আমাদের দাবি এবং আমজনতার কাছে আমাদের দাবি যেমন সম্পূর্ণ ভিন্ন ধাঁচের দুটি বিষয় তেমন ভাবেই ব্যক্তিকে প্রতিষ্ঠান থেকে বিযুক্ত দেখবার মনন তৈরি হলে ভালো হতো। কতৃপক্ষ বেত হাতে নিয়ে প্রবল প্রতাপে শাসন করবেন, নিয়মলঙ্ঘনকারীকে কঠোর হস্তে দমন করবেন, আমাদের প্যান্ট ভয়ে নষ্ট হবে, স্বার্থক শাসকের প্রতিচ্ছবি এমনই। তবে আমজনতাকে আমরা আমাদের মতোই কতৃপক্ষের হাতে নির্যাতিত এবং আমাদের মতোই ভয়ে প্যান্ট নষ্ট করে ফেলা প্রজাতি হিসেবে দেখতে আগ্রহী।

কতৃপক্ষ কিংবা প্রতিষ্ঠান নিজের বাণিজ্যিক দইক বিবেচনা করে কোনো কোনো বিশেষ আমজনতাকে বাড়তি কিছু সুবিধা দিয়ে থাকে, এবং এই বাড়তি সুযোগ পাওয়া মানুষগুলো আমাদের সন্দিগ্ধ করে। আমরা ভাবতে শুরু করি, এই মানুষগুলো গণমানুষের শত্রু। এদের রুখে দাঁড়াতে হবে। এদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে। এবং প্রতিষ্ঠানের শত্রু প্রতিটা মানুষ এইসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রোশ বহন করে নিয়ে চলে।

প্রতিষ্ঠানবিযুক্ত আমজনতা আসলে আমাদের মতোই সাধারণ, তবে আমাদের সামাজিক চেতনার গঠনের জন্যই তার এই প্রতিষ্ঠানের বাইরের ভুমিকা কিংবা রুপটাকে আমরা পছন্দ করি না, কিংবা আমরা দেখতে চাই না, দেখতে পাই না। পুলিশ, সামরিক বাহিনী একটা প্রতিষ্ঠান- তাদের যেকোনো যোগ্যতা , অযোগ্যতা, বর্বরতা এবং হিংস্রতা নিয়েই তারা একটি প্রতিষ্ঠান, তাদের প্রাতিষ্ঠানিক চরিত্র যখন তাদের ব্যক্তিচরিত্রে রূপান্তরিত হয় তখনই আমাদের সমাজের গলদটা চোখে পড়ে। অবসর প্রাপ্ত আমলাও তার প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় ছেড়ে বাইরে আসতে পারেন না, একজন ব্যক্তি হয়ে উঠতে পারেন না। তাকে তার পেশার জোব্বা অদৃশ্য কাঁধে বহন করতে হয়। আজ দেখলাম বালের ভারে বঙ্কিম একজন অনেক অনেক বাল ফেলানোর দীর্ঘ বক্তিমে দিয়ে বললো সেও বামপন্থী ছিলো, তার বিতর্কের ধরণ এবং তার কথা শুনে বুঝবার উপায় নেই যেই জ্ঞানের সমুদ্রে তার নৌকা ভাসছে সেটায় আঙ্গুল ডুবালে হয়তো প্রথম করও ভিজবে না।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।