আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অগভীর ভাবনা ৭

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা

সবচেয়ে বেশী মিথ্যা বলে পরিসংখ্যান। তবে বাংলাদেশের আনাচে কানাচে বিভিন্ন নামে, বিভিন্ন পরিশীলিত মননশীল মানুষের কল্যানে উন্নয়ন তত্ত্বাবধান সংঘ গড়ে উঠেছে, তারা বিভিন্ন স্থান থেকেই পয়সা সংগ্রহ করে জরিপ চালায় বাংলাদেশে। নিয়মিত নতুন নতুন ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যাচাই করে দেখে এখানে, এবং এইসব ঔষধ সেবনের ক্ষতির কারণ এবং লাভবান হওয়ার তরিকাগুলো জরিপ করে ঔষধ কোম্পানিকে পাঠায় এখানের সেবা সংস্থাগুলো। সেবা সংস্থাগুলো হিসেবে করে নির্ধারণ করে আমাদের দারিদ্র ও প্রগতি, এমন কি আমাদের দেশের ভোক্তামানস তৈরীতেও তাদের ভুমিকা আছে। বাণিজ্যিকতার প্রভাব এড়ানো অসম্ভব, নৈতিকতা, বিজ্ঞাপনী চটক, মাননসেবা বিভিন্ন মোড়কেই বাণিজ্যিকতা বাংলাদেশে বিদ্যমান, অনেক সময়ই উপরে উপরে দেখে বুঝাও সম্ভব হয় না আদতে বাণিজ্যটা কোথা. বাংলাদেশে বিনিয়োগ লাভজনক হবে কি না এ নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে দেয় যেইসব প্রতিষ্ঠান তাদের এনজিও ঘারানা থেকে ইনস্টিটিউট ফর্মে এনেছিলো প্রথমে ডেমোক্রেসী ওয়াচ প্রতিষ্ঠানটি।

তারাই বিভিন্ন সময়ে জরিপ চালাতো বাংলাদেশে, এরপরে দেখা গেলো অনেকগুলো এমন ধাঁচের প্রতিষ্ঠান জন্মেছে, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ এমনই একটা প্রতিষ্ঠান, তারাও বাংলাদেশের মেধাবী মানুষদের নিয়ে জরিপ এবং বাংলাদেশের মানস যাচাই করে, অন্য একটা প্রতিষ্ঠান ছিলো এখনও আছে, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। এই প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিত জরিপ করে বিভিন্ন পরিসংখ্যানজনিত উপাত্ত দিয়ে ঘোষণা দিলো বাংলাদেশ দুর্নীতির শীর্ষে। পর পর ৫ বছর বাংলাদেশ শীর্ষস্থানীয় দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ ছিলো, তবে সম্প্রতি এই টিআইয়ের বিরুদ্ধেই দুর্নীতি ও তথ্যে অস্বচ্ছতার অভিযোগ এসেছে আমার গোচরে। তারা ভেনিজুয়েলার রাষ্ট্রায়ত্ব তেল কোম্পানীর বিরুদ্ধে অস্বচ্ছতার অভিযোগ এনেছিলো, বলা হয়েছিলো তাদের অডিট রিপোর্ট এবং তাদের ব্যয় এবং আয়ের হিসাবে স্বচ্ছতা নেই। তারা এই সংক্রান্ত তথ্য প্রদান করতে গরিমসি করে।

তেলকোম্পানীগুলোর ভেতরে সবচেয়ে অসচ্ছ প্রতিষ্ঠান হয়েছিলো ভেনিজুয়েলার তেল কোম্পানী। তবে দেখা গেলো যেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তারা গত ৫ বছর ধরে নিয়মিত আয় ব্যয়ের হিসাব পত্রিকা , ছাপানো বই এবং ওয়েব সাইটে প্রকাশ করে, এটার বিষয়ে টিআইয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তারা ঘোষণা করে তারা যখন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলো তখন এই তথ্য সরবরাহ করতে দেরী করা হয়। সুতরাং দেখা গেলো তারা যখন এই রিপোর্টের জন্য তথ্যের আবেদন করেছে তারও ৪ সপ্তাহ আগেই সেই বছরের আয় ব্যয়ের হিসাব ছাপানো হয়েছে, সেটা প্রচার করা হয়েছে টেলিভিশনে, সেটা পত্রিকায় ছাপা হয়েছে, এমন কি গত ৫ বছরের অডিটের রিপোর্টও ছিলো সেখানে, অসচ্ছতা ছিলো না মোটেও। এটা নিয়ে কথা বলতে গেলে টিআই আর কোনো প্রতিক্রিয়া জানায় নি, বরং তারা তথ্য সংশোধন কিংবা ক্ষমা প্রার্থনার কাজটিও করে নি। এই সংস্থাটির অর্থায়নে আছে বহুজাতিক তেলকোম্পানী এবং ইউএসএ এবং ইউকে , তাদের চাহিদামফিক তথ্য প্রদান করে জরিপ সংস্থাটি।

এবং ভেনিজুয়েলার হুগো শ্যাভেজের বিরুদ্ধে তেলকোম্পানী এবং এই দুই রাষ্ট্রের বিরুপ মনোভাব অজানা নয়। আমাদের দেশের বিরুদ্ধে খুব বেশী বিদ্বেষ কি আছে এই দেশগুলোর? তবে আমাদের টিআইবির প্রধান মোজাফফর আহমেদের স্বচ্ছতা নিয়ে আমার নিজের একটা প্রশ্ন ছিলো, মইন উ আহমেদের বাংলাদেশী তরিকা গণতন্ত্রের বানী সম্বলিত পুস্তকরে মোড়ক উন্মোচনে সেখানে সম্মানিত জেনারেলের পাশে দাঁড়িয়েছিলো মোজাফফর আহমেদ, তবে বাংলাদেশ সদ্যসমাপ্ত টিআই রিপোর্টে তেমন খারাপ করে নি, তাদের অবস্থান উন্নত হয়েছে। মইন উ আহমেদের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ কি আমাদের মোজাফফর আহমেদের ভেতরে নতুন চেতনার জন্ম দিয়েছিলো। কারণ বলবার মতো সাফল্য এই সরকারের একটাই- একটা প্রশ্নবিদ্ধ জরিপ সংস্থার প্রতিবেদনের শীর্ষস্থান থেকে বাংলাদেশকে সহনীয় দুর্নীতির দেশে পরিনত করা। বিশ্বের দুর্নীতিপরায়নতা পরিমাপ করে এমন দ্বীতিয় গ্রহনযোগ্য সংস্থা হলো বিশ্বব্যাংক, যে প্রতিষ্ঠানের প্রধান কয়েক দিন আগে দুর্নীতির অভিযোগে পদতয়াগ করতে বাধ্য হয়েছে।

তবে আমাদের দুর্নীতিগ্রস্থতা কমে নি। আমরা ছোটো মানুষেরা বড় মানুষের কথায় নিজেদের উন্নতি আর অবনতি মাপি। পরিসংখ্যানে প্রগতি মাপা আমরা হয়তো নিজের চোখের চেয়ে বেশী বিশ্বাস করি বিবিসির প্রতিবেদন। আমাদের ভেতরে ব্যক্তিপূজার প্রকোপ নেই দাবি করা মানুষের ভেতরেই দেখা যায় বিভিন্ন ছোটো বড় আইডল পূজার প্রবনতা। মানুষের ব্যক্তিগত বিদ্বেষ এবং মানুষের অনুভুতীপরায়ন অন্ধত্ব ঘুচে যাক, পরিসংখ্যানের মিথ্যা আমাদের আলোকিত করুর।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।