আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অগভীর ভাবনা ৮

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা

ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের ভেতরের পার্থক্য নির্ধারণ করবার ব্যর্থতা সব সময়ই চোখে পড়ে, একজন মোশাররফের পতনের পরে সমস্ত পাকিস্তান আনন্দে উদ্বেলিত হয়, সবাই নেচে গেয়ে উৎসব করে, কারণ মোশাররফ পদত্যাগ করেছে। একই চিহ্ণ যেকোনো স্বৈর শাসকের পতনের পরে দেখা যায়, বাংলাদেশে ৬ই ডিসেম্বর গণতন্ত্র মুক্তি দিবস, এই দিন এরশাদ পদত্যাগ করেছিলো, ব্যক্তি এরশাদের পতনে আনন্দিত সবাই কখনও কল্পনাও করে নি এরশাদের পতন মানেই সব মুক্ত হয়ে যাওয়া নয়। দীর্ঘ ১৫ বছর অনিয়ম নিয়ম হয়ে যাওয়া এবং সার্বক্ষণিক খবরদারিত্বের কারণে প্রতিষ্ঠানটির নৈতিকতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ভেঙে পড়েছিলো। বাংলাদেশ রাষ্ট্র নামক প্রতিষ্ঠানটিংণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নয় বরং প্রজানিপীরক বাংলাদেশ হয়ে উঠেছিলো। এই দেশে মানুষের অধিকার তখন তোষামোদ এবং লেহনের উপরে নির্ভর করতো।

যে যতটা নেহন করতে পারবে রাষ্ট্র তাকে ততটাই অধিকার প্রদান করবে। এমন রাষ্ট্রীয় নীতিতে বংশবদ তোষামুদে ব্যক্তিরা সর্বময় ক্ষমতা ধারণ করে এবং স্তাবক এবং তোষামুদে মানুষেরা শাসক শ্রেনীতে পরিণত হয়। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের এই বিচ্যুতি নতুন কোনো বিষয় নয়, বলা যায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রটি হঠাৎ করেই ইসলামিক রিপাবলিক অফ বাংলাদেশ হয়ে যাওয়ার পরে এটার রাষ্ট্রীয় চরিত্র অনেকটাই ইসলামপন্থি হয়ে উঠেছিলো, এই ইসলামপন্থী চরিত্র জিয়া এবং এরশাদের সময়ে আরও পোক্ত হয় । রাষ্ট্র জনগণের প্রত্যাশা পুরণ করতে ব্যর্থ হবে এবং আইনগত বৈধ্যতার খোঁজে এই জনবিচ্ছিন্ন সরকারকে ইসলামপন্থী মানুষদের দিকে ঝুঁকতে হবে এমনটাই নিয়তি ছিলো বাংলাদেশের। যেকোনো অবৈধ সরকারের বৈধতা দিতে ব্যগ্র ইসলামপন্থীরা কোনো সময়ই অবৈধ সন্তানের বৈধতা দিতে আগ্রহী নয়, তবে ইসলামপন্থী এবং সামরিক শাসকদের অবৈধ প্রণয়ে বিকলাঙ্গ একটা প্রশাসনের অবৈধ জন্ম রদ করতে তাদের উদ্যোগি হতে দেখা যায় না।

তারা বরং এই অবৈধ সন্তানের জন্মের প্রতীক্ষা করে, আমাদের যুদ্ধাপরাধী ইসলামপন্থী মানুষগুলো আইনগণ বৈধতা পায়। রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে তার চরিত্র বদলায়, এবং প্রতিষ্ঠান ধারবাহিক ভাবে নিয়ম লঙ্ঘন করলে একটা সময়ে প্রতিষ্ঠানের চরিত্রে নিয়মনিষ্ঠতা থাকে না, এরশাদ কিংবা জিয়া কিংবা তারও আগে অনির্বাচিত সরকার যেভাবে প্রতিষ্ঠানের চরিত্র হনন করেছিলো, তারই ধারাবাহিকতা বহন করছি আমরা, একজন সাদাত হুসে'ইন নিজেকে ধোয়া তুলসী পাতা, পুতপবিত্র প্রমাণের নানাবিধ প্রকল্প নিলেও তার চরিত্রে আমলাতন্ত্রিকতার প্রভাব কমে নি। তারা আমলা থেকে সাধারণ মানুষ হয়ে উঠতে পারে নি। তিনি বারংবার ভাঙা রেকর্ড বাজাচ্ছেন, আসলে তাকে যেসব অভিযোগো অভিযুক্ত করা হচ্ছে তার কোনোটাই তার দোষ নয়, বরং তার উপরে অর্পিত দায়িত্ব তিনি সফল ভাবে পালন করেছেন, প্রতিষ্ঠানের প্রতিটা নিয়ম মেনে চলেছেন, তার দেশপ্রেম নিয়ে সংশয় নেই। তিনি বিশেষজ্ঞ হিসেবে বিভন্ন পরামর্শ দিয়ে বাধিত করেছিলেন বাংলাদেশকে তবে অপগন্ড সরকার প্রধানেরা সেই পরমার্শ আমনে আনে নি।

তখন যা ঘটেছে সবটাই প্রতিষ্ঠানের নির্দেশে, তিনি নিজে নিয়ম ভাঙবার কোনো তাড়না বোধ করেন নি, বরং তিনি তৎকালীন সময়ে প্রচলিত সকল আইনকে শিরোস্ত্রান গন্য করে সেসবের রক্ষা করেছেন। তার সব প্রশ্নের উত্তর মূলত একটা কথায় প্রকাশ করা যায়, আমাদের কিছুই করার ছিলো না, যেমনটা নির্দেশ এসেছে আমরা তেমন আচরণ করেছি, আমাদের পরামর্শ ছিলো, তবে পরামর্শ গ্রহন করা কিংবা বর্জন করবার দায়িত্ব ছিলো সরকারের। সরকার বিশেষত রাজনৈতিক এবং স্বৈরচারী সরকার সবসময়ই নানাবিধ দোষো দুষ্ট হয়ে উঠতে পারে, স্বৈর শাসক এরশাদ বিশ্ব ব্যংকের পরামর্শ মেনেই দেশের পাট শিল্পকে বেসরকারীকরণ করেছেন, তিনিও সাফাই গেয়ে বলবেন আমার সামনে যে উপাত্ত ছিলো তাতে বিশ্বব্যংকের পরামর্শকেই আমার শিরোধার্য মনে হয়েছিলো। এরশাদ বলতে পারে এই যে রাস্তা ঘাটের এত উন্নতি সেটা মিলিটার ক্যাপে ভরে অনুদান এনেছিলাম বলেই না সম্ভব হয়েছে, ঢাকা শহরের রাস্তায় সোডিয়াম বাতি জ্বলেছে কার কল্যানে। রংপুরের উন্নতি হয়েছে, রংপুরের ঘরের ছাওয়াল তাই ৫ আসনে জয়ী হয়েছে।

প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটাই রাষ্ট্রের চরিত্র, সেখানে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহন সীমিত, কতিপয় রাজনৈতিক ক্ষমতাধারী মানুষ, কতিপয় জনের সমর্থনে বলিষ্ট মানুষ নিজেদের মর্জিমফিক সবকিছু নিয়ন্ত্রন করে। ব্যক্তি তেমন বড় কোনো উপলক্ষ নয় এখানে, বরং প্রতিষ্ঠানই মূখ্য। ব্যক্তিকে দমন করে আনন্দে নেচে ওঠা মানুষেরা এটাই উপলব্ধি করতে পারে না, একজন ব্যক্তিকে দমন করে কিংবা তার পতন ঘটিয়ে প্রতিষ্ঠানের চরিত্র বদলানো যায় না, বরং প্রতিষ্ঠান নিজের প্রয়োজনেই আরও একজন বংশবদের জন্ম দিবে, প্রতিষ্ঠানের চাহিদা পুরণের জন্যই এর একজন নির্বাহীকে প্রতিষ্ঠানের শর্ত পূরণ করেই চলতে হবে, মানুষ প্রতিষ্ঠানের পতন চায় তবে প্রতিষ্ঠানকে উপড়ে ফেলবার মতো সামর্থ্য নেই বলেই ব্যক্তিকে উচ্ছেদ করে ভাবে প্রতিষ্ঠান শোধন হচ্ছে, ভাবে প্রতিষ্ঠানের চরিত্র বদলে যাবে এ বার, বাংলাদেশে এমনটা হয় নি, থাইল্যান্ডে হয় নি, এমন কোনো দেশ নেই যেখানে প্রতিষ্ঠানের চরিত্র আমূল বদলে গেছে, বরং রাষ্ট্রের নাম ও শিরোনাম বদলেছে, রাষ্ট্রের ক্ষমতা গিয়েছে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবীর দখলে , এবং প্রতিষ্ঠান এবং এর কাঠামো সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবীর চরিত্র হরণ করেছে, রাষ্ট্রের নিপীড়ণমূলক চরিত্র সংশোধন হয় নি, রাশিয়ায় পরপর দুটো বিপ্লবে সমাজতান্ত্রিকেরা রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেছিলো, লেলিনের আগে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা বিপ্লবীদের পেটিবুর্জোয়া প্রতিবিপ্লবী বলে প্রকৃত বিপ্লবীরা ক্ষমতায় এসেছিলো, তবে নিপীড়নমূলক সমাজ তৈরি ভিন্ন অন্য কিছু জন্ম দিতে পারে নি, জারের শাসনের ধারা বদলায় নি, বরং নতুন জার হিসেবে উঠে এসেছে লেলিন, মানুষের মুক্তির মহান নেতা লেলিন তাই প্রতিবিপ্লবীদের জন্য কুখ্যাত ৫৮ ধারা সংযোজন করেন, এবং মূলত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করতেই এটা ব্যবহৃত হয়েছে বেশী। প্রায় ৩ কোটি মানুষ ৬০ বছরে বিভিন্ন মেয়াদে নিষ্পেষিত হয়েছে এই ৫৮ ধারায়। পাকিস্তানে এমন বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে না, প্রশসনের ভেতরের গলদ কাটিয়ে উঠতে পারবে না যদি না একেবারে সকল প্রকাতন্ত্রের কর্মচারীদের বরখাস্ত করে নতুন একদল মানুষকে প্রশাসনে যুক্ত করা হয়।

তাহলে প্রাতিষ্ঠানিক চরিত্র বদল করা সম্ভব। এতটা করতে সক্ষম কোনো রাষ্ট্র?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।