আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সমাপ্তি

মানুষ হিসেবে বেশ বোকা ও বন্ধুসুলভ । চেষ্টা করি মানুষের পাশে দাঁড়াতে । অবাক হই এদেশের রাজনীতি দেখে । তবু লেখালেখিতে ভালোবাসা , আবেগ , অনুভূতি আর কষ্টকে প্রাধাণ্য দেই । জোছনার মাদকতা আমায় টানে ।

বৃষ্টির শব্দে জুড়ায় আমার প্রান । কফি বা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে

"রিহান সাহেব ভালো আছেন ? দেশে আসলেন কবে ?"

মেয়েটার কন্ঠে রিহানের হাত থেকে আধখাওয়া সিগারেট পড়ে যায় । সে ভুল শোনেনি । পিছনে ঘুরতে সাহস হয় না।

হ্যা , মেয়েটা পিংকি ।

রিহানের পিংকি !!!

এবার মেয়েটি সামনে এসে সিগারেটের ধোঁয়া ও আগুন জুতো দিয়ে পিষে ফেলে ।

এরপর চুল ঠিক করে বলেঃ
- চলুন কোথাও বসি ।
: কি দরকার , পিংকি ?
- আছে তো দরকার ? আপনার স্ত্রী কোথায় ?
: নেই ।
- আমার মত তাকেও ছেড়ে গেছেন ।
: আমি ছেড়ে যেতে যাবো ক্যান ?
- তো পালিয়ে বেড়ান ক্যান ।

আর আমাকে আপনি করে বলুন ।
: আপনি !
- বিয়ে করেছো প্রচার করেছো কিন্তু করোনি । কাহিনী কি ? দেবদাস দ্বিতীয় পত্র লিখবে ?

খানিকবাদে একটা ছোট মেয়ে দৌড়ে আসে।
এসে পিংকিকে জড়িয়ে বলেঃ
"আম্মু চল যাই । "

পিংকি বলেঃ
আচ্ছা থাকো ।


বাড়ি যাবে কবে ? বিদেশে গিয়ে বাড়িতে খোঁজ নিতে হয় ।
: মেয়ের নাম কি ?
- অপ্সরী ।
: সেই নামটাই ক্যানো ?
- আমার মেয়ে তাই ।
: বিয়েও করে ফেলেছো ?
- হ্যাঁ ।
: আচ্ছা তাহলে যাই ।


- বাড়ি যাবে কবে ?
: বাবা মাকে ফোন দিয়ে আগে ক্ষমা চাইতে হবে ।

পিংকি অপ্সরীকে নিয়ে চলে যায় ।

রিহান পকেট থেকে সিগারেট আর লাইটার বের করে কিন্তু ধরাতে পারে না । চুপ করে বসে থাকতেই চলে যায় অতীতে ,

পিংকির সাথে ফুসকা খাওয়া বা রাতে একসাথে মুভি বা হাত ধরে বসে থাকার মুহূর্ত মনে করতেই চোখ ঝাপসা হয় ।

মেয়েটা খুব ভালোবাসতো ।

অনেকটা জোর করেই রিহান ফিজিক্যাল রিলেশান করে । বলে মাস কয়েক পর বিয়ে করবে । অথচ আগেই ঠিক করে রাখে বিদেশে যাবে । অন্য এক বড় লোকের মেয়ের সাথে ।

তারপর ?
বিদেশ গিয়ে লিভ টুগেদার করতে বাধ্য হয় ।

অন্য মেয়েটি সবার সাথেই অন্তরঙ্গ হতে চায় ।

অথচ পিংকি জানায় সে প্রেগন্যান্ট । তবু রিহান বিশ্বাস করেনি । ।

বাবা মা ও বলেছিলোঃ পিংকিকে বিয়ে করতে কিন্তু সে শোনেনি ।



সেদিন থেকে যোগাযোগ বন্ধ ।

রাতে খাবার পর বাবার নাম্বারটা ডায়াল করে । একটা পিচ্চি মেয়ে ফোন ধরে বলেঃ
: কে ? Who are you ?
- রিহান ।
: দাদুর সাথে কথা বলতে চাইছেন ?
- হ্যাঁ ।
: আচ্ছা ।


- তোমার নাম ।
: অপরিচিত দের নাম বলতে মানা ।

বলে সরে যায় মেয়েটি । রিহানের মনে হতে থাকে মেয়েটি তার চেনা । খুব পরিচিত স্বর ।

পিংকি ?

- হ্যালো ।
বাবার রাশভারী কন্ঠে বাস্তবে ফিরে আসে ।
: বাবা ?
- কি খবর ? বাড়ি আসবি কখন ?
: তুমি রাগ করো নাই ?
- না ।
: ক্যান ?
- আসলেই বুঝবি ।
: আসছি বাবা ।


- আচ্ছা আয় ।

খানিকবাদে বাবা আবার বলেঃ
তুই দুদিন পর আয় ।

বলে ফোন রেখে দেয় ।

আজ সেই দিন ।
রিহান এসেছে ।


কিন্তু
পুরনো বাড়িটাতে আজ উত্‍সব ।

ঠিক কি কারণে তা কেউ বলছে না । কি কাহিনী ধরতে পারছে না । বরং সবাই তাকে দেখে হাসছে ।

খানিক আগে একমাত্র ছোট বোন এসে একটা ব্যাগ দিয়ে গেছে ।


ব্যাগে বিয়ের পোশাক ।

মা আসলেন । জড়িয়ে কেঁদে বললোঃ
এবার বিয়েটা করে ফেল ।
তোর বাবার অনেক ইচ্ছে ।

প্রথমে রাজী না হলেও পরে রাজি হয় রিহান।


বসে থাকতে থাকতেই পিংকির বান্ধবীকে ফোন দেয় ।
পিংকির বিয়ের কথা জিজ্ঞাসা করতেই বলেঃ পিংকি কাউকে বিয়ে করেনি ।

বিয়ে শুরু হতেই রিহান উঠে দাঁড়ায় । বলে বিয়ে করবো না । বলে দাঁড়াতেই সামনে এসে অপ্সরী দাঁড়ায় ।


বলেঃ তুমি আমার বাবা হবে না ?

নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারে না । কি ভেবে বসে পড়ে । তার মাথা এলোমেলো লাগে । বিভ্রম লাগে ।

বাসরঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ না করেই এগিয়ে যায় মেয়েটির দিকে ।



গিয়ে এক ঝটকায় ঘোমটা খুলে দেয় । ঘোমটা খুলে দিতেই চোখ বড় হয়ে যায় তার ।

চিত্‍কার করে বলেঃ
পিংকি , তুই ?
: চুপ ।
- ক্যান ?
: বাবা শুনবে । শব্দে বাবা ঘুমাতে পারে না ।


- এত বছর এখানেই ছিলি ?
: আপনি করে বলো !
- WHY ME ?
: BECAUSE I LOVE YOU

ইতস্তত করে রিহান । পেছন থেকে অপ্সরী চিত্‍কার করে বলেঃ
I LOVE YOU TOO MA.

রিহান বুকে জড়িয়ে নেয় মেয়েটিকে ।

বাবা এসে একটা থাপ্পর দিয়ে বলেঃ
নালায়েক , এত ভালো একটা মেয়েকে ছেড়ে গেছিস । এত বছর সে তোর অভাব বুঝতে দেয়নি । কিন্তু তোর অভাব দাগ কেটেছিলো ।

আমি ভেবেছিলাম তুই আর আসবি না । ও বলেছিলো আসবি ।

অনেক রাগ অভিমান শেষ হয় ভালোবাসার অশ্রুতে ।

এবার দরজা লাগিয়ে দেখে পিংকি ঘোমটা দিয়েছে । পাশে গিয়ে বসতেই মেয়ে বলেঃ
তুমি এখানে ক্যান ? আমি ঘুমবো মায়ের সাথে ।



-আচ্ছা ।
বলে রিহান বাইরে যায় ।

ফিরে আসে ঘন্টাখানেক পরে ।
: সিগারেট ছাড়তে পারো নি ।
- না ।

তবে আজ থেকে বন্ধ । অন্তত মেয়েটার জন্য ।
: আমার জন্য ।
- ক্ষমা করে দিয়েছো আমায় । তোমায় দেয়ার কি আছে আমার?
: আছে তো !

রিহানের হাতে ঝলমল করতে থাকে একটা পায়েল আর কাঁচের চুঁড়ি ।


পায়েল পড়িয়ে দিতে গিয়েই এক ফোঁটা চোখের জল পরে পিংকির পায়ে । পিংকির হাঁটুতে মাথা ঠেকিয়ে রিহান বলে আমায় ক্ষমা করে দাও ।

কাঁদতে কাঁদতে পিংকি বলেঃ
ক্যান পায়েল বাঁধতেই কেঁদে ফেললে ।
- প্লিজ আমার ভুল হয়েছে । তোমাকে ছেড়ে যেতে ...

রিহানের ঠোঁটে আঙুল ছুইয়ে চুপ করিয়ে দেয় পিংকি ।

বলেঃ
আজকের এই রাতে অতীতের কথা থাকুক । অন্য একদিন খুব করে পিটানি দিবো ।
এখন একটু জড়িয়ে ধরে দেখো তো আগের মতই আছি নাকি মোটু হয়েছি ।

রিহান আস্তে করে জড়িয়ে ধরে । অনুভব করে মেয়েটার চোখের জল থামছে না ।

বুকের মাঝে কত লুকোনো কষ্ট । মেয়েটা শক্ত করে ধরে রাখে ।
রিহান বলেঃ I love you too.


লিখাঃ কাব্যপ্রেমী রিফাত । ।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।