আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনামিকা

শুধু তোকে হাসাতে জোকার সেজেছি, আর তুই কিনা......। অনামিকা শব্দটার অর্থ নামহীন। যাকে নিয়ে লিখছি তার অবশ্য অনেক নাম। সম্পর্কে ও আমার মামাতো বোন। স্কুলের পারভীন ম্যাডাম ওকে ডাকে দস্যি মেয়ে।

বান্ধবীরা ডাকে টারজান কন্যা। কারন, স্কুলে ওর মত দূরন্তপনা কোন ছেলেরও ছিল না। মামা-মামী ডাকে টুকটুকি, ওর দাদী ডাকে বুড়ি। আমি অবশ্য ওকে অনু বলে ডাকি, অনামিকা থেকে অনু। প্রায় দুই বছর পর অনুর জরুরী ফোনে মামাবাড়ি এসেছি।

দরজায় ওকে দেখে বললাম,“কিরে অনু, তুইতো পরমানু হয়ে গেছিস। ডায়েট কন্ট্রোল করে মাইনাস ফিগার বানাচ্ছিস নাকি” (কারিনা কাপুরের জিরো ফিগারের চেয়েও ওকে শুকনা লাগছিল)। অনু বলল,“ হ্যা ”। আশ্চর্য ! অনুকে কেউ খোঁচা দিয়ে কথা বলবে অথচ অনু কিছু বলবেনা এটা কি করে সম্ভব। জিজ্ঞাস করলাম,“কিরে তোর কি শরীর খারাপ?” -না।

আচ্ছা, তুই কি এখনো লেখালেখি করিস”? -“এইতো মাঝেমধ্যে..., কি হয়েছে তোর”? -“কই কিছুই তো হয়নি, আমাকে নিয়ে লিখবি”? -“আচ্ছা লিখব। কিন্তু কি লিখব”। অনু বলতে শুরু করল,“ ভার্সিটিতে ভর্তির পর দিনগুলো দারুন কাটছিল। বেসরকারী ভার্সিটিতে যা হয়, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমার অনেক বন্ধু বান্ধব জুটে গেল। সময়ে-অসময়ে আমরা আড্ডা, গল্পে মেতে উঠতাম।

একদিন আমার ব্যাচের একটা ছেলে আমাকে প্রোপোজ করল। না বলার কোন কারন ছিল না। ছেলেটা যেমন স্মার্ট ছিল, তেমনি ছিল ব্রিলিয়্যান্ট। এর পরের দিনগুলো ছিল স্বপ্নের মত। হঠাৎ একদিন আমার এক দূর্বল মুহুর্তে আমরা কিছু ভুল করে বসি।

ও মুঠোফোনে সেইসব দুর্বল মুহুর্তের ছবি তুলতে চাইলে আমি বাঁধা দেই। ও তখন বলল, তুমি কি আমাকে বিশ্বাস কর না? মেয়েদের ঘায়েল করার সবচেয়ে ভাল প্রশ্ন। আমি আর বাঁধা দিলাম না। ঘটনার এক সপ্তাহ পর আমার কয়েকটা বন্ধুর মুঠোফোনে আমার সেইসব ছবি দেখে আমি তো অবাক...”। কিছুক্ষণ চুপ থেকে অনু আবার বলতে শুরু করে, “তুই হয়তো ভাবছিস মিঠু ছবিগুলো ছড়িয়েছে।

না। কি যেন কাজে ও ঢাকার বাইরে ছিল। ওর ল্যাপটপ ছিল ওর বন্ধুর কাছে। যা হোক, আমি ওকে বিয়ের কথা বললাম। ও বলল, এই মুহুর্তে বিয়ে করা সম্ভব না।

তাছাড়া ওর বাবা-মাও নাকি এ মুহুর্তে আমাকে মেনে নেবে না। ” অনু আবার চুপ হয়ে গেল। “জানিস, আমি আগামীকাল জার্মানী যাচ্ছি। কতবার ভেবেছি আত্মহত্যা করব। বাবা-মার দিকে তাকিয়ে তাও করতে পারিনি।

শোন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই বাংলাদেশের বেশিরভাগ ছেলে মেয়ে বিয়ের আগে কোন না কোন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। আর যেহেতু ডিজিটাল যুগে মোবাইল ক্যামেরা খুবই সহজলভ্য, তাই না বুঝেই অনেকে আমার মত সমস্যায় জড়িয়ে পড়ছে। আমি অবশ্যই খারাপটাকে খারাপ বলছি। কিন্তু এই খারাপ থেকে বাঁচার জন্য আমাদের অবশ্যই সচেতন হতে হবে। জানি ব্যপারটা সহজ না।

কিন্তু আমাদের প্রয়োজনেই আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। একসময় কিন্তু এইডস নিয়ে আমরা খোলাখুলি কথা বলতে পারতাম না। কিন্তু এখন...। আমার মত ভুক্তভোগী হাজার জনের দিকে তাকিয়ে হলেও সচেতন হতে হবে। পরদিন আমরা অনুকে এয়ারপোর্টে রাখতে গেলাম।

এয়ারপোর্ট থেকে ফেরার পথে অনুর শেষ কথাটা আমার কানে বারবার বাঁজছিল। ও বলেছিল,“আমরা মেয়েরা খুবই অসহায়। সাহস করে প্রতিবাদও করতে পারি না। আমার এই গল্প শুনে যদি একটা মেয়েও সচেতন হয়, তবেই আমি সার্থক। বাঁচতে হলে অবশ্যই এবং অবশ্যই আমাদের সব ভুলকে না বলা শিখতে হবে।

গল্পের পিছনের গল্পঃ এই গল্পটা লিখেছিলাম আমার সবচেয়ে কাছের বান্ধবীটা যেন ভুল না করে এই জন্য। অবাক কান্ড!! সে ভুল করে বসে আছে। যারা আমাকে চেনেনা তাদের ব্যাপার জানিনা, আমার বন্ধুরা আমাকে ভালোবাসে। শুধু আমার বন্ধুদের বলছি, “সাবধান...”  ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।