আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধর্ম নিয়ে অনেক মাতামাতি চলছে। আসুন প্রচলিত মূল ধর্মগুলোর ব্যসিক জেনে নেই।

নিজেকে সবসময় সর্বজ্ঞানী মনে হয় বলেই বুঝতে পারি যে আমি মস্ত বোকা অথবা মহামূর্খ। । ইসলামঃ আরবি ভাষায়: الإسلام আল্‌-ইসলাম্‌, একটি একেশ্বরবাদী ধর্ম। "ইসলাম" শব্দের অর্থ "আত্মসমর্পণ", বা একক স্রষ্টার নিকট নিজেকে সমর্পন। খ্রিষ্টিয় সম্তম শতকেআরবের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা মুহাম্মদ (সাঃ) এই ধর্ম প্রচার করেন।

কুরআন ইসলামের মূল ধর্মগ্রন্থ। এই ধর্মে বিশ্বাসীদের মুসলমান বা মুসলিম বলা হয়। কুরআন আল্লাহরবাণী এবং তার কর্তৃক মুহাম্মদের নিকট প্রেরিত বলে মুসলমানরা বিশ্বাস করেন। তাদের বিশ্বাস অনুসারে মুহাম্মদ শেষ নবী। হাদিসে প্রাপ্ত তাঁর নির্দেশিত কাজ ও শিক্ষার ভিত্তিতে কুরআনকে ব্যাখ্যা করা হয়।

ইহুদি ও খ্রিস্ট ধর্মের ন্যায় ইসলাম ধর্মও আব্রাহামীয়। মুসলমানের সংখ্যা আনুমানিক ১৪০ কোটি ও তারা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মাবলম্বী গোষ্ঠী। মুহাম্মদ (সাঃ) ও তার উত্তরসূরীদের প্রচার ও যুদ্ধ জয়ের ফলশ্রুতিতে ইসলাম দ্রুত বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে সমগ্র বিশ্ব জুড়ে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া, মধ্য এশিয়া,দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মুসলমানরা বাস করেন। আরবে এ ধর্মের গোড়া পত্তন হলেও অধিকাংশ মুসলমান |অনারব এবং আরব দেশের মুসলমানরা মোট মুসলমান সংখ্যার শতকরা মাত্র ২০ বিশভাগ।

যুক্তরাজ্যসহ বেশ কিছু ইউরোপীয় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম ইসলাম। ধর্মবিশ্বাস মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাসের মুল ভিত্তি আল্লাহ্‌র একত্তবাদ। মুসলমানরা বিশ্বাস করেন আল্লাহ মানবজাতির জন্য তাঁর বাণী ফেরেস্তা জীব্রাইল (আঃ) মাধ্যমে মুহাম্মদ (সাঃ) এর নিকট অবতীর্ণ করেন। কুরআনে বর্নীত "খতমে নবুয়্যত" এর ভিত্তিতে মুসলমানরা তাঁকে শেষ বাণীবাহক (রাসূল) বলে বিশ্বাস করেন। তারা আরও বিশ্বাস করেন, তাদের পবিত্র গ্রন্থ কুরআন নিখুঁত, অবিকৃত ও মানব এবং জিনজাতির উদ্দেশ্যে অবতীর্ণ আল্লাহর সর্বশেষ বাণী, যা পুনরুত্থান দিবস বা কেয়ামত পর্যন্ত বহাল ও কার্যকর থাকবে।

মুসলমানদের বিশ্বাস, আদম (আঃ) হতে শুরু করে আল্লাহ্-প্রেরিত সকল পুরুষ ইসলামের বাণীই প্রচার করে গেছেন। ইসলামের দৃষ্টিতে ইহুদি ও খ্রিস্টান উভয় ধর্মাবলম্বীরাইআব্রাহামের শিক্ষার ঐতিহ্য পরম্পরা। উভয় ধর্মাবলম্বীকে কুরআনে "আহলে কিতাব" বলে সম্বোধন করা হয়েছে এবং বহুদেবতাবাদীদের থেকে আলাদা করা হয়েছে। এই ধর্ম দুটির গ্রন্থসমূহের বিভিন্ন ঘটনা ও বিষয়ের উল্লেখ কুরআনেও রয়েছে, তবে অনেকক্ষেত্রে রয়েছে পার্থক্য। ইসলামি বিশ্বাসানুসারে এই দুই ধর্মের অনুসারীগণ তাদের নিকট প্রদত্ত আল্লাহ্-এর বাণীর অর্থগত ও নানাবিধ বিকৃতসাধন করেছেন; ইহুদিগণ তৌরাতকে (তোরাহ) ও খ্রিস্টানগণ ইনজিলকে (নতুন বাইবেল)।

মুসলমানদের বিশ্বাস ইসলাম ধর্ম আদি এবং অন্ত এবং স্রষ্টার নিকট একমাত্র গ্রহনযোগ্য ধর্ম। ইহুদি ধর্মঃ একেশ্বরবাদী ধর্ম। ধারণাগত মিল থেকে ধর্মতাত্ত্বিকগণ ধারণা করেন যে, ইহুদি ধর্মের ধারাবাহিকতায় গড়ে উঠেছে খ্রিস্ট ধর্ম, ইসলাম ধর্ম ইত্যাদি ইব্রাহিমীয় ধর্ম। এই ধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থ হিসেবে ওল্ড টেস্টামেন্ট-এর প্রথম পাঁচটি বইকে গণ্য করা হয়: জেনেসিস, এক্সোডাস, লেভিটিকাস, নাম্বার্‌স, এবং ডিউটেরোনমি। এই পাঁচটি বইকে একত্রে "তোরাহ"ও (Torah) বলা হয়ে থাকে।

ইহুদি ধর্মবিশ্বাসমতে, ঈশ্বর এক, আর তাঁকে জেহোবা (Jehovah) নামে আখ্যায়িত করা হয়। মোসেয হলেন ঈশ্বরের একজন বাণীবাহক। ইসলাম ও খ্রিস্টধর্মের মতোই ইহুদিগণ পূর্বতন সকল বাণীবাহককে বিশ্বাস করেন, এবং মনে করেন মোসেযই সর্বশেষ বাণীবাহক। ইহুদিগণ যিশুকে ঈশ্বরের বাণীবাহক হিসেবে অস্বীকার করলেও, খ্রিস্টানগণ ইহুদিদের সবগুলো ধর্মগ্রন্থ (ওল্ড টেস্টামেন্ট)-কে নিজেদের ধর্মগ্রন্থ হিসেবে মান্য করে থাকেন। ইহুদি ধর্ম সেমেটিক ধর্ম হিসেবেও অভিহিত।

ইতিহাস প্রায় ৪,০০০ বছরের ইতিহাসে ইহুদি জনগণ এবং ইহুদি ধর্মের সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় দিক ছিল এর অভিযোজন এবং অবিচ্ছিন্নতা। প্রাচীন মিশর বা ব্যাবিলনিয়া সাম্রাজ্য থেকে শুরু করে আধুনিক পশ্চিমা খ্রিস্টান জনগোষ্ঠী এবং আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষ গোষ্ঠীর সাথে মিথস্ক্রিয়ায় জড়িয়ে পড়তে হয়েছে ইহুদিবাদকে। প্রতিটি গোষ্ঠী এবং মতাদর্শ থেকে বেশ কিছু জিনিস ইহুদি সমাজ-ধর্মীয় কাঠামোতে যুক্ত হয়েছে, কিন্তু তাদের প্রাচীন ঐতিহ্যও কখনও ক্ষূণ্ন হয় নি। এভাবেই একদিকে অভিযোজিত হয়েছে এই ধর্মটি এবং অন্যদিকে তার মৌলিক ঐতিহ্যকে অটুট রেখেছে। এ কারণে যেকোন সময়ের ইহুদি ঐতিহ্য তার পূর্বের সকল ইহুদি ঐতিহ্যের সমন্বয় হিসেবে দেখা দিয়েছে।

কোন এক যুগে যত অভিনবত্ব বা বিবর্তনই আসুক না কেন ঐতিহ্যগত দিক দিয়ে সবসময়ই প্রাচীনত্ব বজায় রেখেছে ইহুদিরা। ইহুদি ধর্মের মূল শিক্ষা প্রায় সবসময়ই একেশ্বরবাদকে করে আবর্তিত হয়েছে। ইহুদিদের মধ্যে অনেক শ্রেণী-উপশ্রেণী থাকলেও এই একটি বিষয়ে কারও মধ্যে দ্বিমত নেই। সবাই এক বাক্যে কেবল এক ঈশ্বরকে মেনে নেয়। একেশ্বরবাদ প্রকৃতপক্ষে সার্বজনীন ধর্মের ধারণা দেয় যদিও এর সাথে কিছুটা স্বাতন্ত্র্যবাদ (particularism) যুক্ত রয়েছে।

প্রাচীন ইসরায়েলে এই স্বাতন্ত্র্যবাদ নির্বাচনের রূপ নিয়েছিল। নির্বাচন বলতে ঈশ্বর কর্তৃক মানুষের মধ্য থেকে কাউকে নিজের প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত করাকে বোঝায়। সেই তখন থেকেই ইহুদিরা মনে করতো, ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে একটি পূর্বপরিকল্পিত চুক্তিপত্র (কোভেন্যান্ট) থাকতে বাধ্য; সবাইকে এই চুক্তিপত্র মেনে চলতে হবে; না চললে পরকালে কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। ইহুদিদের এই চিন্তাধারার সাথে mechanism এর সুন্দর সমন্বয় ঘটেছিল। খ্রিস্ট ধর্মঃ প্রাচীন গ্রিক: Χριστός খ্রিস্তোস্‌ হচ্ছে একেশ্বরবাদী ধর্ম।

নাজারাথের যীশুর জীবন ও শিক্ষাকে কেন্দ্র করে এই ধর্ম বিকশিত হয়েছে। খ্রিস্টানরা মনে করেন যীশুই মসীহ এবং তাঁকে যীশু খ্রীস্ট বলে ডাকেন। খ্রিস্ট ধর্মের শিক্ষা নতুন টেস্টামেন্ট বা নতুন বাইবেলে এ গ্রন্থিত হয়েছে। এই ধর্মাবলম্বীরা খ্রিস্টান পরিচিত। তারা বিশ্বাস করে যে যীশু খ্রীস্ট হচ্ছেন ঈশ্বরের পুত্র।

২০০১ সালের তথ্য অনুযায়ী সারা বিশ্বে ২.১ বিলিয়ন খ্রীস্ট ধর্মের অনুসারী আছে। সে হিসেবে বর্তমানে এটি পৃথিবীর বৃহত্তম ধর্ম। ইউরোপ, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, সাব-সাহারান আফ্রিকা, ফিলিপিন্স দ্বীপপুঞ্জ ও ওশেনিয়া অঞ্চলে খ্রীস্ট ধর্ম প্রধান ধর্ম হিসেবে পালিত হয়। প্রথম শতাব্দীতে একটি ইহুদি ফেরকা হিসেবে এই ধর্মের আবির্ভাব। সঙ্গত কারণে ইহুদি ধর্মের অনেক ধর্মীয় পুস্তক ও ইতিহাসকে এই ধর্মে গ্রহণ করা হয়েছে।

ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ তানাখ বা হিব্রু বাইবেলকে খ্রিস্টানরা পুরাতন বাইবেল বলে থাকে। ইহুদি ও ইসলাম ধর্মের ন্যায় খ্রিস্ট ধর্মও আব্রাহামীয়। জৈন ধর্মঃ সংস্কৃত: जैन धर्म, প্রাচীন ভারতে প্রবর্তিত একটি ধর্মমত। বর্তমানে বিশ্বের নানা দেশে এই ধর্মমতাবলম্বীদের দেখা যায়। জৈনধর্মের মূল বক্তব্য হল সকল জীবের প্রতি শান্তি ও অহিংসার পথ গ্রহণ।

জৈন দর্শন ও ধর্মানুশীলনের মূল কথা হল দৈব চৈতন্যের আধ্যাত্মিক সোপানে স্বচেষ্টায় আত্মার উন্নতি। যে ব্যক্তি বা আত্মা অন্তরের শত্রুকে জয় করে সর্বোচ্চ অবস্থা প্রাপ্ত হন তাঁকে জিন (জিতেন্দ্রিয়) আখ্যা দেওয়া হয়। প্রাচীন ধর্মগ্রন্থগুলিতে জৈনধর্মকে শ্রমণ ধর্ম বা নির্গ্রন্থদের ধর্মও বলা হয়েছে। কথিত আছে, তীর্থঙ্কর নামে চব্বিশ জন মহাজ্ঞানী কৃচ্ছ্বসাধকের একটি ধারা পর্যায়ক্রমে জৈনধর্মকে পুনরুদ্ধার করেছিলেন। [১] এঁদের মধ্যে ত্রাবিংশ তীর্থঙ্কর ছিলেনপার্শ্বনাথ (খ্রিষ্টপূর্ব নবম শতাব্দী) ও সর্বশেষ তীর্থঙ্কর ছিলেন মহাবীর (খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দী)।

আধুনিক বিশ্বে জৈনধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম হলেও এই ধর্ম বেশ প্রভাবশালী। ভারতে জৈন ধর্মবলম্বীদের সংখ্যা প্রায় ১০,২০০,০০০। এছাড়া উত্তর আমেরিকা, পশ্চিম ইউরোপ, দূরপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়াও বিশ্বের অন্যত্রও অভিবাসী জৈনদের দেখা মেলে। জৈনরা প্রাচীন শ্রমণ অর্থাৎ, কৃচ্ছ্বসাধনার ধর্মকে আজও বহন করে নিয়ে চলেছেন। ভারতের অপরাপর ধর্মমত, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তাঁর প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষিত হয়।

শিক্ষাক্ষেত্রে বৃত্তিদানের একটি প্রাচীন প্রথা জৈনদের মধ্যে আজও বিদ্যমান; এবং ভারতে এই সম্প্রদায়ের সাক্ষরতার হার অত্যন্ত উচ্চ। শুধু তাই নয়, জৈন গ্রন্থাগারগুলি দেশের প্রাচীনতম গ্রন্থাগারও বটে। বৌদ্ধধর্মঃ বৌদ্ধ ধর্ম বা ধর্ম (পালি ভাষায় ধম্ম) গৌতম বুদ্ধ কর্তৃক প্রচারিত একটি ধর্ম বিশ্বাস এবং জীবন দর্শন। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দিতে গৌতম বুদ্ধের জন্ম। বুদ্বের পরিনির্বাণের পরে ভারতীয় উপমহাদেশ সহ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার হয়।

বর্তমানে বৌদ্ধ ধর্ম দুটি প্রধান মতবাদে বিভক্ত। প্রধান অংশটি হচ্ছে হীনযান বা থেরবাদ (সংস্কৃত: স্থবিরবাদ)। দ্বিতীয়টি মহাযান নামে পরিচিত। বজ্রযান বা তান্ত্রিক মতবাদটি মহাযানের একটি অংশ। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, মায়ানমার, চীন,জাপান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ও কোরিয়াসহ পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে এই ধর্মবিশ্বাসের অনুসারী রয়েছে।

ব্যুৎপত্তি আক্ষরিক অর্থে "বুদ্ধ" বলতে একজন জ্ঞানপ্রাপ্ত, উদ্বোধিত, জ্ঞানী, জাগরিত মানুষকে বোঝায়। উপাসনার মাধ্যমে উদ্ভাসিত আধ্যাত্মিক উপলব্ধি এবং পরম জ্ঞানকে বোধি বলা হয় (যে অশ্বত্থ গাছের নীচে তপস্যা করতে করতে বুদ্ধদেব বুদ্ধত্ব লাভ করেছিলেন তার নাম এখন বোধি বৃক্ষ)। সেই অর্থে যে কোনও মানুষই বোধপ্রাপ্ত, উদ্বোধিত এবং জাগরিত হতে পারে। সিদ্ধার্থ গৌতম এইকালের এমনই একজন "বুদ্ধ"। আর যে ব্যক্তি এই বোধি জ্ঞান লাভ বা ধারন করেন তাকে বলা হয় বোধিসত্ত্ব।

বোধিসত্ত্ব জন্মের সর্বশেষ জন্ম হল বুদ্ধত্ব লাভের জন্য জন্ম। জাতকে, বুদ্ধ বোধিসত্ত্ব হিসেবে ৫৪৮ (মতান্তরে ৫৪৯) বার বিভিন্ন কূলে (বংশে) জন্ম নেবার আগে উল্লেখ আছে। তিনি তার আগের জন্মগুলোতে প্রচুর ভালো বা পুণ্যের কাজ করেছিলেন বিধায় সর্বশেষ জন্মে বুদ্ধ হবার জন্য জন্ম গ্রহণ করেন। বুদ্ধত্ব লাভের ফলে তিনি এই দুঃখময় পৃথিবীতে আর জন্ম নেবেন না, এটাই ছিলো তাঁর শেষ জন্ম। পরবর্তী বুদ্ধ জন্ম না নেওয়া পর্যন্ত পৃথিবীতে তাঁর শাসন চলবে বুদ্ধের দর্শন বুদ্ধের দর্শনের প্রধান অংশ হচ্ছে দুঃখের কারণ ও তা নিরসনের উপায়।

বাসনা হল সর্ব দুঃখের মূল। বৌদ্ধমতে সর্বপ্রকার বন্ধন থেকে মুক্তিই হচ্ছে প্রধান লক্ষ্য- এটাকে নির্বাণবলা হয়। নির্বাণ শব্দের আক্ষরিক অর্থ নিভে যাওয়া (দীপনির্বাণ, নির্বাণোন্মুখ প্রদীপ), বিলুপ্তি, বিলয়, অবসান। কিন্তু বৌদ্ধ মতে নির্বাণ হল সকল প্রকার দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ। এই সম্বন্ধে বুদ্ধদেবের চারটি উপদেশ যা চারি আর্য সত্য (পালিঃ চত্বারি আর্য্য সত্যানি) নামে পরিচিত।

তিনি অষ্টবিধ উপায়ের মাধ্যমে মধ্যপন্থা অবলম্বনের উপর বিশেষ জোর দিয়েছেন ধর্মগ্রন্থ "ত্রিপিটক" বৌদ্ধদের ধর্মীয় গ্রন্থের নাম যা পালি ভাষায় লিখিত। এটি মূলত বুদ্ধের দর্শন এবং উপদেশের সংকলন। পালি তি-পিটক হতে বাংলায় ত্রিপিটক শব্দের প্রচলন। তিন পিটকের সমন্বিত সমাহারকে ত্রিপিটক বোঝানো হয়েছে। এই তিনটি পিটক হলো বিনয় পিটক , সূত্র পিটক ও অভিধর্ম পিটক।

পিটক শব্দটি পালি । এর অর্থ - ঝুড়ি, পাত্র , বক্স ইত্যাদি। অর্থাৎ যেখানে কোনো কিছু সংরক্ষন করা হয়। বৌদ্ধদের মূল ধর্মীয় গ্রন্থ । খ্রীষ্ট পূর্ব ৩য় শতকে সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে ত্রিপিটক পূর্ণ গ্রন্থ হিসাবে গৃহীত হয়।

এই গ্রন্থের গ্রন্থনের কাজ শুরু হয়েছিল গৌতম বুদ্ধ এর মহাপরিনির্বানের তিন মাস পর অর্থাৎ খ্রীষ্ট পূর্ব ৫৪৩ অব্ধে এবং সমাপ্তি ঘটে খ্রীষ্ট পূর্ব প্রায় ২৩৬ অব্ধে । প্রায় তিনশ বছরে তিনটি সঙ্ঘায়নের মধ্যে এর গ্রন্থায়নের কাজ শেষ হয়। হিন্দু ধর্মঃ ভারতীয় উপমহাদেশের বৃহত্তম তথা একটি দেশীয় ধর্মবিশ্বাস। হিন্দু ধর্মাবলম্বীগণ স্বীয় ধর্মমতকে সনাতন ধর্ম (सनातन धर्म) নামেও অভিহিত করেন। হিন্দুধর্মের সাধারণ "ধরনগুলির" মধ্যে লৌকিক ও বৈদিক হিন্দুধর্ম থেকে বৈষ্ণবধর্মের অনুরূপ ভক্তিবাদী ধারার মতো একাধিক জটিল মতবাদগুলির সমন্বয়ের এক প্রচেষ্টা লক্ষিত হয়।

যোগ, কর্মযোগ ধারণা, ও হিন্দু বিবাহের মতো বিষয়গুলিও হিন্দুধর্মের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। হিন্দুধর্ম একাধিক ধর্মীয় ঐতিহ্যের সমন্বয়ে গঠিত। এই ধর্মের কোনো একক প্রতিষ্ঠাতা নেই। লৌহযুগীয় ভারতের ঐতিহাসিক বৈদিক ধর্মে এই ধর্মের শিকড় নিবদ্ধ। হিন্দুধর্মকে বিশ্বের "প্রাচীনতম জীবিত ধর্মবিশ্বাস" বা "প্রাচীনতম জীবিত প্রধান মতবাদ" আখ্যা দেওয়া হয়।

জনসংখ্যার বিচারে হিন্দুধর্ম খ্রিষ্টধর্ম ও ইসলামের পরেই বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ধর্মমত। এই ধর্মের অনুগামীদের সংখ্যা ১০০ কোটিরও বেশি। এদের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি হিন্দু বাস করেন ভারতীয় প্রজাতন্ত্রে। এছাড়া নেপাল (২৩,০০০,০০০), বাংলাদেশ (১৪,০০০,০০০) ও ইন্দোনেশীয় দ্বীপ বালিতে (৩,৩০০,০০০) উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় হিন্দুরা বাস করেন। হিন্দুধর্মের শাস্ত্রগ্রন্থের সংখ্যা প্রচুর।

হিন্দুশাস্ত্র শ্রুতি ও স্মৃতি নামে দুই ভাগে বিভক্ত। এই গ্রন্থগুলিতে ধর্মতত্ত্ব, দর্শন ও পুরাণ আলোচিত হয়েছে এবং ধর্মানুশীলন সংক্রান্ত নানা তথ্য বিবৃত হয়েছে। এই গ্রন্থগুলির মধ্যে বেদ সর্বপ্রাচীন, সর্বপ্রধান ও সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য প্রধান ধর্মগ্রন্থগুলি হল উপনিষদ্‌, পুরাণ, ও ভারতীয় মহাকাব্য রামায়ণ ওমহাভারত। ভগবদ্গীতা নামে পরিচিত মহাভারতের কৃষ্ণ-কথিত একটি অংশ বিশেষ গুরুত্বসম্পন্ন ধর্মগ্রন্থের মর্যাদা পেয়ে থাকে।

  ব্যুৎপত্তি হিন্দু শব্দটি উৎসারিত হয়েছে সংস্কৃত সিন্ধু শব্দটি থেকে। সিন্ধু ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি ঐতিহাসিক নদীর নাম। ঋগ্বেদে সিন্ধু নদের স্তুতি করা হয়েছে। পরবর্তীকালের আরবিসাহিত্যেও আল-হিন্দ শব্দটির মাধ্যমে সিন্ধু নদ অববাহিকায় বসবাসকারী জনগোষ্ঠীকে বোঝানো হয়েছে। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ভারতের নামের সমার্থক শব্দ হিসেবে হিন্দুস্তান বা হিন্দুস্থান শব্দটির উৎপত্তি হয়।

এই শব্দের আক্ষরিক অর্থ "হিন্দুদের দেশ"। প্রথমদিকে হিন্দু শব্দটি ধর্মনির্বিশেষে ভারতীয় উপমহাদেশের সকল অধিবাসীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল। কেবলমাত্র চৈতন্যচরিতামৃত ও চৈতন্য ভাগবত ইত্যাদি কয়েকটি ষোড়শ-অষ্টাদশ শতাব্দীর বাংলা গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মগ্রন্থে যবন বা ম্লেচ্ছদের থেকে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের পৃথক করার জন্য শব্দটি বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়ে। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে ইউরোপীয় বণিক ও ঔপনিবেশিক শাসকেরা ভারতীয় ধর্মবিশ্বাসগুলিরঅনুগামীদের একত্রে হিন্দু নামে অভিহিত করে। ধীরে ধীরে এই শব্দটি আব্রাহামীয় ধর্মসমূহ অথবা অবৈদিক ধর্মবিশ্বাসগুলির (যেমন জৈনধর্ম, বৌদ্ধধর্ম ও শিখধর্ম) অনুগামী নন এবং সনাতন ধর্ম নামক ধর্মীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এমন সকল ভারতীয় বংশোদ্ভুত ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়ে পড়ে।

ইংরেজি ভাষাতে ভারতের স্থানীয় ধর্মীয়, দার্শনিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগুলি বোঝাতে হিন্দুইজম বা হিন্দুধর্ম কথাটি চালু হয় ঊনবিংশ শতাব্দীতে। ধর্মবিশ্বাস হিন্দুধর্ম এমনই একটি মূলধারার ধর্মবিশ্বাস যা একটি সুবিস্তৃত ভৌগোলিক ক্ষেত্রে এক বহুধাবিভক্ত জাতিগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের মধ্যে দিয়ে বিকাশলাভ করেছে। এই বিকাশলাভ সম্ভবপর হয়েছে মূলত দুটি পন্থায়: হিন্দুধর্মের পুরনো রীতিনীতির নবীকরণ এবং বহিরাগত রীতিনীতি ও সংস্কৃতি থেকে আত্মীকরণ। এর ফলে ধর্মীয় ক্ষেত্রে এক বিরাট বৈচিত্র্যময় সমাবেশ গড়ে উঠেছে। এই সমাবেশে যেমন স্থান পেয়েছে অসংখ্য ছোটো ছোটো আদিম ধর্মমত, তেমনই স্থান পেয়েছে সমগ্র উপমহাদেশে লক্ষাধিক মতাবলম্বী সমন্বিত প্রধান ধর্মসম্প্রদায়গুলিও।

বৌদ্ধধর্ম বা জৈনধর্মের থেকে পৃথক ধর্মবিশ্বাসরূপে হিন্দুধর্মের পরিচিতিও তাই এই মতাবলম্বীদের অনুমোদনসাপেক্ষ বিষয়। ] হিন্দু ধর্মবিশ্বাসের প্রধান উপাদানগুলি হল: ধর্ম (নৈতিকতা/কর্তব্য), সংসার (জন্ম-মৃত্যু-পুনর্জন্মের চক্র), কর্ম (ক্রিয়া ও তার প্রতিক্রিয়া), মোক্ষ (সংসার থেকে মুক্তি) ও বিভিন্ন যোগ (ধর্মানুশীলনের পন্থা) ইত্যাদি। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৬৯ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.