মরক্কোতে ইবনে বতুতা রদেভুর দেখা পেয়েছিলেন, যে তাকে বলেছিল তুমি এরকম বিপদে পরবে আর তোমাকে উদ্ধার করবে দিলশাহ বলে একজন। সত্যি সত্যি আহত ইবনে বতুতা যখন পরে ছিলেন এক লম্বা ভারতীয় এগিয়ে এলেন, নিজের নাম বল্লো দিলশাহ। উনাকে ঘাড়ে করে নিরাপদ আশ্রয় এ নিয়ে এলেন। এরপরে ইবন বতুতা অনেক খুজলেন কিন্তু এলাকা বাসী জানাল এখানে দিলশাহ বলে কেউ থাকেনা...
১৩০৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি মরক্কোর তানজিয়ারে জন্মগ্রহণ করেন এই প্রখ্যাত পরিব্রাজক- ইবনে বতুতা। তার পুরো নাম আবু আবদুল্লাহ মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে মুহম্মদ আল-লাওয়াতি আল তানজি ইবনে বতুতা।
একজন সুন্নি মুসলিম চিন্তাবিদ, বিচারক ধর্মতাত্ত্বিক হিসাবে সারাজীবনই দেশে দেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। আফ্রিকা থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্য, ভারতীয় উপমহাদেশ, মধ্য এশিয়া, দক্ষিণপূর্ব এশিয়া এবং চীন পর্যন্ত বিস্তির্ন এলাকা তিনি ভ্রমন করেছেন। প্রায় ৩০ বছরের ভ্রমণ জীবনে পাড়ি দিয়েছেন ৭৩ হাজার মাইল । আইন বিষয়ে পড়াশোনা করলেও ভ্রমণের প্রতি তার ছি্ল অদম্য স্পৃহা। এই ভ্রমণপিপাসা তাকে মাত্র একুশ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পথে নামায়।
১৩২৫ সালের ১৪ জুন তিনি মক্কা নগরীতে গিয়ে হজ পালনের উদ্দেশ্যে জন্মভূমি ত্যাগ করেন। ইবনে বতুতা নিজের লেখা ভ্রমন কাহিনীতে বাংলাকে অতিথিপরায়ণ একটি সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। ইবন বতুতা ১৩৪৬ খ্রিষ্টাব্দে মালদ্বীপ হইতে ৪৩ দিনে চট্টগ্রামের পথে বাংলায় প্রবেশ করেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের যে শহরে আমরা প্রথম প্রবেশ করি তাঁর নাম ‘সোদকাওয়ান’। সারা জীবন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেরিয়েছেণ।
পৃথিবী ভ্রমণের জন্যই তিনি মূলত বিখ্যাত হয়ে আছেন। তার কিছুকাল পূর্বে ভ্রমণ করে বিখ্যাত হয়েছিলেন মার্কো পোলো। কিন্তু তিনি মার্কো পোলোর চেয়েও বেশি পথ সফর করেছেন।
ইবন বতুতা এর ভ্রমণ কাহিনী হতে জানা যায় যে, সেসময় বাংলাদেশ ইসলাম ধর্ম প্রচারের একটি প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বহু দরবেশ, ফকির ও উলামা বাস করতেন।
বাংলাদেশে তখন তাঁদের বেশ প্রতিপত্তি ছিল। বাংলার সুলতান ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ ফকির দরবেশদের অত্যন্ত ভক্তি করতেন। ইব্ন বতুতা বাংলাদেশের হিন্দু-মুসলমানদের পারস্পরিক সম্পর্কের উপর যে মন্তব্য করেন, তা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ড.রমেশ চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘মুসলমানদের ধর্মের গোঁড়ামি যেমন হিন্দুদেরকে তাদের প্রতি বিমুখ করেছিল, হিন্দুদের সামাজিক গোঁড়ামিও মুসলমানদেরকে তাদের প্রতি সেরূপ বিমুখ করেছিল।
চতুর্দশ শতকে ইবন বতুতা যখন বাংলাদেশ পরিভ্রমণে আসেন তখন তিনি বাজারে দাস-দাসী ক্রয় বিক্রয় হতে দেখেন। তিনি লিখেছেন,“উপ পত্মীরূপে সেবা কর্মের উপযুক্ত একটি সুন্দরী যুবতীকে এক স্বর্ণ দিনারে আমার সম্মুখে বিক্রয় করা হয়।
একটি স্বর্ণ দিনার মরক্কোর স্বর্ণ দিনারের ২.৫০ দিনারের সমান। আমি ‘আশুরা’ নাম্নী একটি যুবতী দাসীকে প্রায় একই মূল্যে ক্রয় করি। দাসীটি অসাধারণ সুন্দরী ছিল। আমার সঙ্গীদের একজন এক স্বর্ণ দিনারে ‘লুলু’ নামে একটি ছোট সুন্দর ক্রীতদাস ক্রয় করেন” ।
ভ্রমণকালে আরব বেদুঈনদের কোনোরকম হামলা এড়াতে তিনি কাফেলায় ঢুকে পড়তেন।
এই দীর্ঘ পরিভ্রমণে একাধিকবার বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন তিনি। ১৩৪৬ সালে ইবনে বতুতা জন্মভূমি মরক্কোর দিকে ফিরতে শুরু করেন। ১৩৬৯ সালে তিনি ইন্তেকাল করেন ।
ইবনে বতুতা -
সফর করেছো কত শত দেশ- মহাদেশ
এখনো কি সফরে আছো সেই দেশ !
যেখানে জীবনের মৃত্যু নেই ! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।