বিশ্বজনীন ও চিরন্তন ইসলাম সপ্তম শতাব্দীতে আবির্ভূত হয়ে মাত্র এক শ বছরের মধ্যে অর্ধ পৃথিবীতে আধ্যত্মিক, নৈতিক ও বস্তুগত উৎকর্ষের জোয়ার সৃষ্টি করছিল। চৌদ্দ ও ষোল শতকে ইউরোপে যে রেনেসাঁ সৃষ্টি হয়, তার পেছনে ছিল মুসলিম বিশ্বের মধ্যযুগীয় সাফল্যেরই প্রেরণা। ইসলামী পুনর্জাগরণ বা ইসলামী গণসচেতনতা কোনও মধ্যযুগীয় ঘটনা নয়। এটি পুরোপুরি সমকালীন বাস্তবতা।
ইসলামের আগমনের পূর্বে খ্রিষ্টধর্মের সর্বত্র বিস্তার ঘটেছিল।
খ্রিষ্টযুগের পূর্বে মিসর, ব্যাবিলন, এশিরীয়, চীন, ভারত, গ্রিস প্রভৃতি পৃথক পৃথক রাজনৈতিক রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটেছিল। সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে বিশ্বসভ্যতায় তাদের ফলপ্রসূ অবদান ছিল এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। গ্রিক দার্শনিকদের চিন্তাধারা মানবজাতির জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করেছে। অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই গ্রিক দর্শনের যেকোনো আলোচনায় সক্রেটিস, প্লেটো এবং এরিস্টটল ছিল সর্বজন প্রশংসিত।
ইবনে খালদুন কে কি সমাজ বিজ্ঞানের জনক বলা যায়?"এক জাতি, এক ভূমি"- এই চেতনা ও আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে একদা যে মুসলিম উম্মাহ্ পরিণত হয়েছিল বিশ্বের প্রভাবশালী সভ্যতায় সেই একই জাতি সিংহাসন হারানোর পর আজ হতবিহ্বল ও দিশেহারা।
ইবনে খালেদুন বিশ্বাস করতেন যে ,ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহের অন্তরালে বিশ্বজনীন আইন সমাজের ভাগ্যকে পরিচালিত করে । তিনি সিদ্ধান্তে পৌছান যে দলীয় সংহতির (আসিবীয়াহ্-asibiyyah) প্রবল বোধই কোনো জাতিকে টিকে থাকতে সক্ষম করে তোলে এবং অনুকূল পরিস্থিতিতে অন্য জাতিকে ও বশীভূত করা যায় । তখন প্রভাবশালী দলটি অধীনের লোকদের সম্পদ আত্মীকরণ করে সংস্কৃতি আর জটিল নাগরিক জীবন গড়ে তুলে বিলাসবহুল জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে । ফলে আবার এক নতুন চক্রের সুচনা ঘটে ।
ইবনে খালদুন মুসলিম বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দার্শনিকদের অন্যতম তিনি।
মুকাদ্দিসা তার রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ। ঐতিহাসিক ইবনে খালদুন আল মুকাদ্দসার দ্বিতীয় খণ্ডে লিখেছেন- জনগণের ওপর অর্থনৈতিক শোষণ ও নির্যাতন চালানো হলে তাদের সম্পদ উপার্জনের স্পৃহা নস্যাৎ হয়ে যায়। যখন স্পৃহা নষ্ট হয়ে যায় তখন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শ্রম ও সাধনা থেকে তারা হাত গুটিয়ে নেয়। আর জনপদ যখন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে শ্রম বিমুখ হয়ে পড়ে তখন বাজারে মন্দা দেখা যায়। দেশের বাসিন্দা হয়ে ওঠে কর্ম বিমূখ এবং উজাড় হয়ে যায় নগর বন্দর আর জনপদ।
ইবনে খালদুন লিখেছেন- ‘জুলুম ব্যাপক অর্থবহ, যারা কোন অধিকার ছাড়া সম্পদ আহরণ করে তারা জালিম। যারা অন্যের সম্পদে অন্যায় হস্তক্ষেপ করে তারা জালিম এবং যারা মানুষের ন্যায্য অধিকার থেকে জনগণকে বঞ্চিত করে তারাও জালিম। মালিকানা হরণ কারীরাও সাধারণত জালিম। এসবের খারাপ প্রতিক্রিয়া পড়ে রাষ্ট্রের উপর সামাজিক বিকৃতির আকারে। সর্বস্তরে জনগণের সম্পদ লোপাট ও সর্বাবস্থায় জনগনকে শোষণ করার অনিবার্য পরিণতি থেকে উদ্ভব হয়েছে ব্যক্তি সমষ্টি সমাজ ও রাষ্ট্রীয় বিকৃতি।
আজ ব্যক্তি চেতনা ক্লেদাক্ত সংকীর্ণ এবং সার্বজনীন আবেদন ও ঔদার্য থেকে অনেক দূরে। সামষ্টিক চেতনায় বিরাজ করছে তীব্র প্রতিযোগিতা পরস্পরের ঘাড়ে পা রেখে আকাশ ছোয়ার আকাঙ্খা সামাজিক বিপর্যয়ের সূচনা করছে প্রতিনিয়ত। রাষ্ট্রীয় চেতানায় রয়েছে প্রভূত্বের দাপট, জনগণের সম্পদ লুণ্ঠনের দুর্নিবার, আকাঙ্খা; আর প্রভূত্বের আসন নিরাপদ করার জন্য লুটেরা মাস্তান দুষ্কৃতকারীদের পৃষ্ঠপোষকতা দানের অলিখিত কার্যক্রম। যে কারণে আজ ৯০ শতাংশ শোষিত বঞ্চিত লুণ্ঠিত মানুষ হতাশা ও বঞ্চনা নিয়ে নিরুপায় হয়ে নির্বিকার চিত্তে দুর্গতির শেষ সীমার দিকে এগিয়ে চলছে।
আল্লামা ইবনে খালদুন (রহঃ) তাঁর মুকাদ্দামায় বলেন, “উক্ত চার ইমামের তাক্বলীদ গোটা বিশ্বে চালু হয়ে গেছে।
অনুসরণীয় ব্যক্তিত্বগণ (আলিমগণ) অন্যান্যদের শিক্ষা দিতে শুরু করলেন এবং সর্বসাধারণের মধ্যে মতবিরোধ ও মতানৈক্যের ধারা বন্ধ করে দিলেন। কারণ দ্বীনী ইল্মের পরিভাষাসমূহ অনেক শাখা-প্রশাখায় ব্যাপক রুপ ধারন করেছে। আর ইজতিহাদের স্তরে পৌঁছার মত প্রতিভার অনেক বিরল হয়ে যাচ্ছিল। তা ছাড়া অনুপযুক্ত-অযোগ্য লোক, যাদের মতামত বা ধর্মের ব্যাপারে, আস্থা রাখা যায়না। এমন ধরনের মুজতাহিদ নামধারীদের প্রাদুর্ভাবের আশংকায়, উক্ত বিদ্যান-অনুসারীরা, নিজেদের বেলায় অপারগতার (নতুন মতামত প্রতিষ্ঠার), অন্যদের নিরুৎসাহিত করনের এবং মুসলমানদের উক্ত চার ইমামের তাক্বলীদের দিকে ধাবিত করতে লাগলেন, নিজ নিজ অনুসরণীয় ব্যক্তিত্বের প্রতি।
আর সতর্ক করতে থাকলেন যাতে কেউ কখনও একজনের আবার কখনও অন্যজনের তাক্বলীদ না করে। কেননা এটা একটা তামাশার বস্তুতে পর্যবসিত হয়ে যাবে। অতঃপর তাদের মাযহাব ব্যতীত অন্য কোন মাযহাবের ধারাবাহিকতা অবশিষ্ট রইল না। প্রত্যেক মুকাল্লিদ ব্যক্তি নিজ নিজ মাযহাব সঠিক সূত্র-পরম্পরা ও পরিশুদ্ধি বজায় রেখে আমল করে আসছেন। যা কিনা বর্তমানে আমাদের সামনে‘ফিকাহ্’ নামে বিদ্যমান।
তা ছাড়া এ যুগে যারা মুজতাহিদ হওযার দাবী করবে, তারা প্রত্যাখ্যাত। তাদের ‘তাক্বলীদ’ বা অনুসরণ নিষিদ্ধ। কেননা, তর্বমানে মুসলিম বিশ্ব উক্ত চার ইমামের তাক্বলীদেই সীমিত হয়ে গেছে। ” ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।