পদ্মার পানি চল্লিশ বছর বাংলাদেশের বুক চিরে বয়ে গেছে। আমরা সেই পানিতে সাতার দিয়েছি, নৌকা বেয়েছি, স্টীমার নামিয়েছি, স্পীডবোড-লঞ্চ ভাসিয়েছি। হাবুডুবু খাইনি এতটা কখনোই।
কিন্তু এইবার আমরা নাকানি চুবানি খাচ্ছি। পানির ঢোক আমাদের গলা অব্দি পৌঁছে গেল বলে।
আমাদের এই ধরাশায়ী অবস্থা দেখে এগিয়ে আসে চায়না, এগিয়ে আসে মালয়শিয়া। এসে আমাদের উদ্ধার করতে চায়। আমরা অসহায়ের মতন আত্মসমর্পণ করতে চাই। কিন্তু একটা উৎকন্ঠা থেকেই যায়-
আমাদের দেশে বাস কিংবা কোনো যানবাহন দৈবাৎ দূর্ঘটনায় পতিত হলে, উদ্ধার করতে যেসব হিতৈষী এগিয়ে আসেন, তাহারা সব্বাই যে সাধুমনা তাহা নয়। সাপোজ, একটা বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কোনও গাড্ডা(খাল)-এ পতিত হৈল।
লোকজন উদ্ধার করিতে হুড়মুড় করিয়া ছুটিয়া আসিলো। টানাহেঁচড়া করিয়া উদ্ধার করা হৈল সকলকে। সকলে আশু মৃত্যুর কবল হৈতে রেহাই পাইয়া 'সুবানাল্লা- সুবানাল্লা' পড়িতে লাগিল। এমন সময় পেছন থাকিয়া কেহবা বেরসিকের মতন তারস্বরে চীক্কর পাড়িয়া উঠিল,"আমার ব্যাগ!!!!"
এরপর সকলের সম্বিত ফিরিতে আর কিঞ্চিত দেরী হৈল না। হাতখানা অটোমেটিক পশ্চাৎদেশে চলিয়া গেল সকল পুরুষ মহোদয়ের।
আর স্ত্রী মহোদয়াগনের আঙ্গুলি সঞ্চালিত হৈল গলা কিংবা কানের লতির আশপাশ দিয়া।
নাই! পশ্চাৎদেশে মানিব্যাগ নাই! আর গলায় কিংবা কানে ঝুলানো এমিটেশনের নব্য কেনা হারখানাও খুঁজিয়া পাওয়া যাইতেছে না আর!
ত, এই হল আমদের উদ্ধার হইবার পরবর্তী অবস্থা!
উদ্ধার পাইবার কালে আমরা যেই হাতখানা আঁকড়ে ধরেছিলাম প্রাণপনে- পরম নির্ভরতায়, প্রাণ সংশয়ের দুঃশ্চিন্তায় তখন ঠাহর করিতে পারি নাই- এই হাতখানা আমাদের উদ্ধার করিতে আসিয়াছে ঠিকই, কিন্তু সেই সাথে স্বর্বসান্ত করিতেও ছাড়িবে না সুনিশ্চিত।
এইবার আসি পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে। বাঙ্গালী স্বপ্নবাজ জাতি। স্বপ্ন দেখার জন্য আমরা উম্মুখ এতটাই যে, কেউ ডিস্টার্ব মারাইতে আসিলে লাথ মারি, কাঁথা মাথায় গুঁজিয়া ফের ঘুমাই।
স্বপ্ন কিংবা দুঃস্বপ্নের দোলাচালে আমরা আমাদের আসল কাজটাই ভুলে যাই হামেশাই(মুখে কিঞ্চিৎ পানির ছিটা দিয়ে আমাদের ঘুম দুর করিতে হয় মাঝে মাঝে)।
নিজের পায়ে দাঁড়ানোর যে স্বপ্নটা আমরা একটু আগে দেখেছিলাম তা পূরণ করার জন্য আমরা ভুলে যাই আমাদের করণীয় কাজগুলোই। ভুলে যাই কাজ- সেই সাথে ভুলে যেতে থাকি স্বপ্নটাকেও।
এরপর আমরা উঠে বসি বিছানায়। আড়মোড়া ভেঙ্গে মনে করতে চাই কী স্বপ্ন দেখলাম আজ।
মনে পড়ে একটু একটু করে। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে আমাদের বুকের গহীন হতে, অজান্তেই।
বাঙ্গালী প্রয়োজনে ওভারটাইম করে হলেও এই স্বপ্নগুলো বাস্তবে পরিনত করার ইচ্ছা পোষন করেছিল(আমাদের গার্মেন্টস শিল্পে যে পরিমান ওভারটাইম জমা হয়, তা এক কথায় বিশ্বয়কর! আর বিদেশে খেঁটে তিলে তিলে নিজেকে কষ্ট দিয়ে যে পরিমান পয়সা পাঠায় প্রবাসী বাঙ্গালী যারা)। বাট, আমাদের রাজনীতিবিদরা স্বপ্ন দেখানোতে যেমন পারদর্শী, স্বপ্ন ভাঙ্গতে তার চে অনেক বেশি ওস্তাদ!
তারপরও আমরা স্বপ্ন দেখার আশায় আবার ঘুমিয়ে পড়ি-
স্বপ্ন কিংবা দুঃস্বপ্ন দেখে জেগে উঠি।
দুঃস্বপ্নের দোলাচাল আমাদের ভীত-সন্ত্রস্ত করলেও আমরা হাল ছাড়ি না।
আমরা পাশ ফিরে আবার কাঁথা টেনে নিই। নকশী কাঁথার প্রতিটি বুনট আমাদের নতুন স্বপ্ন দেখানোর ভরসা যোগায়।
আমরা বারবার ঘুমোতে যাই-
নতুন আরেকটা স্বপ্ন দেখবো বলে।
বেলা গড়িয়ে চলেছে। সোনারোদ এসে ঝিলিক দেয় আমাদের ঘুমচোখে।
আমরা উঠে পড়ব আর কিছুক্ষনের মধ্যেই। স্বপ্নটা আমাদের আর একটু বাকী আছে যে------
(লেখাটায় সাধু চলিত কিংবা স্থানীয় শব্দের ব্যবহার একত্রে মিশ্রিত আছে, সরবতের মত) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।