যেতে চাও যাবে, আকাশও দিগন্তে বাঁধা, কোথায় পালাবে!
(রাজনীতি বিমুখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং আরো দুএকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল তরুণ তরুণী একটা পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেছিল । সেই তরুণ তরুণীদের অংশ হিসাবে কয়েকটি পর্বে তুলে ধরার চেষ্টা করব তাদের স্বপ্ন খুনের সত্য ঘটনা )
বিশ্ববিদ্যালয়ের মামাদের জন্য প্রোগ্রামটির প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে আমরা দু-এক সপ্তাহের মধ্যেই ভুলে গেলাম । আসলে ভুলতে বাধ্য হলাম আমাদের নিয়মিত কাজের চাপে । তখন সেবার স্বর্ণ সময়, নতুন নতুন সদ্স্য পাচ্ছি, নিয়মিত প্রোগ্রামগুলি নিয়ম মেনে হচ্ছে, সেপ্টেম্বরে অসময়ে বন্যা হবার পর মেডিকেল টীম কাজ করলো কয়েকদিন, স্কুল গুলিতে রক্তের গ্রুপিং এর কাজ করবার ব্যাপারে আলোচনা আগাচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রক্তের গ্রুপিং এবং ক্লাসরুম ও চারিপাশ পরিচ্ছন্নতা নিয়ে একটি বড় প্রোগ্রাম করলাম । সব মিলিয়ে সেবা তখন সুখী পরিবারের মত ।
ওই সময় আমরা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেয়া শুরু করলাম, বিশেষ করে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে সেবার কাজকর্মকে পরিচিত করা এবং ছাত্র-ছাত্রীদের মানবতার সেবায় এগিয়ে আসতে উদ্বুদ্ধ করা । এই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের দরকার ছিলো একটি বড় অংকের তহবিল । সেই সময়ে একটা উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা নেই আমরা । মিডিয়া জগতে পরিচিত ছিলো, তাদের দুইজন আমাদের প্রস্তাব দিলেন সেবার ফান্ড সংগ্রহের জন্য একটি বড় কনসার্ট আয়োজনের । পরিকল্পনা অনুযায়ী আর্মি ষ্টেডিয়াম বরাদ্দ নেয়া হলো, আমাদের এক মেয়ের নিকটাত্বীয় ছিলেন তখনকার সিজিএস মে.জে. আমসা আমীন ।
তার সুপারিশেই আর্মি ষ্টেডিয়াম আমরা সহজেই পেয়ে গেলাম । এ সি আই কনজ্যুমার প্রোডাক্টের কোলগেট এগিয়ে আসলো স্পন্সর হিসাবে । ব্যান্ড ঠিক করা হলো, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব নিলো আর্ক ব্যান্ডের একজন সদস্য (নাম প্রকাশ করছিনা তবে তিনি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের সাথে জড়িত) । প্রায় সবকিছু যখন চূড়ান্ত তখন মতবিরোধ দেখা দিলো কনসার্ট লদ্ধ টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে । আমরা টের পেলাম যে আমরা কারো কারো ব্যবসার জন্য ব্যবহৃত হতে যাচ্ছি এবং এত পরিশ্রমের পর সেবার ভাগে আসবে অল্প কিছু টাকা কিন্তু সবাই ধারণা করবে সেবা কয়েকলক্ষ টাকার ফান্ড যোগাড় করেছে ।
অনেক দিন এফোর্ট দেবার পরও আমরা সবদিক বিচার বিবেচনা করে প্রোগ্রাম বাতিল করে দিলাম । তখন কিছু মানুষের অন্যরূপও দেখেছি ।
ক্লাস রুম ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিচ্ছন্নতা
পরিবেশ আন্দোলনের একটি অনুষ্ঠানে আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার এবং মেজাফফর আহমদ স্যারের সাথে কথা বলতে বলতে এই প্রোগ্রামটি ঠিক করলাম আমরা । ঠিক হলো আমরা একিদন ব্যাপী এই প্রোগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাসরুম এবং আশপাশ পরস্কার পরিচ্ছন্ন করবো । যদি সফল হয় তবে প্রতি বছর কমপক্ষে দুইবার এই কাজ করবো ।
যোগাযোগ করলাম ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাথে তারা আমাদের ২০ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী এবং দুইটি গাড়ী দিতে রাজী হলো । আমাদের এক সদস্য ওদের গার্মেন্টস থেকে আমাদের ১০০টি সাদা টি-শার্ট দিলো যেটি পড়ে আমরা কাজ করবো এবং পরবর্তী প্রতিটি প্রোগ্রামেও ওই একই টি শার্ট পড়বো ।
নির্দিষ্ট দিনে মোজাফফর আহমদ স্যার কলাভবনের সামনে আমাদের প্রোগ্রাম উদ্বোধন করলেন । আমাদের সদস্যরা একযোগে কলাভবন, সায়েন্স এনেক্স এবং কার্জন হলে কাজ শুরু করলো । আমরা মুলত: ক্লাসরুম পরিস্কার করছিলাম আর সিটি করপোরেশনের কর্মীদের আশপাশ পরিস্কার করার ব্যাপারে নির্দেশনা দিচ্ছিলাম, প্রয়োজনে নিজেরাও হাত লাগাচ্ছিলাম ।
এই প্রোগ্রামটি করার সময় আমরা বর্তমান ধারার ছাত্র রাজনীতির সাথেও একটু পরিচিত হলাম । ঘটনাটি ঘটলো অপরাজেয় বাংলার পাশে বটগাছটির সামনে যেখানে আমাদের মুল কো-অর্ডিনেশন চলছিল । ঠিক ছিলো যে আমাদের সদস্যরা তাদের ক্লাসের সময় অনুযায়ী আসবে এবং কাজ করবে । তাই বেশ কিছু টি-শার্ট রাখা ছিলো ওখানে সদস্যদের জন্য । এমন সময় আমাদের একটি মেয়ে আমাকে এসে জানালো কয়েকজন ছেলে এসে প্রায় ১৫-২০টির মত টি-শার্ট নিয়ে যেতে চাইছে এবং আমি যেন ব্যাপারটি দেখি ।
আমি গেলাম, জানতে চাইলাম যে কেন তারা টি-শার্ট চাইছেন । আমাকে দেখে তাদের নেতা বলল যে তারা একটি বিশেষ দলের নেতা-কর্মী (২০০২ সালের ঘটনা বুঝতেই পারছেন) এবং তারাও পরিচ্ছন্নতার কাজ করবেন সময় সুযোগ মতো আর সেজন্য এই কটি টি-শার্ট নিয়ে যাচ্ছেন । আর বললেন আমাদের সভাপতিকে ডাক দিতে.. যখন বললাম আমিই সভাপতি এবং টি-শার্ট তাদেরকে দিতে পারবোনা কেননা এটি শুধু সদস্যদের জন্য । আমার সাদামাটা চেহারা দেখে নিশ্চিতভাবেই তাদের পছন্দ হলোনা...একবার তাকিয়ে ... নিয়ে গেলাম বলে তারা ২০টি টি-শার্ট নিয়ে চলে গেল। আমাদের সদস্যরা বলল বাদ দেন মিরাজ ভাই ।
এটাই নিয়ম, ছাত্র রাজনীতি যারা করে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকিছুই ফাও পাওয়ার অধিকারী । যাহোক আমাদের প্রোগ্রাম আর কোন অঘটন ছাড়া ভালোভাবেই শেষ হলো ।
অত:পর স্বপ্ন খুন
এই পর্যন্ত লিখে থমকে ছিলাম অনেকক্ষন । স্বপ্ন খুনের কথা লিখতে ইচ্ছা করছিলোনা । কেউ কি তার সন্তান হত্যার কথা অকপটে লিখতে পারেন? সেবা ছিলো আমার প্রথম সন্তান ।
একদল তরুণের তারুণ্যের স্বপ্ন, যাকে নিয়ে আমরা ছুটে বেরিয়েছি দেশের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্তে ...সেই স্বপ্নটি খুন হলো হঠাৎ করেই । কোন পূর্বলক্ষণ...কোন ইঙ্গিত কোন কিছুই ছাড়া ।
২০০২ এর ডিসেম্বর । সেবার আমরা অনেক বড় পরিসরে শীত বস্ত্র বিতরণ করলাম, বিজয়ের মাস উপলক্ষে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেবার মল চত্বরে একটি মেলা আয়োজন করলো । আমাদের একটি ষ্টল নিলাম সেখানে এবং আমাদের চারুকলার সদস্যদের আকা জলরং এর ছবিগুলি আমরা বিক্রি করছিলাম তহবিল সংগ্রহের জন্য ।
হঠাৎ করে ১৪ই ডিসেম্বর সকাল বেলা আমাদের সাধারণ সম্পাদক ফারহানা রুমার ফোন পেলাম যে আমাদের নিয়ে জনকন্ঠের প্রথম পাতায় একটি রিপোর্ট ছাপা হয়েছে, শিরোনাম "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টি এস সি তে শিবিরের সংগঠন সেবা" ।
সাথে সাথে ফোনে সবাইকে টি এস সি অফিসে আসতে বলে ছুটলাম টি এস সিতে । আসার পথে জনকন্ঠ কিনে দেখলাম রিপোর্টটি । সেখানে বলা হয়েছে "সেবা" একটি শিবিরের সংগঠন এবং এই ব্যাপারে রিপোর্টারের কাছে বিশ্বস্ত সূত্রের খবর রয়েছে । জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরকে প্রতিষ্ঠার জন্য ভূইফোর এই সংগঠনটিকে অনেক বড় বড় সাংস্কৃতিক সংগঠনকে পাশ কাটিয়ে টি এস সিতে অফিস দেওয়া হয়েছে ।
এ বিষয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের গোলাম কুদ্দুস সাহেবের একটি বক্তব্য রিপোর্টে দেওয়া হলো এবং তিনি এই ধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা করলেন । সবশেষে "সেবা" এর শিবির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ হিসাবে জানানো হলো এর সভাপতি শিবিরের একজন নেতা এবং শিবির করার অপরাধে তাকে পূর্বে একবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস এম হল থেকে মারপিট করে বহিস্কার করা হয়েছে । এই হলো রিপোর্ট । রিপোর্টটি ছাপা হয়েছে প্রথম পাতায় নিচের দিকে বড় করে ।
রিপোর্টটি কে করেছেন তার কোন নাম দেওয়া নেই ।
এবং আমি অবাক হয়ে গেলাম একটি জাতীয় দৈনিকের মিথ্যাচারের নমুনা দেখে । পুরো রিপোর্টে কোন ভিত্তি ছাড়াই আমাদের নামে একটি বড় কলংক যোগ করে দেওয়া হলো এবং সবশেষে প্রমাণ হিসাবে যেটি বলা হলো সেটি সবচেয়ে বড় মিথ্যাচার । সেবা ছিল আমার ব্রেইনচাইল্ড, প্রতিষ্ঠা থেকেই আমি সেবার সভাপতি, শিবির করারতো প্রশ্নই আসেনা আর আমি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কোনদিন হলেই থাকিনি । এখন এই সেবার সভাপতির এস এম হল থেকে শিবির করার অপরাধে মারপিট করার কথা রিপোর্টার কোথায় পেলেন? টি এস সি আসতে আসতে মনে হচ্ছিল, একটি দু:স্বপ্ন দেখছি, কোথাও একটি বড় ধরণের ভুল হয়ে গেছে এবং কোনভাবেই বিশ্বাস করতে পারছিলামনা যে আমাদের নিয়ে সত্যি সত্যিই এমন একটি রিপোর্ট করা হয়েছে ।
টি এস সি অফিসে এসে দেখি ততক্ষণে অনেকে চলে এসেছেন ।
সবার মুখ থমথমে, সবাই ক্ষুদ্ধ এবং অবাক হয়ে দেখলাম দুএকজন ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে । আসলে এতবড় একটি অপমান কেউ মেনে নিতে পারছিলামনা । এতদিন ধরে রক্ত দিয়ে, ঘাম দিয়ে, সময় আর নিষ্ঠা দিয়ে আমরা যে সংগঠনটি গড়ে তুলেছি তাকে নিয়ে এ ধরণের একটি রিপোর্ট মনে হচ্ছিল, আমাদের বুকে কেউ ছুরি বসিয়ে দিয়েছে । সাথে সাথে মিটিং এ বসে আমাদের কর্মপন্থা ঠিক করলাম । প্রথম কাজ জনকন্ঠে যাওয়া, আমাদের প্রতিবাদ জানানো, তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করা ।
সমগ্র পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে এবং প্রকাশিত ভিত্তিহীন রিপোর্টের জন্য জনকন্ঠ এবং প্রতিবেদকের নিঃশর্ত ক্ষমা দাবী করে আমরা একটি প্রতিবাদ পত্র রেডী করলাম ।
দেখা গেল আমাদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য একটি মেয়ের নিকটাত্বীয় জনকন্ঠের তখনকার ফিচার সম্পাদক কবি নাসির আহমেদ । এবং তিনি আমাদের কাজকর্ম সম্পর্কে জানেন । ঠিক হলো জনকন্ঠ অফিসে যেয়ে প্রথমে তার সাথেই দেখা করবো । তাকে ফোন করে সব জানানো হলো এবং তিনি তখুনি চলে আসতে বললেন ।
আমরা যেয়ে তাকে সবকিছু ব্যাখ্যা করলাম, আমাদের অনেকের চোখেই ক্ষোভের আর বেদনার অশ্রু । তিনি আমাদের জানালেন যে তিনি আমাদের সম্পর্কে জানেন এবং এরকম একটি সংবাদ আমাদের সম্পর্কে কিভাবে তার পত্রিকাতে ছাপা হলো তিনি বুঝতে পারছেননা । তিনি আমাদের নিয়ে গেলেন বার্তা সম্পাদকের কক্ষে এবং স্পষ্ট করে বললেন "এরা আমার ছেলেমেয়ে আমি এদেরকে ভালো করে চিনি, যদি এরা রাজাকার হয় তাহলে আমি আরো বড় রাজাকার, এরা শিবির হলে আমিও শিবির । এই রিপোর্টের জন্য জনকন্ঠকে ক্ষমা চাইতে হবে । " বার্তা সম্পাদক আমাদের কাছে দু:খ প্রকাশ করলেন এবং বললেন আমাদের প্রতিবাদ তিনি প্রথম পাতাতে একই জায়গায় প্রকাশিত রিপোর্টের সমান কলাম সাইজ দিয়ে ছাপবেন এবং রিপোর্টের জন্য জনকন্ঠ দু:খ প্রকাশ করবে ।
আমরা তার কাছে জানতে চাইলাম ন্যূনতম কোন যাচাই করা ছাড়া তারা এরকম একটি রিপোর্ট কিভাবে ছাপালেন । উত্তরে তিনি বললেন তিনি রিপোর্টটির ব্যাপারে জানতেননা এবং এখন বুঝতে পারছেন কোথাও একটি বড় ধরণের ভুল হয়েছে এবং যে রিপোর্টটি করেছে তাকে এর জন্য শাস্তি পেতে হবে ।
সেবার কোন রাজনৈতিক অবস্থান না থাকলেও যারা প্রতিষ্ঠাতা এবং বিভিন্ন পদে ছিলাম সবাই স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসীএবং প্রগতিশীল চিন্তার অধিকারী ছিলাম । সেবার পরিচয় হিসাবে আমরা ব্যানার, লিফলেটে লিখতাম "প্রগতিশীল ছাত্র-ছাত্রীদের মানবতাবাদী সংগঠন" । আমরা আমাদের প্রতিবাদ পত্রে সকলের সম্মতি নিয়ে স্পষ্ট করে লিখলাম "সেবা শিবিরের রাজনৈতিক অবস্থানকে ঘৃণা করে" ।
জনকন্ঠ থেকে ফিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে একটি তাৎক্ষনিক সংবাদ সম্মেলন করে আমাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করলাম এবং প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ করলাম । উপস্থিত সাংবাদিকরা আমাদের প্রতি সহমর্মী হলেও তারা জানালেন যে, যেহেতু সংবাদটি অন্য কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়নি তাই তারা এ বিষয়ে তাদের পত্রিকাতে রিপোর্ট করতে পারবেননা । সেখান থেকে আরো জানলাম যে জনকন্ঠের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদককে এর আগে সমিতি থেকে বহিস্কার করা হয়েছে । তবে একজন জানালেন যে রিপোর্টটি জনকন্ঠের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক করেননি, অন্য কেউ করেছে ।
পরদিন সকাল বেলা জনকন্ঠে আমাদের প্রতিবাদ পত্রটি হুবহু ছাপা হলো ।
তবে প্রথম পাতায় নয়, শেষ পাতায় । তিন কলাম এবং একইরকম বড় শিরোনাম দিয়ে কিন্তু কথা রাখলোনা জনকন্ঠ । কথা ছিলো তারা প্রকাশিত সংবাদের জন্য দু:খ প্রকাশ করবে, সেটি তারা করলোনা ।
সেইদিনই প্রকাশিত রিপোর্ট আর প্রতিবাদপত্র নিয়ে আমার কিছু সাংবাদিক বন্ধুর সাথে দেখা করলাম । প্রথমে গেলাম যায় যায় দিনে ।
যায় যায় দিন তখনো সাপ্তাহিক, আমার খুব কাছের বন্ধু সায়ন্থ সাখাওয়াত তখন যায় যায় দিনে প্রেস নোটস লেখে । সেদিন ছিলো পেষ্টিং এর দিন। এর মধ্যেও সাখাওয়াৎ প্রেস নোটস এ বিস্তারিতভাবে ব্যাপারটি লিখলো । স্বদেশ রায় তখনো যায় যায় দিনে, তার সাথে সায়ন্থর সুবাদে ভালই পরিচয় ছিলো । তিনিও আমাদের সম্পর্কে কিছু জানতেন ।
সবকিছু দেখে বললেন "জনকন্ঠ একটি অন্যায় করেছে কিন্তু আপনারাতো শেষ হয়ে গেলেন । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের ট্যাগ নিয়ে একবার যে সংগঠনের নামে রিপোর্ট এসেছে, সেই সংগঠন আপনি আর টিকাতে পারবেননা " । সেদিন বিশ্বাস করিনি কিন্তু এখন বুঝতে পারি কতবড় একটি সত্য কথা বলেছিলেন স্বদেশ রায় ।
তবে আমরা এত সহজে হাল ছেড়ে দেবার পাত্র ছিলামনা । সকল প্রতিকুলতা, রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে লড়েছি স্বপ্নকে বাচিয়ে রাখবার জন্য ।
সেই লড়াইয়ে পাশে এসে দাড়িয়েছিলেন আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, পরিবেশ আন্দোলনের আবু নাসের খান, প্রথম আলোর আনিসুল হক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির তখনকার সভাপতি ইত্তেফাকের সাহাবুল হক সাবু এবং আমার কিছু সাংবাদিক বন্ধু। আগামী পর্ব যেটি হবে এই সিরিজের শেষ পর্ব সেখানে মৃত্যুর আগেকার সেই লড়াইয়ের গল্প বলবো ।
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।