সকল প্রসংশা আল্লাহর জন্য। আমার চলমান মেইল এড্রেস ঃ shimantodhk2010@gmail.com ,
ভোরের সকালে শিশির ভেজা ঘাস গুলোর উপরে সুর্যের আলো পড়ে চক চক করছে। মনে হচ্ছে এই মাঠটির উপরে স্বর্গ থেকে মুক্তোর বৃস্টি হয়েছে। আর আমি একা একদম একা, ধু-ধু প্রান্তর, আশে পাশে কেউ নেই। দূরে দেখা যাচ্ছে কৃষক গরু নিয়ে জমির আইলের উপর দিয়ে হেটে যাছে।
হাটু গেড়ে বসে একটু উপর হয়ে শিশির ভেজা ঘাস গুলো ছুয়ে দেখলাম। কেন জানি আমার কাছে অসম্ভব ভালো লাগছে হাত দিয়ে শিশির ভেজা ঘাস গুলো নাড়াচারা করতে। কেন? এতো ভালো লাগছে কেন?
ওহ আচ্ছা আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম আমি ইট আর কংক্রীটের পাথরের দালানে বেড়ে উঠা একজন মানুষ। যার হাত মোবাইল, কম্পু কী-বোর্ড নাড়া চারা করতেই অভ্যস্ত। যে অফিস, রেস্টুরেন্ট, ফ্রেন্ড, ফ্লাট বাসাতেই যাপিত জীবনেই অভ্যস্ত।
যার কাছে সময়ের মুল্য অনেক । তার কাছে শিশির ভেজা ঘাস তো তার কাছে অনেক আন কমন ব্যাপার। চারিদিকে শুন শান নীরবতা। পাখীর কিচির মিচির শব্দ আর ডানপাশে একটি বাড়ীতে নলকুপ টিউবয়েল চেপে পানি উঠানোর শব্দ আমার কানে আসছে।
পাশে একটি রাখাল বালক দ্রুত হেটে যাচ্ছে।
প্রকৃতির এই সৌন্দর্যের দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। থাকবেই বা কি ভাবে, সে তো এখানে অভ্যস্ত। কিন্তু প্রকৃতির এই সৌন্দর্য আমার কাছে হাজার হাজার টাকা খরচ করে সিনেমার বা গেমসের সিডি উপভোগ করার চাইতেও অনেক দামী। অনেক মুল্যবান।
কতোদিন-কতোদিন পরে এসেছি আমার দেশের বাড়ীতে সেটা আমার নিজেরো অজানা।
মনে হচ্ছে একবছরের বেশী হবে। আর আমি যেই জমির উপরে দাঁড়িয়ে আছি এটা আমাদের জমি। কিছু দূর পেছনের দিকে হেটে গেলেই আমার দাদা বাড়ী। দাদা-দাদী দু-জনেই পরলোক গমন করেছেন। বাড়ীর উঠান আমার বাবা-চাচা-ফুফু দের ভিতরে ভাগ হয়ে গেছে।
আমার হাতের বাম পাশে আধা কিলো দূরে আছে পাদ্মা নদী। কুয়াশায় ঢাকা নদীর মাঝা-মাঝি পর্যন্ত কিছুই দেখা যাচ্ছে না। বেলা আরো বাড়লে কিছুটা ক্লীয়ার দেখা যাবে। ঠান্ডা কনকনে হিমেল হাওয়া আমাকে যেন কঠিন ভাবে আঘাত করছে। কস্টে দাতে দাত চেপে রেখেছি।
মনটা বার বার চায় ছুটির অবসরে এখানে ছুটে চলে আসতে। প্রকৃতি আমাকে বার বার টানে । আমার গ্রামের প্রকৃতি আমাকে সব সময়ই ভাবুক করে দেয়, উদাস করে দেয়, বিষন্ন করে দেয়। কিন্তু কেন যেন আসতে পারি না, কেন যেন সময়ই হয় না। ঢাকা শহরের এতো কাছে আমার বাড়ী তবুও মনে হয় যোজন যোজন বাধা।
আমার মনে একটি স্বপ্ন আছে, সেটা এই জমিকে নিয়ে। বহু দিন ধরে আমার স্বপ্ন টাকে মনের গভীরে লালন করে রেখেছি । জানি না আমার সেই স্বপ্ন পুরন হবে কিনা। আমার ইচ্ছা এখানে একটি সিমেন্ট ফ্যাক্টরী স্থাপন করবো। আমি জানি সিমেন্ট ইন্ড্রাস্টী করার জন্য অগনিত পরিমান টাকা প্রয়োজন।
আর প্রয়োজন অনেক অনেক লজিস্টিক সাপোর্ট অনেক প্লান। জানি না কোনো দিন সফল হবো কিনা, তার পরেও স্বপ্ন দেখি, অনুভব করি। স্বপ্ন দেখি বলেই বেচে আছি।
একটু হেটে ডান পাশের বাড়িতে ঢুকলাম- বিশাল উঠান, এই বাড়ীতে যারা থাকে তারা আমাদের দূর সম্পর্কের আত্নীয়। পুকুর ঘাটে গিয়ে উপুর হয়ে বসে পানির দিকে তাকাচ্ছি।
পানি দেখছি আর ভাবছি-আমি বড় হয়েছি চট্রগ্রামে, সমস্ত শৈশব কেটেছে চট্রগ্রামে বেশীরভাগ। ছোট বেলায় যখন বাড়ীতে বাবা মায়ের সাথে বেড়াতে আসতাম তখন আমার সমবয়সী চাচাতো ভাই বোনদের সাথে এই পুকুরেই অনেক হৈ-হুল্লোর করতাম। এই পুকুর নিয়ে অনেক মজার কাহিনী আছে। আমার সেই শৈশবকে অনেক মিস করি।
পুকুরে কোনোই ঢেউ নেই, টলটলে স্বচ্ছ কাচের মতন পানি, নিজের চেহারা যেন স্বচ্ছ কাচের চাইতেও পরিস্কার দেখতে পাচ্ছি।
প্রতিদিন নিজেকে আমার বেডরুমের আয়নায় যেমন দেখি আজকে যেন আমি অন্য ভাবে দেখছি। অবাক হয়ে নিজের দিকেই বার বার তাকাই, আমি কি সেই ? এই কি সেই আমি ?এতো তারা তারী আমি কিভাবে বড় হয়ে গেলাম? প্রতিদিন যায় আর আমার বয়স বাড়ে। বয়স কি থেমে থাকে? নাহ কখনোই থামেনা। কি ভাবে যেনো সময় দ্রুতই জীবন থেকে চলে যাচ্ছে।
পুকুরের স্বচ্ছ কাচের পানিতে দেখতে পাচ্ছি আমার চোখের নিচে হালকা কালো দাগ পড়েছে।
কপালে সামান্য কিছু ভাজ বুঝা যাচ্ছে। মনে মনে নিজেকেই শান্তনা দেই- কতই বা বয়স হলোরে তোর ২৮ পেরিয়ে ২৯ শে ছুই ছুই করছে। এখনো বিয়ে করিনি। জানি না কবে বিয়ে করবো, কাকেই বা জীবন সঙ্গী হিসেবে পাবো। অনেক অনেক অজানা আকাঙ্ক্ষা আর চাওয়াতে অদ্ভুদ ভাবেই শিহরিত হই।
জীবনটা কতই না বৈচিত্রময়, কতই না ভিন্ন ঘটনাতে ঘনঘটা।
একজনকে অনেক অনেক ভালোবাসতাম, যার জন্য সব কিছুই উজার করে দিতে পারতাম। যাকে একবার না দেখলে প্রান যেন দেহের খাচা থেকে বের হয়ে যেতে চাইতো। পাগলের মতন হয়ে যেতাম। কিন্তু কিভাবে যেন তাকে হারানোর যন্ত্রনা সয়ে গেছি।
সে নেই আমার জীবনে আজ প্রায় অর্ধযুগ হতে চললো, কিন্তু তবুও কেন যেন তাকে মনে পড়ে। জীবনের কিছুটা অবসর পেলেই তাকে মনে পড়ে। খুব জানতে ইচ্ছা করে সে এখন কেমন আছে, তার সাথে কাটানো সময় গুলো যেনো এখন আমার কাছে সোনালী অতীত। তার স্মৃতি কোনো দিনো ভুলার নয়। জীবনে অনেক কিছুই পেয়েছি, কিন্তু তাকে হারানোর অপুর্নতা হয়ত কোনো দিনো পুরন হবে না।
হঠাৎ আমার চিন্তায় ব্যাবচ্ছেদ ঘটলো। পুকুরে কতো গুলো হাস নেমেছে, পানিতে ঢেউ উঠেছে।
পুকুর থেকে সরে গিয়ে দুরের পদ্মা নদীর দিকে দৃস্টি দিলাম। নদীর দিক থেকে কনকনে হিমেল হাওয়া আসছে। আমার সুয়েটার ভেদ করে যেন ঠান্ডা বাতাস আমার উষ্ণ শরীরকে কাটার মতন বিদ্ধ করছে।
আর নদীর দিকে যাওয়ার পথে আছে অনেক অনেক গাছ গাছালী। ছোট বেলায় যখন বেড়াতে আসতাম তখন আমার চাচার কাছে ভুতের গল্প শোনার জন্য বায়না ধরতাম। আমার চাচাতো-ভাই আর আমি সহ আমার সেঝ চাচাকে নিয়ে বাংলাঘরের বারান্দায় চৌকিতে বসে গল্প শুনতাম। ভুতের গল্পে ভয়ে শরীরে কাপুনি ধরতো, তবুও বায়না করতাম একটার পরে যেন একটা ভুতের গল্প বলেন। আর ভয়ে ভয়ে জানালা দিয়ে নদীর পথে যেতে গাছ গুলোর দিকে তাকাতাম।
বিশেষ করে একটা মান্দার গাছকে আমি ভীষন ভাবে ভয় পেতাম। আর রাতের বেলা জড়-সর হয়ে বাবার পাশে শুয়ে থাকতাম।
হঠাৎ আমার চাচাতো ভাইয়ের ডাকে সম্বিত ফিরে পেলাম। আমার চিন্তায় বিচ্ছেদ ঘটলো।
-ভাই, ঐ ভাই.....তুমি কই? তুমি না কইয়া হেনে আইসো কে? মায় তুমারে ডাকপারতাছে।
তুমার গাড়ী আয়া পড়ছে। তারা-তারী বাইত্তে আহো।
আমার পিচ্চি ছোট চাচাতো ভাই আমার হাত ধরে টানছে। বাড়ী পৌছে দেখি আমাকে নেয়ার জন্য ক্যাব রেডী। নুরু মিয়াকে পাঠিয়েছিলাম গাড়ী ঠিক করার জন্য।
আমার চাচী আমার জন্য পিঠা রেডী করে রেখেছে সাথে দেয়ার জন্য। ঘড়ীর দিকে তাকালাম সকাল ৯ টা বাজে। সাড়ে দশটার মধ্যেই ঢাকায় পৌছে যাবো। গাড়ী ধীরে ধীরে চলতে শুরু করলো। পেছনে পড়ে রইলো আমার স্মৃতি বিজড়িত অনেক অনেক সুন্দর প্রকৃতি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।