আমরা কেন কল্পনা করি? কেন আমরা স্বপ্ন দেখি? সেই ছোটবেলা থেকে? কি দরকার? ওইদিন একটা মুভি দেখলাম। দেখে এই কথাটা খুব মনে হচ্ছিল। মুভিটার নাম টুথ ফেইরি।
ডেরিক থমসন একজন হকি খেলোয়াড়। সে তার ভাল খেলার কারণে বিখ্যাত।
সে বিখ্যাত 'টুথ ফেইরি' নামে। কারণ খেলার মাঝে সে বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়কে এমনভাবে আঘাত করে যেন তাদের দাঁত পড়ে যায়। দাঁত নিয়ে যায় বলে 'টুথ ফেইরি'।
ডেরিক ভালবাসে কার্লিকে, যার আগের সংসারে দুটো ছোট ছোট বাচ্চা ছিল, র্যান্ডি আর টেস। ডেরিকের কাজ হল তাদের বাবা হিসেবে নিজের অবস্থান তৈরি করা।
টেস যদিও ডেরিকের মহাভক্ত, র্যান্ডি কিন্তু তার মায়ের বয়ফ্রেন্ডকে মোটেই সহ্য করতে পারে না।
ঘটনার শুরু ছোট্ট টেস যেদিন তার একটা দাঁত হারাল সেদিন থেকে। বাচ্চারা বিশ্বাস করে পড়ে যাওয়া দাঁত বালিশের নিচে রেখে ঘুমালে রাতের বেলা টুথ ফেইরি এসে দাঁত নিয়ে ডলার রেখে যাবে। তার মা আগে-ভাগেই ডলার রেখে গেলেও ডেরিক বন্ধুদের সাথে তাস খেলার জন্য সেটা নিয়ে গেল। আর ঘুম ভেঙে তো ডলার না পেয়ে লিলি মহা হৈ চৈ।
তার কল্পনার টুথ ফেইরি এল না, ডলার দিয়ে গেল না তাই নিয়ে তার ভীষণ মন খারাপ। তখন ডেরিক এসে বেরসিকের মত বলে বসল, 'ওইসব টুথ ফেইর-টেইরি সব ভুয়া। ওগুলো তোমার কল্পনা ছাড়া আর কিছুইনা। ওইসব বিশ্বাস করতে নেই। ' হেন তেন আরো কত কি! লিলি বেচারিরতো কি মন খারাপ।
সেরাতে হঠাৎ করে ডেরিকের ঘুম ভেঙে গেল। বালিশের নিচ থেকে একটা কার্ড বেরুল, যাতে লেখা "অবিশ্বাসের জন্য শাস্তি"। এটা দেখতে দেখতেই তার পিঠে দুটো ডানা গজাল আর সে হঠাৎ করে চলে এল পরীরাজ্যে। সেখানে পাখাওয়ালা সব পরীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। পরীরাজ্যের রানী এসে বলল, 'তুমি ছোট্ট বাচ্চাটির কল্পনা ভেঙে দিয়েছো, তার মনে কষ্ট দিয়েছো।
তুমি বলেছো টুথ ফেইরি বলে কিছু নেই। দেখো, আমরাই টুথ ফেইরি। এখন শাস্তি হিসেবে তুমি দুই সপ্তাহ টুথ ফেইরি হিসিবে দায়িত্ব পালন করবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাচ্চাদের দাঁত নিয়ে ডলার রেখে আসবে। '
শুরু হল টুথ ফেইরি হিসেবে ডেরিকের দায়িত্ব পালন।
তাকে দেয়া হল বিভিন্ন জাদু সরঞ্জাম। একটা পেস্ট, যেটা খেলে ইঁদুরের মত ছোট হয়ে যাবে। একটা স্প্রে, যেটা গায়ে দিলে অদৃশ্য হয়ে যাবে। একটা পাউডার, যেটা ছড়িয়ে দিলে সবাই সব ভুলে যাবে। ডেরিক একেক রাতে একেকটা বাড়িতে যায় আর ভীষণ মজার মজার কান্ড করে দাঁত নিয়ে এসে পরীরানীর কাছে জমা দেয়।
কিন্তু সে ত্যক্ত-বিরক্ত। কি দরকার এত ঝামেলা করার? ডেরিক বুঝতে পারে না। পরীরানী তাকে বুঝায়, "ছোট বাচ্চাদের কল্পনা করার ক্ষমতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কল্পনা থেকেই জন্ম নেয় স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন তাকে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।
কল্পনাই গড়ে তোলে একজন সৃষ্টিশীল মানুষকে। "
একসময় ডেরিক ব্যাপারটা বুঝতে পারে। সে র্যান্ডিকে স্বপ্ন দেখায় স্কুলের প্রতিযোগিতায় সেরা গিটারিস্ট হওয়ার। লিলির ভেঙে যাওয়া কল্পনাকে ফিরিয়ে আনে। এমন কি স্বপ্ন দেখে নিজের পতনোন্মুখ কেরিয়ারকে আগের অব্স্থানে ফিরে পাওয়ার এবং সফলও হয়।
যে ডেরিক কখনো ভাবতো না "যদি এমন হতো" সেই তার প্রেমিকাকে বলে, "যদি আমরা বিয়ে করি, কেমন হয়?'
মুভিটা দেখে ভীষণ মজা পেয়েছিলাম। একইসাথে মন খারাপ হয়ে গেল আমাদের ছোট ছোট বাবুদের জন্য। আমাদের বাবুদের জন্যতো আমরা কল্পনা করার, স্বপ্ন দেখার, আকাশের পাখি হবার, ফুলের প্রজাপতি হবার কোন সুযোগই রাখিনি। আমরা ওদের বানাচ্ছি যন্ত্র। স্কুলে ওদের যা লিখে দেয়া হবে, হুবহু তাই পড়তে হবে, মুখস্থ, একেবারে ঠোঁটস্থ করতে হবে।
নিজে নিজে একটা বর্ণও লেখা যাবে না। তাহলেই মার্কস কাটা। এমনকি ড্রয়িংও নিজের খুশিমত করতে পারবে না। একটা রঙও নিজের পছন্দমত দিতে পারবে না। একগাদা বইয়ের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে ওদের ভারবাহী গাধা বানাচ্ছি, স্বপ্নচারী মানুষ নয়।
ওরা হাসে না, খেলে না, গায় না...গম্ভীর মুখে শুধু বড় হওয়ার চেষ্টা করে। এই বাবুগুলো কি বড় হয়ে কল্পনাবিলাসী কবি, সাহিত্যিক, সৃষ্টিকার হতে পারবে? খুব মায়া হচ্ছিল বাবুগুলোর জন্য.....খুব.....খুব.....
টুথ ফেইরি মুভি ডাউনলোডের টরেন্ট লিঙ্ক
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।