The Dark Knight -এর চরম সাফল্যের পর Christopher Nolan রে মানুষ চান্স পাইলেই খোঁচায়। “ঐ মিয়া ... ব্যাটম্যান এর পরের মুভি কবে বানাইবেন?”, “বস ... আর কত Wait করুম?”, “ভাইজান আবার কী জোকারের মত কাউরে পাইবেন?”।
নোলানের মাথায় একটাই চিন্তা : “কখনও কোন মুভির ৩ নম্বর পর্ব কি কখনও ভাল হয় শুনসেন? আমি আবার ভালো মুভি ছাড়া কিছুই বানাই না। “ কিন্তু মানুষ কি আর পিছু ছাড়ে? কিন্তু ভিলেন হইবো কেডা? এমন কাউরে লাগবো যেটা ব্যাটম্যানরে ধোলাই দিতে পারে। অবশেষে মুক্তি পেল বহু প্রতীক্ষিত The Dark Knight Trilogy’র শেষ মুভি “The Dark Knight Rises”।
এবং ভিলেন হলো ব্যাটম্যান কমিক্সের সবচেয়ে শক্তিশালী ও দুর্ধর্ষ ‘Bane’।
কাহিনী জানা যাক। Gotham ( গদাম নয়) শহরে ৮ বছর হয়ে গেল ব্যাটম্যানের দেখা নাই। সবাই এখনো জানে যে গত পর্বে Harvey Dent কে সেই ব্যাটম্যানই খুন করেছে। কোথায় গেল ব্যাটম্যান? হারিয়ে গেল?
আসলেই হারিয়ে গিয়েছে ব্যাটম্যান।
Bruce Wayne ( Christian Bale) নিজেও হয়তো ভুলে গেছে যে ব্যাটম্যান কে ? সে এখন শুধু ব্রুস , একটু বয়স্ক , একটু খোড়া এবং কিছুটা গরীব। হঠাৎ করেই তার সম্পত্তির পিছু নেয় এক সংগঠন। তার হাতের ছাপ চুরি হয়। কিছু মানুষও খুন হয়। কিছু একটা হচ্ছে এই শহরে।
Gordon ( Gary Oldman) এবং Blake ( Joseph Gordon Levitt) এর তদন্তে বের হয় এক গুপ্ত সন্ত্রাসী সংগঠন কিছু একটা করতে তৎপর। যাদের আস্তানা হলো মাটির গভীরে। অবশেষে শেয়ার বাজারে হানা দেয় Bane ( Tom Hardy) ও তার সংগঠন। শেয়ার বাজারের সিস্টেমে একটি প্রোগাম ঢুকিয়ে লাল বাত্তি জ্বালায় দেয় গথামের সবচেয়ে ধনী ব্রুস ওয়েনের। পথে নেমে যায় ব্রুস।
বাড়ি নাই , গাড়ী নাই , পয়সা নাই। কিন্তু কে এই বেন ? গরিলার মতো দেহের অধিকারী এই ব্যক্তির মূল লক্ষ্য কী?
ফিরে আসে ব্যাটম্যান। Selina Kyle ( Anna Hathaway) এর সাহায্য সে পৌছে যায় বেনের কাছে। বেন তার অদ্ভূত স্বরে বলে ওঠে :”স্বাগতম মি. ওয়েন”।
বেন হলো সেই League of Shadows এর সদস্য যাদের লক্ষ্য গথামের ধ্বংস।
সে জানে যে গথাম চলে ব্যাটম্যানের ত্রাসে। তাই ব্যাটম্যানকেই দেখাতে হবে যে ত্রাস কাকে বলে। শুরু দুই অতিমানবের যুদ্ধ। বেন এর কাছে ভেঙে পড়ে ব্রুস। সে তো আর সেই ব্যাটম্যান নেই।
প্রতিটি হাড় ভেঙে এক গুপ্ত গর্তে লুকিয়ে রাখে ব্রুসকে। বলে যায়:’ দেখ শুধু গথামের নাশ , তারপর তুমি পাবে মৃত্যুবরণের অনুমতি”।
এদিকে বেন দখল করে নেয় ওয়েন এন্টারপ্রাইজের সমস্ত অত্যাধুনিক অস্ত্র এবং যুদ্ধ-যান। সকল পুলিশদেরকে বন্দি করে দেয় , সকল অপরাধীদের করে দেয় মুক্ত। গথাম হয়ে ওঠে এক কথায় ৭১ এর ঢাকা শহর।
এদিকে গথাম থেকে ছিন্ন করে দেয়া হয় সব ধরণের যাতায়াত ব্যবস্হা। এদিকে ওয়েন এন্টারপ্রাইজের নিউক্লিয়ার চুল্লীকে মূল যন্ত্রের সাথে বিচ্ছিন্ন করে তাকে একটি এ্যাটম বোমায় রুপান্তরিত করা হয়েছে। ৬ মাস পরে সেই বোমাই শেষ করবে গথামকে। কী হবে তাহলে ? ব্রুস ওয়েন পঙ্গু অবস্হায় এক অজানা গর্তে বন্দী , এদিকে গথামের ধ্বংস অনিবার্য। কীভাবে বাঁচবে গথামে? উঠে কী দাড়াবে গথামের কৃষ্ণ প্রহরী?
এক কথায় আরেক অসাধারণ মুভি নোলানের হাত থেকে।
শেষ দৃশ্যে আক্ষরিক অর্থে চিৎকার দিয়েছিলাম। নোলানের এক কথায় কোন জবাব নেই। থ্রি-ডি মুভির যূগে এক ধুম-ধাড়াক্কা একশান মুভি যাতে প্রায়ই সবগুলি দুর্ধর্ষ দৃশ্যগুলি ছিল স্পেশাল এফেক্টের সাহায্য ছাড়া।
অভিনয়ের দিক দিয়ে এক নতুন দ্বার উন্মোচন করেছেন Tom Hardy। মোটামুটি গড়নের মানুষটি নিজের শরীরকে বানিয়েছেন এক দৈত্যের ন্যায় এবং কন্ঠ করেছেন যেন রবীন্দ্র রচনাবলী আবৃতি করছেন।
এক কথায় অসাধারণ।
প্রতিবার ভিলেনদের নৈপূণ্যে হারিয়ে যায় Christian Bale এর অভিনয়। আবার দুর্দান্ত অভিনয়। Bale ছাড়া অন্য কাউকে ব্যাটম্যান কল্পনা করাই এখন কঠিন। অন্যান্য চরিত্রে দারুণ করেছে Michael Cane, Joseph Gordon-Levitt, Morgan Freeman, Gary Oldman।
কিন্তু অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে Marion Cotillard কেও দারুন লেগেছে। Catwoman চরিত্রে Anna Hathaway কে কিছুটা বিরক্তিকর লেগেছে।
এবার কিছু সমালোচনা করা যাক। মুভির সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো মুভিটি একটি ব্যাটম্যান-মুভি। ব্যাটম্যান সম্পর্কে যারা পাগল নন কিংবা আগের দুটি মুভি দেখেননি তাদের মুভিটি দেখে মনে হবে “ইলিয়াস আলী কই?“ ।
এধরণের দর্শকের জন্য একশানগুলিই শুধু দেখে মজা পাবেন কাহিনী কিছুই বোঝা কঠিন হবে। যেমন IMAX এ ব্যাটম্যানের প্রথম দর্শনে যখন আমার মুখ হা হয়েছিল তখন পাশে তাকিয়ে দেখি আমার স্ত্রী ঘুমন্ত অবস্থায়। এছাড়া মুভির কাহিনী বেশ অবাস্তব ধরণের। আরে মিয়া সুপার হিরো মুভির কাহিনী কি বাস্তব সম্মত হয়? কিন্তু “The Dark Knight” এর জোকারের কথা মনে হলে সেরকম আশা থাকতেই পারে। মুভিটি ২য় পর্ব “The Dark Knight” ধারের কাছেও যায় না।
তবুও মুভিটি দেখার পর সবারই মনে হবে: “অসাধারণ একটি মুভি দেখলাম। “
রেটিং- ৪/৫ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।