চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে একবার এক বয়স্ক ব্যক্তি আমাকে কিছু গুরুগম্ভীর উপদেশ দিয়েছিলেন খুবই গুরুগাম্ভীর্য্যের সাথে তা শ্রবণ করে প্রতিটি কথায় বলেছিলাম “জ্বী ... জ্বী ...” । জীবনে এখনো পর্যন্ত রহস্য থেকে গেল উনি আসলে কী বলেছিলেন। কারণ উনার ভাষা ছিলো “দ্য গ্রেট চাটগাঁইয়া” ল্যাংগুয়েজ। ভিন্ন ভাষা , ভিন্ন সংস্কৃতির সাথে তাল মেলাতে হিমশিম খাওয়া এক ব্যক্তির দুর্বিষহ অবস্থার কমেডিরুপ দেওয়া মজাদার এক কাহিনী নিয়ে অনন্ত জলিলের ভবিষ্যত মুবি “নোয়াখাইল্যা গরুর গাড়ী: The Cow gives milk”এর অনুকরণে বর্তমান মুভি “চেন্নাই এক্সপ্রেস”।
কাহিনী জানা যাক।
ঢাকার মরণচাঁদ মিষ্টান্ন ভান্ডারের দোকানদার চল্লিশ বছরের বুইড়া রাহুল (শাহরুখ খান)। পিচ্চিকাল থেকে এতিম। থাকে জন্মের বুইড়া দাদার লগে। দিন যায়- রাইত যায় দাদায় বিয়া দেয় না। একরাতে বুইড়া দাদু খেলা দেইখা যায় মইরা।
শেষ ইচ্ছা নিজের শেষকৃত্য হবে রামেশ্বরমে। রাহুল এদিকে যাইবো গোয়াতে । দাদীরে ভগিচগি দিয়া কয় আমি নোয়াখালী হইয়া ঐদিক যামু। উইঠা পড়ে ট্রেনে। ব্যস দেখা হয়ে যায় মীনার আম্মা, মিঠুর আম্মা মীনাম্মা মীনাম্মা (দীপিকা পাডুকোন) এর লগে।
আর লাইফ শ্যাষ। ১৩ নম্বর বাসে করে মোহাম্মদপুর থেকে যাত্রাবাড়ী যাওয়ার চাইতেও বড় পেইনের এক যাত্রা নিয়ে চলতে থাকে মুভির কাহিনী।
মুভিটির একটি অসাধারণ দিক হচ্ছে দারুণ সব লোকেশান। বিশেষ করে গোয়ার “দুধসাগর জলপ্রপাত” দেখে মুখ হা হয়ে যেতে হয়। কাহিনী খুব একটা খারাপ নয়।
তবে মুভিটিকে সবদিক দিয়ে দারুন করার দায়িত্ব ছিল শাহরুখের যেটি তিনি ভালো ভাবেই করেছেন।
শাহরুখ অভিনীত প্রথম পুরদস্তুর কমেডি মুভি এটি। যদিও শাহরুখের ইমেজ ধরে রাখার দিক দিয়ে চরম খারাপ সিদ্ধান্ত হলেও দারুন করেছে শাহরুখ। তবে শাহরুখের নিন্দুকেরা শাহরুখ অভিনয় পারেন না এটা বলতে মোটেও ছাড়বেনা। কিন্তু শাহরুখ সাধারণ মানুষের মনোরঞ্জনের জন্য সবকিছুই করতে রাজী।
মুভির কিছু দৃশ্য দেখে মনে হয় এইসব কাজ শাহরুখ ছাড়া কারো পক্ষেই করা সম্ভব না।
রোহিত শেঠির পরিচালনা বেশ ভালোই ছিল। তবে শেষ দৃশ্যে নায়ককে এত মাইর খাওয়ানোটা হজম হয়নি।
দীপিকার অভিনয় খারাপ হয়নি। তবে তার উচ্চারণ তামিল না হয়ে কিছুটা মালায়লাম ধরণের ছিল বলে অভিযোগ আছে।
মুভিটির সংগীত হিসেবে “তেরা রাস্তা” গানটি বেশ শ্রুতিমধুর। রজনীকান্তকে উৎসর্গ করা “লুংগী ড্যান্স” গানটি তেমন ভালো নয়।
মুভিটির খারাপ দিক হিসেবে বলবো সমাপ্তি চরম ভুয়া। নায়ক এত মাইর খাইলে দেখতে ভালো লাগে না। মাইর খাওয়ার পর আবার বালতি দিয়া ভিলেন কুপোকাত।
এইসব কী? অনেক জায়গাতেই চরম মাত্রার ছ্যাবলামি আছে। যারা শাহরুখ খানের অভিনয় পছন্দ করেনা দয়া করে মুভিটি দেখবেন না।
কোলকাতা নাইট রাইডার্সের মাধ্যমে ভারতীয় বাঙ্গালীদের মন জয় করার পর কিছুটা দক্ষিণ ভারতীয়দের মন জয়ের যাত্রা হিসেবে মুভিটিকে ধরা যায়। দক্ষিণ ভারতে মুভিটি ব্যবসা কাল বৈশাখী ঝড়ের মত হওয়ার কথা। আর “Bol Bachchan” এর মত মুভি হিট হলে এই মুভিটিও দুর্দান্ত হিট হওয়া উচিত।
সব মিলিয়ে খুব বেশি ভালো মুভি নয়। তবে দম ফাটানো কিছু হাসির দৃশ্যগুলি আসলেই বেশ উপভোগ্য। আর শাহরুখ ভক্তদের জন্য না দেখলে পুরাই কবীরা গুনাহ।
রেটিং – ৩ / ৫
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।