মায়ের পেট থেকে জন্মানোর পর থেকেই কেবল ছুটছি। ছোটবেলায় বলের পিছনে এখন টাকার পিছনে , চাকরীর পিছনে, সংসারের পিছনে। ছোটবেলায় না হয় বলটা ধরে ফেলতে পারতাম। বড় হয়ে কেন জানি বেশ বাজে খেলোয়াড় হয়ে গিয়েছি। অন্যগুলি কিছুই কাছে থাকে না।
বসের কাছে শুনতে হয় তোমার ক্লায়েন্ট ব্যাক্যল হইসে এখন তুমি সামলাও, ঘরের বস আবার কখন বলে বসে :”আমার বাবা তোমার জন্য কি করেছে সব ভুলে গেছ?”। এইটাই জীবন? Barfi’র কাছে জীবন বলে কিছু নেই। নাচতে নাচতে পথ চলতে কাউকে কাঁন্দতে দেখা মাত্র তার মুখে হাসি ফোটাতে হবে। ব্যস কাজ শেষ। এতটুকুই জীবন।
জীবনকে এত সহজভাবে তুলে ধরা এই Barfi’র সাথে পরিচয় হলো একটি চলচ্চিত্র দিয়ে যার নাম Barfi!
কাহিনী জানা যাক। ১৯৭২ সালে শ্রুতি ঘোষের (Ileana D’Cruz) সাথে দার্জিলিং এ পরিচয় হয় এক অদ্ভুত রকমের ছেলে। ছেলেটির জন্মের পরপরই মা মারা যায়। ছেলের জন্য অনেক শখ করে Murphy Radio কিনে এনেছিল বাবা। কিন্তু হায় কপাল ! ছেলে তো বলতেও পারে না, শুনতেও পারে না।
রেডিওর নামে দাদী নাম দেয় “মার্ফি”।
তারপর থেকে ছেলেটিকে তার নাম জিজ্ঞেস করলে অনেক কষ্টে কন্ঠ থেকে বের হয় “বার্ফি” (Ranbir Kapoor) । অদ্ভুত রকমের দুষ্টু ছেলে। মানুষকে সত্যিকারের বন্ধু কিনা পরীক্ষা করার জন্য নিজেকে বিপদে ফেলে দেখে মানুষটি কী তাকে ফেলে চলে যায় কিনা।
শ্রুতিকে দেখেই প্রেম নিবেদন করে ফেলে বার্ফি।
কিন্তু শ্রতির বাগদান আগেই হয়ে গেছে রণজিতের ( যীশু সেনগুপ্ত) সাথে। শুধু বন্ধু হয়েই খুশি থাকে বার্ফি। শ্রুতি, বার্ফির সাথে ছুটে চলে অদ্ভুত দুনিয়াতে। শেষে প্রেমে পড়ে যায় বার্ফির। কিন্তু পরিবারের চাপে বার্ফিকে ত্যাগ করে রণজিতের সাথেই শুভ পরিণয়।
৬ বছর পরে আবার দেখা কোলকাতায়। এবার এক অদ্ভুত অবস্থায়। বার্ফিকে পুলিশ ধরেছে ব্যাংক ডাকাতি ও অপহরণের দায়। দার্জিলিং এর সবচাইতে সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির Autistic নাতনি ঝিলমিল ( Priyanka Chopra) কে পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে বার্ফি নিজেই পুলিশকে ইশারাতে বলছে :”কোথায় ঝিলমিল?”।
কে এই ঝিলমিল? বার্ফি কী আসলেই দোষী? আর দোষী হলেই শ্রুতিরই বা কী আর এসে যায়?
মুভিটি দেখে কার কেমন লাগবে তো বলতে পারবো না। তবে আমার কিছুক্ষণের জন্য মনে হয়েছিল আমার হৃৎপিন্ড আসলে রক্ত-মাংসের কোন কঠিন বস্তু নয়। এটি যেন চায়ের জন্য দেবার দুধের মত কোন তরল। মাঝে মাঝে সুখের মধ্যে মিশে যায় আবার কখনো দুঃখের মধ্যে।
অনুরাগ বসু তো অনেক ভালো পরিচালক।
কিন্তু এই মুভি শুধু অনুরাগ বসুর নয়। মুভিটি দেখেই বোঝা যায় যে চলচ্চিত্র কি জিনিস সেটা শুধু মাত্র বাঙালীরাই বোঝে। একজন মুভি দর্শককে জীবন কি জিনিস তা খুব সাধাসিধে ভাবে কেবল একজন বাঙালীই বলতে পারে। মুভিটি দেখতে গিয়ে সত্যজিত, গৌতম ঘোষ, ঋতুপর্ণের কিছু মুভির কথা মনে পড়ে। মুভি মানে যে আইটেম সং না সেটা বলিউডকে আবারো বোঝালো এক বাঙালী।
শাবাশ অনুরাগ।
অভিনয়ের দিক দিয়ে বলতে হবে দুর্দান্ত করেছে Ranbir। যে নায়কের জন্য সব মেয়েরা এমন কী আমার বউও পাগল, সে এইরকম একটি চরিত্রে এগিয়ে এসেছে ভাবাই যায় না। যদিও চরিত্রটি বেশীর ভাগ কার্যকলাপ Charlie Chaplin থেকে নেওয়া। তাও দারুন করেছে Ranbir।
কাহিনী তে বলিনি তবে মুভির অন্যতম প্রধান চরিত্র Priyanka। চরিত্রটিতে Sadma’র Sridevi র সাথে কিছুটা মিল থাকলেও অদ্ভুতভাবে নিজের মত করে করেছে Priyanka।
সবশেষে শ্রুতি চরিত্রে Ilena D’ Cruz । পুরো মুভিতেই যেন একটা মায়া নিয়ে রাখে তার চরিত্র। তেলেগু মুভির এই স্টারকে বলিউডে আবার দেখা যাবে কী না কে জানে? বলিউডে ঢুকতে তো সানি লিওন টাইপ ট্যালেন্ট লাগে।
এছাড়া অন্যান্য চরিত্রের মধ্য Saurabh Shukla, রুপা গাঙ্গুলী, হারাধন বন্দোপাধ্যয় দারুন করেছে।
মুভির অন্যতম সেরা দিক ছিল সংগীত। যেহেতু প্রীতম সেহেতু টুকলিফাই তো আছেই। তবে প্রীতম অন্তত অনেক কষ্ট করে গানগুলি খুঁজে বের করে। ফরাসি শিল্পী Yann Tiersen এর সংগীত, Barfi!’র আবহ সংগীতের সাথে সত্যিই অদ্ভুত লেগেছে।
মুভিটির খারাপ দিক বলতে গেলে মাঝের দিকে একটু হত্যা –রহস্যের ব্যাপার স্যাপার নিয়ে আসা। তখন মুভিটি বেশ বোরিং লাগে। তবে সমাপ্তি আসলেই চমৎকার। বার্ফির সাথে দেখা করে যেন শবে বরাতের বরফির মিষ্টি স্বাদ পাওয়া গেল।
রেটিং- ৪/৫
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।