১৯৭২ সালের পুরানো এক হিন্দী গানের থেকে মুভির নামকরণ। দেইখা তো মনে হইতেসে পুরাই লাফাঙ্গা মুভি। কিন্তু আয়ান মূখার্জীকে তো বেশ ভালো পরিচালক হিসেবেই জানি। কে জানে ? ট্যাকার লাইগা গাজাখুড়ি বানাইসে নাকি। মুভিটি দেখে আশ্বস্ত হলাম।
দারুন এক মুভি। পুরাই পয়সা উশুল।
কাহিনী জানা যাক। কাহিনী অবশ্য খুবই সাধারণ। মুভিটি দুটি অংশে বিভক্ত।
প্রথম অংশের কাহিনী হলো “এক তুখোড় ছাত্রীর বন্ধুহীন জীবনে একটি উচ্ছাসের আলো”। দ্বিতীয় অংশ হলো “এক ধামাকা বিয়ের অনুষ্ঠান”।
প্রথম অংশ থেকেই শুরু করি। Naina Talwar ( Deepika Padukone) স্কুলে এক নম্বর ছাত্রী। স্কুল শেষ হয়ে গেলেও তার এক নম্বর হওয়ার অভ্যাসটি এখনও যায়নি।
কিন্তু জীবন কেন জানি বইয়ের বর্ণমালাগুলিতে বন্দী হয়ে আছে। পড়তে হবে, বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করে প্রথম আলো তে নিজের ছবি ছাপাতে হবে। বুয়েট কিংবা সরকারী মেডিকেলে চান্স না পাওয়া মানে হলো জীবন শেষ। এভাবে দুনিয়ার চাপ সামলে এগিয়ে যাচ্ছে দীপিকা। হঠাৎ একদিন পুরানো এক স্কুল মেট Aditi ( Kalki Koechlin) এর সাথে দেখা।
স্কুলের সেরা ছাত্রী তাই আলাদা সম্মান। কিন্তু লাভটা কী? অদিতি যাচ্ছে মানালি ঘুরতে আরো স্কুলের বন্ধু Avi ( Aditya Roy Kapoor) এবং Bunny ( Ranbir Kapoor)। আর এদিকে দীপিকা তখন মেডিকেল স্টুডেন্ট হয়ে পড়ছে তো পড়ছেই। আর সহ্য হয় না। কিছুটা বাসা থেকে পালিয়েই চলে যায় সেই গ্রুপের সাথে মানালি।
পরিচয় হয় নায়ক রণবীরের সাথে।
রণবীর একটু ফাউল টাইপের পোলা। মা বেঁচে নেই। বাবা ( Farooq Sheikh) দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। সৎ মা ( Tanvi Azmi) যথেষ্ট আদর করলেও তিনি রণবীরের চক্ষুশূল।
রণবীরের তাই খালি ঘুরাঘুরির শখ। তার স্বপ্ন দুনিয়ার কোণা কোণা দেখা।
যাই হোক, দীপিকা মানালিতে চলে আসলেও মোটেও মিশতে পারছিল না তাদের সাথে। তবে মানালিতে এক গুন্ডা পার্টি রণবীরদের পিটান দিতে গেলে দীপিকার বুদ্ধিমত্তার কারণে তার বেঁচে পালাতে পারে। ধীরে ধীরে দীপিকাকে সবাই বিশেষ করে রণবীর বুঝতে শুরু করে।
রণবীর কেন জানি দীপিকার কাছে তার স্বপ্নের কথা বলে দেয়। দীপিকার সাথে খুব সহজে কেন জানি সময় চলে যায়।
তারপর যা হওয়ার তাই হলো। মানালির ভয়ংকর সৌন্দর্য যেকোন মানুষের হৃদয়কে বিগলিত করতে সক্ষম। দীপিকা গেল গলে রণবীরের প্রেমে।
বলতে যখনই গেল তখন জানতে পারলো রণবীর জার্নালিজম পড়তে আমেরিকা যাচ্ছে। থাক , নাই বা বলা হলো।
এবার দ্বিতীয় অংশ। ৮ বছর পার হয়ে গেছে। রণবীর এখন Fox Traveller এর চাকুরীজীবী।
ঘুরাঘুরি এখন পেশায় পরিণত হয়েছে। হঠাৎ একদিন জানতে পারে যে অদিতির বিয়ে। নিজেকে না থামিয়ে দৌড়ে চলে আসে। পুনরায় দেখা হয় অদিতি, অভি এবং দীপিকার সাথে। দীপিকা এখন অনেক পরিণত।
বাচ্চাকালের ভালোবাসা দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাবার কিছু নেই। ধুমায় বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠান চলছে। এর মধ্যে রণবীর-দীপিকা এক সাধারণ কিন্তু অদ্ভুত এক সফরে যায়। জীবন মানে কি সেটা নিজেদের ভাষ্যে প্রকাশ করে তারা। রণবীরের কাছে জীবন মানে দেশ-বিদেশে ঘুরাঘুরি আর দীপিকার কাছে পরিবারের সাথে নিজের দেশে।
দুজনে এত অমিল। দুজনে মিল হওয়াটা বেশ অবাস্তব। তাহলে শেষে হবে কী?
মুভিটিকে দারুন লাগার কারণ অবশ্যই আয়ান মূখার্জীর দুর্দান্ত নির্দেশনা। এক একটি দৃশ্য দারুনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। ঋতুপর্ণ ঘোষের চলে যাবার পর মুভিকে উচুভাবে তুলে ধরবার দায়িত্ব ভালোভাবে সামলাতে পারবেন বলে মনে হচ্ছে।
শেষের দিকে রণবীর ও তার বাবার দৃশ্যটি চোখে পানি এনে দিয়েছে। এছাড়া মুভিকে উপভোগের জন্য সকল উপাদান সঠিকভাবে মেশানো হয়েছে মুভিটিতে। ক্যামেরার কাজের জন্য V Manikanandan কে ধন্যবাদ দিতেই হয়। এছাড়া Karan Johar এর মুভি হিসেবে মুভিটি সার্থক।
অভিনয়ের দিক দিয়ে Ranbir Kapoor আবারও দারুন করেছে।
তবে Deepika Padukone কে বেশি ভালো লেগেছে। Ranbir-Deepika এর জুটি নিয়ে আরও মুভি দর্শকরা আশা করবেন। Kalki Koechlin এর অভিনয় বরাবরের মত দারুন তবে Aditya Roy Kapur অভিনয় শব্দের বানানটাও ঠিকমত জানেন না। Farooq Sheikh অল্পসময়ের জন্য থাকলেও অসাধারণ অভিনয় করেছেন।
সংগীত হিসেবে Pritam এর কাজ মুভিটিতে মোটামুটি বলবো।
গানগুলি মুভিতেই ভালো লাগে, এমনি খুব একটা আহামরি নয়। তবে “ঘাগড়া” আইটেম সং টিতে Madhuri Dixit কে দুর্দান্ত লেগেছে।
সব মিলিয়ে পরিবারকে নিয়ে উপভোগ করার মতো দারুন একটি মুভি।
রেটিং- ৪ / ৫
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।