হিন্দী মুভি। তাও আবার সুপার হিরো। নির্ঘাত নকল। আগের Krrish এর গায়ে কালো কাপড় তার মানে Batman, এবার Krrish এর কাপড়ে কিছুটা সুতার কারুকাজ, তাহলে Man of Steel এর নকল। নকল যে না সেটা বলছি না কিন্তু আমি মুভি দেখি আনন্দের জন্য।
আনন্দ পাইলেই আমি আনন্দিত।
কাহিনী জানা যাক। আগের পর্বের পর সুপারহিরোর পরিবার এখন সুখেই আছে। পরিবারে আছে বুইড়া রোহিত, বেকার কৃষ্ণা (Hrithik Roshan) আর মুন্নি সাহা (Priyanka Chopra)। রোহিত সারাদিন রিসার্চের নামে আয়নার দিকে চাইয়া থাকে, প্রিয়াংকা সবাইরে “আপনার অনুভূতি কী?” জিগায় আর বেচারা বেকার কৃষ্ণ একবার তিতুমীর হলের মুচির কাজ করে তো আরেকবার স্টার হোটেলের বয়রার কাজ।
কিন্তু কাজের টাইমে উনারে পাওন যায় না। উনি তখন জলিলের নকল কইরা প্লেনের চাক্কা ঠিক করতে ব্যস্ত। এজন্য তাকে সবাই ডাকে “ভারতের অনন্ত” বা “ভানন্ত”। কিন্তু নামটি পরবর্তীতে হয়ে যায় কৃষিজীবিদের সুপারহিরো “কৃষ”। দুনিয়ার সবচাইতে দুর্বল এবং অশিক্ষিত সুপার হিরো হলেও কাজ চলে যায় আরকি।
এদিকে একটা ঘটনা ঘটে। নামিবিয়াতে “সানডে মর্নিং লাভ ইউ” নামক একটি গান ভাইরাসের মত ছড়িয়ে পড়েছে। যেই এইগানটি শুনে সাথে সাথে বলে “মাইরালা ... মাইরালা ...”। এর থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজতে নামে বুড়া রোহিত। কয়েকদিন ধরে বিশ্লেষণের পর রেজাল্ট আসে যে গানটির গায়ক গান গাইতে পারে না।
এটা কীভাবে সম্ভব? কয়েকদিন পর “কাল” ( Vivek Oberoi) নামক এক বিজ্ঞানী তার প্রতিষেধক বের করে ফেললো। এই ঔষধ সেবনের পর সব গান মনে হবে ইভা রহমানের গলা থেকে আসছে। কিন্তু আসল কাহিনী ভিন্ন। “কাল” এক ভয়ংকর ব্যক্তির নাম। সেই তৈরী করে “Eye to eye” আর সেই তৈরী করে “ইভা রহমান” নামক Mutant।
কিন্তু তার লক্ষ্য একটু ভিন্ন। পারবে কী কৃষ এবং রোহিত তাকে থামাতে।
একটি সুপারহিরো মুভিতে যে সকল মাল-মশলা থাকা জরুরী সেগুলি হলো: প্রথমেই বিরাট সংখ্যক মানুষকে বাঁচানো, তারপর তার জীবনে ছোট খাট সমস্যা এবং একটি ভয়ংকর খল-নায়ক, সবই এই মুভিতে বিদ্যমান। মুভিতে কিছু কিছু জিনিস সরাসরি নকল মনে হয়েছে। যেমন “কাল” চরিত্রটি X-men এর Xavier এবং Jean Grey এর সংমিশ্রণ।
কায়া ( Kangana Ranaut) চরিত্রটি হবহু Mystique এর নকল। নকল নকল নিয়ে যখন লাফাতে থাকি তখন এক দৃশ্যে বলা হয় যে Mutant এর ধারণাটি এসেছে মহাভারত থেকে এবং কায়া চরিত্রটি Mystique নয় বরং রামায়ণের “সুর্পনখা”র অনুকরণে তখন একটু ভাবতেই হয়। এমনিতেও Koi Mil Gaya কে E.T. এর নকল বললেও E.T. যে পুরোপুরিভাবে সত্যজিত রায়ের গল্প থেকে টুকলিফাই করা সেটা কেও বলবে না। মুভির শেষের দিকে কৃষ ও কায়ার কিছু মারামারি দৃশ্য “Man of Steel” থেকে নেয়া হলেও দর্শকদের মনে তখন চলছিল যে “মার “কাল” হালার পুতরে ...”। যেটা Man of Steel এর দৃশ্যে মনে হয়নি।
সুপারহিরো মুভিতে দর্শকেরা সুপারহিরোর মনের সাথে যদি সংযুক্ত হতে পারলে আমার মতে সেই মুভি সফল যেটা এই মুভিতে কিছু দূর পর্যন্ত সম্ভব হয়েছে। এছাড়া মুভিটিতে কিছু নতুন ধারণাও দেখতে পাওয়া যায়। এজন্য পরিচালক Rakesh Roshan কে সালাম দিতেই হয়।
Hrithik Roshan এর অভিনয় রোহিত চরিত্রে এতটা অসাধারন হয়যে “কৃষ” চরিত্রটিকে ফালতু বলে মনে হয়। একারনে রোহিতকে অনেক প্রাধান্য দেবার চেষ্টা করা হয়েছে।
কৃষ চরিত্রে Hrithik খারাপ করেনি কিন্তু রোহিত চরিত্রে পুরাই মারাত্মক। রোহিতের প্রতিটি দৃশ্যে এখনো এত মায়া আসে যে চোখে পানি চলে আসে। রোহিত চরিত্রটি এই মুভিতে না থাকলে এই মুভি দেখার যোগ্য নাও হতে পারতো। Hrithik অবশ্য মুভিটির জন্য জান দিয়ে দিয়েছে সেটা তার Body দেখলেই বোঝা যায়।
Vivek Oberoi এর চরিত্রটি প্রথমত ভয়ংকর মনে হলেও আমার মতে তার অভিনয় যথেষ্ট ভালো হয়নি।
Priyanka Chopra’র অভিনয় সহ্য করা গেলেও Kangana Ranaut কে সহ্য করতে হলেও দর্শকদেরকেও “কৃষ” হতে হবে। তবে Kangana ও Hrithik অংশটি বেশ রোমাঞ্চকর বলে মনে হয়েছে।
মুভিটির সংগীত চরম মাত্রায় খারাপ। Rajesh Roshan একজন বিরাট সংগীত পরিচালক হলেও তিনি আর পারছেন না যুগের সাথে তাল মেলাতে। আমার মতে মনে হলো তিনি একটি করে গান বানাইসেন তারপর তারপর সবাইরে জিগাইসেন:”কেমন হইসে?”।
সবাই চক্ষুলজ্জায় বলতে বাধ্য হয়েছে “জোস”। কিন্তু মনে মনে সবাই বলেছে: “ টাকলা ... গান থামা”।
স্পেশাল এফেক্ট সুপার হিরো মুভির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হলেও হিন্দী মুভিতে বেশী আশা রাখা ঠিক না। তবে আমি স্পেশাল এফেক্টে সন্তুষ্ট। তবে “জিহবা” মানবটি অতিরিক্ত বিরক্তিকর।
শেষের দিকে “কাল” এর পোষাকটি পুরান ঢাকার ফ্রেঞ্চ রোডের টিনের ময়লা থেকে তৈরী করা হয়েছে যেটি মোটেও ভালো হয়নি।
মুভিটি Hrithik Roshan ভক্তদের জন্য অবশ্যই দেখা উচিত। বিশেষ করে যারা Koi Mil Gayaর রোহিতকে ভালবাসেন তাদের জন্য দেখতেই হবে। মুভিটির বাজারজাতকরণ খুবই নিম্নমানের ছিল। মুভিটির ট্রেইলার গুলি যেরকম চরমমাত্রায় খারাপ মুভিটি আসলে ততটা খারাপ নয়।
তবে যারা Koi Mil Gaya, Krrish দেখেনি তাদের জন্য মুভিটি দেখা উচিত নয়। সব মিলিয়ে মুভিটি যেরকম আশা করেছিলাম তার কাছাকাছি বলা যায়।
রেটিং- ৩/৫
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।