আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক মৌলবাদীদের কাঁধে বন্ধু ইউনূস

টরেন্টো থেকে : চট্টগ্রাম কলেজে পড়তাম আমরা। আমি, বাংলাদেশ বেতারের সাবেক মহাপরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং একালের বিখ্যাত কলামিস্ট বেলাল বেগ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাষ্ট্রদূত প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার এবং নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কলেজের পর আমরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়লাম যে যার মতো। ষাটের দশকের শেষ ভাগে পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমি যখন ঐতিহাসিক আগরতলা মামলার ২২ নম্বর আসামি এবং মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছি, মুহাম্মদ ইউনূস তখন আমেরিকায়। স্বাধীন দেশে ফিরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা এবং পরে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে ড. ইউনূসের নোবেল প্রাপ্তি।

বন্ধুর বিখ্যাত হওয়ার নেপথ্যের জারিজুরি মনপূত না হলেও চুপ করে থাকাই সমীচীন মনে করেছি এতদিন। যদিও গ্রামীণ ব্যাংকের অত্যধিক সূদের ব্যাপারে আমার একটি প্রশ্নেরও উত্তর দিতে পারেননি ড. ইউনূস কোনো দিন। গত ২৬ আগস্ট, ২০১২ দৈনিক ‘আমাদের সময়’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে প্রবাসী লেখক ভজন সরকারের, ‘ড. ইউনূস, এক স্বপ্নচারী মানুষের স্বপ্নের মুখোশ’ প্রবন্ধটি। আমার কলেজ-জীবনের বন্ধু ড. ইউনূসের উদ্দেশে লেখা প্রবন্ধটি তাই আমি আগ্রহ নিয়েই পড়েছি এবং মুগ্ধও হয়েছি। প্রবন্ধটি যে সব মহলেই ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে, তার প্রমাণ কয়েক শ পাঠকের মন্তব্য।

আমার আজকের লেখার বিষয়বস্তু সেটা নিয়েই। প্রবন্ধটির বিপক্ষের কিছু মন্তব্য দেখে অতি সহজেই বুঝতে পারা যায়, আমার কলেজ-জীবনের বন্ধু ড. ইউনূসের পক্ষে আজ কে ও কারা অবস্থান নিয়েছে। এ রকম অশালীন, সাম্প্রদায়িক ও নোংরা সব মন্তব্য যেকোনো সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে কীভাবে সম্ভব, সেটা ভেবেই আমি হতবাক! এ কথা বলতে হয়তো দ্বিধা নেই, ড. ইউনূস এখন স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক মৌলবাদীদের কাঁধে; স্বাধীনতাবিরোধীরা আজ ড. ইউনূসকে বেছে নিয়েছে শত্র“র শত্র“ বন্ধু হিসেবে। ড. ইউনূসের পক্ষে যারা আজ বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছেন, তাদের প্রায় সবাই সাম্প্রদায়িক এবং স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের মানুষ, কিংবা চিন্তাচেতনায় পাকিস্তানপন্থি। তাদের বিরুদ্ধেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা মৃত্যুকে উপেক্ষা করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম একসময়।

তাই প্রশ্ন জাগে, ড. ইউনূস তবে কি আজ স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন? যে আমেরিকা সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে রুখে দিতে, ৪০ বছর পরে সেই আমেরিকা কি ড. ইউনূসকে কলের পুতুল বানিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তিকে আবারও ক্ষমতায় বসাতে চায়? ড. ইউনূস দাবি করেন, গ্রামীণ ব্যাংকের মতো ক্ষুদ্রঋণব্যবস্থা দিয়ে তিনি দারিদ্র্যকে জাদুঘরে পাঠাবেন। অথচ তিনি কি গ্রামীণ ব্যাংকের লাখ লাখ সদস্যের মধ্যে থেকে শুধু ১০০ জনের নাম প্রকাশ করতে পারবেন, যারা দারিদ্র্য দূর করতে পেরেছেন? গ্রামীণ ব্যাংকের চড়া সুদের ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে হাজার হাজার গ্রামীণ নারী সর্বস্বান্ত হয়েছেন। অনেকে জমি-বসতবাড়ি বিক্রি করে পথের ফকির হয়েছেন। এমনও অভিযোগ আছে, অনেকে আÍহত্যা পর্যন্ত করেছেন। নিজের প্রভাব খাটিয়ে তিন হাজার একর জমি নামমাত্র মূল্যে ইজারা নিয়ে করা মৎস্য ও পশুপালন প্রকল্পের বিরুদ্ধে এক ভয়াবহ অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

বেশি দামে কৃষকদের কাছে গাভি বিক্রি করে কম দামে দুধ কিনে গ্রামীণ ব্যাংক নিজেদের লাভের পরিমাণ বাড়ালেও সর্বস্ব খুইয়ে অনেকেই পথের ভিখারি হয়েছে এই প্রকল্পে। এই রকমের আরও অনেক অনিয়মের পাহাড়ে ঢাকা পড়ে গ্রামীণ ব্যাংক এখন একটি বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান। অথচ এই প্রতিষ্ঠানটিকে নিজের ও পরিবারের কুক্ষিগত করে রাখতে আইনের সাহায্য চেয়েছিলেন ড. ইউনূস। সে আইনি লড়াইয়ে হেরে গিয়ে ড. ইউনূস দেশের আইন-নিয়মনীতিকে উপেক্ষা করে পশ্চিমা বিশ্বের কিছু প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের সুযোগ নিয়ে অন্যায্য এবং অন্যায়ভাবে চাপ সৃষ্টি করছে এই গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে। প্রকারান্তরে এটা যে দেশের জনগণের স্বার্থের পরিপন্থী, এটা ড. ইউনূস জেনেও না জানার ভান করছেন বলে আমার বিশ্বাস।

গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার গণতান্ত্রিক উপায়ে ঠিক সময়ে নির্বাচনের মাধ্যমেই কেবল পরিবর্তন হতে পারে। অথচ ‘নতুন সরকার’ আসবে এই কথা বলে তিনি কি এই সরকারকে পরোক্ষভাবে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করার হুমকি দিচ্ছেন? এবারও আমি দৃঢ় আশাবাদী, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে ড. ইউনূসসহ যারা দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন এবং করবেন, তাদের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের কোটি কোটি মানুষ রুখে দেবেই ১৯৭১ সালের মতো। মাহফুজুল বারী, লেখক : ঐতিহাসিক আগরতলা মামলার ২২ নম্বর অভিযুক্ত। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.