প্রথমেই শুকরিয়া পরম করুণাময় আল্লাহ্ তাআলার নিকট যিনি আমাদের তৌফিক দিয়েছেন দার্জিলিং ভ্রমণ করতে।
আর ধন্যবাদ আমার স্ত্রীকে তার এই ভ্রমণের পরিকল্পনার জন্য এবং যেহেতু সে বিস্তারিত মনে রেখেছে যার ভিত্তিতে আমি লেখাটা শেয়ার করতে পেরেছি
দার্জিলিং ভ্রমণ/ পর্ব-০১
২০১০ এর সেপ্টেম্বর এ আমরা দার্জিলিং যাওয়ার প্লান করি। এসব ব্যাপারে আমার বৌ আবার এক কাঠি বেশি সরেস। কোথায় কখন যেতে হবে, কোন জায়গার weather কেমন- এ সব বাপারের পরামর্শদাতা হল আমার বৌ। যাই হোক, যেই ভাবা সেই কাজ।
সেপ্টেম্বর এর মাঝামাঝি তে ঈদ-উল-ফিতর এর একদিন পর আমরা ঢাকা থেকে রওনা দিলাম শামলী পরিবহন এর বাসে করে। যাওয়ার টিকিট আগেই কেটে রেখেছিলাম, কিন্তু আসার টিকিট ওরা বলল শিলিগুড়ি তে ওদের যেই বাস কাউন্টার আছে ওইখান থেকে কাটতে হবে। কিছুটা uncertain অবস্থায় বলা যায় রওনা দিলাম। শামলীর বাস ছাড়লো রাত ১১ টার দিকে। সারা রাত জার্নি করে যখন আমরা বুড়িমারি সীমান্তে পোছালাম তখন ভোর ৪ টা।
এবার অপেক্ষার পালা। কারন ওপারে যাওয়ার জন্য আমাদের যে কাস্টমস এর মুখোমুখি হতে হবে তাদের অফিস খুলবে সকাল ১০ টা এ। এই ৬ টা ঘণ্টা যে কিভাবে কাটালাম তা আর বলতে চাই না। দুইটা ছাপরা ঘর আছে-একটা ছেলেদের আরেকটা মেয়েদের, যেখানে খাট পাতা আছে। সেখানে যেই চাদর দেয়া আছে তার উপর শোয়া তো দূরের কথা বসতে ও আপনার ইচ্ছা হবে না।
আর আছে একটা মাত্র বাথরুম যা totally ব্যাবহারের অযোগ্য। যাই হোক ১০ টা বাজলো। আমরা হেটে কাস্টমস অফিস এর দিকে রওনা দিলাম। ৫-৬ মিনিট এর রাস্তা। কিন্তু এর মধ্যে অইখানে প্রচুর মানুষ এর ভিড় হয়ে গেছে।
আল্লাহর রহমত এ কাস্টমস কোন সমস্যাই করলো না । অনায়াসে আমাদের কে ছেড়ে দিল।
আমরা ওপারে গেলাম (ওদের সীমান্তের নাম চ্যাংড়া বান্ধা)। এবার ওদের কাস্টমস এর মুখোমুখি হতে হবে। তবে ওরাও কোন সমস্যা করলো না (সবি বাস কতৃপক্ষ এর ম্যানেজ করা)।
তারপরে ওখান থেকে যখন আমরা বের হলাম তখন প্রায় ১ টা বাজে। এই পুরোটা সময় আমরা না খাওয়া। এখান থেকে রওনা দিতে হবে শিলিগুড়ি র উদ্দেশে। Normally শামলী পরিবহন এর connecting bus থাকে এই চ্যাংড়া বান্ধা থেকে শিলিগুড়ি যাওয়ার জন্য। কিন্তু সেদিন মাত্র দুটো বাস থাকায় সেগুলো fill up হয়ে যায়।
ফলে আমাদের sumo ( জিপ এর মত যা ভাড়ায় চলে) তে করে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। sumo অনেক expensive. আর তাতে seat থাকে প্রায় ৯ টার মতো। আমরা দুজন মানুষ। কি করি? এর মধেই আরও দুটো family আমাদের পাশে এসে দাঁড়ালো। ওদের ও sumo লাগবে।
ওনারা ছিল ৬ জন। একটা sumo ঠিক করে আমরাও উঠলাম ওনাদের সাথে। টাকা অবশ্য দিতে হল না। শ্যামলী বাস কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা করে দিল। গন্তব্য শিলিগুড়ি, প্রায় দুই- আড়াই ঘণ্টার রাস্তা।
শিলিগুড়ি যখন পৌছালাম তখন প্রায় ৪ টা বাজে। আমাদের খুব তাড়াতাড়ি এখান থেকে বের হতে হবে কারন আমাদের যেতে হবে দার্জিলিং যা পুরোটাই পাহাড়ি রাস্তা। আর এই রাস্তা এবং এর বাঁক গুলো যে কতো টা ভয়ংকর তা না দেখলে কিছুই বুঝবেন না। এজন্য যতটা দিনের আলোয় রওনা দেয়া যায় ততই ভাল। কিন্তু শিলিগুড়ি তে আমাদের দুটো কাজ ছিল।
এক. Return ticket কেনা, আর দুই. উদর পূর্তি করা। সেই ভোর থেকে বিকাল পর্যন্ত আমরা না খাওয়া। প্রথমেই শামলীর কাউন্টার থেকে টিকিট কিনলাম। তারপর ঠিক এর দোতালায় Central Plaza তে খেতে গেলাম। Central Plaza এর নাম আমরা আগেই শুনে আসছিলাম।
এটা একটা আবাসিক হোটেল।
এদের রান্না এক কথায় অসাধারণ। কলকাতার ঢং এ আমাদেরই রান্না এমনিতেই ছিল মজাদার তার উপরে পেটে মারাত্মক খিদে তাই এর স্বাদ ছিল অতুলনীয়। খাওয়া- দাওয়া শেষ করে আমরা যখন নীচে নামলাম তখন প্রায় ৫ টা বাজে। আবার sumo ঠিক করতে হবে।
এর মধ্যেই দেখি সেই দুই family যাদের সাথে আমরা শিলিগুড়ি পর্যন্ত এসেছিলাম। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং যেতে সময় লাগে প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা। তারমানে এখুনি রওনা দিলেও আমাদের দার্জিলিং পৌছাতে রাত ৯ টা বেজে যাবে। অপরিচিত জায়গা, পাহাড়ি রাস্তা, চারদিক অন্ধকার হয়ে আসছে... ওই দুই family আমাদেরকে নিয়েই রওনা দিতে চাইলো। আমরাও কোন আপত্তি করলাম না।
এখানে বলে রাখা ভাল যে ওনারা দুই family আসলে একসাথে এসেছে। এক family তে ছিল Husband & Wife আর ওনাদের ৬ এবং ৪ বছরের দুই ছেলে। আরেক family তে ছিল শুধু Husband & Wife, মানে দুই জন। আর আমরা দুইজন তো আছিই। শুরু হল আমাদের ৮ সদস্য বিশিষ্ট টিম এর দার্জিলিং এর পথে যাত্রা।
একটা কথা বলে রাখি এরকম টিমে জার্নি করাটাই আসলে ভাল, কারণ একে তো পাহাড়ি রাস্তা তার উপর কম মানুষ থাকলে একটু খারাপই লাগে।
শিলিগুড়ি থেকে মাত্র ১৫-২০ মিনিট যেতে না যেতেই আমরা দেখতে পেলাম দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়। আমরা বলে ওইসব পাহাড় বেয়েই উপরে উঠবো
দূরের ঐ পাহাড়ের উপরেই দার্জিলিং, আমরা সেখানেই যাচ্ছি, ছবিটা সুমো থেকে নেয়া
sumo থেকে পাহাড় গুলোকে এত কাছে মনে হবে যে আপনি ভাববেন এই বুঝি পাহাড়ের পাদদেশে চলে এসেছেন। কিন্তু না, এত সহজ না। আপনাকে স্থলে চলতে হবে প্রায় আধা ঘণ্টার মতো বা আরেকটু বেশি।
এরপর দেখবেন আপনি একটু একটু করে উপরে উঠছেন। এই যে আপনার ওঠা শুরু হল আর কোন থামাথামি নাই। আমরা উঠছি তো উঠছিই। বাঁক বেয়ে গাড়ি আমাদের এগিয়ে চলছে। এ প্রসঙ্গে আমি ওদের ড্রাইভার এর প্রশংসা না করে পারছি না।
কি চালায় ওরা। বাঁক থেকে একটু স্লিপ কাটলেই নীচে। এর সেই নীচ যে কোথায় তা আমি জানি না। আল্লাহ তায়ালা জানেন। পাহাড়ি রাস্তা গুলো almost one way ।
খুব emergency ছাড়া পিছনের গাড়ি সামনের গাড়িকে overtake করে না। আর back এ যাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। যাই হোক এক দেড় ঘণ্টার মতো গেলো আর আমার বৌ uneasy feel করতে লাগলো।
আমাদের গাড়ি তে তিনজন মেয়ে। পিছনে ওনারা ৬ জন।
আমি আর আমার বৌ সামনে ড্রাইভার এর পাশে বসেছি। পিছনের দুই ভাবি হঠাৎ হঠাৎ করে চিৎকার শুরু করে। আমরা রাস্তা দেখে বুঝি যে ওনাদের চিৎকার ১০০% জায়েজ আছে। আমার বৌ চিৎকার না করলেও আমাকে মাঝে মাঝেই শক্ত করে ধরছিল। তাতে বুঝলাম ও সহ্য করতে পারছে না।
ঘণ্টা দুয়েক পর ড্রাইভার আমাদের কাউকে কিছু না বলেই গাড়ি থামাল। আমরা একটু অবাক হলাম আবার একটু ভয় ও পেলাম। ড্রাইভার ভাই আমাদের চা খাবেন। কাঠের তৈরি দোকান। উনি বললেন আপনারাও খান ভাল লাগবে।
ওই দুই ভাই আর ভাবি চা খেলেন। ড্রাইভার বলল “photo khichiye…. Achha hoga”.। ওনাদের চা খাবার পর আমরা ফটোসেশনে নামলাম। এই অবস্থায় আমরা প্রায় দুই আড়াই হাজার ফুট উপরে। আমাদের পাশ দিয়ে হাল্কা করে মেঘ যাছে।
সে যে কি দৃশ্য...।
যাইহোক আমাদের গন্তব্য দার্জিলিং হল প্রায় সাড়ে আট কি নয় হাজার ফুট উপরের এক শহর। সুতরাং আমাদের আরও কতো উপরে উঠতে হবে তা নিশ্চয়ই আপনাদের বুঝতে আর বাকি নাই। চা পর্ব শেষ করে আমরা যখন আবার গাড়িতে উঠলাম তখন আর আমার বৌ জানলার সাইডের সীট এ বসতে রাজি হল না। ওকে ভিতরের দিকে দিয়ে আমি সাইড এ বসলাম।
আধা ঘণ্টার মধ্যে ও বলল যে ও আর সহ্য করতে পারছে না। ও নিজেই বলল “ আমি better ঘুমায় পড়ি, কিছু অঘটন হলে তো আমরা মরেই যাব; না হলে দার্জিলিং এ যেয়েই কথা হবে। “ চারিদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার (অন্ধকার হওয়াতে একদিক দিয়ে সুবিধা হয়েছে, আমরা রাস্তার ভয়াবহতা কিছুই বুঝি নাই)... গাড়ি উঠছে তো উঠছেই... আর আমরাও চলছি।
একটু একটু করে লোকালয় দেখতে পেলাম। আস্তে আস্তে তা বাড়তে লাগলো।
রাস্তার এক পাশে সাইড করে আমাদের গাড়ি থামল। বউ কে উঠালাম। পিছনে বসা জামিল ভাই আর নাসির ভাই এর ফামিলি ও আস্তে আস্তে নড়েচড়ে উঠলো। ড্রাইভার আমাদেরকে ওখানেই নামায় দিলো, সে আর যাবে না। আমরা তিন family কেউ কোন hotel booking দিয়ে যাই নাই।
ওখানে অনেক অনেক হোটেল তাই booking এর প্রয়োজন পড়ে না। But রাত ৯ টায় এই total জিনিসটাকে খুবই unwise কাজ হয়েছে বলে মনে হল। হাতে luggage নিয়েই আমরা ওই রাতে হোটেল খোজা শুরু করলাম। ও ভালো কথা, গাড়ি থেকে নেমে আমরা কিন্তু already সোয়েটার এবং শাল পরে ফেলেছি। ভীষণ ঠাণ্ডা, আমাদের মাঘ মাসের শীতকেও হার মানায়।
একটু হেটেই আমরা একটা হোটেল পেলাম নাম “ The Plaza” ঠিক “ State Bank of India, Darjeeling Branch” এর opposite এ। অনুমান করলাম এটা ওদের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা। hotel এর ভেতর এর পরিবেশ পছন্দ হলও, ছোট কিন্তু বেশ ছিম ছাম। সব রকমের facilities আছে। মনে আছে ৬০০ রুপি ছিল প্রতি রুম।
আমরা তিন পরিবার তিনটি রুম নিয়ে নিলাম। রুম এ ঢুকে শুধু ভালো করে মুখ ধুয়ে সবাই মিলে চলে গেলাম আমাদের হোটেলের গা ঘেঁষে থাকা খাবার হোটেল Park এ। Order দিলাম রুই মাছ, সবজি আর ডাল। উফ awesome রান্না। simply awesome......।
আরাম করে খেয়েদেয়ে রুম এ আসলাম। সারাদিন এর নামাজ আদায় করলাম। জানলা দিয়ে আশেপাশে তাকাই খালি building ছাড়া আর কিছুই দেখি না। রুম পুরা আটকানো, তারপরেও আমরা রুম এর ভেতর full sweater পরা। কম্বল মুড়ি দিয়ে পুরো খোকাবাবু সেজে চলে গেলাম ঘুম এর দেশে।
পরেরদিন থেকে শুরু হল আমাদের সাইট দেখা......সেটা ইন্শাআল্লাহ্ পরের পর্বে।
এখানে যতটুকু বর্ণনা দিলাম, তার কিছু ছবি শেয়ার করলাম।
হালাল খেতে গেলে আপনাকে মাছ আর সবজি খেতে হবে আর সাথে ডাল নিতে পারেন। প্রচন্ড শীতে গরম রান্না সাথে মোটা মোটা কাঁচামরিচ এর স্বাদ...আহ্......দারুণ
মাটি থেকে অল্প কিছু উপরে উঠার পর একটা ঝর্ণা চোখে পড়ল ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।