আসো, মুখোশ পড়ে খেলতে বসি, আমি জানি আমি জিতবো - আমি এই খেলাটায় বড্ড পটু!
ঘুমিয়ে পড়া শহরের বুকে পিঠে এসে পড়ছে নরম আলো । বৃষ্টি শেষের আকাশে থাকা মেঘ ভেদ করে যে নরম স্নিগ্ধ আলো অথবা শীতের কুয়াশা ভেদী আলোর চেয়েও স্নিগ্ধ আলোতে ধীর আলস্য কাটিয়ে জেগে উঠছে শহর । চোখের কোণে জমে থাকা পিঁচুটি, রাত্রি শেষে জেগে উঠা আলস্য নিয়ে কেউ একজন লিখে চলেছে তার কল্পনা । নিব কলমে ঝরে পড়ছে তার তমসিক ক্লান্তি । মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে চায়ের পানি ফুটিয়ে নিতে থাকে কেউ ।
পানি ফুটে এলে চা পাতা, দুধ চিনি মিশিয়ে চুমুক দেয় কাপে । ধোঁয়া উঠা চায়ের কাপ বেয়ে নেমে আসে ক্লান্ত কল্পনা । সকালের আলোয় লিখতে চলা সেই লোকটি হয়ত কবি । হয়তো তার কবিতায় ভরে উঠে না ফুলস্কেপ কাগজ কিংবা বাঁধাই করা কবিতার খাতা । কিন্তু তারপরো সে কবি ।
কবিতা না লিখেও তো কেউ কবি হয়, তেমনি ।
সিমেন্ট বাঁধানো রাস্তা পেরোলেই দেখা যায় দিগন্ত-জোড়া সবুজ ঘাসের মাঠ । সবুজ ঘাসের উপর থাকে গত রাত্রিরের জমে থাকা জল । পথ ছেড়ে নামে মাঠে । ছপছপ শব্দের সাথে সাথে কমতে থাকে বয়েস ।
সাতাশ, ছাব্বিশ, পঁচিশ এভাবে একসময় বয়েস স্থির হয় ছয় অথবা আটে । স্থির হয়ে যাওয়া বয়সের স্বপ্নের জন্যই লিখার কাগজটাকে ভাসিয়ে দেয় জমে থাকা মাঠের জলে । একটা নৌকো, দুইটা, তিনটা, ছয়টা, আটটা নৌকো । কাগজের নৌকো সাদা, সাদার মাঝে কালো ছোপে লিখা । লেখা থাকে, না-লেখা কবিতাগুলো, না দেখা স্বপ্নের কথা, লেখা থাকে না পাওয়ার বেদনা, পাওয়ার আকুলতা ।
লেখা থাকে কোন এক না পাওয়া নারী কিংবা প্রেমের জন্য হাহাকার । জোছনা রাত্রিরে ঝড় জঙ্গলের কাব্য । লেখা থাকে তার হাসি, বাঁকা ভুরু, কাঁচুলির নীচের স্তন । বিশেষ কোন নারীর কথা নির্দিষ্ট করে কবি বলে না । সে বলে অপালার কথা ।
সে লিখে সোফিয়ার হাসি । জলে ভিজে কবিতা থেকে মুক্তি পায় অপালা, সোফিয়া মুছে যেতে থাকে সময়ের ইরেজারে ।
কবি বিষণ্ণ হয় । কবিতার জন্য নাকি কবিতার কোন নির্দিষ্ট নারীর জন্য জানা হয় না আমাদের । হয়তো কোন বিশেষ কবিতা, বা কোন নারীর জন্য কবি বিষণ্ণ হয়ে উঠেন যার চোখে ঝিলিক দেয় মুক্তির বিষণ্ণতাটুকু, অথবা কবিকে ছেড়ে যাবার কষ্টটুকু ।
আমাদের জানা হয়ে উঠে না । খুব সাধারণ কবির সে বিষণ্ণতা আসলে আমাদের জানবার জন্য দরকারী হয়ে উঠে না ।
আজ পৃথিবীর রঙ ধূসর, পায়ের নীচের রঙ সবুজ, মাথার উপর নীল । আজ সত্য হলো কবিতা, ঘাস, আকাশ, জমে থাকা জল, কাগজের নৌকো আর সাদা কাগজে গলে যাওয়া কালির অক্ষর গুলো । কবিই আজ মায়া কিংবা মোহ ।
কেননা আজ বিষণ্ণতার দিন ।
পায়ের নীচের সবুজ ঘাস থাকুক, সবুজ ঘাসের উপর থাকুক জল, সেই জলে ভাসতে থাকুক কাগজের নৌকো, মাথার উপর থাকুক একটুকরো নীল আকাশ । আর থাকুক কবি, তার কল্পনার নারী এবং সবশেষে বিষণ্ণতা । চলুন আমরা চলে যাই কবিকে কিছুক্ষণ একা থাকতে দিয়ে । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।