আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নতুন প্রজন্ম-সমাজ ও সামাজিকতা- কিছু আশা আশঙ্কা ও একটি ছেলের গল্প

একটা ছোট ছেলের কথা দিয়ে শুরু করা যাক। ছেলেটি তার বাবা মা’র একমাত্র সন্তান। বাবা মা’র আদরে কখনও তার বোঝা হয়ে ওঠেনি ভাই বোন সম্পর্ক কি , কেমন, এর মাধুর্যটাই বা কেমন। এটা আসলে গল্পের লক্ষণীয় বিষয় না। ছেলেটি একা বড় হলেও খুব ই বন্ধুসুলভ।

ছেলেটি মধ্যবিত্ত পরিবার এর , আত্মীয় তথা ব্যাকগ্রাউন্ড স্ট্যাটাস বলতে আমরা যা বুঝি তাও ভাল, বলতে গেলে অনেক ভাল। এখন ছেলে তার বন্ধু-বান্ধবদের কাছে প্রায় একটা কথা শুনে--- বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠানে কাজিন রা একসাথে অনেক মজা করা হয়, সবাই একসাথে ঘুরে বেড়ানো , খেলা ইত্যাদি ইত্যাদি। -তার মাকেও কোন অনুষ্ঠান এ গেলে ছেলে দেখে ওর মা র সাথে মা’র কাজিন দের অনেক ভাল সম্পর্ক! অনুষ্ঠানে গেলে তার যা করা হয় তা হল কোন এক কোণায় একা বসে থাকা। মাঝে মধ্যে মা বাবা এসে পরিচয় করিয়ে দেয়, এটা তোমার অমুখ তমুখ , এটা তোমার চাচাতো ভাই, ফুফাত বোন, তোমার এদিকের মামা, ওদিকের খালা! কিন্তু ছেলে তাদের কাওকেই চেনেনা! অনেক ক্ষেত্রে তাদের কে সে হয়তো প্রথম বার এর মত তাদের দেখল! তখন ছেলেটি ভাবে, ‘’আমার তো অনেক গুলো কাজিন! তাহলে আমরা একসাথে মজা করিনা কেন? এটা কেমন কথা , তাদের তো আমি চিনিই না! ‘’ ছেলে অবাক হয়। মা’র কাছে সে জিজ্ঞাসা করে, ‘ মা তোমাদের ছেলেবেলা কেমন ছিল? ’ মা বলে, ‘আমরা কত মজা করতাম তখন! ছুটি পেলেই মামার বাড়ি, খালুর বাড়ি, খালার বাসায় চলে যেতাম, সেখানে কাজিন মিলে ঘোরা , খেলা কত্ত মজা হত!’ ছেলের কাছে মায়ের ছেলেবেলা রুপকথা মনে হয়।

সে বুঝে উঠতে পারেনা তার দোষটা কোথায়!কেন তাকে মামার বাসায়, খালার বাসায় জেতে দেওয়া হয়না। ছুটি তো তার ও হয়! কেন তখন ও তাকে সবসময় বই খাতা, so called Extra curricular activities( যা শিশুকে নিজের খুশিতে নয় জোর পূর্বক করতে বাধ্য করা হয়) নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়? কেন সে তার সব কাজিনদের সাথে মজা করা দূরে থাক চেনেইনা? কেন সবার সাথে তার এত দূরত্ব ? কেনই বা তাকে কেও চেনেনা আর সেই বা কাওকে চেনেনা! --- ঘটনা হোক, হোক গল্প- আমার মনে হয় এটা আজ এই সমাজ এর অনেক ছেলেমেয়ের জন্যই সত্যি। আমাদের ঠিক আগের জেনারেশনে এ সমস্যা তেমন একটা না থাকলেও এখন এটা রীতিমত ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সময়ের সাথে পারিবারিক তথা সামাজিক বন্ধনের সুতা টা ব্যস্তানুপাতিক হারে দুর্বল হচ্ছে। শিকড় ছেড়ে যাওয়ার এ প্রবণতার কারণ দেখতে গেলে সবার আগে যে কথাটা বলা যায় তা হল – গ্রাম থেকে শহরের দিকে মানুষের একমুখী যাত্রা তথা একান্নবর্তী পরিবার থেকে একক পরিবার এর দিকে মানুষের বেশি ঝুঁকে পড়া।

অবশ্যই এ কথা স্বীকার করতে বাধা নেই যে সময়, পরিবেশ- সবই মানুষকে এ পথে ঠেলে দিচ্ছে। কিন্তু কথা থেকে যায় এখানে, যে দলবদ্ধতার মূলচেতনা থেকে পরিবার তথা সমাজ এর উৎপত্তি, মূল ছেড়ে এভাবে ম্যারাথন দৌড়ে থাকা মানুষ কতটুক ই বা এই চেতনা ধারণ করছে? এটা অবশ্যই এক ধরণের অবক্ষয় আর এটা সত্যি অন্য সব কারণ এর মত ক্যান্সার এর হয়ে সমাজ কে কুরে কুরে খাচ্ছে। এর সাথে যোগ হচ্ছে অহঙ্কার, ঈর্ষা আর হিংসার মত ব্যাপারগুলো! সম্পর্কের চেতনা মানসিক বন্ধন থেকে গিয়ে ঠেকছে স্বার্থপরতায়। তাই আজ ছেলেমেয়েদের মানসিক বিকাশে আসছে বাধা আর দুঃখের কথা এটা যে আমরাই এ বাধার জনক ও প্রণেতা। তবুও ঈদ পুজা পার্বণে মানুষের শিকড় এর টানে ছুটে যাওয়া দেখতে সত্যি অনেক ভাল লাগে।

আশা জাগে। কিন্তু আশার মাঝে জাগে আশঙ্কা। গল্পের মত অনেক ছেলেমেয়ে ই আছে এদের মাঝে যাদের মনে এই দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে, যা বাড়তে থাকা ক্যান্সার এর মত, যা একটা সময় এই প্রজন্মকে অথবা তার পরের প্রজন্মকে মানসিক অস্থিরতা আর একাকিত্তের মত বেশ কিছু ঝামেলায় ফেলতে যাচ্ছে। আমাদের আগের প্রজন্মের ভুল এর মাশুল দিচ্ছি আমরা আর প্রজন্মের ধারায় ভুলের ধারা যদি চলতে থাকে আগামী এক কিংবা দুই প্রজন্ম পরে এই পারিবারিক আনুষ্ঠানিকতা গুলো রুপকথা হয়ে যাবে। এখন ছেলেমেয়েরা নিকট আত্মীয়দের চেনেনা, এই ছেলেমেয়েদের ছেলেমেয়েরা চেনার প্রয়োজনটুকও বোধ করবেনা।

বর্তমানের ধারা আমাদের নিয়ে যাচ্ছে ভয়াবহ এক ভবিষ্যৎ এর দিকে। এই ধারা বন্ধ করতে হবে আজই। করতে হবে আমাদের কেই। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এমন বন্ধনহীন মুক্ত বন্দিত্ব দিতে চাই না আমরা। পরিবর্তন এর শুরু হোক আজই, আমাদের নিজ পরিবার থেকেই... ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.