আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাঁচটি ছেলের রঙ্গিন স্বপ্ন কিন্তু একজনের ধূসর গল্প

রিমনঃআচ্ছা তোর s.s.c শেষ হলে কোথাও কি যাবি? আমিঃহুম কোথাও তো যাওয়া দরকার,চল কক্সবাজার যাই। রিমনঃকিন্তু কেউ কি যাবে? আমিঃআরে আগে বলে দেখি,ওড়াও তো আমাদের মতো ঘুরতে পাগল Ok done done উপরের কথা গুলো আমার এবং রিমনের,কক্সবাজার যাওয়ার plan টা আমার। যাই হোক যেতে রাজি হল আমি,রিমন,কাজল,হিমেল এবং আমার ফুফাতো ভাই নোমান যে কিনা আসবে গাজিপুর থেকে কক্সবাজার যাওয়ার জন্য, যাওয়ার প্লান তো হল কিন্তু টাকা পাব কোথায়, আগে বলে নেই এই ৫ জনের মাঝে পড়ালেখা করি শুধু আমি ,হিমেল,নোমান যার মাঝে হিমেল পড়ালেখার ক্ষেত্রে আমাদের থেকে ১ বছর এর বড়, যাই হোক নোমান কে বললাম ও বলল যে ওর কোন টাকার সমস্যা হবে না, যখন আমরা প্লান করতে লাগলাম তখন ১৪ জানুয়ারি,এবং আমাদের কক্সবাজার যাওয়ার দিন ধার্য করা হল ১৬ মার্চ, হাতে আমরা কমপক্ষে ২ মাস সময় হাতে পাচ্ছি যেটা কম না। আমরা অনেক হিসাব করে দেখলাম যে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা হলেই কক্সবাজার গিয়ে ঘুরে আসা যাবে। টাকার ব্যাবস্থা কার কিভাবে হবে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম, রিমনঃ ওর এক মামার দোকান আছে ও সেখানে ২ মাস বসবে এবং বিনিময়ে যে টাকা পাওয়া যাবে তা দিয়েই ওর কক্সবাজার যাওয়া হবে।

হিমেলঃ ও একটা স্টুডেন্ট পড়ায় সেখান থেকে ৬০০ টাকা বেতন পায়, ও আরও একটা স্টুডেন্ট বেশি পড়াবে এবং ২ মাসে হবে ২৪০০ টাকা এবং এদিক সেদিক করে আরও ১০০০ টাকা যোগাড় করতে পারবে অর্থাৎ ওর টাকা হবে মোটমাট ৩৪০০ টাকা থেকে ৩৫০০ টাকা,নতুবা ওর যাওয়া হবে না। কাজলঃ ওকে টাকার কথা জিজ্ঞেস করাতে ও কিছু বল্লনা,শুধু বলল যে যেভাবেই হোক ও যাবে আমাদের সাথে। আমার টাকাঃ আমি আমার টাকার কথা আম্মুকে বলেছিলাম,আম্মু আব্বুকে বলার পর আব্বু বলল যে ওকে S.S.C দিতে বল ভালমত,আর টাকা যাওয়ার কয়েকদিন আগে দিব। s.s.c শেষ হল, আমাদের কত স্বপ্ন কিভাবে যাব, কিভাবে খাব, কোথায় থাকব,কে কি পোশাক পরব। ১০ মার্চ নোমান এসে পরল ঢাকায় আমাদের বাসায়, ওকে পেয়ে তো আমাদের উচ্ছাস আরও বেড়ে গেলো।

১১ মার্চ কাজল ওর গ্রামের বাড়ি নোয়াখালি চলে গেলো বলল টাকা জোগাড় করতে গেলো,চিন্তা না করতে,দরকার পরলে ১৬ ই মার্চ এসে আমাদের সাথে যোগ দেবে। ১২ মার্চঃ হিমেল এবং রিমন এখনও বেতন পায়নি। ১৩ মার্চঃ কাজল এর কোন খোজখবর পাওয়া যাচ্ছে না। ১৪ মার্চঃ হিমেল এবং রিমন বেতন পেয়েছে,রিমন এর টাকা কম পরেছে বলে,রিমন এর হাপানির সমস্যার কারনে ওর মা ওকে ১০০০ টাকা দিয়েছিলো ডাক্তার দেখানোর জন্য কিন্তু রিমন ডাক্তার না দেখিয়ে সেই টাকা কক্সবাজার যাবার জন্য রেখে দিলো, এবং সব থেকে ভয়াবহ বেপার ঘটল কাজল এর,ওর টাকা হয় না দেখে গ্রামের বাড়ীতে যায়,গিয়ে দেখে ওর মামার বাড়ীতে বিল্ডিং বানানোর কাজ চলছে ,তো কাজল সেখান থেকে কিছু রড চুরি করে বিক্রির জন্য কিন্তু ও ধরা পরে যায়,তারপর টাকার বন্দবস্ত হয় না দেখে ও ওর মোবাইল টা বিক্রি করে দেয় আমাদের সাথে যাবার জন্য। ১৫ মার্চঃ আমি আজকে আব্বুর কাছে টাকা চাইলাম,বললাম আব্বু টাকা দিন,কালকে তো যাব,কিছু কিনতে হবে,আব্বু টাকা দিলো ৫০০০।

১৬ মার্চঃ সকাল ১০ টা, রাত ১১ টা ১৫ তে আমাদের বাস ছাড়বে, তাই সকাল বেলা আমি একটু বাজারে গেলাম একটা ক্যাপ কিনতে, বাজারে যেতে হলে বড় একটা রোড পার হতে হয় আমাদের, সাবধানে পার হচ্ছিলাম, হটাত করে দেখি একটা ট্রাক আসছে এবং ট্র্যাক এর ঠিক সামনে একটা ছোটো ৫ বছর এর মেয়ে হয়তবা পথকলি, অর্থাৎ পড়িস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে মেয়েটা হয় ট্রাক এর ধাক্কায় মারা যাবে কিংবা আমি পারি ঝাপিয়ে পরে মেয়েটাকে বাঁচাতে, এটা করব কি করব না এটা ভাবতে আমি সময় পাব বড়জোর ৫ সেকেন্ড, কিছু বুঝে উঠার আগেই আমি ঝাপিয়ে পরে মেয়েটাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম রোড অন্য প্রান্তে এবং আমি হটাত চোখে একটা সাদা পৃথিবী দেখতে পেলাম, তারপর তারপর তারপর চোখ মেলে তাকাবার পর দেখি আমার সামনে আমার ৪ বন্ধু দাড়িয়ে আছে, আমি উঠতে গিয়ে বুজতে পারলাম উঠবার শক্তি টুকু আমার নেই, এবং আরও বুজতে পারলাম আমার পা দুটো আর অবশিষ্ট নেই,হাটু থেকে কেটে ফেলা হয়েছে, ৩ মাস পরের কথা আমি এখন আমার পঙ্গুত্ব মেনে নিয়েছি,আমার যে ইচ্ছে ছিল কক্সবাজার যাবার সেটার বাস্তবায়ন হয়তবা হয় নি কিন্তু আমি শান্তি পাই এই ভেবে যে আমি তো অন্তত একটি নিস্পাপ শিশুর জীবন বাচাতে পেরেছি,হোক না সে কোন পথশিশু,মানুষ তো। কিছু কথাঃউপরের ঘটনাটা পুরোপুরি সত্য নয়,১০ মার্চ এর পর থেকে ঘটনাটার পুরোটা আমার কল্পনা প্রসুত,আসল ঘটনাটা আমি ছাড়া কেউ জানে না হয়তবা জানবেও না কোন দিন বিঃ দ্রঃ নামগুলো ছদ্মনাম উৎসর্গঃ রিমন,হিমেল,কাজল,নোমান আমার এই চার বন্ধু এবং ভাইকে ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২১ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।