আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তাঁদের কাছে ক্ষমাভিক্ষা...

যখন কোনো আব্দার করার ইচ্ছে হতো, বড়ভাইকে বলেছি। ঈদে নতুন জামা, প্যান্ট, জুতো-সবই ছিল তাঁর কাছে। ছোট মামা কোনো এক সময় তাঁকে বলেছিলেন, ওকে আমার কাছে দাও, আমি তার সব খরচ চালাবো। লেখাপড়া করবে আমার বাসায় থেকে। বড়ভাই মামার সেই প্রস্তাব নাকচ করতে এক মুহূর্ত ভাবেননি।

সরাসরি বলেছেন, গায়ে যতক্ষণ একফোঁটা রক্ত আছে, ততক্ষণ ‘আমার’ দায়িত্ব অন্য কাউকে বহন করতে হবে না। বড়ভাইকে অন্য সব ভাই মিয়াভাই বলে ডাকেন। মিয়াভাই সংক্ষেপে ম্যাভাই হয়ে গেছে। মনে পড়ছে, কলেজজীবনের প্রথমদিকের কথা। খুব ধুমছে ফুঁকোয় সিগ্রেট।

সেজোভাই একদিন এ বিষয়টি জেনে বলেন, এরপর যদি শুনি, তবে এককোপ দিয়ে ঘাড় থেকে মাথা নামিয়ে দেবো। সিগ্রেটের বিষয়টি চাপা থাকেনি মিয়াভাইয়ের কাছে। রাতের খাবার খাওয়ার সময় খুব ধীরস্বরে জানতে চাইলেন, শরীরের অবস্থা কেমন। ক্ষীণকণ্ঠে বলি, ভালো। তোর কাশিটা কি সেরেছে? বলি, এখন অনেক কম।

তিনি এক মনে আস্তে আস্তে বলতে থাকেন,... ছোট চাকরি করি। বেতন অনেক কম। তোদের যে একটু ফলমূল খাওয়াবো সে উপায়ও নেই। কত ইচ্ছে করে একটু ভালমন্দ খাওয়াই-কিন্তু পেরে উঠি না। এরপরও যদি শস্তা বিড়ি-সিগারেট খেয়ে অসুখ-বিসুখ বাধাস তা কি ঠিক হবে।

লেখাপড়া শেষ করে ভাল দেখে একটি চাকরি করিস। তারপর দামি দামি ব্রাান্ডের সিগারেট খাস। ব্যাস এটুকুই। তার কথা বলার স্টাইল, উপস্থাপন কৌশল ইত্যাদিতে নিচু মাথা আর উঁচু হতে চাইছে না। ভাবি বলেন, খাওয়ার সময় এত বকবক করো না... খুব সকালে স্কুলে যেতে হবে।

ভাবির শরীর খারাপ; আমাকে বললেন, ভাত বেড়ে খাও। আমারও সময় কম। তাই না খেয়েই দ্রুত স্কুলে চলে আসি। বিষয়টি মিয়াভাই সবিস্তার শুনেছিলেন। উনি অফিসে যাবেন।

ততক্ষণে ভাবি কিছুটা সুস্থ। ভাত বেড়ে তাঁর সামনে দেন। কিন্তু তিনি না খেয়েই চলে আসেন। আজ বাবা দিবসে বাবাকে নিয়ে লেখার কথা। কিন্তু বাবাকে বাদ দিয়ে মিয়াভাইকে নিয়ে লিখতে হচ্ছে কেন? সহজ উত্তর।

বাবা কেমন হয়, বাবার কাছে কী বলতে হয়, বাবা দেখতে কেমন, বাবা কী-এসব আমার কাছে নিতান্তই কৌতুহল আর বিরাট এক প্রশ্নচিহ্ন। আমি তো তাকে স্মরনেই আনতে পারি না। কীভাবেই বা তিনি আসবেন? ১৯৭৭ সালে তিনি যখন মারা যান, তার আগে থেকেই তো আমি বড়ভাইয়ের কাছে। মিয়াভাই বিয়ে করার পর থেকেই আমি তার সাথে থাকি। তা সেতো বছর দুই আগ থেকে।

ভাই-ভাবির সাথে কোথায় বেড়াতে গেলে তাদেরকেই বাবা-মা ঠাওরাতেন লোকে। সেই এত্তটুকুন বয়স থেকেই। বাবা-আমাকে পিতৃহীন করেছো আমার বোঝার বয়স হওয়ার আগেই। কখনোই কোনো শখ-আহ্লাদ মেটাওনি। কখনো বুকে জাপটে ধরেছো কি না-জানি না।

তোমার ওম কেমন তা বলার মতো যোগ্যতা আমার নেই। নিজে গেছো এত ছোট রেখে, আবার মাকেও নিয়ে গেছো সাত বছর পর। আমাকে পিতৃ-মাতৃহীন রেখে তোমাদের কি খুব আনন্দে সময় পার হয়? তোমাদের দেখিনি। তাই অবয়ব খুঁজেছি মিয়াভাই-ভাবির কাছে। তোমাদের শূন্যতা তাতে কি পূরণ হয়েছে? জানি না এর উত্তর।

হয়তো এর থেকে বেশি কিছু করার ক্ষমতা তোমাদের ছিল না। পারতে কি না তাও বলা যায় না। বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়, তোমাদের কাছে থাকাটা আরও বেশি রোমাঞ্চকর হতো, বেশি আনন্দের। তোমরা থাকোনি, কিন্তু আমি আছি। আমার এখন একজন বাবা-মা হয়েছে।

তোমাদের দুজনের জন্য আমাদের দুজনের এই পুরনো ছবিটা উ]সর্গ করলাম। তোমাদের অভাব যারা পূরণ করেছেন, তাদের প্রতি অসীম শ্রদ্ধা। নিসংকোচে প্রার্থনা, মিয়াভাই-ভাবিকে পরমায়ু দিও ¯্রষ্টা। তাদের সুখী রেখো। কেননা আমার কাছ থেকে তাঁরা কখনোই এক ফোঁটা স্বস্তি পাননি।

সবসময় তাদের কষ্টের কারণ হয়ে থেকেছি। করজোড়ে তাঁদের কাছে ক্ষমাভিক্ষা ছাড়া আর কিছুই বলার নেই। Photo: তাঁদের কাছে ক্ষমাভিক্ষা... যখন কোনো আব্দার করার ইচ্ছে হতো, বড়ভাইকে বলেছি। ঈদে নতুন জামা, প্যান্ট, জুতো-সবই ছিল তাঁর কাছে। ছোট মামা কোনো এক সময় তাঁকে বলেছিলেন, ওকে আমার কাছে দাও, আমি তার সব খরচ চালাবো।

লেখাপড়া করবে আমার বাসায় থেকে। বড়ভাই মামার সেই প্রস্তাব নাকচ করতে এক মুহূর্ত ভাবেননি। সরাসরি বলেছেন, গায়ে যতক্ষণ একফোঁটা রক্ত আছে, ততক্ষণ ‘আমার’ দায়িত্ব অন্য কাউকে বহন করতে হবে না। বড়ভাইকে অন্য সব ভাই মিয়াভাই বলে ডাকেন। মিয়াভাই সংক্ষেপে ম্যাভাই হয়ে গেছে।

মনে পড়ছে, কলেজজীবনের প্রথমদিকের কথা। খুব ধুমছে ফুঁকোয় সিগ্রেট। সেজোভাই একদিন এ বিষয়টি জেনে বলেন, এরপর যদি শুনি, তবে এককোপ দিয়ে ঘাড় থেকে মাথা নামিয়ে দেবো। সিগ্রেটের বিষয়টি চাপা থাকেনি মিয়াভাইয়ের কাছে। রাতের খাবার খাওয়ার সময় খুব ধীরস্বরে জানতে চাইলেন, শরীরের অবস্থা কেমন।

ক্ষীণকণ্ঠে বলি, ভালো। তোর কাশিটা কি সেরেছে? বলি, এখন অনেক কম। তিনি এক মনে আস্তে আস্তে বলতে থাকেন,... ছোট চাকরি করি। বেতন অনেক কম। তোদের যে একটু ফলমূল খাওয়াবো সে উপায়ও নেই।

কত ইচ্ছে করে একটু ভালমন্দ খাওয়াই-কিন্তু পেরে উঠি না। এরপরও যদি শস্তা বিড়ি-সিগারেট খেয়ে অসুখ-বিসুখ বাধাস তা কি ঠিক হবে। লেখাপড়া শেষ করে ভাল দেখে একটি চাকরি করিস। তারপর দামি দামি ব্রাান্ডের সিগারেট খাস। ব্যাস এটুকুই।

তার কথা বলার স্টাইল, উপস্থাপন কৌশল ইত্যাদিতে নিচু মাথা আর উঁচু হতে চাইছে না। ভাবি বলেন, খাওয়ার সময় এত বকবক করো না... খুব সকালে স্কুলে যেতে হবে। ভাবির শরীর খারাপ; আমাকে বললেন, ভাত বেড়ে খাও। আমারও সময় কম। তাই না খেয়েই দ্রুত স্কুলে চলে আসি।

বিষয়টি মিয়াভাই সবিস্তার শুনেছিলেন। উনি অফিসে যাবেন। ততক্ষণে ভাবি কিছুটা সুস্থ। ভাত বেড়ে তাঁর সামনে দেন। কিন্তু তিনি না খেয়েই চলে আসেন।

আজ বাবা দিবসে বাবাকে নিয়ে লেখার কথা। কিন্তু বাবাকে বাদ দিয়ে মিয়াভাইকে নিয়ে লিখতে হচ্ছে কেন? সহজ উত্তর। বাবা কেমন হয়, বাবার কাছে কী বলতে হয়, বাবা দেখতে কেমন, বাবা কী-এসব আমার কাছে নিতান্তই কৌতুহল আর বিরাট এক প্রশ্নচিহ্ন। আমি তো তাকে স্মরনেই আনতে পারি না। কীভাবেই বা তিনি আসবেন? ১৯৭৭ সালে তিনি যখন মারা যান, তার আগে থেকেই তো আমি বড়ভাইয়ের কাছে।

মিয়াভাই বিয়ে করার পর থেকেই আমি তার সাথে থাকি। তা সেতো বছর দুই আগ থেকে। ভাই-ভাবির সাথে কোথায় বেড়াতে গেলে তাদেরকেই বাবা-মা ঠাওরাতেন লোকে। সেই এত্তটুকুন বয়স থেকেই। বাবা-আমাকে পিতৃহীন করেছো আমার বোঝার বয়স হওয়ার আগেই।

কখনোই কোনো শখ-আহ্লাদ মেটাওনি। কখনো বুকে জাপটে ধরেছো কি না-জানি না। তোমার ওম কেমন তা বলার মতো যোগ্যতা আমার নেই। নিজে গেছো এত ছোট রেখে, আবার মাকেও নিয়ে গেছো সাত বছর পর। আমাকে পিতৃ-মাতৃহীন রেখে তোমাদের কি খুব আনন্দে সময় পার হয়? তোমাদের দেখিনি।

তাই অবয়ব খুঁজেছি মিয়াভাই-ভাবির কাছে। তোমাদের শূন্যতা তাতে কি পূরণ হয়েছে? জানি না এর উত্তর। হয়তো এর থেকে বেশি কিছু করার ক্ষমতা তোমাদের ছিল না। পারতে কি না তাও বলা যায় না। বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়, তোমাদের কাছে থাকাটা আরও বেশি রোমাঞ্চকর হতো, বেশি আনন্দের।

তোমরা থাকোনি, কিন্তু আমি আছি। আমার এখন একজন বাবা-মা হয়েছে। তোমাদের দুজনের জন্য আমাদের দুজনের এই পুরনো ছবিটা উ]সর্গ করলাম। তোমাদের অভাব যারা পূরণ করেছেন, তাদের প্রতি অসীম শ্রদ্ধা। নিসংকোচে প্রার্থনা, মিয়াভাই-ভাবিকে পরমায়ু দিও ¯্রষ্টা।

তাদের সুখী রেখো। কেননা আমার কাছ থেকে তাঁরা কখনোই এক ফোঁটা স্বস্তি পাননি। সবসময় তাদের কষ্টের কারণ হয়ে থেকেছি। করজোড়ে তাঁদের কাছে ক্ষমাভিক্ষা ছাড়া আর কিছুই বলার নেই। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.