সকালের আলো সবে ফুটতে শুরু করেছে। নাস্তার টেবিলে পরটার সাথে ডিমের মিলনের ঢের বাকি এখনও। যাই, লাগিয়ে আসি দুই তিন রাউন্ড। লুঙ্গিটা......নাহ!এটা পড়ে বেরনো ঠিক হবে না। এমনিতেই পাড়ার কুকুরগুলোর ইদানিং বেশ বাড় বেড়েছে।
এইত সেদিন পাশের বাড়ির কমলের পাজামার একটা পা নিয়ে তিনটা কুকুর পুরো পাড়ায় শো-ডাউন দিল। থাক, আমার লুঙ্গির তো আর পা নাই। গেলে একদম...... পাজামাটা পড়ে জুতার র্যাক থেকে দাদার বাপের আমলের একটা জুন্ডেল (জুতা বা স্যান্ডেল কিছু হবে একটা) পায়ে গুঁজিয়ে দুই মন ওজনের লাশটা নিয়ে ম্যারাথন শুরু করলাম। আস্তে আস্তে চলাই ভাল, নাহলে আজকাল বাজারের খাঁটি ভ্যাজাল রক্তে মিশিয়ে এই থ্রী স্ট্রোক টু হুইলার সিঙ্গেল স্ট্রোক নো হুইলারে কনভার্ট হবার সম্ভাবনা প্রবল।
আজকে একটু পার্কের দিকে যাওয়া যাক।
অনেকদিন হল রবী বাবু আর নজরুল চাচার সাথে কোন দেখা-সাক্ষাত নাই। কাল কাজলের মুখে শুনলাম মোতাহের আঙ্কেল আর হুমায়ন কাকু নাকি বেড়াতে এসেছেন নজরুল চাচার বাড়িতে। আর আজকাল শুনি রবী বাবুর পকেট বেশ ভারি থাকে...বিলেত থেকে পিসি ডলার পাঠিয়েছে। আমার নিশানা আজ ওই রবীর পকেট। নান- নেহারি আজ তো হবেই।
বেশি দূর যেতে হল না। পার্কের বাইরেই আধা ভাঙা একটা বেঞ্চে পেয়ে গেলাম রবী বাবুকে। এই যা! আমি তো ভুলেই গেছিলাম। যাকে এতক্ষন রবী বাবু বলে মাখিয়ে এসেছি উনি আসলে রবীন্দ্রনাথ। হা হা...আমার সোনার বাংলা--- সেই রবীন্দ্রনাথ।
এখন কেন জানি লেখা লেখি বাদ দিয়ে সারাদিন নজরুলের সাথে আড্ডা মারতেই বেশি দেখা যায়। এই বদ তাছির মনে হয় কাজী মিয়ার উপরও পড়েছে। কাজী মিয়া মানে আমাদের বিদ্রোহী। ঐযে ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো মহান পুরুষ।
- সে কি? অমন মন মরা হয়ে বসে আছেন কেন?
দাড়ি আর গোঁফ এখনও একই সাথে মিলিত।
তার মানে দৃষ্টি দিয়ে জবাব! না রে বাবা...এইসব কবি মানুষের চাহনি ভাল না। বোঝাবে আলু ভরতা...আর পাবলিক গোমাংসের ঝোল দিয়ে আধা প্লেট ভাত মেরে দেয়া সারা। ...... আমিই আবার আওয়াজ দিলাম।
- কি হল? এতদিন পরে দেখা। হাল হাকিকত তো জানতে চাইতে পারেন।
লেখালেখি কি আর শুরু করেছেন?
এবার মনে হয় কিছু একটা বলবে। পার্কের বাতাসেই হোক আর আমার প্রশ্নের তোড়েই হোক দাঁড়ি- গোঁফের জোড়া ভাঙা শুরু হল মনে হয়।
- আমি আর বই লিখে কি করবো!! তোমরা ছোকড়ারা তো সব, কি বলে ওই বস্তুটাকে?...হা... MP3...কি নামরে বাবা। এটা কোন পুস্তকের নাম হতে পারে! ঐটা নিয়েই তো যৌবন পার করছ। আমার গল্পগুচ্ছের কি আর চার আনা মান রেখেছ? নাম শুনে মনে হয় পুরা ক্যাসেটের ফিতা বইয়ের মাঝে ঠুসে দিয়েছে।
- এখানে যৌবন নিয়ে কি কথা চলে?... একগাল হাসি নিয়ে নজরুল চাচাকে এগিয়ে আসতে দেখা গেলো। হাতে একটা পত্রিকা টাইপের কিছু হবে। এত সকালে হকার তো পাড়ায় আসার কথা না।
- কি হে ভায়া! হাতে কি ধরে রেখেছ? রবী বাবুর সতৃষ্ণ প্রশ্ন।
- যৌবন হন্তক।
- তুমি আবার এই লাইনে গেলে কবে? ছ্যা ছ্যা...
আমার দিকে তাকিয়ে কাজী সাহেব মোড়ানো পত্রিকার ময়লাটখানা বিশ্ব কবির চোখের সামনে মেলে ধরলেন। ওমা, এত দেখি কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স জানুয়ারি সংখ্যা।
- আপনি এইটা দিয়ে কি করেন?—আমার সাগ্রহ প্রশ্ন।
- গত মাসে বাজারে গিয়ে চোখে পড়ে জিনিসটা। নাম দেখে ভাবলাম আবার ইংরেজরা কোন চালবাজি শুরু করল কিনা! সকালের নাস্তার টাকা দিয়ে কিনে নিলাম।
কিছুক্ষণ থেমে হতাশাভরা কণ্ঠে বলে উঠলেন, কিন্তু টাকাটা পুরাই মাটি।
- ঠিক ঠিকক...এইসব ছাইপাস আর কিইবা কাজে আসবে।
এবার আমি বললাম, এইগুলো আমাদের জানায় দৈনন্দিন সবকিছু। আরও......
আমার কথা শেষ হবার আগেই নজরুল চাচা এক কদম এগিয়ে এল। “বলত আজ বাজারে বেগুন কতো করে যাচ্ছে?”- বলে আমাকে বইটা ধরিয়ে দিল।
আমি খতমত খেয়ে বললাম, “আরে এটা থোড়াই এগুলো জানাবে, আপনি জানতে পারবেন পৃথিবীর......আপনি নিজেই দেখেন না কেন ভিতরে কি আছে?”
- আমি গত দুই মাস ধরে এই বইটা মুখস্ত করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কোন ছন্দ খুজে পেলাম না। হ্যা রে... তোদের ওই কিছু কোচিং এর বিজ্ঞাপনগুলো বেশ ভাল কবিতা দেয়। এটা পড়ে বেশ লাগে।
- হ্যা ভাল তো।
...... এই বুড়াগুলাকে আর ঘাঁটাতে ইচ্ছে করছে না। রবী বাবুর পকেট মারার ইচ্ছে এর মধ্যেই কবরস্থ হয়ে গেছে। আমি হা করে তাকিয়ে আছি। আজ সকালে আয়নাতে মনে হয় নিজের মুখটা দেখেছিলাম।
- আচ্ছা! তুই কি ওই আজব পরিক্ষা দিবি নাকি রে?...... নজরুল চাচার পাল্টা প্রশ্ন।
আমি কি বলব বুঝতে পারছি না। নাক দিয়ে ঘ্যোত করে একটা শব্দ করলাম।
- দিবেনা কেন? ঠিক ই দিবে। হলে গিয়ে কলমের আগা দিয়ে বল বানাবে। দশ পদের চাকুরি কিন্ত এক পদের পরিক্ষা।
আমাদের সময়টাই ভাল ছিল, কি বল নজরুল!
(এর পরের ঘটনা আমার আর জানা নাই। দূরে মোতাহের হোসেনের ছায়ামূর্তি দেখেই আমি চম্পট দেই। রবী আর কাজির কথায় তো রস কিছু আছে...... কিন্ত উনার উন্নত জীবন আর মহান জীবন শুরু হয়ে গেলে আমার পাজামা খুলতে আজ আর কুত্তা লাগবে না........)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।