আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাখিটা বন্দি আছে দেহের খাঁচায় ...

কোনো জটিলতা নেই তবুও জটিলতর শেষ বিকেলের রোদ গত ১৩ আগস্ট সকাল ৭টায় ফরিদপুর জেলার ভাংগা উপজেলার নূরপুর গ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলাম। গন্তব্য চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের বাড়ী। এক বছর আগে এই দিনে চিরদিনের মতো আমাদের কথা বলার পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এক বছর আগেই আমি তাঁর শেষ যাত্রায় শামিল হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তা হয় নি, কারণ আমার ওপর দায়িত্ব ছিল শোকসভা আয়োজন করা সংশ্লিষ্ট কিছু কাজের।

তাই এক বছর আগে পারি নি। এইবার তেমন কোনো দায়িত্বে নিজেকে জড়াবো না, তা আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম। তাই এইদিন অনেকের মধ্যে থেকেও একা একাই একটি এককযাত্রায় বেরিয়ে পড়েছিলাম। পথে নিহত হওয়ার স্থানে কিছু আয়োজন ছিল, অনেকের মতো সেখানেও ছিলাম কিন্তু দলছুট হয়েই চারপাশটা দেখছিলাম। ঠিক যে সময়টিতে ঘটনাটি ঘটেছিল এক বছর আগে সেই সময়টিতে সেই স্থানেই আমিও দাড়িয়ে ছিলাম বাকি সকলের মতো, মাথায় তখন কত কথা ঘুরে ফিরে আসছিল।

আমি জানি প্রত্যেকেই তখন ছিলেন আমার মতোই একক। যদিও আমরা ছিলাম দলগত। আমরা ভাংগায় পৌছে একটি মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করলাম। মানববন্ধন শেষে সবাই শোকযাত্রা করে তারেক ভাইয়ের বাড়ীতে পৌছালাম। একটি বছর, অনেক দিন! কিন্তু কেন জানি কখনও মনে হয়নি তারেক ভাই নেই।

বিগত একটি বছর। মনেই হয়নি। কিন্তু যখন শোকযাত্রা তারেক ভাইয়ের সমাধি বা কবরের সামনে পৌছালো, কেমন করে যেন আমি শোকযাত্রাটির সামনের দিকেই ছিলাম। চলতে চলতে হঠাৎ করেই লাল ইটে সীমানা প্রাচীরে বাধানো একটি কবরের সামনে দাড়ানো অবস্থায় নিজেকে দেখতে পেলাম। লক্ষ্য করলাম চলচ্চিত্র সম্পাদক তারেক ভাইয়ের বহুদিনের সহকর্মী জুনায়েদ হালিম কবরের সামনে গিয়েই কবরের প্রাচীর ধরে বসে পড়লেন।

আর আমি সত্যিকারের হতবাক, হতবুদ্ধি হয়ে দাড়িয়ে পড়লাম। হঠাৎ করেই একটি শূন্যতা বোধে আক্রান্ত হলাম। উপলব্ধি করলাম তারেক ভাই সত্যিই আর আমাদের মাঝে নেই ! এই না থাকার বোধ আমি তাড়াতে পারলাম না। কারণ কবরের দিকে তাকিয়ে কেবলি আমার মনে হচ্ছিল এখানে, এইখানেই তিনি চিরদিনের শয্যাগ্রহণ করেছেন। বাড়ীতে আরো নানা আয়োজন ছিল, আমি কোনো কিছুতেই নিজেকে যুক্ত করতে পারি নি।

আমি আমার মতো করেই ঘুরে ফিরে দেখছিলাম বাড়ীর চারপাশটা, বাড়ীর গাছগুলো অথবা পুকুরের আশপাশ। ফেরার পথে প্রয়োজনেই নেমে গেলাম গাড়ি থেকে, হলাম দলছুট। সে রাতটি রাজবাড়িতে থেকে পরদিন সকালে চলে গেলাম কুষ্টিয়ায়। সেখানে সাধুসঙ্গ করে চলে গেলাম মেহেরপুর। মেহেরপুরে সাধক দৌলত সাঁইজির আখড়ায় থাকলাম।

সেখান থেকে আবার কুষ্টিয়া শহরে একদিন থেকে গতকাল রাজধানীমুখি হয়েছি। ফিরতে ফিরতে ভাবছিলাম তারেক ভাইয়ের 'মাটির ময়না'র একটি গান: পাখিটা বন্দি আছে দেহের খাঁচায় ও তার ভবের বেড়ি পায়ে জড়ানো উড়তে গেলে পড়িয়া যায় ! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।