জীবনকে ভালোবাসি, তার চেয়েও বেশী ভালোবাসি মেয়েকে। মেজাজটা চরম খারাপ হয়ে আছে, মেয়েটা অসুস্থ, খাওয়া নিয়ে বড় যন্ত্রণা করছে। ও সারাদিন হাজারটা দুষ্টুমি করলেও আমার রাগ হয়না, কিন্তু যখনই ও খাওয়া নিয়ে বিরক্ত করে তখন কেন যেন আমি আর আমাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারিনা, এখন বুঝতে পারি যে আমি ছোট থাকতে যখন খেতে চাইতামনা তখন কেন আব্বু আম্মু খাওয়ানোর জন্য এতো সাধতো। কত রাগ করতাম তখন তাদের উপর, হায়রে তখন যদি মা বাবার মনের অবস্থা বুঝতাম!!!
মেয়েটা দেখতে দেখতে বড় হয়ে যাচ্ছে। কত কথা বলতে শিখছে....ওর বাবাইয়ার নাম কি, ওর মার নাম কি, ওর নিজের নাম কি, সব বলতে পারে এখন মাশাআল্লাহ।
অথচ ওর জন্মের কথা মনে পড়লে এখন ও আবেগে কেঁপে উঠি। এইতো সেদিন হলো আমার পাখীটা (২০১১ এর মার্চ মাসের ১৮ তারিখে)।
ঈশিত্বর প্রথম ছবি।
আমাদের প্রথম সন্তান আমার ও আমার জামাইয়ের পরিবারের প্রথম তৃতীয় প্রজন্ম সে তাই ওকে নিয়ে সবার আনন্দ আর উৎসাহ যেন একটু বেশীই। আদর ও পাচ্ছে বেশী।
ও আমার মেয়ের নামই তো বলা হয়নি, ওর নাম রেখেছি ঈশিত্ব যার অর্থ হলো সম্পদ। আসলেই সে আমাদের সম্পদ। যখন আমি conceive করলাম তার কিছুদিন পরই ওর বাবা ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিল, যা আমাদের অনেক দিনের স্বপ্ন ছিলো। জানিনা এটা কাকতালীয় কিনা তবুও আমরা আমাদের ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে এটা বিশ্বাস করতে ভালোবাসি যে এটা আমাদের মেয়ের জন্যই হয়েছে।
ওর সাড়ে ৬ মাস বয়স থেকেই জীবন ও জীবিকার তাগিদে আবার চাকুরিতে যোগ দেই, অবশ্য এর আগে আমার অফিস থেকে আমাকে যে সাহায্য ও সহযোগিতা করা হয়েছিলো তা একটু বলে নিই।
আমার Early Pregnancy period এর তিনমাস সময় থেকেই অফিস থেকে গাড়ীর ব্যবস্থা করা হয়। যার ফলে রাস্তাঘাটে যাতায়াতজনীত কোন সমস্যা আমাকে ভোগ করতে হয়নি। মার্চ মাসের শুরু থেকে আমার মাতৃত্বকালীন ছুটি শুরু হয়। আমাদের অফিসে এর আগে আর কেউ এই ছুটি নেয়নি বা নেয়া লাগেনি, আমার জন্য প্রথমবার পলিসি করা হয়, সে অনুযায়ী আমি ৪মাস সবেতন ছুটি নেয়ার অনুমতি পাই। মেয়ের সুবিধার কথা ভেবে আমি আরও ৩মাস ছুটি (বিনা বেতনে) বাড়াই।
এই সাতমাসে আমি অফিস থেকে সম্পূর্ন সহায়তা পেয়েছি, এজন্য আমি আমার অফিসের প্রতি কৃতজ্ঞ।
যাই হোক এই ৭মাস ছুটির পর যেদিন আমি অফিসে যোগ দিলাম, সেদিন সারাটাদিন মন পড়ে রইলো বাসায়। আমার জামাইর ক্লাস থাকা সত্বেও ওকে জোর করে বাসায় রেখে এসেছি কারন মেয়েটা একসাথে বাবা মাকে না পেলে ভয় পেতে পারে এই ভেবে। সারাদিনে ১ঘন্টা পর পর খোঁজ নিয়েছি মেয়ে কি করছে কি খেয়েছে.....ইত্যাদি, ইত্যাদি। অফিস শেষ করে মনে হয়েছে দৌড়ে বাসায় যাই, গিয়ে মেয়েকে আগে বুকে জড়িয়ে ধরি।
আজ পর্যন্ত সেই অবস্থাটা আছে।
কি এক অদ্ভুত মায়া এটা যে মা না হয়েছে সে বুঝতে পারবেনা। আমার মেয়েটা খাওয়া নিয়ে অনেক যন্ত্রণা করে, তখন খুব রাগ হয় ওর উপর, বকা দেই, মাঝে মাঝে বেশি যন্ত্রণা করলে মার দেই, তখন মেজাজ চরম খারাপ হয়, কিন্তু পরে যখন ও একটা হাসি দেয় আর কিছু মনে থাকেনা আমার। মাঝে মাঝে অসুস্থ হলে খুব বিরক্ত করে, তখন আমি আর তার বাবা সহণশীলতার চরম পরীক্ষা দেই। রাতে নিজেরা জেগে থেকে ও যেন ভালো ঘুমাতে পারে সেটা নিশ্চিত করতে চাই।
তখন মাঝে মাঝে নিজের মা বাবার কথা ভাবি , মনে হয় যে আমরা একটা সন্তান বড় করতেই হিমসিম খেয়ে যাচ্ছি, আর আমাদের মা বাবা তিন তিনটা সন্তানকে বড় করতে কতই না কস্ট করেছেন।
এবার আমার লক্ষী মেয়েটার কিছু কার্যকলাপের নমুনা দেই। সে তার বাবার ব্যাপক ভক্ত। তার সব ঢং আর আহ্লাদ তার বাবাইয়ার কাছে। আমি আর তার বাবা দুজন যদি একসাথে ঘরে ঢুকি সে আমার কাছে না এসে তার বাবার কাছে যাবে, বাবার হাতে যাই থাকুক না কেন ও নিতে পারুক বা না পারুক নেয়ার চেষ্টা করবে।
তাকে ক্যামেরা দেখিয়ে Smile বললে সে তার পন্চদন্ত দেখিয়ে দিবে।
এই ছবি যখন তোলা হয় তখন ওর ৪টা দাঁত ছিলো, এখন আরেকটা উঠেছে।
ইদানীং নতুন শিখেছে বাংলা ছবির স্টাইলে দৌড় দিয়ে বুকে এসে ঝাঁপিয়ে পড়া। সকালে ঘুম থেকে উঠে Good morning বলা শিখেছে। আদর দিতে বললে এক গালে দিয়ে আরেক গাল দেখিয়ে বলবে ঐ গাল - মানে সে আরেক গালে আদর দিতে চায়।
সে তেলাপোকা আর টিকটিকি ভয় পায়। আমাদেরকে জানা অজানা আরও কত কিছুর আবির্ভাব যে ঘটাতে হয় তাকে খাওয়ানোর জন্য.....
আমার পাখীটা এখন আবার কবিতা বলাও শিখেছে। ওকে প্রায়ই আমি বা তার বাবা কবিতা শুনাই , সে তা শুনে শুনে এখন অনেক কবিতার এক একটি লাইনের শেষ শব্দগুলো বলতে পারে মাশাআল্লাহ। যেমন, আমি যদি খোকন খোকন বলি সে বলবে ডাক পাড়ি, আমি - খোকন মোদের বললে সে বলবে কার বাড়ী......... এরকম অনেক কবিতার অংশবিশেষ সে বলতে পারে। ওর মুখে শুনতে অনেক মজা লাগে।
মেয়ের গল্প লিখতে গেলে শেষ হবেনা, মা হয়ে আমার মন চাইবে সারাদিন ওর গল্প করি, কিন্তু তাতে সামুর ব্লগার পাঠকরা বিরক্ত হবেন। আর বিরক্ত করছিনা , সবাই আমার মেয়ের জন্য দোয়া করবেন ওকে যেন একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।