জীবন গঠনে নিজেস্ব প্রতিক্রিয়ার দায় বেশি, ঘটে যাওয়া ঘটনার ভূমিকা সামান্য।
দু'টো ঘটনা কল্পনা করুন।
ঘটনা এক:
ক্লাস সিক্সের এক দল ছেলে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে আম চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। বিচার আসল হেড মাস্টার স্যারের কাছে। মহা বদরাগী হেড স্যার সবগুলো পাপীষ্ঠকে ডাকলেন।
লাল চোখে আগুন ঝরিয়ে সবার দুই হাত সামনে মেলে ধরতে বললেন। এরপর, তেল মাখানো এক নম্বর বেতে শপাং শপাং শব্দ তুলে বাতাসের গতিতে চালিয়ে যেতে লাগলেন। তখনই, হাতে বেতের বারি পরার ঠিক আগ মুহূর্তে রাজীবের কাছ থেকে সর সর শব্দ আসল।
মহা কেলেঙ্কারী!
বেচারা রাজীব সারা জীবনের জন্য কলঙ্কিত হয়ে গেল। ওর সারাটা স্কুল জীবন বন্ধুরা একটা দিনের জন্যও ভুলতে দেয় নি ক্লাস সিক্সের সেই ঘটনার কথা।
অথচ, দোষ আসলে বেচারা রাজীবের না। দোষ--জোর-হীন পাখার মাটির তৈরি ময়না পাখির, আমাদের এই দেহ খাঁচার।
ঘটনা দুই:
পরীক্ষার আগের রাত। ভীষণ রকমের নার্ভাস। ঘুমোতে যাওয়ার সাথে সাথে টয়লেট পেয়ে গেল।
বুঝলেন পেট খারাপ হয়েছে। ভয়টা বাড়াবাড়ি রকমের জেঁকে ধরলেই এমন হয়, রীতিমত যন্ত্রনা লাগে।
এখানেও দোষটা আপনার না, দোষ, আদিমযুগ থেকে চলে আসা এই দেহ যন্ত্রের।
ভাবুন সেই আদিম যুগের মানুষগুলোর কথা। গুহা আর জঙ্গল জীবনের প্রতিটা বাঁকে অনিশ্চয়তা।
যে কোন সময় জান হাতে নিয়ে দৌঁড়ে পালাতে হতে পারে। কোথা থেকে ক্ষ্রিপ্ত চিতা এসে হাজির হয়, কিংবা বন্য মহিষ! শরীরের সবটুকু জোর নিয়ে দৌঁড়াতে হবে। সে প্রান বাঁচানোর লড়াইয়ে প্রতিটা সেকেন্ড, প্রতিটা ইঞ্চি দুরত্ব, ভীষণ রকমের গুরুত্বপূর্ণ। এক মুহূর্তের দেরি বাঘের খাদ্যে পরিণত করতে পারে, এক ইঞ্চি দুরত্ব জীবনকে বাঁচিয়ে দিতে পারে।
সৃষ্টিকর্তা দেহযন্তরকে এমন ভাবে বানিয়েছেন, যেন সেই "ভীষণ" মুহূর্তে শরীর নিজেকে তৈরি করতে পারে স্বাভাবিকের চেয়েও অনেক জোরে দৌঁড়ানোর জন্য।
তাই ভয় পেলেই, সারা শরীরে সাজ সাজ রব পড়ে যায়। ভয় পাওয়া মাত্র, কাছাকাছি বিপদ আছে ভেবে, মুহূর্তেই সব অপ্রয়োজনীয় কাজ বন্ধ করে দেয় শরীর। সব রক্ত আর অক্সিজেন পাচার করে যেখানে খুব দরকার, শুধু সেখানেই। পায়ের পেশীগুলোতে। দৌঁড়ানোর সময় খাবার হজমে শক্তি খরচ করা একটা অপ্রয়োজনীয় অপচয়।
তাই খাবার হজমের প্রক্রিয়াগুলো বন্ধ হয়ে যায়। পরিণাম? ঘন ঘন টয়লেটে দৌঁড়ানো!
এবার ভাবুন, ঠিক সেই মুহূর্তে, কাঁধে যদি এক কেজি ফল মূলের একটা বস্তা চাপানো থাকে? যে কেউ প্রান বাঁচানোর দায়ে ফেলে দিয়ে দৌঁড়ে পালাবে। কম ওজনে, হালকা শরীর, দ্রুত দৌঁড়াতে পারবে।
অথচ, শরীরেরই একটা অংশে খুব অপ্রয়োজনীয় এক কেজি ওজন জমে থাকে। পূর্ণ ব্লাডারের ধারণ ক্ষমতা প্রায় এক লিটার।
তাই খুব ভয় পেলে পালাতে হবে ভেবে শরীর খুব দ্রুত এই ওজন হালকা করার ব্যবস্থা করে দেয়। পরিণাম? আদিমযুগের মানুষগুলো এক কেজি ওজন কমিয়ে স্বাভাবিকের চেয়েও দ্রুত দৌঁড়াতে পারত, কোটি লোকের প্রাণও হয়তো বেঁচেছে এভাবে। কিন্তু এ যুগে? রাজিব বেচারারা সারা জীবনের জন্য মার্কা মারা হয়ে যায়!
প্রাণ বাঁচানো গুণগুলোই অবস্থা ভেদে ভীষণ রকমের দোষ হয়ে যায় এভাবেই! কালো চামড়া রোদে গেলে মেলোনিনের বদৌলতে আরও কালো হয়, আলট্রাভায়োলেট রে ঢুকে স্কিন ক্যান্সারের জন্ম দিতে পারে না। কিন্তু হায়, স্কিন ক্যানসারের কথা কে চিন্তা করে? দেহ খাঁচার এই অতিরিক্ত মাতবরির উসুল দিতে গিয়ে উপটানের ব্যবসা চলে দারুণ!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।