আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাপড় পেয়েছেন ময়না-জরিনা, তবে শাদা...

চাচা চৌধুরীর মগজ কম্পুটারের চেয়েও প্রখর তারা তখনো জানতো না এমন করুণ পরিণতি অপেক্ষা করছে তাদের জন্য। সামান্য একটু সাহায্য নিতে আসা তাদের সারাজীবনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে। ঈদের নতুন কাপড় কে না চায়, তেমনি এক চাওয়া পাওয়ার আশায় জাকাতের শাড়ির জন্য দাঁড়িয়েছিলেন জরিনা বেগম। কিন্ত যে দারিদ্রের জন্য নতুন কাপড় নিতে আসা সেই কাপড় তার আর কোনোদিন নেয়া হবে না। বৃহস্পতিবার বিকেলে জাকাতের কাপড় নিতে আসা সঙ্গী লোকজনের পদদলিত হয়ে মারা যাওয়া তিনজনের একজন তিনি।

সমাজের নিচু শ্রেণীর এ সকল লোকজন বিত্তবানদের সহায়তা নিতেই লাইনে দাঁড়ান। কিন্তু এমন যে হবে কে ভেবেছিল! আর তাইতো হাসপাতালের বারান্দায় এইসব হতভাগাদের আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠে। সেখানে থাকা অন্য লোকজনও চোখে জল ধরে রাখতে পারেননি। বিশেষ করে জরিনা বেগমের বোন হাবলা বেগমের কান্না সবার হৃদয়কে নাড়া দিয়েছে। লালমনিরহাট থেকে বছর তিনেক আগে ঢাকায় আসা এই দুই বোন বাসা বাড়িতে কাজ করে জীবনযাপন করছিলেন।

এবারের ঈদে তেমন কোনো আয় না হওয়ার কারণে নতুন কাপড়ের আশায় দুই বোন-ই লাইনে দাঁড়ান। কিন্তু ভাগ্যক্রমে এক বোন বাঁচলেও মারা যান অন্যজন। শুধু যে নিহতরাই হাসপাতালে এসেছে তা নয়, যারা আহত হয়েছেন কিংবা যাদের গায়ে মালেক মার্কেটের মালিকপক্ষের দারোয়ানদের লাঠি পড়েনি তেমন লোকও এসেছেন হাসপাতালে। কেউ চিকিৎসা নিতে কেউ বা এই শোকে শামিল হতে। মারা যাওয়া অপর নারী ময়না বেগমের এক নিকট আত্মীয় কান্নাকাটি করছেন।

তবে নিহত বৃদ্ধ আর এক নারী যার এখনো পরিচয় পাওয়া যায়নি, সেই নারীর দিকে তাকালেও চোখের জল ধরে রাখতে পারছে না কেউ। জীবনের শেষ বয়সে এসে একটা নতুন কাপড় নিতে এসে সারা জীবনের জন্য চলে গেলেন তিনি। এখন অবশ্য নতুন কাপড় তিনি নিশ্চিতই পাবেন, তা হচ্ছে কাফনের সাদা থান। হয়তো এর আগে জীবনের সঙ্গে কতই না সংগ্রাম করেছেন, কিন্তু এখন আর তাকে সেই যন্ত্রনা ভোগ করতে হবে না, কারো সামনে একটি টাকার জন্য হাত পাত হবে না। সেই না ফেরার দেশে গিয়েই তিনি মুক্তি হলেন।

শোষণ-শোষক নিয়ন্ত্রিত এই ভোগবাদী সমাজের নিষ্ঠুর বিড়ম্বনার শিকার এই সকল মানুষেরা সামান্য একটু সহযোগীতা নিতে এসে লাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছে। সাহায্য নিতে এসেও ভাগ্য তাদের সহযোগীতা করছে না। তাহলে তারা দাঁড়াবে কোথায়! এমন প্রশ্ন হাসপাতালের বারান্দায় আহাজারিরত মানুষের। সাথে সেই পুরনো প্রশ্ন ফের ঘুরপাক খাচ্ছে-- জাকাতের শাড়ি-লুঙ্গি বা টাকা নিতে আবারও তো যাবে তারা লাইন দিতে অন্য কোনো ‘মালেক ‍মার্কেটে! আবার ঘটবে এরকম ঘটনা, মরবে অসহায় মানুষ, মিডিয়াকর্মী আর পুলিশ ছুটে যাবে। আবার লাশ যাবে মর্গে, মানবিক রিপোর্ট হবে পত্রিকার পাতায়।

কিন্তু কোনোভাবে কি বন্ধ করা যায় না এটা! সুত্র- View this link  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.