মানুষ জন্মগতভাবেই মুক্তিকামী । কোন প্রাণী বন্দী হতে চায়না । বন্দী হওয়ার চেয়ে মৃত্যু শ্রেয় । আবার বাস্তবতার মুখোমুখি দাড়িয়ে বন্দী হয়েও বেঁচে থাকতে হয় । সেই আদিম ডাকে " বেঁচে থাকতে হবে "।
ধর্ম মানুষের জীবনে প্রয়োজন বা অপ্রয়োজন । এটা কি ঠুনকো বিষয় ? এক এক জনের দৃষ্টিভঙ্গি এক এক । আমি মনে করি ধর্ম , অনুশাসন বা শৃঙ্খলা জীবনে অবশ্যই প্রয়োজন । এখানেই অন্য প্রাণী ও মানুষের জীবনের পার্থক্য ।
অন্য প্রাণীরা তাদের সামনে সগোত্রীয় কাউকে হত্যা করলে তারা থাকে নির্বিকার কিন্তু মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তোলে ।
এভাবে থাকলে মানুষ ভালো থাকবে , এভাবে থাকবেনা । অসুখ হলে পথ্য নিতে হবে । অর্থাৎ সুস্থ সুন্দর জীবনের জন্য নিয়ম প্রয়োজন । ধর্ম মানুষের জীবনের নিয়মের অনেকধারার একটি ধারা ।
এখন প্রশ্ন ধর্ম কতটা জীবনমুখী ??? অথবা যারা ধর্মের ধারক বলে নিজেদের দাবী করে তারা ধর্মকে কতটা জীবনমুখী করেছে বা করতে পেরেছে ???
আমি বলবো ধর্মের ধারকরা ধর্মকে মানুষের কাছে উপস্থাপন করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে ।
নানা কারনে নানাভাবে । তারা ধর্মকে কোনভাবেই জীবনমুখী করতে পারেনি । তারা ধর্মকে মানুষের কাছে উপস্থাপন করেছে মৃত রূপে । পৃথিবীর বাস্তবে থাকেও কোন জিনিস যদি স্বপ্ন বা পৃথিবীর বাইরের কোন জিনিস আমাদের সামনে থাকে তা হল ধর্ম । আমাদের কাছে এটা একটা পরোলৌকিক বা মৃত্যুর পরের একটা ব্যাপার ধর্ম ।
আসলেই কি তাই ? আর তা যদি হয়েই থাকে তাহলে এই ধর্ম বেটা এই বাস্তব জীবনে কেন ? যা মৃত্যুর পরের ব্যপার তা দিয়ে এখন আমরা কি করবো ? মৃত্যুর পরেই দেখা যাবে এটা কি ? তাহলেই তো যুক্তিযুক্ত ।
এবং এই কারণেই আজ মানুষ ধর্ম বিমুখ কারণ সে তার জীবনের কিছুই ধর্মের মধ্যে খুঁজে পায়না । ধর্মের কর্ণধাররা তো শুধু স্বর্গ, নরক বা দোযখ বেহেস্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ।
আমি ধর্ম বিশারদ নই । কোন ধর্ম নিয়ে আমার বিশেষ কোন জ্ঞান নেই ।
একজন মানুষ হিসেবে ধর্ম ও ধর্মের ধারকদের আমি যেভাবে দেখি বা পাই তার দৃষ্টি ভঙ্গি থেকেই আমার এই কথাগুলো । আমি মুসলমান । তাই আমি ইসলাম নিয়ে আমার কিছুমাত্র ধারণা আছে । তা থেকেই বলছি বা ইসলাম কিভাবে আমাদের সামনে তুলে ধরা হয় ??
আল্লাহ মহা ক্ষমতাবান । ভালো কাজ করলে বেহেস্তে যাইবা , আঙ্গুর-সেব খাইবা ।
হুর-পরি লইয়া থাকবা । পাপ করলে দোযখে যাইবা আর মুগুরের বারি খাইবা । যদি জীবনের কিছু কথা থাকে তা হল ,
পুরুষের ক্ষেত্রে - দাড়ি , টুপি , আলখাল্লা । ছোটো কাম করার পর ঢিলা-কুলুফ বা ইটা কাপড় জায়গায় লাগাইয়া দৌড়াদৌড়ি । টাকনার উপরে পায়জামা বা গিরার উপর ।
পাঁচবার মসজিদে কপাল ঠুকা ।
মেয়েদের ক্ষেত্রে - বোরকা । স্বামী, সন্তান ব্যাস জীবন শুরুর আগেই শেষ ।
যা বললাম এগুলো মানেই ইসলাম কিনা তা জানিনা । তবে ইসলামের ধারক দাবিদার মোল্লারা তাই বলে ।
কিন্তু এতে কোথায় জীবনের কথা ?? কোথায় জীবনের জটিলতার সমাধান ?? আরে দোযখ বেহেস্ত , পাপ পুন্যের হিসাব তো মরনের পর । এখন যে জীবিত আছি তার কথা কই ? আসল কথা এই মোল্লারা আমদের কাছে কোন কিছুই তুলে ধরতে পারেনি ।
আমি যদি একটি ভালো কাজ করি তা করবো আল্লাহর খুশির জন্য । এটা আমার বিশ্বাস ।
কিন্তু ধর্মগুরুদের কথা অনুযায়ী পুন্য করলে বেহেস্ত পাপ করলে দোযখ ।
তাহলে আমি ভালো মন্দ কাজ করবো স্বর্গ নরকের জন্য । অর্থাৎ আমার কাছে খোদার চেয়ে স্বর্গ নরক বেশি প্রাধান্য পায় । তাদের সব বক্তব্যে তাই বলে তাহলে খোদার প্রাধান্য কোথায় ?
আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে মহানবী (সঃ) বিয়ে করলেন খাদিজা (র) কে যিনি ছিলেন বিধবা । ইসলামে বিধবা বিবাহ জায়েজ । এটা আজকের কথা নয়া ১৪০০ বছর আগেই বলা ।
পুত্র সম্পদ পাবে শুধু বাবার অংশের । মেয়েরা পাবে - পিতার , স্বামীর , সন্তানের অংশের ।
এগুলো একদমই সাধারণ জ্ঞান । যে ধর্মে নারীদের এই অধিকারগুলো দেয় আজ শুধু সঠিক ব্যখ্যার অভাবে আর মূর্খ মোল্লাদের কারনে সেই ইসলাম আজ সবার সামনে একটি নারী বিদ্বেষী বা নারীর অধিকার হরণকারী ধর্ম । এটা কোনোদিন হতে পারেনা ।
ইসলাম নারীদের যে অধিকার দেয় অন্য কোন রীতি বা নিয়ম আমার জানা মতে সে অধিকার দেয়নি । শুধু সঠিক ব্যাখ্যার অভাবে ইসলাম সম্পর্কে আমরা অন্ধকারে ।
কোরআন একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান আর মহানবী (সঃ) এর জীবন এই বিধানের বাস্তবরূপ ।
শুধু জানার বা ব্যাখ্যার অভাবে আমরা ভুল জানি । প্রতিটি ধর্মের ক্ষেত্রেই এক ব্যাপার ।
আমি এখানে শুধু ইসলাম ও নারীর বিষয়টি উদাহরণ রূপে দিলাম । আসলে ধর্ম কি বলে ? আমরা কি জানি ? ধর্মকে শুধু নামাজ , পূজা বা ধর্মীয় আচারের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে করতে হবে সার্বজনীন । জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ধর্মকে নিয়ে আসতে হবে ।
বিধবা বিবাহের বিষয়টি যদি ধরা হয় । কি দেখি ? এক সময় ভারতবর্ষে বিধবাদের স্বামীর সাথে পুড়ে ফেলা হতো ।
আমার জানা মতে যা কোন দিন হিন্দু কোন আচার বা রীতিতে বলা হয়নি । যা ছিল ধর্ম ধারক অতি উৎসাহীদের পাগলামি মাত্র । কিন্তু পরবর্তী সময়ে মানবতা ও সময়ের দাবীতে তা বন্ধ হল । ঠিক এইভাবে ধর্মকে ব্যবহার করতে হবে জীবন সাজাতে জীবন নাশে নয় ।
ধর্মের ভুল ব্যাখ্যায় জন্ম হয় ধর্মান্ধতা ।
স্বল্প শিক্ষিত মানুষ কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হয়ে এবং অতি শিক্ষিত জ্ঞানপাপী মানুষ তার ফায়দা লোটার জন্য নানা ভাবে ধর্মকে ব্যবহার করে ।
ধর্মকে জানতে হবে নতুনভাবে । জীবনমুখী হতে হবে ধর্মের প্রীতিটি কথা প্রতিটি বর্ণ । জীবনের জন্যই ধর্ম । জীবনের প্রয়োজনেই ধর্মের জন্ম ।
জীবন শেষ হওয়ার পর কি তার জন্যে নয় ।
কোরআন , হাদিস এবং আরও যত ধর্মীয় বিষয় রয়েছে তা শুধু ধর্মীয় রীতি বা আচারের জন্য নয় । সেখান থেকে জীবনের কথাগুলো বের করে আনতে হবে । জানতে হবে বাস্তব জীবনের কথা আসলে ধর্ম কি বলে ?
ধর্মকে আবার কেউ কেউ আস্তিকতা , নাস্তিকতার মধ্যে নিয়ে আসে । ব্যপারটা যেন এটা রাজনীতির ন্যায় প্রচণ্ড তর্কের বিষয় ।
আরে আঁতেলের দল , তুমি খোদা বা ঈশ্বর মানো বা না মানো তাতে কি খোদা বা ঈশ্বরের কিছু আসে যায় ??? সে কি কোনোদিন কাউরে আইসা ধরছে আমারে কেন বিশ্বাস করোনা বা করো ।
অতি আস্তিক এবং অতি নাস্তিক উভয়ই ধর্মান্ধ ।
কারণ তারা শুধু ধর্মে ঈশ্বরকেই দেখে কিন্তু দেখেনা ধর্মের সার্বজনীনতা । ধর্ম অর্থ শুধু ঈশ্বর নয় ধর্ম অর্থ মানুষ ও জীবন ।
অনেক আস্তিক না খাইয়া মরে আবার অনেক নাস্তিক প্রাচুর্যের চূড়ায় ।
আবার ঠিক এর বিপরীতও দেখা যায় । তাহলে কোনটা সত্য ?? বিষয়টা কখনোই তর্কের নয় । বিষয়টি জানার । ধর্মকে জানতে হবে দেখতে হবে জীবনের আয়নায় ।
ভুলের শুরুটা আসলে জানার শুরুতে ।
ধর্মকে আমাদের সামনে এমন ভাবে আনা হয়েছে বা জানানো হয়েছে যে ঈশ্বরকে বিশ্বাস করাই ধর্ম । আসলে কি তাই ? ধর্ম কি ঈশ্বর , পাপ পুন্যর কথাই বলে , না সেখানে আরো কথা আছে ??
আমি লাল রঙ পছন্দ করি , তুমি নীল রঙ পছন্দ করো । তাহলে কি আমি বলবো লাল সত্য , নীল মিথ্যা । আমার বিশ্বাস আমার কাছে , তোমার বিশ্বাস তোমার কাছে । বিশ্বাস অবিশ্বাসের বাইরে এসে ধর্মকে দেখতে হবে ।
লাভ কি বিশ্বাস অবিশ্বাসে যেখানে ঈশ্বরের বা যাকে নিয়ে তর্ক সে নীরব । তোমার বিশ্বাস তোমার শান্তি । তুমি যা বিশ্বাস করো , যেভাবে বিশ্বাস করো সেটা শুধু তোমারই বিষয় । মানুষের বিশ্বাস বা অবিশ্বাসে খোদার কিছুই যায়না বা আসেওনা । তাই ধর্মে খুঁজতে হবে জীবনের কথা ।
এই কাজ এখনকার যে মোল্লারা বা ধারক নামের মূর্খ ধর্মগুরুরা রয়েছে তাদের দ্বারা কখনোই সম্ভব নয় । করতে হবে নব প্রজন্মকে । জীবনের প্রয়োজনে নব প্রজন্ম একটা সময় ঠিকই তার জীবনের দাবী নিয়ে ধর্মের কাছে যাবে তার উত্তরের জন্য । আশা করি তখন এই প্রজন্ম ধর্মের কাছ থেকে ঠিক উত্তরই বের করে নিয়ে আসবে । কারণ পৃথিবীর প্রায় সব প্রথা বা রীতি মানুষের প্রায় দেখা শেষ ।
শুধু বাকী আছে ধর্ম ।
আসুন আমরা আমাদের জীবনের কথাগুলো নিয়ে ধর্মের কাছে যাই । সময় আর আমাদের মেধা বলে দেবে সঠিক উত্তর কোথায় । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।