শহরের ঈদগাহ চত্বরে পদার্পন করিবামাত্র দুষ্ট বালকের দল চারিদিক হইতে গগনবিদারী আর্তনাদ তোলে 'ফেরী আসিয়াছে, ফেরী আসিয়াছে' বলিয়া, তাহা সে চৈত্রের গরমে হোক আর আশ্বিনের বরষার জলে হোক। চারিদিকে উৎসুক জনতা বিস্ময়ের ঘোর কাটাইয়া উঠিতে না পারিয়া ইতি উতি খুজিতে থাকে এই ভাবিয়া যে পিচঢালা রাজপথে নদীর যান আসিবে কোথা হইতে? তবে কি অদ্যকালের ছোকড়ারা গন্জিকা সেবনে ব্যাস্ত? আমি মনে মনে প্রমোদ গুনিতে থাকি। সেই দুর্বিষহ স্মৃতি দৃশ্যপটে ভাসিয়া ওঠে এক লহমায়। অদ্য তাহাই প্রকাশ করিয়া মনের খেদ মিটাইতে চাই।
সে অদ্য হইতে বছর দশেক আগেকার কথা।
প্রকৌশল বিদ্যায় প্রথম শ্রেনীতে পাশ দিয়া মনের সুখে ঘুরিয়া বেড়াই মতান্তরে আড্ডাই। রাশেদ বলিয়া এক বড়ভাইয়ের দোকানে আড্ডাইতেছিলাম, সাথে বড় ভাই সোহেল খান। তিনি চালিয়াত হিসাবে বন্ধুমহলে সুপরিচিত। অনেক মনুষ্যর পিতৃপ্রদত্ত নাম তিনি আকিকাবিহীনভাবে বদলানোর বিস্ময়কর ক্ষমতা রাখিতেন। সে দিবস ছিলো হরতালের।
হস্তে 'মুপাইল' ফোন লইয়া টিপিতেছিলেন আর নেটওয়ার্কের মাতা, ভগ্নি উদ্ধারে খেদোক্তি করিতেছিলেন। এমতবস্হায় আমি আবালের ন্যায় নেটওয়ার্ক ডাউনের মর্মার্থ জানিতে উৎসুক হইলাম। চালিয়াত বড় ভাই মনে করি তাহার জীবন ব্যাপি সেই সুযোগের অপেক্ষায় রহিয়াছিলেন। কালক্ষেপন না করিয়া তিনি কহিলেন ' আরিচা ফেরী ঘাটে নদী তো, টাওয়ার নাই, তাই নেটওয়ার্ক টাওয়ার ফেরীতে বসাইসে, আইজকা হরতাল, ফেরী বন্ধ, তাই নেটওয়ার্ক নাই, বুচ্ছিস'। আমি মানসপটে ফেরীর আকৃতি হাজির করিলাম।
সার্চ লাইটের ডিব্বাকে মিনি স্যাটেলাইট ঠাহর করিয়া দুইে দুইে চল্লিশ মিলাইলাম। সর্বপরী, নেটওয়ার্ক কার্যপ্রনালী জানিতে পারিয়া যথেষ্ট প্রীত হইলাম। মনেপ্রানে ঈর্ষায় জ্বলিয়া পুড়িয়া ভাবিতেছিলাম ভ্রাতা প্রকৌশলী না হইয়া যে বিদ্যা রাখেন উহার তুলনায় আমি ধুলিকনা মাত্র। পরদিবসে হৃষ্টচিত্তে হস্তে বিড়ি লইয়া চত্তরে পদার্পন করিবা মাত্র আমার পূনঃজন্ম হইল, ফেরী ফেরী শোরগোল নরক সদৃশ হইয়া গেলো। সেই শুভক্ষন হইতে আমি হইয়া গেলাম জ্যাম ফেরী।
শাপ শাপান্ত করিলাম আমার চোথা মারা বিদ্যাকে। আমার আবালামি দেখিয়া সৃষ্টিকর্তা নাখোশ হইয়া আদেশ করিলেন ' নালায়েককে প্রকৌশলী গড়িয়া আমি ভূল করিয়াছি, উহার পিতা মাতাকে মৃত্যুর পর বেহেশত বাসী কর, তাহারা জীবদ্দশায় মানুষরুপী একটি গাভী পালিয়া বড় করিয়াছেন। ' সৃষ্টিকর্তার আদেশক্রমে ফেরেশতারুপী এক বাল্যবন্ধুর সহমর্মিতায় আমি কিছুকাল অবহিতপরে একটি ভিস্যাট কম্পানীতে চাকুরী পাই যাহা কমিউনিকেশন নেটওয়ার্কের আদ্যপান্ত বুঝিতে সহায়ক হয়। এতদঘটনা পরেও আমার বন্ধুদের মুখঃনিসৃত জ্যামফেরী ডাক আমাকে পুলকিত করে। আমাকে ফেরী ডাকিবামাত্র হৃদয়ের টান অনুভব করি।
সেই লগ্নে বাংলা চলচ্চিত্রের দূঃখিনী মা ডলি জহুরের সুপুত্র বাবুলরুপী জসীমের জেলহাজত হইতে নিষকৃতিকালীন দৃশ্যপট ভাসিয়া ওঠে। ডলি জহুরের ন্যায় বলিতে চাই ' বুখে আয় বাভুল ! '
পাদটীকা: কিছুকাল পূর্বে এক বন্ধু খোমাবইয়ে আমার চোথামারা কবিস্বত্তায় পুলকিত হইয়া প্রশ্ন করিয়াছিলেন, বিধাতা ভুল করিয়াছিলেন কিনা আমাকে প্রকৌশলী গড়িয়া। অদ্য বলিতে চাই, হে বন্ধু, আমার উপরোক্ত প্রকৌশলী আচরন কি অদ্যপি সন্দেহের অবকাশ রাখে? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।