আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাকশালীদের ভণ্ডামির মুখোশ খুলে দিলেন মরহুম হুমায়ুন আহমেদের মা

শহীদ পরিবার হিসেবে হুমায়ূন আহমেদের মা আয়েশা ফয়েজ স্বাধীনতার পর সরকারিভাবে একটি বাড়ি পেয়েছিলেন। কিন্তু মাত্র তিন দিন পরই সে বাড়ি থেকে তাদের তাড়িয়ে দিয়েছিল রক্ষীবাহিনী। হুমায়ূন আহমেদের পিতা শহীদ ফয়জুর রহমান ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পিরোজপুরের পুলিশ প্রধান (সাবডিভিশনাল পুলিশ অফিসার, এসডিপিও) ছিলেন। তার স্ত্রী আয়েশা ফয়েজ ১৯৭১ সালে পিরোজপুরের স্মৃতিচারণ করে জীবন যে রকম নামে একটি বই লিখেছেন। রক্ষীবাহিনী তাড়িয়ে দেয় হুমায়ূন আহমেদদের : শহীদ পরিবার হিসেবে আয়েশা ফয়েজ স্বাধীনতার পর একটি বাড়ি বরাদ্দ পেয়েছিলেন সরকারিভাবে।

সে বাসায় ওঠার তিন দিনের মাথায় তাদেরকে রক্ষীবাহিনী বাসা থেকে পথে নামিয়ে দেয়। সে কথা লিখেছেন তিনি তার জীবন যে রকম বইয়ে। "এইভাবে শহীদ পরিবার হিসেবে আমার এক নতুন জীবন শুরু হলো। শহীদ পরিবারের প্রথম কাজ হচ্ছে ঘোরাঘুরি করা। আমার ঘোরা ঘুরি শুরু হলো।

এক অফিস থেকে আরেক অফিস। এক অফিসার থেকে আরেক অফিসার। এভাবে আস্তে আস্তে ঘোরাঘুরিতে অভিজ্ঞ হয়ে গেলাম। ঢাকায় থাকার জায়গার খুব সমস্যা। শহীদ পরিবারকে বাড়ি দেয়া হয়েছে শুনে তার জন্য ঘোরাঘুরি শুরু করেছি।

একদিন খোঁজ খবর নিয়ে বাড়িসংক্রান্ত একজন মন্ত্রী, নাম মতিউর রহমান, তার সাথে দেখা করতে গেলাম। গিয়ে দেখি আমার মতো আরো অনেকে আছেন। দীর্ঘ সময় পর মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে দেখা হলো। আমাদের দেখে একেবারে ক্ষেপে গেলেন মহোদয়। পেয়েছেন কি আপনারা? প্রত্যেক দিন সকালে এসে বসে থাকেন? সকালে ঘুম থেকে উঠেই আর কত বিধবার মুখ দেখব? আমি লজ্জায় মরে গেলাম।

’ অবশেষে এভাবে ঘেরাঘুরি করতে করতে অশেষ লজ্জা অপমান হজম করে আয়েশা ফয়েজ শহীদ পরিবার হিসেবে একটি বাড়ি বরাদ্দ পেয়েছিলেন। তার স্বামীর বন্ধু কাজী জাহেদুল ইসলাম বাড়িটি তাকে পাইয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেন। এক অবাঙালির পরিত্যক্ত বাসা। ১৯/৭ বাবর রোড। ‘বাবর রোডের বাসায় ওঠার তিন দিন পর হঠাৎ একদিন রক্ষীবাহিনী এসে হাজির হলো।

একজন সুবেদার মেজর জিজ্ঞাসা করল, এ বাড়ি আপনি কোথা থেকে পেলেন? আমি বললাম সরকার আমাকে দিয়েছে। আমার স্বামী যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন তাই। সুবেদার মেজর কিছু না বলে চলে গেল। আমার মনের ভেতর হঠাৎ করে একটা খটকা লেগে গেল। হঠাৎ করে রক্ষীবাহিনী আসছে কেন? ক্ষাণিকক্ষণ পর আরেকজন সুবেদার মেজর এসে হাজির।

সে একা নয়। তার সাথে বোঝাই এক ট্রাক রক্ষীবাহিনী। সবার হাতে অস্ত্র। সুবেদার মেজরের নাম হাফিজ। ভেতরে ঢুকে বলল, এই বাড়ি আমার।

শেখ সাহেব আমাকে দিয়েছেন। আমি বললাম, সে কি করে হয়? আমার সাথে বাসার অ্যালটমেন্ট রয়েছে। সে কোনো কথা না বলে টান দিয়ে ঘরের একটা পর্দা ছিঁড়ে ফেলল। সাথে আসা রক্ষীবাহিনীর সদস্যদের বলল ছেলেমেয়েদের ঘাড় ধরে বের কর। আমি এত দিনে পোড় খাওয়া পাথর হয়ে গেছি।

রুখে দাঁড়িয়ে বলেছি, দেখি তোমার কত সাহস। সুবেদার মেজর একটু থমকে গিয়ে কিছু না বলে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। দেখতে দেখতে পুরো এলাকা রক্ষীবাহিনী দিয়ে বোঝাই হয়ে গেল। বাসা চার দিকে ঘেরাও হয়ে আছে। কাউকে বাসায় ঢুকতেও দেয় না, বের হতেও দেয় না।

কাজল (সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ) মহসিন হলে ছিল। খবর পেয়ে এসেছে। তাকেও ঢুকতে দিলো না। সারা রাত এভাবে কেটেছে। ভোর হতেই আমি বের হলাম।

পুলিশের কাছে গিয়ে সাহায্য চাইলাম। পুলিশ বলল আমরা গোলামির পোশাক পরে বসে আছি। রক্ষীবাহিনীর বিরুদ্ধে আমরা কি করব? বঙ্গভবন, গণভবন এমন কোনো জায়গা আমি বাকি রাখলাম না সাহায্যের জন্য। কিন্তু লাভ হলো না। আমি তুচ্ছ মানুষ।

আমার জন্য কার মাথাব্যথা? রাতে ফিরে এসেছি। আমাকে ভেতরে ঢুকতে দেবে না। অনেক বলে ভেতরে ঢুকেছি। রাত আটটার দিকে রক্ষীবাহিনীর দল লাথি মেরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে গেল। ইকবাল (ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল) আমাকে আড়াল করে দাঁড়াল।

একজন বেয়োনেট উঁচিয়ে লাফিয়ে এলো। রাইফেল তুলে ট্রিগারে হাত দিয়েছে। চিৎকার করে কিছু একটা বলছে। গুলি করে মেরে ফেলবে আমাদের? আমি ছেলেমেয়েদের হাত ধরে বের হয়ে এলাম। " মনীষী আহমদ ছফা গণকণ্ঠ পত্রিকায় পরের দিন শহীদ পরিবারের ওপর এ নির্যাতনের একটি খবর ছাপার ব্যবস্থা করেন অভিনব কায়দায়।

বিস্তারিতঃ http://dailynayadiganta.com/details/62023 ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.