নুহাশ তার বাবা হুমায়ুন আহমেদকে জুলাই মাসে একটা চিঠি লিখেছিলেন। শেষ পর্যন্ত সেটি আর পাঠানো হয়নি। অপ্রেরিত সে চিঠি আজ ইংরেজি দৈনিক স্টারে প্রকাশিত হয়েছে। Click This Link
সেই চিঠির ভাষান্তর তুলে ধরছি:
বাবা, আশা করি তুমি ভালো বোধ করছ। আমার শরীরটাও ভালো যাচ্ছে না, টাইফয়েড হবার কারণে পাকস্থলী বেশ ভোগাচ্ছে।
এক সপ্তাহ ধরে প্রায় কিছু না খেয়ে কাটিয়েছি, অন্যদিকে জাউ নামের এক অখাদ্য বিছানায় শুয়ে খেতে খেতে সেই ভালো খাবারের কথা ভাবছি যা সুস্থ হলে খেতে পারব। একবার গলদা চিংড়ি খাবার শখ হয়েছিল, তখন একটা ঘটনার কথা মনে পড়ল।
মা ও তোমার বিচ্ছেদ হবার পর আমার খুব খারাপ সময় যাচ্ছিল, সব সময় আশায় আশায় ছিলাম তুমি আমাদের মাঝে ফিরে আসবে। বিচ্ছেদ চূড়ান্ত হবার পর বুঝলাম দরজা চির জীবনের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে । রসায়নের পরিভাষায় যাকে বলে আগুন জ্বলে উঠা, সেটি প্রত্যক্ষ করলাম।
তখন আমার ভয় হয়েছিল তোমার সাথে আমার দুরত্ব বাড়বে এবং তুমি আমাকে তোমার ছেলে হিসেবে দেখবে না।
বিচ্ছেদের কয়েকদিন পর তুমি ফোন করে বললে তুমি বাজার থেকে মস্ত বড় এক গলদা চিংড়ি কিনেছ এবং সেটি রান্না করে আমাকে নিয়ে খেতে চাও তোমার বাসায়। শীতল যুদ্ধের সময় এটা যে সম্ভব না তা আমরা জানতাম । ঘটনা ঘটলো অন্য কিছু। আধা ঘন্টার পর বাসার কলিং বেল বেজে উঠলো, দারোয়ান জানালো মস্ত বড় এক গলদা চিংড়ি নিয়ে তুমি গেটে অপেক্ষা করছ।
বিস্মিত, হতভম্ব আর খানিকটা উত্তেজিত আমি নিচে নামলাম, তুমি বললে: "পুত্র, আমি আসলেই এটা তোমার সাথে খেতে চেয়েছি, তবে এটা এখন সম্ভব হবে না। আমি তোমাকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি আমি সব সময় তোমার পাশে থাকব, কোনো একদিন আমরা একসঙ্গে ভালো খাবার খাব, তবে এখন তোমাকে এটা নিতে হবে"- এই বলে তুমি আমার হাতে জীবন্ত গলদা চিংড়ি ধরিয়ে দিলে।
বড় চোখ আর লিকলিকে লম্বা পা-অলা বিদঘুটে প্রাণীটি আমার মনে আশার আলো জ্বালালো, সে আশা এই যে, পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, তুমি সব সময় আমার কাছে থাকার চেষ্টা করবে।
আমার মনে হয় তোমার জন্য আমি কিছুই করতে পারিনি, অন্তত আমার যা করা উচিত ছিল। তোমাকে যখন ফোন করতাম, তুমি কথা বলার অবস্থায় থাকতে না, আবার যখন কথা বলেছি আমি তখন নিজেকে ঠিকমত প্রকাশ করতে পারিনি।
তোমার মত কথক তো আমি নই ।
ঢাকাতে ফিরে আসার পর তোমাকে দেখতে গিয়ে খুব কষ্ট হচ্ছিল আমার। গেটে দারোয়ান প্রতি বারই থামাত। বাবাকে দেখতে চাইলে কোনো দারোয়ানের কাছে ছেলের জবাব দিতে হবে, এটা উচিত নয়। এটা কোনো ছুতো নয়, আমার আসলে তোমার কাছে আরো থাকার দরকার ছিল।
আমি সব কিছু বদলাতে চাই, আমি তোমাকে জানাতে চাই আমি সত্যি তোমাকে মিস করি, আমি তোমাকে জানাতে চাই আমার মত করে তোমাকে আমি পাইনা বলে আমার মনে অনেক জ্বালা। আমার এই চিঠিটা তোমার কাছে গলদা চিংড়ি, তোমার পুত্র নুহাশ। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।