হয় তো তুমি আজকে সন্ধ্যায়
দেখছো এক স্বপ্ন অদ্ভুত
যখন তুমি নিজেকে আয়নায়
দেখলে, তাকে ভাবলে দেবদূত ।
( ম্যাক্স জেকব-এর স্বপ্ন )
অনেকদিন আমার সাথে গুল্লুর দেখা হয় না । প্রিয় মুখ গুলো কিছুদিন পর পর না দেখলে ভালো লাগে না । আমি অস্থির হয়ে উঠি । সেদিন সন্ধ্যায় হঠাৎ আমি গুল্লুর ম্যাসে গিয়ে উপস্থিত ।
গুল্লু আমাকে দেখে মহা খুশি । আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল- আরে- বিখ্যাত রাজীব নূর আমার ম্যাসে !
আমি চায়ে চুমুক দিতে দিতে বললাম- গুল্লু সাহেব আজ আপনার গল্প শুনতে এলাম । গুল্লু বলল অবশ্যই গল্প শোনাবো । আজ সারারাত গল্প হবে । রাতে রান্না হবে খিচুরী আর ভূনা মাংস ।
তার আগে নূর ভাই আপনাকে একটা কবিতা শোনাবো । আমি বললাম শোনাও । গুল্লু সুন্দর উচ্চারণে আবৃত্তি করলো- " ভাবিব না আমি কিছু, বলিব না মুখে কোনও কথা,/ আত্মায় বাজিবে শুধু সীমাহীন প্রেমের সংগীত । / আর আমি যাব দূরে, বহু দূরে- যাযাবর যথা,/ প্রকৃতির কোলে- সুখী, যেন এক নারীর সহিত । আমি বললাম, সুন্দর ফরাসি প্রেমের কবিতা ।
কবির নাম হচ্ছে- আর্তুর র্যাবো আর কবিতার নাম হচ্ছে- অনুভব । এই কবির জন্ম-১৮৫৪ সালে এবং কবি মারা যান সম্ভবত ১৮৯১ সালে । তিনি ফরাসি সাহিত্যে 'প্রতীকীবাদী আন্দোলনের অন্যতম পিরোধা ছিলেন । আমার কথা শেষ হতেই তাকিয়ে দেখি গুল্ল আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে !
আমি সিগারেটে লম্বা একটা টান দিয়ে বললাম- গুল্লু শুনলাম সুন্দরবনে গিয়েছিলে । গুল্লু বলল- সুন্দরবন যাইনি ।
সুন্দরবনের কাছে একটা গ্রামে গিয়েছিলাম । আপনাকে আজ সেই গল্পই বলব । গুল্লু চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আরাম করে বসল । গুল্লুর শুরু করলো তার গল্প, আসুন তার ভাষাতেই গল্পটা শুনি- অনেকদিন ঢাকার বাইরে যাই না । আমার বন্ধু জুবায়ের ফোন করে বলল- রেডী হও বিকালের বাসে গ্রামে যাচ্ছি ।
পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই হঠাৎ চলে গেলাম বন্ধু জুবায়ের এর সাথে বাগেরহাট তার গ্রামের বাড়ি । যেতে সময় লাগল দশ ঘন্টা । একেবারে অজপাড়া গা । বিদ্যুৎ নেই । বিকেল তিনটায় রওনা দিয়ে রাত দু'টায় গিয়ে পৌছালাম ।
ভয়াবহ শীত আর কুয়াশা ।
গুল্লু খুব সুন্দর করে কথা বলে । কথা বলার সময় খুব বেশী হাত নাড়ে । গল্প বলার সময় তাকে খুব অস্থির দেখায় । গুল্লু আমার দিকে সিগারেটের প্যাকেটটা বাড়িয়ে দিয়ে আবার তার গল্প শুরু করলো ।
নূর ভাই, পরের দিন বিকেলে কি হলো শুনুন- বিশাল ধানক্ষেত । এক মাথায় দাড়ালে আর এক মাথা দেখা যায় না । আমি ক্যামেরা কাঁধে নিয়ে ধানক্ষেতের মধ্যে হাঁটতে শুরু করি । জুবায়েরকে সাথে নিই নি । সাথে নিই নি কারন, গাধা গ্রামের রাস্তায়ও টাই কোট-প্যান্ট ছাড়া বের হয় না ।
সন্ধ্যার আগে আগে বেশ কিছু ছবি তুলে ফেলি । হঠাৎ স্পষ্ট শুনলাম- একটি মেয়ে বলছে আমার ছবি তুলে দিবেন না ? খুব মিষ্টি গলা ! কিন্তু আমার কলিজা কেঁপে উঠলো । পাশে তাকিয়ে দেখি- একটি মেয়ে ! শাড়ি পরা । মাথার এক আকাশ চুল খোলা । কপালে টিপ ছিল কিনা ঠিক মনে করতে পারছি না, রাগ করবেন না নূর ভাই ।
মেয়েটির শাড়ির আচলখানা ধানক্ষেতের উপর বিছানো । সন্ধ্যার আবছা আলোয় আমি মেয়েটিকে ভালো করে দেখতে চেষ্টা করলাম । আমি বললাম, দুঃখিত এই আলোতে ছবি তোলা যাবে না । পরে একদিন তুলে দিবো । মেয়েটি ছোট করে বলল- আচ্ছা ।
মেয়েটি গেলে ডান দিকে আমি গেলাম বাম দিকে ।
গুল্লু বলল- রাজীব নূর ভাই এখন আমরা ২০ মিনিটের জন্য ব্রেক নিবো । রাতের খাবার শেষ করে আবার শুরু করবো । আমাদের বুয়া'র হাতের রান্না খুব ভালো । আমরা খুব তৃপ্তি করে খেলাম ।
গুল্লু আবার তার গল্প শুরু করল - নূর দা, লক্ষ্য করেছেন চা আর সিগারেট ছাড়া গল্প জমেই না । যাই হোক, শুনুন পরের দিন কি হলো- সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি, একটা মেয়ে আমার পাশে বসে আছে । আমার বালিশের কাছ থেকে গতরাতে পড়া ম্যাগাজিনটা নিয়ে পড়ছে । আমি ভালো করে তাকিয়ে দেখি, গতকালের ধানক্ষেতের মেয়েটি । তখন ভাবলাম স্বপ্ন দেখছি ! মেয়েটির গালে হাত রাখতেই মেয়েটি দূরে সরে গিয়ে বলল- আপনি স্বপ্ন দেখছেন না ।
আমি এই ধরনীর একজন মানবী । আমি লজ্জা পেয়ে একটু হাসলাম আর তখন জুবায়ের এসে বলল- এই মেয়ের নাম লিলি, আমাদের প্রতিবেশী । এখন গুল্লু সাহেব ঘুম থেকে উঠেন আমি বাজারে গেলাম মোবাইল চার্জ দিতে । জুবায়ের চলে গেল ।
বেসিন থাকতেও আমি পুকুর পাড়ে গিয়ে দাঁত ব্রাশ করলাম হাত মুখ ধুয়ে নিলাম ।
ঘরে ঢুকে দেখি লিলি খুব সুন্দর করে টেবিলে নাস্তা সাজিয়েছে । আমি নাস্তা খেতে খেতে বললাম- আমার নাম গুল্লু । আমি একজন ফোটোগ্রাফার । মেয়েটি বলল আমার নাম লিলি । আমি একজন বেশ্যা ।
লিলির কথা শুনে আমি হঠাৎ করে একটা বড় ধাক্কা খেলাম । মেয়েটির গলার স্বর শুনেই বুঝতে পেরেছি সে মিথ্যা বলেনি । রাজীব দা, আপনি বিশ্বাস করুন তখন আমার অনেক কষ্ট হচ্ছিল । আমি এক দৃষ্টিতে অনেকক্ষন মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকি । এত সুন্দর চোখ, মাথা ভর্তি চুল, কি সুন্দর করে শাড়ি পরেছে ।
ঠোঁটে কত যত্ন করে লিপস্টিক দিয়েছে । মেয়েটির মুখে কোনো পাপ দেখা যায় না ।
গুল্লু হঠাৎ করে একদম চুপ হয়ে গেল । আমি গুল্লুর দিকে তাকিয়ে বললাম- লিলি দেখতে কি হিমির মতন ? আমি বললাম, তারপর কি ? নাকি গল্প শেষ ? গুল্লু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার বলতে শুরু করলো- লিলি, দুবাই যায় বেড়াতে, তারপর কিছু লোক...বাধ্য করে । এই তো.... ।
নূর ভাই, তারপর আমি লিলির সম্পর্কে অনেক কিছু জানি । সেইগুলো আমি আর আপনাকে কিচ্ছু বলব না । আমি বললাম- আর বলতে হবে না । শুধু বলো, লিলিকে কি কোনো কবিতা শুনিয়েছিলে ? গুল্লু বলল, হুম একটা কবিতা শুনিয়েছি । কবিতাটি ছিল এই রকম- "তোমার অতীত জেনে আমি নই ঈর্ষিত,প্রেয়সী,/ বরং আমার তাতে ভালোবাসা, মুগ্ধতাই বাড়ে,/ আর বুঝি কী উদার তোমার হৃদয়, মহীয়সী,/ কোমলে-কঠোরে মেশা কী অদম্য প্রেম সে আঁধারে !/ তোমার মোহিনী কান্না- কী অমূল্য সেই পুরস্কার !/তার চেয়ে বেশি আমি ভালোবাসি।
ভুলে যাও তারে। / গোপন কথার ফাকে অন্তত হাসো একটিবার,/ বিশ্বস্ত সঙ্গীর বুকে জেগে ওঠো তুমি পুর্নবার । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।