জীবনটা যেন এক বর্ণীল প্রজাপতি গল্পঃ “খাইরুন ও সেফটি”
খাইরুন ঢাকা শহরে আইসেছে তা বছর বারো ত্যারো হবি। ডাকা শহরে জন্মালিও পুর্যা শোহুরে হইয়্যে উটতি পারে নি বোচ্চেন? শহুরের ইস্মাট মেয়ে ছেলেদের মতন চলাপেরা করে না।
এক জুগের বেশি হয় এইসেছে তাও এখনতেরি কুনো ইছপিশাল কাজ জুগাতে পারে নি। পড়াশুনাও যে কম করিছে তাও কিন্তু না। বুইচেন? রিলেটিব্রা সব ভালো ভালো জায়গায় পতিষ্টিতো হইয়্যে গেলো।
ভালো টাকা পয়সা কামাচ্চে। আর খাইরুন একনো জীবন যুদ্দে যুদ্দ করি যাচ্চে।
আপ্নারা জানেন আজকাল কারু মামা কাকা না থাক্লি ভালো কোন কাজ পাওয়া যায়না। মাস্খানেক হয়েচে একজনি তাকে নিজে ডেইকে একটা কাজ দিয়েচে। কাজটা খারাপ না।
কিন্তু মাইনেটা খুবি যাচ্চেতাই। বোচ্চেন! আজকাল বাসা বাড়িতে বুয়ারাও এরচে বেশি টাকা মাইনে পায়। তা যা হৌক, খায়রুন ঐ টাকায় রাজী হইচে ক্যানে, সেইটে এক বিরাট রহশ্য!
নতুন যে কাজটা পেইচে সেটি হচ্চে মাস্টারি। ওকে মাস্টারি কর্তি হবে। এক্টা ইছকুলে।
ছেলেপুলে পড়াতি খায়রুনের ককনো খারাপ লাগে না। বাচ্চাকাচ্চা পড়াতি বরং আনন্দোই বোদ করে সে।
অকে যকন ডেইকে নিয়ে বলা হয়িচে, “তোমাকে বেতন দেব এই, বেতন নিয়ে তোমাক ভাবতি হবি না। এত্ত কিচু জানো তুমি বেতনের দিকে আর তাকাতি হবি না!” কতাটা শুইনে কেমন তব্দা খাইয়ে গেচিলো সে। আর এই সুযোগে ককন জানি নিজের বাড়ির বুয়ার চাইতেও কম মাইনেতে সে নিমরাজী হয় গ্যালো, সেইটে সে নিজেও বুজতি পারে না!
নিজে বাড়ি থেইকে ইছকুল মেলা দূর।
একেবারে বোলা যায় তেপান্তরের মাট পেইরে তার্পরে। রিকশা ভারা এত বেশি যে বেতনের ডাবোল, তিনগুন খরছ হই যাবে। পোতিদিন এই পরিমান টাকা নিজের গাটির থিকি দিয়া সম্বব হয়ি উটচেনা। মায়ের কাচে হাত পাত্তি হচ্চে। মায়ে তো দিতিয় দিন থিকে যাবার নিশেদ করেচিলো তাও যাতিছে দেকে বীষন বিরক্ত।
তার উপ্রে এই পরিমান খরোচ কর্তি থাক্লি বাসাত থিকে বাপ মায় যে কোন সময় বাইর কইরে দিতি পারে নিচ্চিত। মিয়া কামাই কর্বা দুই টাকা আর খরছ কর্বা তিন টাকা তালি কেম্নি চল্বি! এই কতা বাবতেই নিজের উপোরে চড়োম বিরক্তি লাগতিছে। কে কইচিলো এই মরার জাগায় চাকরি করার জন্যি।
বাসে চর্বার পারলি কিচুটা খরচ পুশান যাতি পারে। কিন্তু, পেট্টোলের গন্দেই তো বোমি আসে যায়।
মাতা গুড়ানি নিয়ে কি কইরে চাক্রিতে আসা হবি। চাক্রিতে আসা হয়তো ঝায়। কিন্তু অত্তগুলান ত্যান্দর বাচ্চাকাচ্চাকে কেম্নে কন্টোল কর্বি যদি মাতা গুঢ়ায়! ভেইবে ভেইবে চিন্তায় পোইড়ে যাতিছিলো খায়রুন।
খায়রুনে এইখেনে চাক্রি কর্তি আসার একটা আলাদা উদ্দিশ্য ছেলো। তা হোলো এই পতিষ্টানের উচু পদে মানে, হাই ইছকুলে আগে থিকেই দুই বন্দু চাক্রি কর্তো।
তাদের সাতে তো বার্সিটি চাড়া দেখা হয়না। তাই একানি আসাও হবি, চাক্রিও কোরা হোবে, আবার বন্দুদের শাতে নিয়মিতো দেকাও হবে। এত কিচু একসাতে পাওয়া কি চাট্টিকানি কোতা নাকি!
সেই দুই বন্দুর এক জন বুদ্দি দিলো একদিন, বড়ো রাছতায় যে হাস্পাতাল আচে, সেইটের সাম্নে গিয়ে খাড়ালি সেপ্টি নামে একটা গাড়ি আসবি। সেপ্টি না পালি বিকল্প। একি দরনের গাড়ি।
সাদা রোঙ্গের। এক্টা যদি চইলে যায় তাও হতাশ হওয়া লাগবি নে। ঐ গাড়ি সারাদিনি এক্টার পর এক্টা আস্তিই থাকপে।
বন্দু কোন রাস্তার কতা বইলেছে তা টিকঠাক বুইজতে পারে নি খায়রুন। তাই সে পায়ে হাটা দিলো।
হাটতি হাটতি হাস্পাতালের সাম্নে আইসে খাড়াইতেই দ্যাখলো, এক্টা সেপ্টি বাস আসতিচে। ও চলন্তো বাসে ককনো উটতি পারে না। সেই রিস্ক নিলো না। বাস কাছে এইসে ইছথির হইয়ে দাড়ানোর পোরে সে জিজ্ঞেস কইরলো, “ভাই এইটে কি ঐ জায়গা দিয়ি যাবে?” হেল্পার হ্যাঁ সুচোক মাথা নাড়তেই খায়রুন সেইটায় উইঠে বসলো। বন্দু কয়ে দেছিলো, হেল্পারের হাতে দুই তিন টাকা গুইজে দিলেই হবে।
কতাটা কেমন বেঈমানের মতন হোয়ে যায় বইলে সে হেল্পারকে নিজের জায়গার নাম বইলে ভাড়া কত জানতে চাইলো। জবাব পাইলো, “দুই ট্যাকা!” “ওয়াও! তাইলিতো যাতায়াত খরোচ অরধেকে নেইমে আসতিচে! বাসের মোদ্দের পোচা গন্দটাও পাচ্চেনা। একন তেকে এটাতেই যাওয়া আসা কর্তি হোবে। ” খায়রুন যারপরনাই খুশি হইয়া ব্যাগের থেইকে চকচকা নোট বাইর কইরে দিলো।
বাড়ি ফিইরে খুশি খুশি মনে বাস ভাড়ার কির্তিটা বাসার সবাইকে ফলাউ কইরে বলল।
আজকে বন্দুর বুদ্দিতে কত্ত উপকার হইচে! এরপোর থেকে সে বিকল্পো আর সেপ্টি চাড়া আর কোনো গাড়িতে উটলো না। উটে না। বাসে একেবারি চর্তেই পার্তো না। নাম শুনলিয়ি বোমি আশ্তো। একন দিব্বি যাতায়াত কর্তি পারতিছে।
অবোশ্যো সব বাসে চর্তি পারচে না। একদিন বাসায় যাওয়ার তাড়া চিলো। সেপ্টি বা বিকোল্পো কারোই দ্যাখা পাচ্চিলো না। উইঠে বোসলো ধামরাই গুলিস্তান বাছে। উরে গন্দো বাসে।
বাসে পোচোন্ডো বিড়। মানুশের ঠাসাটাশিতে জান বেরোয় যাচ্চিলো। তার্পরে বাস থিকে নাইমেও মাতা গুরাচ্চে। বাসায় পৌচেও মাতা গুরাচ্চেই।
বার্সিটিতে নতুন কেলাস শুরু হয়েচে।
নতুন কেলাসে নতুন সব ছার, মেডাম। খায়রুনের যেই কেলাস করে সেইটেই অনেক বালো লাগে। সবচে বেশি বালো লাগে মোক্লেছ ছারের কেলাসটা কোর্তে। শুদু ছারের কেলাসই না। মনে অয় ছারকেও তার অসম্বব ভালো লাগে।
নাইলে আগে সে একমাতা গোমটা দিয়া বার্সিটি আশ্তো। কারেন্ট না থাক্লিও পোচোন্ড গোরোমে যকন ঘামি অস্তির তকনো মাতা থেকে বান্দুবীরা অর মাতা থিকে গোমটা সরাইতে পার্তো না। নতুন কেলাসে উইঠে তার মদ্দ্যে কি এমন গোটলো যে সে শুদু তার গোমটাই ফালায় নাই। গোমটার নিচে যে তার লোম্বা চুল লুকায়িত থাক্তো সেইটাও একন কোমোর পর্যন্তো রেশ্মী ওরনার সাথে হুটোপুটি কর্তি থাকে। ছার যকন হাইসে হাইশে কেলাসে লেকচার দিতে থাকে সে তকন ছারকে নিয়া ছিনেমায় ডুইকে যায়।
দ্যাখে ছার তারে নিয়া গান গাচ্চে, “ খাইরুন লোওওও, তোমার লম্বা মাতার কেশ...” । কল্পোনা থেইকে বাস্তোবে আসে, ছারের কতাতেই, “মেডাম কি পরা বুজতি পারচেন না? নাকি কেলান্তি দরিচে?” “কেলান্তি না! ছার, মোরে কি আপ্নার বালো লাগে?” বলতি কি আর পারে। ছারের জিজ্ঞাসায় খালি মুকে একটু মুচকি হাশি দিইয়ে উটে!
এতোদিন কোনোখানে চাক্রির চেষ্টা কর্তে ইচ্চে অয়নি। অনেক জায়গায় দিতি দিতি আর না হতি না হতি সব বাদ দিইয়ে থুয়েচিলো। যেই এক্টা নাম কা ওয়াস্তে চাক্রি হইয়েচে, ওমনি আরো ভালো পুস্টে যাওয়ার জন্যি জাপায়ে পইরেছে।
সেইরকমি একদিন-
একন যেকানে কাজ কোর্তি যায় সেইটে যেমন দূর, আরেক চাক্রিতে দোরকাস্ত দিতি চইলেছে সেইটেও তেমনি দূর। মোটামুটি বোলা চলে এই দুই ইছকুলের মাজখানে হোলো খায়রুনের বাশা। শেমোলীতে এক্টা ইছকুলে সিবি ফেলে ফির্তি পতে আসাদ গেটের কাচে দাড়িয়ে আচে। এক্টা বিকল্পো আসতিচিলো। হাত নাড়ার পোরেও দাড়ালো না।
তুপানের বেগে চইলে গেলো। এর পোরেরটায় উটলো। উইটে একটু পোরেই বীড়ের মদ্যে পোরে গেলো। বাস জ্যামে পোরেচে। একটু পোরেই দেক্তে পেল ডান দিক দিয়ি এক্টা সেপ্টি বাস একটু আগাই গেইচে।
ওর মোন বইলে উটলো, “ঐ যে সেপ্টি! সেপ্টি বাস আমারে বালোই সেপ্টি দিতিচে। ” একন সেপ্টিতে উটতি না পার্লেও সেপ্টির বিকল্পো তো আচে। হয় সেপ্টি না হোয় বিকল্পো এইভাবেই যাতায়াত চোলতে লাগ্লো।
...২৬ জুলাই ২০১২...
[পাদটীকাঃ যশোর এর বেনাপোল এর কাছাকাছি একটি গ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় রচনা করার প্রয়াস চালানো হয়েছে।
কারো বাস্তব জীবনের সাথে মিলে গেলে তা অনভিপ্রেত কাকতাল মাত্র!]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।