আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছোটগল্প: মুরগি

শুদ্ধতার আগুনে যেন সতত পুড়ি (সতর্কতা: বিশালাকৃতির পোস্ট। ) রাতের অন্ধকার পুরোপুরি কাটেনি আবার ভোরের আলো ফুটে উঠতেও হয়তো বেশি দেরি নেই, ঠিক তেমনই একটি সময় বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ এসে ভিড় জমিয়েছে বাগদার সুরঞ্জিত দাসের ছাপরা ঘরের আলো-আধারিতে। এলাকার লোকজন জানে দূর দূরান্ত থেকে লোকজন তার কাছে আসে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার জন্যে। যে কারণে স্থানীয়রা সকাল আটটার আগে এলে ওষুধ পাবে না। দূরের মানুষগুলোকে বিদায় করে স্নান আর নাস্তার পর্ব সেরে আটটার দিকে ফের ছাপরায় এসে বসবে সুরঞ্জিত দাস।

বাগদা এলাকায় সুরঞ্জিত দাসের নাম অনেকেই জানে। সাধারণ মানুষ যতটা না জানে তার চাইতে আরো বেশি জানে থানার পুলিশ। আর জানে বনগাঁ-বয়রা রোডের পাহারায় থাকা বিএসএফের লোকেরা। সুরঞ্জিত কী করে কোথায় যায় তার সবই জানা আছে তাদের, কেবল জানা নেই প্রতিদিন কত কিলোগ্রাম ইয়াবা, কয় হাজার ফেন্সিডিলের বোতল, অফিসার্স চয়েস, রেড লেবেল বাংলাদেশে পাঠায়। হিসেবটা জানতে পারলে হয়তো তাদের বখরার পরিমাণটাও নির্দিষ্ট করে নিতে পারতো।

কিন্তু চোরের ওপরও বাটপার থাকে। সুরঞ্জিত দাসের টিকিটিও এ পর্যন্ত ছুঁতে পারেনি কেউ। সুরঞ্জিতের ছাপরা ঘরে অন্যান্যদের ভিড়ে খানিকটা মনমরা হয়ে মেঝেতে বসেছিলো আরতি। আসবার সময় ছোট মেয়ে বিন্তি খুব করে ধরেছিলো ঘর থেকে বের না হতে। ওদিকে বড় মেয়ে পাখি সংবাদ পাঠিয়েছে তাকে নিয়ে আসার জন্যে।

ন’মাসের গর্ভবতী কাউকে দূরের পথে যাত্রা করতে উৎসাহ দিতে পারে এমন নির্বোধ অথবা নির্দয় মানব-সমাজে খুব কম থাকলেও পুরুলিয়ায় আছে এক ঘর রাক্ষসের ঘরের খোক্কস। তারা দিনরাত মেয়েটির কানে ফু দিয়ে চলেছে, প্রথম সন্তান বাপের বাড়ি জন্মালেই ভালো। পেছনের দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকেই ছোট ছোট অনেকগুলো সেলোফেনের রঙিন প্যাকেট স্তূপ করে টেবিলের ওপর রেখে নড়বড়ে চেয়ারটা টেনে বসে সুরঞ্জিত দাস। তারপর ঘরের কোণে অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গাটায় বসে থাকা নারী-পুরুষের জটলাটার দিকে হাত উঁচিয়ে বললো, কই তোরা? এগো! প্রথমেই এগিয়ে যায় আরতি। টেবিলের কোণ ধরে দাঁড়াতেই মুখটা যেন অপ্রসন্ন হয়ে ওঠে সুরঞ্জিতের।

নাক-মুখ কুঁচকে নিয়ে বলে উঠলো, তুই ফির আইছিস! পুরা চালান নি ধরা পইড়লি, এহন কি আমাক পথে বসাতি চাস? তোক বিশ্বাস করি কী কইরে? এহন যা তুই! - আমি কি করবো! সব তো নষ্টের গোড়া তোমার ভাই! গম্ভীর মুখে কথাগুলো বললেও জায়গা ছেড়ে নড়ে না আরতি। ঘরের ভেতর বাইরের আলো আবছা রকম ভাবে প্রবেশ করলেও কারো মুখই পরিষ্কার দেখা যায় না। কিন্তু সবাই যে নিজের ইচ্ছেতেই এখানে আসে, যুক্ত হয়েছে এমন কঠিন আর অনিশ্চিত জীবনের সঙ্গে _তাও নিজেদের ইচ্ছেতেই। এদের কারো কারো স্বামী-সন্তান আছে। কারো বা স্বামী থেকেও নেই।

কারো বা চল্লিশ পেরিয়ে গেলেও যৌতুকের অভাবে বিয়ে হয়নি। কারো কারো এ পর্যন্ত বিয়ের কোনো সম্বন্ধই আসেনি। সুরঞ্জিত টেবিলের ওপর স্তূপীকৃত ছোট ছোট রঙিন প্যাকেটগুলো কয়েকটি ভাগে ভাগ করার কাজের ব্যস্ততা থেকে মুক্ত হয়ে আরতিকে দেখতে পেয়ে বেশ কিছুটা ধমকের সুরে বললো, তুই এহনও দাঁড়ায়ে রইছিস ক্যান? যাতি কয়িছি না! -চালান দিয়ে দ্যাও চইলে যাই! -কলাম না এহন যা, আমাক কাজ করতি দে! তারপরই সে ডাকে, বিন্দু! ভিড় থেকে কোনো সাড়া আসে না। হয়তো বা আজ আসেনি বিন্দু। সুরঞ্জিত মুখ তুলতেই আরতি এবার করুণ কণ্ঠে বলে, চালান না হলি অনেক বিপদে পইড়ে যাবো কাকা! -তো আমি করবো কী, ধরা পড়ার আগে কথাডা মনে ছিলোনি? -ধরা তো পড়িনি।

তোমার ভাই ধরায়ে দিলে। দু হাতে সুরঞ্জিত খোলা ঊরু চুলকায় খস খস শব্দে। আরতির দিকে না তাকিয়েই বলে, ভাই ধরাইয়ে দেয় এমন কাজ করিস ক্যান? -সুমায় অসুমায় বুঝতি হবে না? মিয়া মানুষির কত সমিস্যা। শরীলির ভালো-মন্দ থাকতি নেই? আরতির কণ্ঠস্বরে বেশ কিছুটা উষ্মা ছিটকে উঠলেও সুরঞ্জিত তেমন একটা পাত্তা দেয় বলে মনে হয় না। বরং হেসে উঠে বলে, মিয়া মানষির শরীলির ভালো-মন্দ আবার কি? তাগের তো তো সেই শুয়ে থাকাই।

ত্যাল- ঘাম যা বারায় সে তো পুরুষির! বলে, আরো বিশ্রী রকম ভাবে জোরে জোরে হাসতে থাকে সে। হাসির তোড়ে শরীর দুললে সঙ্গে সঙ্গে বুড়ো দাঁতের মতো নড়বড়ে চেয়ারও ক্যাঁচ ক্যাঁচ করতে থাকে। আরতির ইচ্ছে হয় এক্ষুনি সুরঞ্জিতের দু গালে দুটো থাপ্পড় লাগায়। কিন্তু এমন কাজ করা তো দূরের কথা, মুখে দুটো কড়া কথা বলার আগেও দশবার ভাবতে হয়। এপার ওপার দুটোই ওদের মতো জান্তব মানুষদের কব্জায়।

কখনো বিএসএফ কখনো বা বিজিবি। নামে বা কাজে কর্মে যাই হোক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে সবাই যেন এক একটা সুরঞ্জিত। যারা মনে করে মেয়েদের শরীর যেন পেতে রাখা বিছানা। ইচ্ছে হলেই যখন তখন গা এলিয়ে দেওয়া যায়। আরতির দিকে একটি সবুজ রঙের প্যাকেট বাড়িয়ে ধরে সুরঞ্জিত বললো, আসা-যাওয়ার পথি আমাগের কারু কথায় সতী সাজতি যাবিনি।

নটিবাড়ির নটিগের এক রকম স্বাধীনতা আছে, ইচ্ছে হলি বিছানায় লোক তুলবি না হলি নায়। এ নিয়ে কারু কিছু কবার নেই। কিন্তু তোরা হলি গিয়ে স্মাগলারগের মুরগি। নটি-বেশ্যাগের থাকিও নিচু জাতের। তোগের ইচ্ছে অনিচ্ছে বইলে কিছু থাইকব্যার নয়।

ইচ্ছে মতন চলতি হলি নিজেগের ঘর-দোরে নয়তো গিরামে গিয়ে চলিস। বর্ডারে নয়। তারপর আরো বিশ্রী একটি হাসি মুখে ঝুলিয়ে লোকটি বললো আবার, নে, ধর! ওপারে ডিমের চালান নিয়ে যাবে গাঙ্গুলি। তার হাতে না দেওয়া পর্যন্ত যাই হোক চালান হাত ছাড়া করবিনি! তা ছাড়া আগের চালানের ক্ষতিপূরণ রাখতি গেলি তো কয়েক চালানে ফুটো পয়সাও পাবিনি। কয় চালানে শোধ করবি টাকা? নাকি শুয়ে শুয়েই শোধ কইরে দিবি? আরতি মনে হয় শুনছিলো না।

তার মন পড়েছিলো পুরুলিয়ায়। যেখানে পাখি ছটফট করছে খাঁচার ভেতর, কখন জননী গিয়ে উদ্ধার করবে তাকে। কিন্তু সুরঞ্জিতের নানা ফাঁদে এভাবে যদি জড়িয়ে যেতে থাকে তাহলে হয়তো এ জীবনে মা-মেয়ের দেখা হবে না। তবু সুরঞ্জিতের শেষ কথাগুলো কানে কেমন করে যেন ঢুকে পড়ে, তোর ছোট মিয়াটাও তো বড় হইয়ে গিইছে শুনিছি। তাকও লাইনে নিয়ে আয়।

লোকবল বেশি হলি আয়ও বেশি। আরতি আর কোনো কথা শুনতে চায় না। সুরঞ্জিতের হাত থেকে প্রায় ছোঁ মেরে প্যাকেটটা নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। তখনই শুনতে পায় সুরঞ্জিত বলছে, গাঙ্গুলি না থাকলি গিরিশের কাছ তোকই যাতি হবি। এমনিতেই অনেক সময় নষ্ট হয়ে গেছে।

বাগদা বাজারের পাশ দিয়ে যাবার সময় আরতি টের পায় ঊরু দুটোর সংযোগ স্থল কেমন প্যাচপ্যাচে হয়ে উঠেছে। ঊরু বেয়ে তরল গড়িয়ে পড়তে থাকলে চলা মুশকিল। পরনের কাপড়টা দু ঊরুতে চেপে ধরে সোজা হয়ে দাঁড়ায় সে। সুরঞ্জিতের বাড়ির পেছন দিককার বাগানটা দিয়ে বেরিয়ে নিজের ঘরের অভিমুখে দ্রুত পা চালায় আরতি। খানিকটা পরিষ্কার হয়ে না নিলেই নয়।

কিছুক্ষণ পর একটি বাস আছে বেনাপোলের দিকে। যদিও তাকে ততটা দূর যেতে হবে না, তবু আজকের অভিযান সেদিকেই। গাঙ্গুলির কাছে চালান পৌঁছাতে না পারলে তাকে বাংলাদেশে ঢুকতে হবে আজই। যশোরের গিরীশ ঘোষের দুধের আড়তে পৌঁছুতে হবে। কিন্তু তার আগে কোথায় যে নিজকে একটু নিরাপদ ভাবতে পারে তাই ভেবে ঠিক করতে পারে না।

২ কাঁটা তারের বেড়া ডিঙোনোর সময় গুলি করে ওপারের একটি মেয়েকে মেরেছে বিএসএফ। এ নিয়ে বর্ডার গরম। শোনা যাচ্ছে যে কোনো সময় দুপক্ষে গোলাগুলি আরম্ভ হয়ে যেতে পারে। তাই সেদিকে আজ কোনো বাস যাচ্ছে না। যদিও বনগাঁ রুটে একটি ট্রেন রয়েছে তাও দুপুরের পর।

এতটা সময় কোথাও বসে থাকাও নিরাপদ নয়। তা ছাড়া আজ অন্যান্য বারের মতো এবারকার নারী দেহজ বিশেষ শারীরিক নির্গমনের পরিমাণ কেমন ভয়াবহ রকমের বেশি। স্বামী নেই বলে তাকে জন্ম নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত কোনো নিরাপদ মাধ্যমের শরণাপন্ন হতে হয় না। কিন্তু তাই বলে একেবারে নিষ্কণ্টকও সব নয়। সময়ে সাবধান হতেই হয়।

বিন্তি নিজের একটি অন্তর্বাস দিয়ে বলেছিলো, এটা পইড়ি ন্যাও। ন্যাকড়া কোমরের সঙ্গে বাঁধতি হবিনি। ব্যবস্থাটা খুব একটা মন্দ না হলেও কিছুটা আঁটোসাঁটো হয়েছে। অভ্যাস না থাকাতে অস্বস্তিও হচ্ছে কিছুটা। আজ চল্লিশেরও বেশি বছর ধরে সে চেনে এই শরীরটাকে।

সামান্য অসুখ-বিসুখ ছাড়া বড় রকমের বিপর্যয়ের মুখে তাকে পড়তে হয়নি কখনো। যে কারণে ডাক্তারের কাছেও তেমন ছুটাছুটি করতে হয়নি। এবার লক্ষণে মনে হচ্ছে ডাক্তারের কাছে না গিয়ে উপায় নেই। ঘর থেকে তৈরি হয়ে বেরুনোর সময় অতিরিক্ত আরো দুটো কাপড়ের টুকরো ভাঁজ করে সঙ্গে দিয়ে দিয়েছে বিন্তি। প্রয়োজনে বদল করে নেওয়া যাবে।

বনগাঁ’র দিকে কোনো বাস যাচ্ছে না বলে রেল স্টেশনে লোকজনের ভিড় বেশি। এত ভিড়ের ভেতরও পুলিশের বাচ্চা পুলিশগুলো ঠিকই বুঝে ফেলে যে, সঙ্গে কোনো রকম চালান রয়েছে। যদিও শোনা যায় বাংলাদেশে যে কোনো মাদক চালানে এদেশের সরকারের নীরব সমর্থন রয়েছে। যে কারণে সীমান্তের কাছাকাছি নানা জাতের ভেজাল মাদক তৈরির কারখানাগুলো আইনী নজরদারিতে তেমন একটা গুরুত্ব পায় না হয়তো। কিন্তু আরতির মতো ছোটখাটো মুরগিদের জন্য সবখানেই বিপদ ওত পেতে বসে থাকে।

নগদে পার পাওয়ার সুযোগ না থাকলে শরীরের ওপর দিয়ে যায় সেই ঝড়-ঝাপটা। কখনো কখনো দুটোর ওপরই নেমে আসে দুর্যোগ। ইন্সপেক্টর ভূপতি সাহা দূর থেকে আরতিকে দেখতে পেয়েই হাতের লাঠিটা উঁচু করে ধরলো। দেখতে পায়নি এমন একটি ভান করে সে উঠে গিয়ে ট্রেনে তোলার জন্য প্লাটফরমে রাখা একটি স্টিলের আলমারির পেছনে গিয়ে বসলো। কিন্তু মিনিট দুয়েকের ভেতরই ভূপতিকে দেখা যায় হাতে খৈনি ডলতে ডলতে আরতির সামনে এসে হাসিমুখে তাকিয়ে আছে।

আরতি কিছু একটা বলার জন্য মনে মনে শব্দ হাতড়াচ্ছিলো তখনই ভূপতি বলে উঠলো, আমাকে দেখে পালিয়ে এলি কেন? আরতি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো, কি বলছো বাবু, তোমাক দেইখে পেলিয়ে আসবো এইটে ভাবতি পারলে? -আজ মুরগি হয়েছিস কার? -শঙ্কর। -ফিরছিস কবে? তোর পিসীর বাড়ি যাবি না এবার? আরতি বুঝতে পারে না ভূপতির মতিগতি। কেনই বা অযথা ভূমিকা করছে লোকটা। কিছু একটা ব্যাপার অবশ্যই আছে। মনে মনে বললো, ঝেড়ে কাশছিস না কেন বাপু? পেটের ভেতর ঘুটুর ঘুটুর রেখে শেষে না আবার বদ হজম হয়ে মরিস! শেষটায় বললো, পিসীর বাড়ি যেতে আমার সাত-আটশ টাকা লেগে যায় কেবল ভাড়া বাবদ।

তা ছাড়া পিসীর বাড়ি কিছু না নিলিও তো মুখ থাকে না। -বউটা কদিন ধরে বাড়ি নেই। তোর বাংলাদেশে গেছে। চাঁন্দপুর। ফিরতে ফিরতে আরো কদিন লাগে কে জানে।

বলছিলাম কি তুই চল আমার সঙ্গে। বিকেল আর সন্ধ্যা রাত্তিরটা এক সঙ্গে কাটিয়ে রাতের বাসে চলে যাস। বর্ডারও আমিই পার করে দেবো। আরতির হাসি পায় ভেতরে ভেতরে। তার শরীরের যে অবস্থা শুনলে হয়তো ভোঁ দৌঁড় দেবে।

অবশ্য কোনো কোনো পুরুষ আছে মেয়েদের এ সময়টাতেও কোনো বাছ বিচার করে না। ভূপতি কোন গোত্রের কে জানে! সে বললো, আমার তো শরীল খারাপ চলতিছে কাইল থেকে। কাঁথার মতন ন্যাকড়া দিয়েও সামাল দিতি পারতিছিনি। তোমার রুচিতে কুলুলি আমার আপিত্তি কেন হবি? মুখের ভেতর খৈনিটুকু ছুঁড়ে দিয়ে মুখ বন্ধ করলেও ভূপতির হাসি বন্ধ হয় না। কিন্তু কিছু না বলে সে ফিরে হাঁটতে থাকলেও আরতির যেন বিশ্বাস হতে চায় না ভূপতির ব্যবহার।

পুলিশ কি সাধারণ মানুষের মতো হয়? পুলিশ বলো বিএসএফ বলো আর বিজিবিই বলো, সব ব্যাটাই এক একটা ধৃতরাষ্ট্র। বুক-পেট বলে কিছু নেই তাদের। নিজের বা পরের বলে কিছু বোঝে না। ভূপতি সত্যি সত্যিই চলে গেছে দেখে আরতি উঠে টয়লেটের দিকে দ্রুত পায়ে এগোয়। চলতে চলতে শুনতে পায় লাউড স্পিকারে কিছু ঘোষণা হচ্ছে।

স্টেশনের মাইক থেকে কখন কী বলে তা কোনোদিনই সে বুঝতে পারেনি, আজও পারছে না। টয়লেটের সামনে বেজায় ভিড়। কখন যে সে সুযোগ পাবে ভাবতে ভাবতে তার শরীরে ঘাম শুরু হয়। ট্রেন আসার আগে কুউ করে বাঁশি বাজে। কিন্তু তেমন কোনো শব্দ বা লাইনের ওপর দিয়ে ট্রেনের চাকা গড়ানোর একটি বিচিত্র শব্দ আছে যা বেশ কিছুটা দূর থেকেই শুনতে পাওয়া যায়, তাও শুনতে পায়নি সে।

অথচ টয়লেটের সামনে ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েরা কী মনে করে হুড়মুড় করে সব প্লাটফরমের দিকে ছুটে গেল বুঝতে পারলো না আরতি। খালি টয়লেটে ঢুকে নির্ভার মনে নিজের যাবতীয় কাজ সমাধা করে একটি বড় সড় ভেজা ন্যাকড়া মাথায় ঘোমটার মতো করে গায়ে জড়িয়ে বেরিয়ে আসে। আর তখনই শুনতে পায় ট্রেনের বাঁশি। সেই সঙ্গে রেলের পাতের ওপর লোহার চাকার গড়িয়ে চলার লক্কর-ঝক্কর শব্দ। ৩ ওপার ছুটির দিন শুক্রবার।

এপার রোববার। যে করেই হোক শুক্রবারে কাজটা সেরে শনিবারের ভেতর গুরু দয়াল ভাটিয়ার মন্দিরে রাতটা কাটিয়ে পরদিন ভোর ভোর গ্রামের পথে ধাবমান জনস্রোতের সঙ্গে মিশে যাবে। সঙ্গে বেআইনি কিছু থাক বা না থাক নিজেকে বেশ নিরাপদ ভাবা যায়। জগতের অনেক ঘটনাই প্রাকৃতিক নিয়মের বাইরে না ঘটলেও মানুষের অদৃষ্ট বলে একটি ব্যাপার আছে যে কোনো নিয়মের ধার ধারে না। কথা ছিলো, বর্ডার যতই উত্তপ্ত থাকুক না কেন, তাকে কোনো না কোনোভাবে পার করে দেবেই।

ট্রেন থেকে নেমেই দেখা হয়ে গেল চম্পা র সঙ্গে। যে জন্মসূত্রে বাঙালি হলেও বিহারে কেটেছে জীবনের অনেকটা সময়। যে কারণে হিন্দি-উর্দু আর বাংলা মিশিয়ে একটি জগাখিচুড়ি ভাষায় কথা বলে সে। আরতিকে দেখতে পেয়েই এগিয়ে এসে হাত ধরে বললো, কঁহা যাচ্ছিস বহেন? আজকে মুরগি নাহি বনা? আরতি মুখ টিপে হাসে। কিন্তু কোনো জবাব দেয় না।

বনগাঁ চেক পোস্টের তিন-চার কিলোমিটার বাকি থাকতেই জঙ্গলের মতো একটি জায়গায় নেমে যেতে হবে। বুনো পথে কিছুক্ষণ হাঁটলে বিনায়ক পালের বৃন্দাবন। যেখানে সব সখিরা নানা জায়গা থেকে এসে ভিড় করে তার হাত ধরে সীমান্ত পাড়ি দিতে। কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর চম্পা বললো, হামি চালান বিনা মুরগি বনকে এইছি। কোন চিজ দিবে হামি জানে না।

ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের দিকে হাঁটতে হাঁটতে চম্পা যা বললো তার মর্মার্থ দাঁড়ায় যে, তার ছোট মেয়েটা হাসপাতালে আছে। গর্ভ ভাড়া দিয়েছিলো। যারা সন্তান নেবে তারা পরে সব খরচ মিটিয়ে তাদের সন্তান নিয়ে যাবে। ভালোয় ভালোয় জিনিস নিয়ে ফিরে আসতে পারলে হাতে হাতে বিশ হাজার টাকা। যা আরো কিছু টাকার সঙ্গে মিলিয়ে হাসপাতালের বিল মেটাবে।

যে কারণে ইচ্ছে না থাকলেও তাকে আজ আসতে হয়েছে। আরতির একবার ইচ্ছে হয় যে বলে, চম্পার মেয়ের তো বিয়ে হয়নি, এমন একটা ঝুঁকির কাজ করলো কেন? কিন্তু যার মেয়ে আর যে গর্ভ ভাড়া দিয়েছে ব্যাপারটা তারাই ভালো বোঝার কথা। বাইরের মানুষ হয়ে তার কৌতূহল প্রকাশ করাটা ভালো দেখায় না। আলাদা ট্যাক্সিতে উঠবার ফলে চম্পার সঙ্গ ছাড়তে হয়েছিলো আরতির। সীতারামের ধাবায় এসে খানিকটা বিশ্রাম নিয়ে নিজেকে পরিষ্কার করে ফিরে এসে সে দেখতে পেলো চায়ের গ্লাস হাতে একটি চারপাইয়ের ওপর অন্যমনষ্ক হয়ে বসে আছে চম্পা।

আরতি তার পাশে গিয়ে বসলেও কোনো কথা বলে না। এখানে এসেও সে শুনতে পেয়েছে আজ খুব একটা সুবিধা হবে না। ফিরে যাওয়াটাই মঙ্গল। যদিও শরীরটা আজ কোনোরকম ধকল পোহাতেই যেন রাজি নয়। ইচ্ছে হচ্ছিলো যেখানে বসে আছে সেখানেই শুয়ে পড়ে।

কিন্তু বিনায়কের সঙ্গে যতক্ষণ দেখা না হচ্ছে ততক্ষণ স্থির হতে পারবে না সে। অবশ্য বিন্তি তাকে বেশ কয়েকবার মানা করেছিলো শরীরের এমন নাজুক অবস্থায় বের না হতে। কিন্তু ছোট বেলা থেকেই প্রতিকূলতার সঙ্গে যুঝতে যুঝতে সে শিখেছে যে, সুযোগ কেউ কাউকে দিতে চায় না। কোনো সুযোগ হাত ফসকে বেরিয়ে গেলে তাও আর ফিরে আসে না। তাই ইচ্ছে না থাকলেও সে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে।

চারদিকে যতটা অভাবী মানুষ গিজ গিজ করছে পুরো পশ্চিম বাংলায় ভারতের অন্যান্য জায়গার অবস্থা কেমন কে জানে। এমনিতে একবার বাসে কর্ণাটকের এক ভদ্রলোকের আলাপ থেকে জানতে পেয়েছিলো যে, ভারতে প্রতিদিন বাইশ কোটি মানুষ উপোষ থাকে। দেড় শ কোটির তুলনায় হিসেবটা তার কাছে কখনোই ছোট মনে হয়নি। অথচ এমন একটি দেশের কিছু পেট-খারাপ লোক স্বপ্ন দেখে কোনো একদিন তারা আমেরিকার মতই শক্তিধর হয়ে উঠবে। আরে, পেটে খাবার না থাকলে শাসনের কোনো ভাবনাই থাকবে না।

বরং চুরি করে হলেও পেট ভরার ভাবনা মাথায় পাক খাবে সারাক্ষণ। জাত-পাত আর ছোঁওয়া-ছুঁয়ি না হয় বাদই থাকলো। অভাবের সঙ্গে লড়াই করার শক্তি না থাকলে মরে যাওয়া উত্তম। কাজেই এ নিয়ে তার মাঝে কোনো ভালো-মন্দ ভাবনা বা বিচারবোধ কাজ করে না। ভালোয় ভালোয় বর্ডার পেরিয়ে ঘরে ফিরতে পারলে বেশ কিছুদিনের জন্যে নির্ভাবনায় থাকতে পারে সে।

ওপার বেশ কিছু আত্মীয়-স্বজন এখনও রয়ে গেছে আরতির। যদিও সবাই আসি আসি করছে কতকাল ধরে, তবু গুছিয়ে উঠতে পারছে না। তাদের ধরে মাস কয়েক আগে একটি আইডি কার্ড করিয়ে নিতে পেরেছিলো। ভাগ্য ভালো বলতে হবে তার। সে সময়টাতে বেশ কিছুদিন সেখানে ছিলো সে।

যে কারণে বাংলাদেশটা চষে বেড়ালেও মনের ভেতর বিন্দুমাত্র শঙ্কা বোধ করে না। অথচ এই দেশটাকে পিতা-পিতামহ আপন করে ভাবতেন বলে সেও নিজের দেশ বলে মেনে নিয়েছিলো। অথচ এখানকার কোথাও এতটুকু নিরাপদ মনে করতে পারে না নিজেকে। পুরোটা দিন পেরিয়ে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়। বিনায়ক পালের অনুসারী সব মুরগি হয়ে ঝোপ-ঝাড়ে বসে ক্ষুধা-তৃষ্ণার সঙ্গে সময় গুনছে।

সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে মশার উৎপাত। এরই মাঝে বিনায়কের রসের হাঁড়ি মাঝে মাঝেই যেন উথলে উপচে পড়ছিলো। সুযোগ পেলেই মুরগিদের যত্রতত্র হাত বুলিয়ে দিয়ে জানাচ্ছিলো, আইজ একজন কইরে পারাবি, সাইকেলে চইড়ি। এমনিতেই চম্পা আজ মানসিক সংকটে সময় কাটাচ্ছিলো। বিনায়ককে প্রথমবার ধমক দিয়ে সরালেও দ্বিতীয় বার তার হাত মুচড়ে ধরে বলে উঠলো, হারামজাদা কাঁহিকা! মানা নেহি করিছি? বিস্মিত বিনায়ক হাতের কবজি ডলতে ডলতে কঁকিয়ে বললো, তোর হলোডা কী? -হামরার বিটিয়া হসপিটালে! চম্পার থমথমে মুখ দেখে খানিকটা থমকে যায় যেন বিনায়ক।

তারপরই বেশ কিছুক্ষণ দেখা যায় না তাকে। পশ্চিমাকাশে হালকা কমলা রঙের যে আলোর আভাসটুকু ছিলো তাও কখন বিদায় নিয়েছে বলতে পারবে না আরতি। হঠাৎ করেই অন্ধকার থেকে কাপড় দিয়ে ঢাকা টিমটিমে আলোর হ্যারিকেন হাতে উদয় হয় বিনায়ক। বেশি সাইকেল যোগাড় হলোনি! পাঁচজন কইরে যাতি হবি! চম্পা সঙ্গে সঙ্গেই উঠে পড়ে বলে, হামি আগে যাইবে! চম্পা অস্থিরতা প্রকাশ করলেও অন্যান্যদের মাঝে তেমন একটা অস্থিরতা টের পাওয়া যায় না। হয়তো বা অন্ধকার বলেই আসন্ন বিপদাশঙ্কা খানিকটা স্থিরতা দিয়েছে তাদের।

নয়তো মেয়েরা কয়েকজন একখানে হলে কিছুক্ষণের ভেতরই তাদের কণ্ঠস্বরের পর্দা চড়তে আরম্ভ করে। কিন্তু আজ অনেক কিছুই ব্যতিক্রম। ৪ সময় যেন আর কাটে না। ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে উঠতে থাকে আরতি। একবার ইচ্ছে হয় চম্পার মতোই বুনো আক্রোশে চিৎকার করে ওঠে সে।

কিন্তু তার অস্থিরতা মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আগেই ডাক পড়ে, আরুতি! নিজের নাম শুনেই বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছিলো সে। অভ্যাস বশে সামনে আগাতে গিয়ে তাল সামলাতে না পেরে উপুড় হয়ে পড়লো কোনো একটি কাঁটা ঝোপের ওপর। চোখে যেন কাঁটার খোঁচা লেগেছে বলে মনে হয়। জ্বলুনির সঙ্গে ডান চোখটা আপনাতেই বুজে আসছিলো। সেই সঙ্গে পড়ে থাকা অবস্থাতেই সে বুঝতে পারে পা'টা তেমন নাড়াতে পারছে না।

কেমন যেন ঝিঁঝিঁ ধরে গেছে। বিনায়ক এসে তাকে টেনে তুললে পরে পা’টাকে প্রায় ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে সে এগিয়ে যায় এক চোখ মেলে। হয়তো বা সে কারণেই বিনায়ক অন্যান্য-বারের মতো তেমন হুটোপুটি করে না। অন্ধকারে চলতে চলতেই টের পায় ডান পায়ের বোধ ফিরে এসেছে। হাঁটতে হাঁটতে আরতি পেছন দিকে ভেজা কাপড়ের অস্তিত্ব টের পেলেও চলার গতি শ্লথ না করে এগিয়ে চলে।

কিছুক্ষণ পর পর সে চেষ্টা করে বুজে থাকা চোখটি মেলে রাখতে। কিন্তু জ্বলুনি আর সেই সঙ্গে পানি পড়ার কারণে ফের আপনা থেকেই বুজে আসছিলো চোখটি। -যা, চইলে যা আরুতি! বিনায়কের কথা শুনে এক চোখে সামনের দিকে তাকালে পর্দা ঢাকা হ্যারিকেনের আবছা আলোয় একটি সাইকেল দেখতে পায় সে। পেছনের ক্যারিয়ারে কাপড় বা কাঁথা জড়িয়ে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সামনের দিকে দুপাশে দু পা মাটিতে রেখে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটিকে বিনায়ক বললো, হরিপদ, যতটা কম শব্দে যাতি পারিস! বুচ্চিস? আরতি সাইকেলের পেছনে উঠে বসতেই প্রথমে কিছুটা এঁকে বেঁকে চললেও পরে সোজা হয়ে চলতে আরম্ভ করে সাইকেলটি।

আরো সামনে গিয়ে উঁচুনিচু পথে খুব বেশি এঁকে বেঁকে চলার কারণে ভারসাম্য রক্ষা করতে নিজের অজান্তেই কখন একটি হাত দিয়ে চালকের পেটের কাছটা বেষ্টন করে ধরেছিলো টের পায়নি আরতি। বেশ কিছুটা পথ চলার পর লোকটি হঠাৎ হিহি করে হেসে উঠে বলে, হাত সরাও! আমার পেটে কাতুকুতু লাগতিছে! আরতি অকস্মাৎ চালকের পেট ছেড়ে দিয়ে কোথায় ধরবে বা ভারসাম্য কীভাবে রক্ষা করবে তা ঠিক করার আগেই সামনে থেকে একই সঙ্গে কয়েকটি টর্চ জ্বলে উঠলে দিকভ্রান্ত বা বিভ্রান্ত হরিপদ সাইকেল সহ কাত হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। সেই সঙ্গে ছিটকে পড়ে আরতিও। অন্ধকার থেকে চাপা কণ্ঠে কেউ বলে,পইড়ে গিছে দেখছি! অন্য কেউ বলে উঠলো,মেয়েছেলেও আছে! অন্ধকার বলে টর্চের পেছনে কারো মুখ দেখতে পায় না আরতি। কিন্তু কথাবার্তা শুনে বুঝতে পারে এরা পুলিশ বা বিএসএফের কেউ নয়।

হরিপদ উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা না করে বসেই থাকে। দেখাদেখি আরতিও উঠতে চেষ্টা করে না। টর্চগুলো আরো কাছে এগিয়ে এলে একজন বললো, তোরা কি ঘর ছেইড়ে পালাচ্ছিলি? -শঙ্করদার মুরগি নিয়ে যাচ্ছি! হরিপদ যেন বলার জন্যে মুখিয়েই ছিলো। এগিয়ে আসা লোকটি বলে উঠলো,বুঝলাম শঙ্করের মুরগি। কিন্তু মুরগিডা ডিমঅলা তো? আমরা ডিমডা নিতি এয়েছি।

একজন আরতির ঘাড় চেপে ধরে বলে, চালানডা দিয়ি দে! আরতি একটুও ভয় না পেয়ে বলে, চালান আনতি যাচ্ছি! -এপার থাইকে ওপার যাচ্ছিস খালি হাতেই? আরেকজন কৌতুকের স্বরে বলে, এমনিতি না দিলি কাপুড় খুলে নিবো কতিছি! আরতি নিজের ঘাড়ে চেপে বসা হাতটি সরানোর চেষ্টা করে বলে,তোমাগের ইচ্ছে হলি খোলো! দলটি যেন হতাশায় মুষড়ে পড়লো। যার হেতু সঙ্গে সঙ্গে টর্চ নিভে গেল সব কটি। বেশ কিছুক্ষণ কেউ কিছু বললো না। যেন একটি গাঢ় নীরবতা অন্ধকারের ঘনত্ব হয়ে স্তব্ধ হয়ে আছে। হঠাৎ একটি টর্চের আলো আরতির মুখে পড়লে টর্চ ধরা লোকটিই হয়তো বলে ওঠে,মেয়েছেলে যখন নগদে উসুল কইরে নে! সঙ্গে সঙ্গে কেউ ঝাঁপিয়ে পড়ে আরতির ওপর।

তার সঙ্গে পরনের কাপড়ে টান পড়ে। টান পড়ে ব্লাউজেও। হয়তো ছিঁড়েও যায়। কিন্তু হাঁটুর ওপর কাপড় তুলে সঙ্গে সঙ্গেই লোকটি বমির বেগ সামলাতে সামলাতে উঠে দাঁড়ায়। অক অক করতে করতে যা বলে সবটুকু বোঝা না গেলেও আরতির মনে হয় লোকটি বললো, শালি পইচে রইছে! এতটা কষ্ট আর বিপদের মাঝেও আরতি না হেসে পারে না।

কিন্তু তার হাসিকে ম্লান করে দিতেই যেন আরেকটি কণ্ঠ জানায়,তাতে কি? মেয়েছেলে তো! সে এগিয়ে এসে ফের আরতির কাপড়টা আরো বেশ খানিকটা ঠেলে দেয়। টর্চ জ্বেলে হয়তো পরখ করে। আর তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই টর্চ নেভার মধ্য দিয়ে শুরু হয় লোকটির হুটোপুটি। সেই সঙ্গে তলপেটের কাছে অন্তর্বাসে টান পড়লে আরতি পা দুটো সোজা করতে করতে ভাবে যে,দুটো মিনিট শুয়ে থাকলে কী বা এমন ক্ষতি। চালান বেঁচে যাওয়ার অর্থ যে তার নিজেরও প্রাণে বেঁচে থাকা।

(সমাপ্ত) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।