দেশে মাদকের আগ্রাসন থামছেই না। আর ভয়ঙ্কর সব মাদক আসে সীমান্তের ওপার থেকে অর্থাৎ ভারত ও মিয়ানমার থেকে। বছর কয়েক আগে আগ্রাসন ছিল ফেনসিডলের। এই ভয়ঙ্কর মাদক তৈরি হয় বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষে ভারতে। এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকার অনেকবার ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে।
এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভারত সরকার তাদের সীমান্তে গড়ে ওঠা অনেক কারখানা সম্প্রতি ধ্বংস করে দেয়। ফলে দেশে এখন ফেনসিডিলের প্রভাব কমলেও বেড়েছে অন্য মাদকের ব্যবহার। ফেনসিডিলের বদলে বর্তমানে দেশে ঢুকছে গাঁজা, হেরোইন, যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট, টিটি ইনজেকশনসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য। আর বৃহত্তর চট্টগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে মরণনেশা 'ইয়াবা'।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) হিসাব অনুযায়ী ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে ভারতের মাটিতে গড়ে ওঠা ফেনসিডিল কারখানার সংখ্যা ৩২টি উল্লেখ করা হলেও বিভিন্ন সূত্র জানায় বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষে ভারতের মাটিতে গড়ে উঠা ফেনসিডিল কারখানার সংখ্যা ছিল ৩০৯টি।
এর মধ্যে সাতক্ষীরা ২৩৮ কিলোমিটার সীমান্তের বিপরীতে ভারতের জিরো পয়েন্ট থেকে একটু ভেতরে ছিল ৩৬টি এবং দিনাজপুরের সীমান্তে ৩৫টি ফেনসিডিল তৈরির কারখানা ছিল। ৩১টি জেলার শতাধিক পয়েন্ট দিয়ে ফেনসিডিলের চালান বাংলাদেশে ঢুকত। অভিযোগ রয়েছে, মাদক পাচারকারীদের সঙ্গে দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের অাঁতাত রয়েছে, রয়েছে মোটা অঙ্কের অবৈধ লেনদেনও। বছরে ৩ কোটি বোতল ভারতীয় ফেনসিডিল বাংলাদেশে ঢুকত। মাদকের আন্ডার ওয়ার্ল্ডে এর বাজার মূল্য প্রায় ৮০০ কোটি টাকা।
তবে প্রকৃতপক্ষে এ বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল চোরাচালানে অন্তত ১৫০০ কোটি টাকা লেনদেন হয়।
সরকারি সূত্রগুলো জানায়, বাংলাদেশে ফেনসিডিলের অপব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় সব মহলেই ভাবনার মধ্যে পড়ে। বাংলাদেশ সরকার সুযোগ পেলেই প্রতিবেশী দেশ ভারতকে বারবার অনুরোধ করে আসছিল ফেনসিডিল কারখানাগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য। এ নিয়ে তৎপর ছিল বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি এবং মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। তারা ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী-বিএসএফ এবং ওই দেশের মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ব্যুরোর উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে বারংবার অনুরোধ করে আসছিল ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।
অবশেষে ভারত এতে সাড়া দেয়। এর বিনিময় বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সীমান্তে জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা বন্ধে সর্বতোভাবে প্রতিবেশী দেশ ভারতকে সহায়তা করছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ভারতকে কয়েকদফা অনুরোধ করা হয়েছিল সীমান্তে ফেনসিডিল কারখানা বন্ধ করার জন্য। সাম্প্রতিক সময়েও দুই দেশের সীমান্ত বাহিনীর প্রধানদের বৈঠকেও এ ব্যাপারে অনুরোধ করা হয়েছে। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তারা ফেনসিডিল কারখানাগুলো বন্ধ করেছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আমীর হোসেন বলেন, 'ভারতের পক্ষ থেকে অফিসিয়ালী কোনো তথ্য না দেওয়া হলেও সাম্প্রতিক সময়ের উদ্ধারকৃত মাদকের পরিসংখ্যান বলে যে ফেনসিডিল দেশে কম ঢুকছে। একই সঙ্গে মনে হয় যে হয়তো ভারত ফেনসিডিল কারখানা হয়তো ধ্বংস করেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।